এবার মীর কাসেম-সাঈদী, কাঠগড়ায় আরও ১২৮ ও জামায়াত

1
 

ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে পঞ্চম শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী হিসেবে মঙ্গলবার (১০ মে) ফাঁসিতে ঝুললেন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী কিলিং স্কোয়াড আলবদর বাহিনীর সর্বোচ্চ নেতা জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী। এরপর ফাঁসির দড়িতে ঝোলার মুখে আছেন আলবদর বাহিনীর তৃতীয় শীর্ষনেতা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলী। আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে চূড়ান্ত রায়ের পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে শুনানির অপেক্ষায় আছেন জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী দেইল্লা রাজাকার।

মীর কাসেম আলীর ফাঁসি বহাল রেখে সংক্ষিপ্ত আকারে তার আপিল মামলার রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর তিনি রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন জানালে এর নিষ্পত্তিতে শেষ হবে মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানবতাবিরোধী অপরাধের এই হোতার মামলা।

অন্যদিকে সাঈদীকে ট্রাইব্যুনাল ফাঁসির আদেশ দিলেও সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। চূড়ান্ত পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর খালাস চেয়ে সাঈদী এবং সর্বোচ্চ সাজা চেয়ে রিভিউ অাবেদন জানিয়েছেন।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫ মার্চ তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, আইনজীবী প্যানেল এবং তদন্ত সংস্থা গঠন করা হয়। মামলার সংখ্যা বাড়ায় এবং বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য তিন সদস্যের দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয় ২০১২ সালের ২২ মার্চ। তবে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল আপাতত নিষ্ক্রিয় রয়েছেন এবং ট্রাইব্যুনাল-১ মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের বা রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল মামলার নিষ্পত্তি করছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

এ পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন অথবা হতে যাচ্ছেন ৬১ মামলায় মোট ১৬৭ ব্যক্তি এবং দলগতভাবে জামায়াত। ৩১ জনের রায় ঘোষিত হওয়ায় এবং দু’জন বিচার চলাকালে ও ৬ জন তদন্ত চলাকালে মারা যাওয়ায় বাকি ১২৮ জন ও জামায়াতসহ ছয় দল যুদ্ধাপরাধের শাস্তি অথবা বিচারের অপেক্ষায়।

৬৭৫ মামলার আসামি ৩৩৭৬ জন
ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় এখন পর্যন্ত মানবতাবিরোধী অপরাধের ৬৭৫ মামলায় ৩ হাজার ৩শ’ ৭৬ জন আসামি এবং দলবদ্ধ যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য জামায়াতের নাম এসেছে। মামলাগুলোর মধ্যে গত সোয়া ছয় বছরে জামায়াতেরসহ ৪০টির তদন্ত শেষ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এর মধ্যে ২৩টির বিচার শেষ করে রায় ঘোষণা করেছেন ট্রাইব্যুনাল, যেগুলোতে ৩১ যুদ্ধাপরাধীর সাজা ঘোষিত হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল ও আপিল বিভাগ মিলিয়ে এ পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ডাদেশ পেয়েছেন ২৩ জন, আমৃত্যু-যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় হয়েছে বাকি ৮ জনের।

আরও চারজন ঝুলেছেন ফাঁসির দড়িতে
এর আগে ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে আরও চার শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর। তারা হলেন- একাত্তরে ‘মিরপুরের কসাই’ বলে পরিচিত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা, মুক্তিযুদ্ধে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের নৃশংস যুদ্ধাপরাধের হোতা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, কিলিং স্কোয়াড আলবদর বাহিনীর প্রধান জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের নৃশংসতম যুদ্ধাপরাধের হোতা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরী।

মারা গেছেন দশজন
সাজা ভোগরত অবস্থায় মারা গেছেন ৯০ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধের মাস্টারমাইন্ড জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম ও আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির সাবেক নেতা সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত আব্দুল আলীম। ফলে তাদের আপিলের নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। এছাড়া মারা গেছেন বিচার শেষ পর্যায়ে থাকা মুক্তিযুদ্ধকালে রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা জামায়াতের সিনিয়র নায়েবে আমির একেএম ইউসুফ ও রায়ের অপেক্ষায় থাকা বাগেরহাটের রাজাকার কমান্ডার আব্দুল লতিফ তালুকদার।

গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকা অবস্থায় অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ায় আসামি তালিকা থেকে বাদ গেছেন আরও ছয়জন। তারা হচ্ছেন- বিচারাধীন যশোরের কেশবপুরের মামলার মো. লুৎফর রহমান মোড়ল, তদন্ত শেষ হওয়া কক্সবাজারের মহেশখালীর মামলার শামসুদ্দোহা ও মো. জিন্নাহ ওরফে জিন্নাত আলী, নেত্রকোনার পূর্বধলার মামলার আহাম্মদ আলী, ময়মনসিংহের মামলার মো. আমজাদ আলী এবং তদন্তাধীন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের মামলার এমদাদুল হক ওরফে টাক্কাবালী।
 

আপিল শুনানির অপেক্ষায় ১২ জন
সর্বোচ্চ আদালতে আপিল শুনানি শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে ১২ জনের আরও ৯ মামলা। সেগুলোর মধ্যে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বার পলাতক থাকায় তিনি আপিল না করলেও তার সর্বোচ্চ সাজার আরজি জানিয়ে আপিল করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ। জেল আপিল করেছেন এক মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বাগেরহাটের রাজাকার কমান্ডার সিরাজুল হক সিরাজ মাস্টার ও আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আকরাম হোসেন খাঁন এবং অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের রাজাকার মো. ফোরকান মল্লিক।

আইনজীবীর মাধ্যমে সরাসরি আপিল করা বাকি আটজন হচ্ছেন- মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা ও জামায়াতের সাবেক রোকন মোবারক হোসেন, জামায়াতের নায়েবে আমির আবদুস সুবহান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির সাবেক প্রতিমন্ত্রী সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার, একই মামলায় নেত্রকোনার রাজাকার কমান্ডার মো. ওবায়দুল হক তাহের ও রাজাকার আতাউর রহমান ননী এবং আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত একই মামলায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন চুটু।

সর্বশেষ ঘোষিত কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের পাঁচ রাজাকারের মধ্যে গ্রেফতারকৃত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কিশোরগঞ্জ জেলা বারের আইনজীবী শামসুদ্দিন আহমেদ তার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে সময় পাবেন এক মাস। পলাতক বাকি চারজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন নাসিরউদ্দিন আহমেদ, গাজী আব্দুল মান্নান ও হাফিজ উদ্দিন এবং আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আজহারুল ইসলাম আপিল করতে চাইলে তাদেরকে ওই সময়সীমার মধ্যে আদালতে আত্মসমর্পণ বা গ্রেফতার হতে হবে।

চার মামলায় সর্বোচ্চ সাজাপ্রাপ্ত পলাতক পাঁচজন আপিল না করায় গ্রেফতার হলেই ঝুলবেন ফাঁসিতে। তারা হলেন- জামায়াতের সাবেক রোকন (সদস্য) আবুল কালাম আজাদ বাচ্চু রাজাকার, জামায়াত নেতা বুদ্ধিজীবী হত্যার দুই ঘাতক আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মাঈনুদ্দিন, ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভার বহিষ্কৃত মেয়র ও পৌর বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি পলাতক জাহিদ হোসেন খোকন রাজাকার এবং কিশোরগঞ্জের তাড়াইল থানার রাজাকার কমান্ডার সৈয়দ মো. হাসান আলী ওরফে হাছেন আলী।

বিচার চলমান ও রায়ের অপেক্ষায় ২৩ জন
তদন্ত শেষ হওয়া অন্য ১৬টি মামলার মধ্যে বিচার শেষ হয়ে রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে তিন আসামি হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জের দুই সহোদর মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়া এবং তাদের চাচাতো ভাই আব্দুর রাজ্জাকের মামলা।

