একটি গণহত্যার রাত ।। আলী আকবর টাবী

follow-upnews
0 0


পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে ২৫ মার্চ রাতে বাঙালি জাতির উপর সামরিক অভিযান ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ শুরু হয়। বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আদিম হিংস্রতায় ঘুমন্ত ঢাকাবাসীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাদের স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্রের নল ক্রমাগত উদগীরণ করতে থাকে মৃত্যু আর মৃত্যু। পাকিস্তানি বাহিনীর উদগ্র বর্বরতায় শহীদ মিনার ভুলুণ্ঠিত হলো। আক্রান্ত হলো পিলখানার ইপিআর, রাজারবাগ পুলিশ লাইন, বিধ্বস্ত হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হল, জগন্নাথ হল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কবি, সাহিত্যিক লেখক ও সাংবাদিকদের আবাসস্থল আক্রান্ত হলো।

রেললাইনের পাশের বস্তিগুলো পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়া হলো। এই এক রাতেই বর্বর পাকিস্তানি সেনাদের হাতে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে প্রায় ৫০,০০০ মানুষ নির্মম গণহত্যার শিকার হয়েছিল। দুঃসহ স্মৃতিবিজড়িত ২৫ মার্চ ১৯৭১-এর ভয়াল রাতের বিভৎসতা এতটাই নির্মম যে—হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও ধ্বংসযজ্ঞ অতীতের সব রেকর্ডকে ছাপিয়ে এটি হয়ে উঠেছে বিশ্বের ভয়ালতম গণহত্যার রাত।

পরদিন সকালে সুবেদার খলিলুর রহমান বুড়িগঙ্গার বিভৎস দৃশ্য অবলোকন করে যে বর্ণনা দেন—তা থেকে ২৫ মার্চের ভয়াল রাতের হত্যাকাণ্ডের নির্মমতার ভয়ঙ্কর এক করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে। বিবরণে তিনি বলেন, ‘কোতয়ালী থানার বরাবর সোজাসুজি গিয়ে বুড়িগঙ্গা লঞ্চ ঘাটের পাড়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম বুড়িগঙ্গার পাড়ে বিকৃত ক্ষত-বিক্ষত অসংখ্য মানুষের লাশ ভাসছে, ভাসছে পুলিশের পোশাকপরা বিভৎস লাশ। দেখালাম বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ, বৃদ্ধা-যুবা, যুবক-যুবতী, বালক-বালিকা, কিশোর-শিশুর অসংখ্য লাশ। যতদূর আমার দৃষ্টি যায় দেখলাম বাদামতলী ঘাট থেকে শ্যামবাজার ঘাট পর্যন্ত নদীর পাড়ে অসংখ্য মানুষের বিভৎস পচা ও বিকৃত লাশ, অনেক উলঙ্গ যুবতীর লাশ দেখলাম। এই পুত পবিত্র বীরঙ্গনাদের ক্ষত বিক্ষত যোনিপথ দেখে মনে হলো, পাঞ্জাবী সেনারা কুকুরের মত ওদের পবিত্র দেহের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ওদের যথেচ্ছভাবে ধর্ষণ করে গুলিতে ঝাঁঝরা করে নদীতে ফেলে দিয়েছে। অনেক শিশু ও ছোট ছোট বালক বালিকাদের থেতলে যাওয়া লাশ দেখলাম। ওদের পা ধরে মাটিতে আছড়িয়ে মারা হয়েছে।’ (বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র, অষ্টম খন্ড)।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে শুরু করে ১৬ ডিসেম্বরের আগ পর্যন্ত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশের দোসর জামায়াতে ইসলামীসহ স্বাধীনতাবিরোধী দলগুলো ৩০ লক্ষ নিরস্ত্র মানুষ হত্যা করেছে এবং প্রায় ৪ লক্ষ নারীর সম্ভ্রম লুটে নিয়েছে। ১৯৮১ সালে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের ইতিহাসে যে সমস্ত গণহত্যা হয়েছে, তারমধ্যে স্বল্পতম সময়ে সর্বাধিক সংখ্যক ব্যক্তি নিহত হয়েছে বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের গণহত্যায়।

আসুন, আজ গণহত্যা দিবসে সকল শহীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই।


আলী আকবর টাবী আলী আকবর টাবী

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখক

সাংগঠনিক সম্পাদক

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি

Next Post

স্বাধীনতা // হাসনা হেনা

স্বাধীনতা মানে মাথা উঁচু করে বাঁচবার অধিকার অনেক স্বপ্নে মোড়ানো স্বদেশ বাঁচাবার অঙ্গিকার। স্বাধীনতা মানে পাখির ডানায় অসীম আকাশ সবুজের বুকে ঢেউ খেলানো মৃদু-শান্ত বাতাস। স্বাধীনতা মানে নীরব ধূলিকনায় উচ্ছ্বাসের গান বাংলা নামের তুমুল আলোড়নে নদীর কলতান। স্বাধীনতা মানে আঁধার ঠেলে আসা রাঙারোদের হাসি ঘাস ফড়িঙের ডানায় জড়াজড়ি প্রেম শিশুর […]
হাসনা হেনা