খুলনায় প্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুল কাইয়ুম // রফিকুল ইসলাম রিপন

follow-upnews
0 0
শেখ কামরুজ্জামান টুকু
রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান মামলা (আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা) প্রত্যাহারের পর ১৯৬৯ সালে খুলনায় শেখ আবু নাসেরের বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর সাথে জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক শেখ আব্দুল কাইয়ুম (বঙ্গবন্ধুর মাথার উপরে বাম থেকে দ্বিতীয়), এবং অজ্ঞাতনামা আরো তিনজন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুল কাইয়ুম ১৯৬২’র শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বাতিলের আন্দোলন, ১৯৬৬’র ঐতিহাসিক ৬ দফা আন্দোলন ও ১৯৬৯-এর ১১ দফা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।  শেখ আব্দুল কাইয়ুম ১৯৬৯-৭০ মেয়াদে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি ৯ নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি খুলনা জয় বাংলা বাহিনীর প্রধান ছিলেন। মার্চের প্রথম সপ্তাহে জিলা স্কুল মাঠে তিনি স্কুল স্কাউট ক্যাডেটদের ডামি রাইফেল দিয়ে ট্রেনিং করিয়েছিলেন। ৩ মার্চ ১৯৭১, স্বাধীনতার দাবিতে খুলনা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে একটি মিছিল বের হয়েছিলো। ওই মিছিলে বেলুচ পুলিশ গুলি চালালে ৭ জন নিহত হয়। মার্চের প্রথম সপ্তাহে খুলনার দু’টো বন্দুকের দোকান থেকে অস্ত্র ও গুলি সংগ্রহ করা হয়। আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান শেখ কামরুজ্জামান টুকু, শেখ আব্দুল কাইয়ুম, মির্জা খায়বার হোসেন প্রমুখ স্বাধীনবাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ মিলে সংগ্রহকৃত অস্ত্র কর্মীদের মধ্যে বণ্টন করেন। ২৩ মার্চ শেখ আব্দুল কাইয়ুম হাদিস পার্কে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের পতাক উত্তোলন করেছিলেন। ১২ মার্চ খুলনায় ১২ সদস্য বিশিষ্ট স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়েছিলো। শেখ আব্দুল কাইয়ুম এই কমিটির ১ নম্বর সদস্য ছিলেন। ২৬ মার্চ খুলনা সার্কিট হাউজে পাকিস্তানি বাহিনী অবস্থান নেয়।  ২৬ মার্চ ১৯৭১, খুলনায় ‘বিপ্লবী পরিষদ’ গঠন করা হয়। এই পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন খুলনা অঞ্চলের মুজিব বাহিনীর প্রধান শেখ কামরুজ্জামান টুকু। পরিষদে অন্যতম সদস্য ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুল কাইয়ুম। তিনি ৪ এপ্রিল কামরুজ্জামান টুকুর বাহিনীর সাথে খুলনা বেতার আক্রমণে অংশ নিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে ৪ ডিসেম্বর কপিলমুনি রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণে আব্দুল কাইয়ুমের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিলো। কপিলমুনি ছিলো এ অঞ্চলের রাজাকারদের শক্ত ঘাঁটি। এখান থেকে রাজাকারদের ট্রেনিং দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হত। কপিলমুনি যুদ্ধে শেখ আব্দুল কাইয়ুমের কয়েকজন সহযোদ্ধা নিহত হয়েছিলেন। কপিলমুনি যুদ্ধের পর ধৃত রাজাকারদের তাৎক্ষণিক গণআদালত গঠন করে বিচার করা হয়েছিলো। বিচারে মৃত্যুদণ্ড হয়েছিলো অনেক রাজাকারের। ১৯৭২ সালে তিনি খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি জাসদে যোগ দেন। এক পর্যায়ে এসে জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক হন। মুক্তিযুদ্ধের পরে তিনি সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত হন। তিনি আজাদ, সাপ্তাহিক দেশের ডাক, ডাক দিয়ে যাই সহ আরো কয়েকটি দৈনিক এবং সাপ্তাহিক পত্রিকায় কাজ করেছেন। তিনি খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বর্ষীয়ান এ মুক্তিযোদ্ধা ১৬ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে মারা যান।

মুক্তিযোদ্ধা
অস্ত্র হাতে তরুণ মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুল কাইয়ুম।

তথ্যদাতা ঃ সামসুন্নাহার (শেখ আব্দুল কাইয়ুমের সহধর্মিণী), কাজী মোতাহার রহমান (লেখক ও সাংবাদিক), তথ্যসূত্র ঃ দৈনিক জন্মভূমি, ১২ ডিসেম্বর ১৯৯৮ ।। দৈনিক কালান্তর, ৩০ নভেম্বর ২০২০ ।। 

Next Post

রাজাকার বাহিনী আমার আট মাস বয়সে বাবা এবং কাকাকে মেরে ফেলে // অরুণ রায়

১৯৭১ সালের ২৩ মে মোংলার দামেরখণ্ডে বাগেরহাটের কুখ্যাত রাজাকার রজ্জব আলী ফকিরের নেতৃত্বে এবং স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় শতাধিক মানুষকে হত্যা করা হয়। এই হত্যাযজ্ঞের সময় নারীদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালানো হয়। এদিন অনেকের সাথে আমার বাবা এবং কাকাকে হত্যা করা হয়। আমি তখন অনেক ছোট, একেবারেই দুধের শিশু। মায়ের কাছ […]
দামেরখণ্ড গণহত্যা