জামালপুরে নিরীহ দম্পতির উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিসিএস-এডমিন কর্মকর্তাগণ

জাহাঙ্গীর আলম

জামালপুর প্রতিনিধি

জাহাঙ্গীর আলম


১০/০২/২০১৮ তারিখে বিকেল ৪টায় জামালপুর জেলার জামালপুর রেলওয়ে স্টেশনের পেছনে মো: জাহাঙ্গীর আলম (৫২) ও তাঁর স্ত্রী ফেন্সী বেগমের (৪৫) বাড়ীতে জমি দখলের উদ্দেশ্যে স্থানীয় ইয়াসিন ও তার ভাই রুবেলের নেতৃত্বে অর্ধশত স্বসস্ত্র ক্যাডার ওই দম্পতির উপর সন্ত্রাসী হামলা চালায়। অাক্রান্ত জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, “ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে থেকে হামলায় নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনার হেলাল উদ্দিন।“

জানা যায়, এ বিষয়ে মামলা করতে গেলে আক্রান্তদের পক্ষে মামলা নেয় না জামালপুর সদর থানা। অবশেষে বিসিএস-এডমিন কর্মকর্তাগণের চাপে মামলা নিয়েছেন ওসি। বাদীর পক্ষে ১১/০২/২০১৮ তারিখে এজাহার দায়ের করেছেন আক্রান্ত জাহাঙ্গীর আলমের নিকট আত্মীয় শফিকুল ইসলাম বাবু।

শফিকুল ইসলাম বাবুকে ওসি বলেন, “আমি উভয়পক্ষের মামলা নিয়েছি।” খোঁজ নিয়ে জানা গেছে আক্রমণকারী পক্ষও আক্রান্তদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন।

জামালপুর সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার মেশকাত মাহমুদ বলেন, “আক্রমণকারী ইয়াসিন এবং রুবেলের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। আক্রান্ত জাহাঙ্গীর আলম এবং তাঁর স্ত্রী ফেন্সি বেগম আক্রমণকারীদের উল্টে মামলা করার বিষয়টি শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। 

ওসি এও বলেছেন, “আক্রান্ত জাহাঙ্গীর আলমের জামাতা ইমদাদুল হক তালুকদার একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ায় মামলার প্রেক্ষিতে তাঁর শশুর শাশুড়ীকে আমরা গ্রেফতার করছি না। এই দয়াটুকু আমি দেখাব।”

এদিকে বিসিএস এডমিন ক্যাডারের কর্মকর্তাগণের উদ্বেগের প্রেক্ষিতে জামালপুর জেলা প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে একটি জরুরি বৈঠকে বসেন। তাঁরা বাদী জাহাঙ্গীর আলমের মামলায় আসামীদের দ্রুত গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। 

কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো আসামী গ্রেফতার হয়নি বলে জানতে পেরেছে ফলোআপনিউজের এ প্রতিবেদক।

জামালপুর জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাসেল সাবরিন আক্রান্ত জাহাঙ্গীর আলম এবং তাঁর স্ত্রী ফেন্সি বেগমকে হাসপাতালে গিয়ে দেখে এসেছেন। জামালপুর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণও তাঁদের দেখতে গিয়েছিলেন আজকে সন্ধ্যায়। তাঁরা আক্রান্তদের ন্যায্য বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন।

ঘটনার প্রধান নির্দেশদাতা হেলাল কমিশনার প্রভাবশালী হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন মামলার বাদী জাহাঙ্গীর আলম। 

নিরীহ দম্পতির উপর ন্যাক্কারজনক সন্ত্রাসী হামলা এবং বিসিএস-এডমিন কর্মকর্তগণের তীব্র প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকারের সিনিয়র সচিব আব্দুল মালেক, ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারসহ জনপ্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

মেডিকেল অফিসার মেশকাত মাহমুদ জানিয়েছেন, “আক্রান্ত ফেন্সি বেগমের তলপেট থেকে এখনো থেকে থেকে রক্তপাত হচ্ছে, তাই তাকে পুরোপুরি অাশঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না।”

অাক্রান্ত জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, “কমিশনার হেলাল উদ্দিন আমার জামাইকে চাকরিচ্যুত করবেন বলে হুমকি প্রদান করেছেন।”

“আক্রমণকারী সন্ত্রাসী ইয়াসিন এবং রুবেল বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং তাঁরা অাগাম জামিন নিতে সমর্থ হবেন বলে বলে বেড়াচ্ছেন এলাকায়।” জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার কয়েকনজন। 

ঘটনাটি নিয়ে হেলাল কমিশনারের সাথে যোগাযোগের করা হলে তিনি জানান, “এই ঘটনার সাথে কোনোভাবেই আমি জড়িত নই। ফায়ার ব্রিগেড ও পুলিশের গাড়ি দেখে আমি সেখানে গিয়েছিলাম। দারোগা রফিক ও মোস্তাফিজের অনুরোধে সেখানে আমি কিছুক্ষণ অবস্থান করি। জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ির সাথে ইয়াসিন ও রুবেলের ক্রয়কৃত আড়াই শতাংশ জায়গা রয়ছে। ঐ জায়গায় যে ঘরটি রয়েছে সেখানে লেফ তোষকে ফেন্সি বেগম ও জাহাঙ্গীর আলম আগুন ধরিয়ে দেয়। ফেন্সি বেগমের তলপেট থেকে রক্ত পড়ছে বলা হচ্ছে, ওটা তো তাঁর রোগ। সদর হাসপাতালে খোঁজ নিলে এ বিষয়ে জানা যাবে। আমি তাঁদের ওপর হামলায় মদদ দেয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। বরং বিভিন্ন সময়ে আমি তাঁদের হেল্প করেছি। তাঁদের ছেলেকে বিভিন্ন ঘটনা থেকে আমি বাঁচিয়েছি।”