আপনারা লক্ষ্য করেছেন, সেই একই খালেদা খালেদা জিয়া ফুলবাড়ী হত্যা দিবসের প্রাক্কালে রামপাল পরিবেশ আন্দোলনে উপর কী রকম একমুখী বক্তব্য দিলেন গতকাল। উনি বলেছেন, “এটা গনবিরোধী, পরিবেশের স্বার্থে প্রতিরোধ করুন।” কে এই শব্দগুলো লিখে দিয়েছে তাকে । তিনি প্রেস কনফারেন্সে সেগুলো পড়লেন। এরপর, কারো কেনো প্রশ্নও শোনেনি, জবাবও দেননি। কী জবাব দেবেন?
আপনারা হয়ত লক্ষ্য করেছেন, জাতিয়তাবাদী ঘরানার বুদ্ধিজীবিরা রামপাল-সুন্দরবন পবিবেশ আন্দোলন নিয়ে আজকাল পত্রিকায় লিখছেন। টকশোতে হাত নেড়ে বক্তব্য করে বোঝাচ্ছেন অনেক কিছু। কথাতো ঠিক। এদেশে নষ্ট লোকেরা প্রায়ই সত্য কথা বলেন অসৎ উদ্দেশ্যে। কিন্তু যদি বলেন, “ফুলবাড়ী পরিবেশ বিপর্যয় ও গণমানুষের উচেছদ নিয়ে কিছু বলেন, বলেছেন কখনো, ক্ষমা চেযেছেন?” যে সব মানুষ জখম করা হলো, তাদের জন্য কী করেছেন? অনেকে এখনো ক্রাচে ভর করে হাঁটছে । এর জবাব না দিয়ে, শহীদ হওযা পরিবারের ক্ষতিপুরন না দিয়ে, আপনি রামপাল-সুন্দরবন পরিবেশ নিয়ে দরদ দেখাচ্ছেন কেন?
এ মুনাফেকী রাজনীতি এদেশে রুটিন ওয়ার্ক হযে গেছে। নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগ সরকারের রামপাল প্রকল্প সুন্দরবনকে জথম করবে, এটাই আমার মত । সেটা গণবিরোধী কাজ। কিন্তু আপনারা নিজেরা আন্দোলন শুরু করেন না কেন? অন্যের কষ্টে-গড়া, রক্তে-ঝরা আন্দোলন গিলে খাওয়ার আকাঙ্খা ছাড়তে হবে।
আমি গত দশ বছর ধরে ফুলবাড়ী আন্দোলন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। আমাকে দলীয়ভাবে কেউ যে ডেকে নিয়ে যায়, এমন নয়। আমি নিজেই যাই। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ কতোটুকু নিচে নেমেছে আমি তার পরিমাপ করতে যাই। আমি ওখানকার একজন একটিভিস্টও। জনাব আনু মুহাম্মদ সম্পর্কে আমার ধারনা, এই অধ্যাপক সীমীত সাধ্যের সকটুকু দিয়ে ২৫ বছর ধরে গ্লোবাল পুঁজিবাদের দুবৃত্তায়নের প্রতিরোধ আন্দোলন সংগঠিত করে চলেছেন। খুবই অহমিকামুক্ত একজন অঙ্গিকারবন্ধ মানুষ । নিজেরে মতো কাজ করে যাচ্ছেন, যখন কি না তার মতো প্রায় সবাই বিদেশী পুঁজিবাদের টাকা কামানোর ধান্ধায় নিয়োজিত।
২০১৪ সালে ফুলবাড়ী অভু্ত্থান দিবসে আমারা যাই। যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা তরিকুল/সালেকীনের বাড়ীতে। অকস্মাৎ কান্নায় ভেঙে পড়ে তার কিশোর সন্তানের জননী, কান্না তার থামেই না। আমরা স্তব্ধ হয়ে থাকি। কিছু অধ্যাপক, কিছু প্রগতিশীল মানুষের অার্থিক অবস্থা কতটা বোঝা আর টানতে পারে? তাদের যথাযথ চিকিৎসা, ক্ষতিপূরনসহ সব ওযাদা ধারাবাহিকভাবে বরখেলাফ করেছে রাষ্ট্র। কই লেখা তো দেখি না সেসব নিয়ে? এসব সত্য নিয়ে তো কেউ টকশো গরম করে না? মিডিয়া গ্লামার খুঁজে পায় না এসবে। আমি তেল গ্যাস আন্দোলন কমিটিকে বলতে চাই, তরুণদের ব্যাপারে কোনো প্র্রশ্ন নেই। কিন্তু এইসব হবু শাসক নেতারা যখন কাছে ভিড়রে তখনই আন্দোলন চরিত্র হারাবে, শক্তি হারাবে তাদের রামপাল আ্ন্দোলন। তাদেরকে অবিশ্বাস করে তফাৎ রাখা দরকার। না হলে এটা আপনাদের ইমেজ ও আত্মত্যাগের বিপরীতে যাবে।
যাদের হাতে ফুলবাড়ী পরিবেশ আন্দোলনে গুলি করে হত্যা করা কর্মীদের রক্ত লেগে আছে, তারা যখন সুন্দরবন পরিবেশ আন্দেলন নিয়ে ঝাঁঝালো বক্তৃতা করে, নিরক্ষর লোকেও তার মানে বোঝে।
অনেকে জানে না যে, ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা ছিল দিনাজপুরের। এখানে প্রথম কুটিবাড়ী থেকে মুক্তাঞ্চল তৈরি হয়, সেখানেই বিশ্ব গণমাধ্যমের লোকজন প্রথম পা রাখে জনতা ও ইপিআরদের যৌথ প্রয়াসে। দিনাজপুর-ফুলবাড়ী রাস্তায় ট্যাংক চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল সেখানকার মানুষ। ফুলবাড়ী, বিরামপুর, নবাবপুরের মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণ দিয়েছেন। তেভাগা আন্দোলনে শুধু ওই এলাকার কৃষকের আন্দোলন সমগ্র পৃথিবীর বিখ্যাত অান্দোলনগুলোর অন্যতম। তাদের সম্মিলিত সংগ্রামে বাংলাদেশ জন্ম লাভ করেছে। সে খরব ঠিকমত মনে রাখতে চায না শাসক। ক্ষমতার পালা বদল হবেই। যারা পরিবেশ আন্দোলনে ফুলবাড়ীর ৪ জন, কানসাটের ২০ জন কৃষককে হত্যা করেছে, একদিন নিশ্চই আমরা ট্রাইবুন্যাল গঠন করে জাতীয়তাবাদী গুলী বর্ষণকারীদেরও বিচার করবো। গণবিরোধী সকল শাসকের বিচার হবেই হবে। ইতিহাসের কোন অধ্যায় কখনে শুরু হয়, কখন শেষ হয়, এ দেশের পেশাদার বিশ্লেষকেরাও তা জানে না।
#লেখাটি তিনি ২৫ আগস্ট ২০১৬ তারিখে তার নিজস্ব ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন।
ড. শেখ বাতেন
সমন্বয়ক,
মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ আন্দোলন
ফেসবুক: Sheikh Baten