খলি পেটে বেশি লিচু খেলে আপনি মারাও যেতে পারেন …

follow-upnews
0 0

ভারতের বিহার রাজ্যে লিচু খেয়ে মারা যাবার একটি ঘটনা ঘটেছিল। বাংলাদেশে অতবড় ঘটনা না ঘটলেও লিচু খেয়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনা রয়েছে।

অবশ্য বাংলাদেশে এ ধরনের মৃত্যুর ঘটনাকে লিচুতে কীটনাশকের উপস্থিতি বলে বলা হয়েছিল। তবে …

২৫ জুলাই ২০১৭, বিবিসি বাংলা

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকেরা বলছেন, বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ কীটনাশকের বিষক্রিয়ার কারণেই প্রায় পাঁচ বছর আগে বাংলাদেশে ১৩টি শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। ওই শিশুরা লিচু খাবার পর মারা গিয়েছিল।

গবেষকরা বলছেন, নিহত শিশুরা সবাই ‘অ্যাকিউট এনসেফালাইটিস সিনড্রোমে’ আক্রান্ত হয়েছিল, ফলে তাদের মস্তিষ্কে প্রদাহ তৈরি হয়। লিচু গাছের নীচে বা আশেপাশে এই কীটনাশক বিষের প্রভাব থাকে।

নতুন ওই গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ২০১২ সালে যে সময় শিশুদের মৃত্যু হয় সেই সময়ে চাষীরা তাদের শস্যক্ষেতে ‘এনডোসালফান’ নামের অত্যন্ত বিষাক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করেছিল। যে কীটনাশকটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ।

অ্যামেরিকান জার্নাল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন এন্ড হাইজিনে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, লিচু ফলগুলোতে ওই কীটনাশক বিষ মিশে গিয়েছিল যা খাওয়ার কারণে ২০ ঘন্টার মধ্যে তার প্রতিক্রিয়ায় মস্তিষ্কে প্রদাহ শুরু হয় ও শিশুদের মৃত্যু ঘটে।

পোকামাকড় ঠেকাতে লিচুসহ বিভিন্ন ধরনের ফল, শাকসবজিসহ বিভিন্ন ক্ষেতখামারে কীটনাশক মেশানো হয়। লিচু যখন বাতাসে গাছ থেকে নীচে পড়ে ফেটে যায় তখন ওই কীটনাশকের বিষ ফলে মিশে যায়-আর লিচু গাছের নীচে বা আশেপাশে থেকে সেই ফল খেয়ে শিশু বা অন্য মানুষ আক্রান্ত হতে পারে।

তবে ভারতের বিহার রাজ্যে শিশু মৃত্যুর প্রেক্ষিতে যে গবেষণাটা হয়েছিল তাতে পাওয়া গিয়েছিল ভিন্ন একটি কারণ—

ভারতের বিহারে দুইবছর আগে মৌসুমী ফল লিচু খাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ৩৯০ টি শিশু। তার মধ্যে ১২২ জনই মারা গিয়েছিল। গবেষকরা এখন বলছেন, খালিপেটে লিচু খাওয়ার ফলেই তাদের শরীরে বিষক্রিয়া দেখা দিয়েছিল।

লিচু মৌসুমী ফল হিসেবে বেশ জনপ্রিয় হলেও, ভারত ও বাংলাদেশে কিছু এলাকায় শিশুর মৃত্যুর কারণ হিসাবে লিচু থেকে বিষক্রিয়ার প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, ভারতের বিহার রাজ্য এবং বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অনেক শিশুর মৃত্যুর কারণ এটি।

আন্তর্জাতিক চিকিৎসা বিজ্ঞান পত্রিকা ‘ল্যানচেট’-এর সাম্প্রতিক সংখ্যায় প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্রে এই তথ্য উঠে এসেছে।

খালি পেটে অনেকগুলি লিচু খেয়ে ফেললে শরীরে যে বিষ তৈরি হয়, তার ফলেই সুস্থ-সবল শিশুদের হঠাৎ খিঁচুনি আর বমি শুরু হয়। তারপরেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে তারা। আর এভাবে আক্রান্ত হওয়া অর্ধেকেরও বেশি শিশু মারা যায়।

বিহারে ‘লিচু রোগ’ বা বাংলাদেশের কোথাও কোথাও ‘অজানা কীটনাশকের প্রয়োগ’-কেই এসব শিশুমৃত্যুর কারণ বলে মনে করা হতো এতদিন।

কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে যে মৃত্যুর কারণটা লুকিয়ে থেকেছে ‘লিচু’ ফলের মধ্যেই।

লিচুতে হাইপোগ্লাইসিন নামে একটি রাসায়নিক থাকে, যা শরীরে শর্করা তৈরি রোধ করে। খালি পেটে অতিরিক্ত লিচু খেয়ে ফেললে শিশুদের শরীরে শর্করার পরিমাণ অত্যন্ত কমে গিয়ে তা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

বিহারের ঘটনায় বিজ্ঞানীরা প্রত্যেকটি শিশুর চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য খুঁটিয়ে দেখে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে ওই বাচ্চাগুলি আগের রাতে খাবার খায়নি অথবা কম খেয়েছিল। পরের দিন রাস্তায় পড়ে থাকা, নষ্ট হয়ে যাওয়া অথবা অপরিপক্ব লিচু একসঙ্গে অনেকগুলি খেয়ে ফেলেছিল তারা। তারপরেই অসুস্থ হয়ে পড়ে বাচ্চাগুলি।

মে থেকে জুলাই মাসেই লিচুর ফলন হয়ে থাকে। আর ওই সময়েই শিশুরা ওই উপসর্গ নিয়ে মারাও যায় সবথেকে বেশী।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, অপরিপক্ব লিচু বা লিচুজাতীয় ফল খেয়েই যে বিষক্রিয়ায় বহু শিশু মারা যায়, সেটা অনেক দিন আগেই ক্যারিবিয়ান দ্বীপে গবেষণায় জানা গিয়েছিল।

এরপর ‘জামাইকান ভমিটিং সিকনেস’ নামের ওই রোগটির ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য ভারত ও বাংলাদেশ সহ এশিয়ার কয়েকটি অঞ্চলে পৌঁছাতে অনেক দেরী হয়েছে, বলছে ‘ল্যানচেট’।

Next Post

বাগেরহাটে বর্জ্য ও পয়:নিস্কাশন কর্মীদের মাঝে নিরাপত্তা সামগ্রী প্রদান করেছে ’কর্মজীবী নারী’

২৭ মে, ২০১৯ তারিখে বাগেরহাট পৌরসভা অডিটোরিয়ামে আলোচনা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বর্জ্য ও পয়:নিস্কাশন কর্মীদের মাঝে নিরাপত্তা সামগ্রী প্রদান করেছে ‘প্রাকটিক্যাল অ্যাকশন’ এর সহযোগিতায় ‘কর্মজীবী নারী’ এনজিও। প্রকল্পটির মাদার অর্গানাইজেশন ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। সুবিধাভোগী একশো জন বর্জ্য ও পয়:নিস্কাশন কর্মীদের দেওয়া হয়েছে রেইনকোট, গামবুট, মাস্ক, হ্যান্ড গ্লোবস্, অ্যাপ্রন, টর্চ, চশমা —এরকম […]
বাগেরহাট

এগুলো পড়তে পারেন