গণহত্যার মর্মস্পর্শী গদ্য: মগিয়া গণহত্যা

Genocide

বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানা থেকে উত্তর পশ্চিমে মগিয়া গ্রামের অবস্থান। কচুয়া থানার রাজাকার বাহিনী মগিয়া থেকে আরো ২ কিলোমিটার পশ্চিমের ভাসা বাজার থেকে পঁচিশ ত্রিশজন লোককে আটক করে আনে। এদেরকে মগিয়া বাজারের কাছে এনে হত্যা করা হয়।
হত্যাকাণ্ডের একটি লোমহর্ষক বর্ণনা রয়েছে ‘একাত্তরে বাগেহাট’ বইটিতে। সেদিনের ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া সুনীল ডাকুয়াকে উদ্ধৃত করে বইটিতে লেখা আছে—

এরপর সেই রাজাকার এক টান দিয়ে মামার লুঙ্গি খুলে ফেলল। “এ মালাউনের বাচ্চা, মুক্তিবাহিনী তোর বাপ হয়! তলে তলে মুক্তিবাহিনীদের খাতির করিস!” হঠাৎ আরেকটা অল্পবয়সী রাজাকার উন্মত্তের মতো চিৎকার করতে করতে এসে বিশাল এক রাম দা দিয়ে এক কোপ বসিয়ে দিল মামার পুরুষাঙ্গের ওপরে। মামা আর্তনাদ করে কুঁকড়ে গেলো। তারপর কাঁপতে কাঁপতে মাটিতে পড়ে গেল। জবাই করা পশুর মতো মামা দাপাদাপি করতে লাগলেন। তাই দেখে সেই রাজাকারটা উন্মাদের মতো চিৎকার আর উল্লাস শুরু করে দিল। চিৎকার করতে করতে মামাকে পাড়িয়ে ধরল। তারপর গলার ওপর রামদা দিয়ে …

ঐ একই স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে রাজাকারদের একটি যুদ্ধ হয়েছিল ২ ডিসেম্বর। যুদ্ধে লোকবল এবং অস্ত্রসস্ত্রের অভাবে মুক্তিবাহিনী পরাজিত হয়। শহীদ হয় আলফাজ হোসেন ননী, ওমর আবেদ আলী, আতাহার হাওলাদার, আতিয়ার রহমান প্রমুখ। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা আরো বেশি সংগঠিত হয়ে কচুয়া রাজাকার ক্যাম্প দখলে নেয় ১২ ডিসেম্বর তারিখে, ততদিনে অবশ্য দেশের বেশিরভাগ জায়গায় রাজাকার এবং পাকিস্তানী বাহিনী আত্মসমর্পণ করে ফেলেছে। এর আগে জুলাই মাসের মাঝামাঝি রফিক বাহিনী কচুয়া থানা আক্রমণ করে কিছু অস্ত্র সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়েছিল। বাগেরহাটে রাজাকার বাহিনীর তাণ্ডব যেমন ছিল নজিরবিহীন, একইভাবে মুজিব বাহিনী, রফিক বাহিনী, টুকু বাহিনী এবং আরো অনেক ছোট ছোট দল মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ছিল। 


তথ্যসূত্র: একাত্তরে বাগেরহাট, দৈনিক পত্রিকা