নিসর্গবিদ দ্বিজেন শর্মা আর নেই

দ্বিজেন শর্মা

দ্বিজেন শর্মা

বরেণ্য নিসর্গবিদ অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা আর নেই। শুক্রবার (১৫ আগস্ট ২০১৭) সকালে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।

বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতা ছাড়াও ফুসফুসে সংক্রমণে ভোগা দ্বিজেন শর্মাকে হাসপাতালটির আইসিইউতেও রাখা হয়েছিল।

নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে গত ২৩ জুলাই দ্বিজেন শর্মাকে বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ২৯ জুলাই তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে ১০ আগস্ট কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু আবারও অবস্থার অবনতি হওয়ায় ১৮ আগস্ট থেকে হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন বিভাগের নিবিড় তত্ত্বাবধানে রাখা হয়।

দ্বিজেন শর্মা ১৯২৯ সালের ২৯ মে সিলেট বিভাগের বড়লেখা থানার শিমুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ভিষক চন্দ্রকাণ্ড শর্মা এবং মাতার নাম মগ্নময়ী দেবী।

বাবা ভিষক বা গ্রাম্যভাষায় কবিরাজ ছিলেন, আর মা ছিলেন সমাজসেবী। শৈশবে পাথারিয়া পাহাড়ের জঙ্গলে ঘুরে বেড়িয়েছেন অনেক, আর সেখান থেকেই হয়তো গাছপালার প্রতি তার অসীম ভালোবাসা জন্মে। “কবিরাজ বাড়ি” বলে বাড়ির বাগানেই অজস্র গাছগাছালি ছিল, তার মাঝে ছিল স্বর্ণচাঁপা, কনকচাঁপা, মধুমালতীসহ নানা রঙবেরঙের ফুল। বসন্ত শেষের বৃষ্টির পর সারা বাড়ি যখন ফুলে ফুলে ভরে উঠতো, দ্বিজেন শর্মা তখন সকালে পূজার ফুল তুলতেন। সেসময়ই মনের অজান্তে দ্বিজেন শর্মাও প্রকৃতির প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন।

শৈশবেই গ্রামের পাঠশালায় তাঁর হাতেখড়ি হয়। এরপর করিমগঞ্জ পাবলিক হাইস্কুলে লেখাপড়া করেছেন। যদিও মায়ের ইচ্ছে ছিল তিনি বড় হয়ে ডাক্তার হবেন, কিন্তু প্রকৃতিপ্রেম তাঁকে উদ্ভিদবিদ হতে আকৃষ্ট করে। কলকাতা সিটি কলেজ থেকে স্নাতক অর্জনের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেন। তিনি উদ্ভিদবিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে করিমগঞ্জ কলেজ, বিএম কলেজ ও নটরডেম কলেজে চাকরি করেছেন। পরে মস্কোর প্রগতি প্রকাশনে প্রায় ২০ বছর চাকরি করেছেন। এরপর দেশে ফিরে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিতে।

১৯৬০ সালে বরিশালে দেবী চক্রবতীর সাথে বিবাহ হয়। ড: দেবী শর্মা ঢাকার সেন্ট্রাল উইমেনস কলেজের দর্শনের সাবেক অধ্যাপিকা। এক ছেলে ও এক মেয়ে তাদের সংসারে। ছেলে ডা: সুমিত শর্মা থাকেন মস্কোতে আর একমাত্র মেয়ে শ্রেয়সী শর্মা বাস করেন বাংলাদেশেই।

প্রকৃতি ও গাছগাছালির প্রতি ভালোবাসা ও লেখালেখির কারণে দ্বিজেন শর্মাকে ‘নিসর্গসখা’হিসেবে অভিহিত করা হয়। তাকে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, রাষ্ট্রীয় একুশে পদকে ভূষিত করা হয়েছে।

উদ্ভিদ ও প্রকৃতি নিয়ে দ্বিজেন শর্মার লেখা আকরগ্রন্থ ‘শ্যামলী নিসর্গ’। এছাড়া তার লেখা বইয়ের মধ্যে রয়েছে- ‘বাংলার বৃক্ষ’, ‘সপুষ্পক উদ্ভিদের শ্রেণীবিন্যাস’, ‘ফুলগুলি যেন কথা’, ‘গাছের কথা ফুলের কথা’, ‘এমি নামের দুরন্ত মেয়েটি’, ‘নিসর্গ নির্মাণ ও নান্দনিক ভাবনা’, ‘সমাজতন্ত্রে বসবাস’, ‘জীবনের শেষ নেই’, ‘বিজ্ঞান ও শিক্ষা : দায়বদ্ধতার নিরিখ’, ‘ডারউইন ও প্রজাতির উৎপত্তি’, ‘বিগল যাত্রীর ভ্রমণ কথা’, ‘গহন কোন বনের ধারে’ ইত্যাদি।