বর্তমানে ৪ মামলায় ২০ জনের বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রম চলছে। এর একটি মামলার জামালপুর জেলার আট আসামির মধ্যে জামায়াতের দুই সাবেক নেতা অ্যাডভোকেট শামসুল আলম ও এস এম ইউসুফ আলী গ্রেফতার এবং আলবদর বাহিনীর উদ্যোক্তা আশরাফ হোসেন, অধ্যাপক শরিফ আহাম্মেদ, মো. আব্দুল মান্নান, মো. আব্দুল বারী, আবুল হাসেম ও মো. হারুন পলাতক আছেন।

যশোরের কেশবপুরের ৮ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলায় জামায়াতের সাবেক এমপি সাখাওয়াত হোসেন ও মো. বিল্লাল হোসেন গ্রেফতার এবং মো. ইব্রাহিম হোসেন, শেখ মোহাম্মদ মুজিবর রহমান, মো. আব্দুল আজিজ সরদার, মো. আজিজ সরদার, কাজী ওয়াহেদুল ইসলাম ও মো. আব্দুল খালেক মোড়ল পলাতক।

শরীয়তপুরের গ্রেফতারকৃত সোলায়মান মোল্লা ওরফে সলেমান মৌলভী ও পলাতক ইদ্রিস আলী সরদার ওরফে গাজী ইদ্রিস একটি এবং পলাতক কিশোরগঞ্জের নিকলির রাজাকার কমান্ডার সৈয়দ মো. হুসাইন ও মোহাম্মদ মোসলেম প্রধান অন্য মামলাটির আসামি।

দলবদ্ধ যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর অপেক্ষা
অন্য তদন্ত প্রতিবেদনটি দেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক দল হিসেবে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতের বিরুদ্ধে।

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র বিরোধিতাকারী জামায়াতসহ সব দল ও সংগঠনের বিচার ও নিষিদ্ধ করার বিধান করে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনের (আইসিটি)’ ১৯৭৩ সংশোধন হচ্ছে শিগগিরই। ফলে কেবল জামায়াতই নয়, মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র বিরোধিতাকারী অন্য পাঁচটি দল পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি), নেজামে ইসলাম, মুসলিম লীগ (কনভেনশন), মুসলিম লীগ (কাউন্সিল) ও কৃষক শ্রমিক পার্টিরও বিচার হবে।

২০১৪ সালের ২৭ মার্চ দল হিসেবে দলবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র বিরোধিতাকারী জামায়াতের বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে জমা দিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। সংশোধিত আইনটি মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর সংসদ অধিবেশনে এটি পাস হলেই জামায়াতের বিচারের লক্ষ্যে ট্রাইব্যুনালে মামলার চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেবেন প্রসিকিউশন।

জামায়াতের বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে জামায়াত এবং তাদের অঙ্গ সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির (সে সময়কার ইসলামী ছাত্রসংঘ) ও ইসলামী ছাত্রীসংস্থা, শান্তি কমিটি, রাজাকার বাহিনী, আলবদর, আলশামসের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত চেয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন’১৯৭৩ এর আলোকে তৈরি এ তদন্ত প্রতিবেদনে জামায়াত ও তার সব অঙ্গ সংগঠন নিষিদ্ধ ও অবলুপ্ত করার আরজি জানানো হয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে জামায়াতের বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান-সংগঠনের বিরুদ্ধেও। ভবিষ্যতেও যেন কেউ এ ধরনের রাজনীতির আলোকে রাজনৈতিক দল গঠন বা রাজনীতি করতে না পারেন সে রায়ও চাওয়া হয়েছে।

একাত্তরে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, জেনেভা কনভেনশন ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন, মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের চেষ্টা ও ষড়যন্ত্র এবং এসব অপরাধ ঠেকাতে ব্যর্থতাসহ সাত ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে জামায়াত ও তার অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে। জামায়াতের নীতিনির্ধারক, সংগঠক, পরিচালক এবং কেন্দ্র থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের এসব অপরাধের জন্য দায়ী করা হয়েছে।

মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত জামায়াত, তার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ, শান্তি কমিটি, রাজাকার বাহিনী, আলবদর বাহিনী ও আলশামস বাহিনীর নানা নৃশংস অপরাধ এবং জামায়াতের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামের যাবতীয় অপরাধের অভিযোগ তুলে আনা হয়েছে এ তদন্ত প্রতিবেদনে।

