ডিমওয়ালা মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে জব্দকৃত ইলিশ মাছ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজা বেগম পারুলের বিরুদ্ধে। সোমবার সকালে অভিযানে উদ্ধারকৃত বিপুল পরিমান ইলিশ তার সরকারি বাসায় লুকিয়ে রেখে নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ার সময় হাতেনাতে বিষয়টি ধরে ফেলেন উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রিফাত জাহান তাপসী। এ সময় স্থানীয় শত শত মানুষ, প্রশাসনের লোকজন এবং স্থানীয় সংবাদকর্মীরা ইউএনও’র ইলিশ কেলেঙ্কারি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেন।
অভিযোগ পেয়ে জেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসেনকে অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রিফাত জাহান তাপসী অভিযোগ করেন, গত ১৮ থেকে ২০ অক্টোবর ইউএনও আফরোজা বেগম পারুল তার অফিসের কিছু কর্মচারী এবং আনসার বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে বাবুগঞ্জের বিভিন্ন নদীতে অভিযান চালান। অভিযানে জব্দকৃত ইলিশ তিনি (ইউএনও) ককশিটে ভরে বিভিন্ন স্থানে পাঠান এবং তার কর্মচারীদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে দেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল থেকে ফেরার পর সোমবার সকালে তিনি (তাপসী) উপজেলা পরিষদে যান। এ সময় দেখতে পান ইউএনও সকালে অভিযানে বের হয়ে বিপুল পরিমান ইলিশ জব্দ করে তার সরকারি বাসায় নিয়ে গেছেন। পরে তার বাসা থেকে একটি প্লাস্টিকের বস্তায় এবং দু’টি বাগে ভরে ইলিশ সরিয়ে ফেলা হচ্ছিলো। বিষয়টি দেখে তিনি দৌঁড়ে ইউএনও’র সরকারি বাসার গেটে গিয়ে কর্মচারীদের হাতে থাকা দুই ব্যাগ ইলিশ রাস্তায় ফেলে দেন। পরে বাসার নীচ তলায় থাকা একটি প্লাস্টিকের বস্তা ভরা ইলিশ মাছ ধরতে গেলে ইউএনও তার বাসার দোতলা থেকে নেমে এসে তাকে (তাপসী) অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করেন। পরে ইউএনও’র নির্দেশে তার অফিসের দুই কর্মচারী মহিবুল ও অপু উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তাপসীকে সরকারি বাসা থেকে ঠেলে বাইরে বের করে দিয়ে গেট আটকে দেন।
বিষয়টি তাৎক্ষনিক জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে বলে তাপসী জানিয়েছেন।
তাপসী অভিযোগ করেন, জব্দকৃত ইলিশগুলো বাইরে পাঁচার করতে না পেরে ইউএনও তার বাসার শৌচাগার, পানির ট্যাংকিসহ বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রেখেছেন। এখনও ইউএনও’র বাসায় বিপুল পরিমান জব্দকৃত ইলিশ আছে বলে দাবি করেন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রিফাত জাহান তাপসী। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করেন।
বাবুগঞ্জ থানার ওসি আব্দুস সালাম জানান, ইউএনও’র বাসা থেকে ইলিশ নিয়ে বাইরে যাওয়ার সময় উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তাপসী হাতেনাতে ধরেছেন বলে তিনি শুনেছেন।
এ বিষয়ে জানতে ইউএনও আফরোজা বেগম পারুলের সরকারি মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বরিশালের জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান জানান, মৌখিক অভিযোগ পেয়ে ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেনকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছেন। তার রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসেন জানান, ইউএনও’র সাথে উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের বিরোধ থাকায় বিষয়টিকে অতিরঞ্জিত করা হয়েছে। ইউএনও’র বাসায় কোন ইলিশ পাওয়া যায়নি। তবে অভিযানে উদ্ধারকৃত ইলিশ নিয়ে ইউএনও’র তার বাসভবনে প্রবেশ করা ঠিক হয়নি। তারপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ইলিশ কেলেঙ্কারির বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট দিয়েছে মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষ শাখা। রিপোর্টে পুলিশ না নিয়ে আনসার এবং অফিস কর্মচারীদের নিয়ে ইউএনও অভিযান পরিচালনা করছেন বলে উল্লেখ করা হয়।
সংবাদ: বাংলাদেশ প্রতিদিন