৩০ বছর পর বাংলাদেশ ‘হিন্দু’ শূন্য হবে // অধ্যাপক আবুল বারাকাত

follow-upnews
0 0

১৯৬৪ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৫ দশকে মোট ১ কোটি ১৩ লাখ হিন্দু ধর্মাবলম্বি মানুষ বাংলাদেশ ত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। অর্থাৎ প্রতি বছর গড়ে ২ লাখ ৩০ হাজার ৬১২ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বি মানুষ নিরুদ্দিষ্ট বা দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। আর প্রতিদিন দেশ ছেড়েছেন গড়ে ৬৩২ জন হিন্দু।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল বারকাতের ‘বাংলাদেশে কৃষি-ভূমি-জলা সংস্কারের রাজনৈতিক অর্থনীতি’ শীর্ষক এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণাটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এই নিরুদ্দেশ প্রক্রিয়ার প্রবণতা বজায় থাকলে আগামী দু’তিন দশক পরে এদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বি কোনও মানুষ আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।

ড. বারকাতের গবেষণায় বলা হয়েছে, বিভিন্ন সময়কালে প্রতিদিন গড়ে নিরুদ্দেশ হওয়া হিন্দুদের সংখ্যা সমান নয়, যেমন-১৯৬৪ থেকে ১৯৭১ পাকিস্তানের শেষ ৭ বছর প্রতিদিন নিরুদ্দেশ হয়েছেন ৭০৫ জন হিন্দু। ১৯৭১ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত প্রতিদিন নিরুদ্দেশ হয়েছেন ৫২১ জন। ১৯৮১ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত প্রতিদিন নিরুদ্দেশ হয়েছেন ৪৩৮ জন। ১৯৯১ থেকে ২০০১ পর্যন্ত প্রতিদিন ৭৬৭ জন হিন্দু দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। আর ২০০১ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ৬৭৪ জন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ দেশ থেকে নিরুদ্দেশ হয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক আবুল বারকাত বলেন, এটি একটি ভয়ঙ্কর ব্যাপার যে এই দেশে জন্ম নিয়ে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া। তিনি বলেন, যেভাবে হিন্দুরা হারিয়ে যাচ্ছে, তাতে এই নিরুদ্দেশ প্রক্রিয়ার প্রবণতা বজায় থাকলে আগামী দু-তিন দশক পরে এদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বী কোনও  মানুষ আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।

ড. বারকাত তার গবেষণায় উল্লেখ করেছেন, অর্পিত সম্পত্তি নামে শত্রু সম্পত্তি আইন কার্যকর থাকার ফলে হিন্দু হিন্দুধর্মাবলম্বী মানুষ অনিচ্ছায় দেশান্তরিত হতে বাধ্য হয়েছেন।

তার গবেষণায় বলা হয়েছে, পাকিস্তানের সামন্ত-সেনা শাসকরা জন্ম সূত্রেই ছিলেন বাংলা ভাষা ও বাঙালি বিরোধী। যে কোনও কায়দায় ব্যাপক হিন্দু জনগোষ্ঠীকে সম্পদচ্যুত, ভূমিচ্যুত, দেশচ্যুত করা গেলে অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতিকে বিভক্ত করে শাসন করা সোজা হবে। এ ভাবনা থেকেই পাকিস্তানি সেনা শাসকরা ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সুযোগ নিয়ে শত্রু সম্পত্তি আইন জারি করে।

আবুল বারকাতের গবেষণায় দেখা গেছে, শত্রু সম্পত্তি আইনে হিন্দু সম্প্রদায়ের মূল মালিকানার ২৬ লাখ একর বেদখল বা ভূমিচ্যুত করা হয়েছে। এই ২৬ লাখ একরের মধ্যে প্রায় ৮২ শতাংশই কৃষি জমি, ২৯ শতাংশ বসতভিটা, ৪ শতাংশ বাগান, ৩ শতাংশ পতিত, ১ শতাংশ পুকুর ও ১৯ শতাংশ অন্যান্য জমি বেদখল হয়েছে।