বিচার শুরু হচ্ছে ৬২ জনের
মানবতাবিরোধী অপরাধের আরও ১০ মামলায় গ্রেফতারকৃত ও পলাতক ৬২ জনের বিচার শুরু হতে যাচ্ছে।

একটি মামলায় নোয়াখালী জেলার সুধারামের পাঁচজন আসামির মধ্যে গ্রেফতার রয়েছেন আমির আহম্মেদ ওরফে রাজাকার আমির আলী, মো. ইউসুফ, মো. জয়নাল আবদিন ও মো. আব্দুল কুদ্দুস এবং পলাতক আছেন আবুল কালাম ওরফে এ কে এম মনসুর।

একটি মামলায় কক্সবাজারের মহেশখালীর ১৯ জন আসামির মধ্যে গ্রেফতারকৃত পাঁচজন হচ্ছেন- এলডিপির নেতা কক্সবাজার চেম্বারের সাবেক সভাপতি সালামত খান উল্লাহ খান ওরফে আঞ্জুবর ওরফে ‘পঁচাইয়া রাজাকার’, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ রশিদ মিয়া, ওসমান গণি, নুরুল ইসলাম ও বাদশা মিয়া। পলাতকরা হচ্ছেন- রমিজ হাসান, জকরিয়া শিকদার, অলি আহমদ, মো. জালাল উদ্দিন, মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সাবুল, মমতাজ আহম্মদ, হাবিবুর রহমান, আমজাদ আলী, আব্দুল মজিদ, আব্দুল শুক্কুর, মো. জাকারিয়া এবং আব্দুল আজিজ।

মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার পাঁচ আসামির একটি মামলায় গ্রেফতার আছেন ইউনুস আহমেদ ও ওজায়ের আহমেদ চৌধুরী এবং পলাতক আছেন শামসুল হোসেন তরফদার, নেসার আলী ও মোবারক মিয়া।

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের একটি মামলার পলাতক ছয়জন আসামি হচ্ছেন- জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল আজিজ ওরফে ঘোড়ামারা আজিজ, মো. রুহুল আমিন ওরফে মঞ্জু, মো. আবদুল লতিফ, আবু মুসলেম মো. আলী, মো. নাজমূল হুদা ও মো. আব্দুর রহিম মিয়া।

একটি মামলার পলাতক দুই আসামি হচ্ছেন- হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার মুড়াকরি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী ও কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার আমিনুল ইসলাম ওরফে রজব আলী।

একটি মামলার আসামি নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলার ছয়জন হচ্ছেন- গ্রেফতারকৃত আব্দুর রহমান এবং পলাতক শেখ মো. আব্দুল মজিদ ওরফে মজিদ মওলানা, মো. আব্দুল খালেক তালুকদার, মো. কবির খান, আব্দুস সালাম বেগ ও নুরউদ্দিন ওরফে রদ্দিন।

মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার অন্য একটি মামলার চার আসামি হচ্ছেন- গ্রেফতারকৃত আকমল আলী তালুকদার এবং পলাতক আব্দুর নুর তালুকদার ওরফে লাল মিয়া, মো. আনিস মিয়া ও মো. মোছাব্বির মিয়া।

ময়মনসিংহ জেলার অন্য একটি মামলায় গ্রেফতারকৃত মো. রিয়াজ উদ্দিন ফকির ও পলাতক ওয়াজউদ্দিন আসামি।

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা ও জামালপুরের ৮ আসামির মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন চারজন- রেজাউল করিম ওরফে আক্কাস মৌলভী, এবিএম ইউনুস আলী, তার ছোট ভাই মো. ইউসুফ আলী ওরফে এ কে এম ইউসুফ আলম ও ওমর ফারুক এবং পলাতক আছেন মো. নাসির উদ্দিন,  মো. ইসমাইল হোসেন, একেএম বেলায়েত হোসেন ও কাজী বদরুজ্জামান।

