ঈশ্বর মুখও দেয় না, খাবারও দেয় না

নরসিংদী

খবরটি সম্ভবত অনেকেরই চোখে পড়েছে-

নরসিংদী জেলার লঞ্চঘাটের টয়লেট থেকে সহোদর দুই মেয়ে শিশুর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে অভাব অনটনের কারণে শিশু দুটিকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন শিশু দুটির বাবা শফিকুল ইসলাম। 

গত শুক্রবার রাতে ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয় হতভাগা শিশু দুটির বাবা শফিকুল ইসলাম (৩৮) কে। 

নরসিংদীর পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহমেদ শনিবার দুপুরে পরিবারের সদস্য ও শফিকুল ইসলামের বরাত দিয়ে জানান, ডাক্তার দেখানোর কথা বলে পিতা শফিকুল ইসলাম দুই মেয়েকে শিবপুর উপজেলা সদরে নিয়ে যায়। কিন্তু সেখানে ডাক্তার না পাওয়ায় তাদের নিয়ে নরসিংদী সদরে আসেন। এক পর্যায়ে দুই সহোদর বোন লঞ্চঘাট দেখতে চাইলে তাদের নরসিংদীর কাউরিয়াপাড়া লঞ্চঘাটে নিয়ে যান পিতা শফিকুল ইসলাম।

এসপি বলেন, শুক্রবার রাতে লঞ্চঘাটের টয়লেট থেকে পুলিশ দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধারের পর ঘটনাস্থলেই নিহতদের নিজের সন্তান দাবি করেন মনোহরদীর চালাকচরের শফিকুল ইসলাম। এসময় তার আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে হেফাজতে নেয়া হয় এবং শিশু দুটি তার সন্তান বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ।

অভাবের তাড়না বা বিভিন্ন কারণে শিশু সন্তান হত্যার ঘটনা পূর্বেও ঘটেছে—

১৯ অক্টোবর ২০১৭

গাজীপুরের টঙ্গীতে অভাবের তাড়নায় শিশু সন্তানকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে এক মা। শুক্রবার ভোরে টঙ্গীর মরকুন পশ্চিম পাড়ার, টিটু মিয়ার ভাড়া বাসায় এ ঘটনা ঘটে।

জুন ২২, ২০১৮

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলায় বাবাসহ একই পরিবারের তিন জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশ ও স্থানীয়দের ধারণা, অভাব-অনটনের জেরে বাবা কাজল মোল্লা তার দুই সন্তানকে মেরে নিজে আত্মহত্যা করেছেন।

শুক্রবার ভোরে রায়পুরা পৌর এলাকার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন তুলাতলীতে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।

নিহতরা হলেন রায়পুরার বাবা কাজল মোল্লার (৩২), তার দুই সন্তান কাকলী আক্তার (৮) ও সোয়ান মোল্লা (৫)।

সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৮

ঢাকার দোহার উপজেলার উত্তর জয়পাড়া মিয়াপাড়া এলাকায় দুই মাসের শিশু সন্তানকে লবন খাইয়ে হত্যার দুঃখজনক অভিযোগ পাওয়া গেছে এক মায়ের বিরুদ্ধে। অভাবের সংসারে দুধের টাকা যোগাতে না পারায় রাগে ক্ষোভে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে জানায় পুলিশ। এই মায়ের নাম সাথী আক্তার (২১)।

দেখা যাচ্ছে, এ ধরনের ঘটনা খুবই দৃশ্যমান। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে সামাজিক এ সংকট নিয়ে কোনো গবেষণা আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত হয়নি। কেন এবং কীভাবে একজন পিতা বা মাতা তার সন্তানকে হত্যা করতে পারে! 

এখনও এদেশের দরিদ্র অশিক্ষিত পরিবারগুলোতে সন্তান নেওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি। এমনকি ধর্মান্ধ শিক্ষিত পরিবারগুলোতেও অধিক সন্তান নেওয়ার বিষয়টি রয়েছে। 

বিষয়টি কি শুধুই সামাজিক এবং পারিবারিক, নাকি এর মধ্যে ধর্মীয় রাজনীতির কোনো উপাদান রয়েছে? বিষয়টি সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করতে হলে গবেষণা প্রয়োজন। 

তাছাড়া সন্তান ধারণ এবং লালন পালন বিষয়ে আমাদের দেশে কোনো ট্রেনিং, সেমিনার বা ওয়ার্কশপ হয় না। মাতা-পিতারা জানতে পারে না তাদের করণীয়। ফলে এখনও এক ধরনের আবেগ এবং প্রথাগত বিষয় হয়ে রয়েছে সন্তান ধারণ এবং লালন পালনের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়—যেটি কোনোভাবে কাম্য নয়। 

নরসিংদী