আবুল বারকাত তার গবেষণায় উল্লেখ করেছেন, শত্রু অর্পিত সম্পত্তি আইনে ভূমি-জলা ও স্থানান্তরযোগ্য সম্পদ হারানোর আর্থিক ক্ষতি সাড়ে ৬ লাখ কোটি টাকা (২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজার দর হিসাবে)।

গবেষণায় বলা হয়েছে, গত ৪০ বছরে (১৯৬৫-২০০৬) বিভিন্ন  সরকারের আমলে শত্রু ও অর্পিত সম্পত্তি আইনে হিন্দুধর্মাবলম্বী মানুষের ক্ষতির পরিমাণ ও মাত্রা ছিল বিভিন্ন ধরনের। এই আইনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ৬০ শতাংশ ও মোট ভূমিচ্যুতির ৭৫ শতাংশ হয়েছে ১৯৬৫ থেকে ১৯৭১ সালের মধ্যবর্তী সময়ে। মোট ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ২০ দশমিক ৬ শতাংশ ও মোট ভূমিচ্যুতির ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ ঘটেছে ১৯৭৬ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে। গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, শত্রু ও অর্পিত সম্পত্তি আইনে যেসব হিন্দুধর্মাবলম্বী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের ৭২ শতাংশ এবং মোট ভূমিচ্যুতির ৮৮ শতাংশই ঘটেছে সেনাশাসন-স্বৈরশাসনামলের ২১ বছরে। অর্থাৎ ১৯৬৫ থেকে ১৯৭১ সাল  এবং ১৯৭৬ থেকে ১৯৯০ সাল।

ড. বারকাত তার গবেষণায় দাবি করেছেন, হিন্দু সম্পত্তি বেদখল করতে স্থানীয় প্রভাবশালী গোষ্ঠী ও ভূমি অফিস সবচেয়ে দায়ী। গবেষণায় বলা হয়েছে, সম্পদ দখল হয়েছে প্রধানত ৫ ভাবে। প্রথমত- স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ভুমি অফিসের সঙ্গে যোগসাজশে উদ্দেশ্য সাধন করেছেন (৭২ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্তের বক্তব্য)। দ্বিতীয়ত-ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা নিজেরাই অবৈধ দখল করেছেন (৪৬ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্তের বক্তব্য)। তৃতীয়ত- স্থানীয় প্রভাবশালী মহল বিভিন্ন ধরনের বল প্রয়োগ করেছেন, জোরপূর্বক বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেছেন, দেশত্যাগে বাধ্য করেছেন (৩২ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্তের বক্তব্য)। চতুর্থ কারণ হলো, প্রকৃত মালিক/ উত্তরাধিকারীদের একজনের মৃত্যু অথবা দেশত্যাগ (৩৫ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্তের বক্তব্য) এবং পঞ্চম কারণ, স্থানীয় প্রভাবশালী মহল জাল দলিল-দস্তাবেজ, কাগজপত্র তৈরি করে ভূসম্পত্তি দখল করেছেন (১৭ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্তের বক্তব্য)।

ড. বারকাত তার গবেষণায় বলেছেন, ‘শত্রু/অর্পিত সম্পত্তি আইন’ বিষয়টি কোনও অর্থেই হিন্দু বনাম মুসলমান সমস্যা নয়। বরং বিষয়টি প্রকৃতপক্ষে বলপূর্বক অন্যের সম্পত্তি দখল করার একটি ঐতিহাসিক প্রক্রিয়া মাত্র। যে প্রক্রিয়ায় লুটপাটের ভাগিদার হয় গুটিকয়েক প্রভাবশালী ব্যাক্তি/শ্রেনি/ গোষ্ঠী।

Next Post

When the child is probably for his parents, may be now his parents are for heaven

Today is Friday, now the time is for prayer. It is an important day and time for the most of the people of Bangladesh. But here we see that the child is waiting for customers so that he can sell to survive, perhaps for his parents too.
now is prayer time, but the child is for life