পটুয়াখালী জেলার একটি মামলার গ্রেফতার হওয়া পাঁচ আসামি হলেন- এছহাক সিকদার, আব্দুল গনি, মোঃ আউয়াল, আব্দুস সাত্তার প্যাদা ও সোলায়মান মৃধা।

তদন্ত চলছে ৫৩ জনের বিরুদ্ধে
বর্তমানে সংস্থায় তদন্তাধীন আছে গ্রেফতারকৃত ও পলাতক ৫৬ জন আসামির বিরুদ্ধে দায়ের করা ২১টি মামলা।

একটি মামলার আসামি নেত্রকোনার ৫ রাজাকার হচ্ছেন- গ্রেফতারকৃত আজিজুর রহমান, রমজান আলী, আশক আলী ও মো. শাহ নেওয়াজ এবং পলাতক খলিলুর রহমান।

ময়মনসিংহের ৮ আসামির মধ্যে গ্রেফতার রয়েছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য এম এ হান্নান ও তার ছেলে রফিক সাজ্জাদ, ডা. খন্দকার গোলাম সাব্বির, মিজানুর রহমান মিন্টু ও হরমুজ আলী। পলাতক তিন আসামির পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন অন্য একটি মামলার আসামি সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল খালেক মণ্ডল।

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার গ্রেফতারকৃত দুই সহোদর রাজাকার আব্দুল আজিজ হাবুল ও রাজাকার আব্দুল মতিন নামক এবং পলাতক আব্দুল মান্নান ওরফে মনাই মিয়া- এ তিনজন অন্য একটি মামলার আসামি।

গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানীর এনায়েত মোল্লাসহ ১১ জন একটি মামলার আসামি।

অন্য একটি মামলার তিন আসামি হলেন মৌলভীবাজার জেলার আলাউদ্দিন চৌধুরী, লাল মিয়া এবং মো. মতিন মিয়া।

নেত্রকোনা জেলার একটি মামলায় তিন আসামির মধ্যে সোহরাব ফকির ওরফে সোহরাব রাজাকার গ্রেফতার হলেও হেদায়েত উল্লা ওরফে আনজু ও এনায়েত উল্লাহ পলাতক।

পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলার দুই সহোদর আমীর হোসেন ও ফজলুল হক, নূরুল আমীন এবং আব্দুল মান্নান- এ চারজন একটি মামলার আসামি।

কক্সবাজার জেলার পেকুয়ার মহসীন হায়দার চৌধুরী ও অধ্যক্ষ তাহের শওকত অন্য একটি মামলার আসামি।

গ্রেফতার হওয়া নড়াইলের আব্দুল ওহাব ও ওমর আলী শেখ পৃথক একটি মামলার আসামি।

অন্য ১১ মামলার ১১ জন আসামি হচ্ছেন- চট্টগ্রামের রাউজানের বিএনপি নেতা গিয়াসউদ্দিন কাদের গিকা চৌধুরী, ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁওয়ের আবুল ফালাহ মুহাম্মদ ফাইজুল্লাহ, নীলফামারীর সৈয়দপুরের ইজহার আহমেদ, গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুরের আবদুল জলিল শেখ, কুমিল্লার খালেক মজুমদার, খুলনার আমজাদ মিনা, রাজশাহীর লাহার আলী শাহ, পটুয়াখালীর রুস্তম আলী সিকদার, পটুয়াখালী জেলার আয়নাল খাঁ, পটুয়াখালী জেলার গলাচিপার আশ্রাব আলী খান এবং যশোরের এএসএম আমিন উদ্দিন।

# নিউজটি বাংলানিউজ২৪.কম থেকে নেওয়া। লিংক নিচে দেওয়া হল।

http://www.banglanews24.com/national/news/488335/%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B7%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%85%E0%A6%AA%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%BE%E0%A7%9F-%E0%A6%AE%E0%A7%80%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%AE-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%88%E0%A6%A6%E0%A7%80-%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%A0%E0%A6%97%E0%A7%9C%E0%A6%BE%E0%A7%9F-%E0%A6%86%E0%A6%B0%E0%A6%93-%E0%A7%A7%E0%A7%A8%E0%A7%AE-%E0%A6%93-%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%A4