ইসলাম ধর্মের অবমাননার অভিযোগে নির্মর্মভাবে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্র নয়ন মজুমদারকে। গত ২৮ জুন চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের সন্তোষপুর ইউনিয়নে এই ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্থানীয় মুন্সিরহাটে শত শত মানুষের সামনে নয়নকে তার ফেসবুক কমেন্টের জন্য ক্ষমা চাইতে বললে নয়ন ক্ষমা চেয়ে বলেন, আমার কমেন্টে কারো মনে আঘাত দিয়ে থাকলে সেজন্য আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। এরপর উত্তেজিত জনতা দাবি করে তাকে জুতার মালা পরিয়ে বাজার প্রদক্ষিণের, কিন্তু নয়ন সাফ জানিয়ে দেন, মেরে ফেললেও তিনি তা করতে পারবেন না। এসময় বিশ ত্রিশজন উত্তেজিত যুবক নয়নকে এলাপাথারি মারধর শুরু করলে তিনি জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে উপস্থিত লোকজন তাকে স্থানীয়ভাবে শুশ্রুষা দিয়ে হাসপাতালে পাঠান। এ নিয়ে বর্তমানে এলাকায় পক্ষে বিপক্ষে উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয় যুবলীগ, ছাত্রলীগের কর্মীরা বিষয়টিকে জামাত শিবিরের দুরভিসন্ধি বলে বলছেন।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, সন্তোষপুর ৪নং ওয়ার্ডের রঙ্গনী বাড়ির নিরঞ্জন মজুমদারের ছেলে নয়ন মজুমদার গত ২৬জুন তার ফেসবুকে সুলতানা কামালের একটি আলোচিত বক্তব্যকে সমর্থন দিয়ে স্ট্যাটাস দিলে স্থানীয় এক মাদ্রাসা ছাত্র এর প্রতিকারের জন্য লোকজনকে উদ্বুদ্ধ করে। তাদের সাথে সন্তোষপুর কাছেমুল উলুম মাদ্রাসার দু’জন মাওলানাও যুক্ত হন বলে জানা যায়।
নয়নের বিষয়টিকে ধর্মবিরোধী বলে প্রচার করে তার বাড়িঘরে হামলার জন্য তারা যুবসমাজের প্রতি আহবান জানান। এমতাবস্থায় এলাকার গণ্যমান্য কিছু মানুষ তাদেরকে বিষয়টি সামাজিকভাবে সমাধানের জন্য বলেন এবং সে মোতাবেক উদ্যোগ নেয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নয়নকে স্থানীয় মুন্সিরহাটে উপস্থিত করে তার অপরাধের জন্য ক্ষমা চাইতে বললে নয়ন ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ঘটনাটি যখন প্রায় মীমাংসার পথে তখনই চিহ্নিত কিছু যুবক হৈ হুল্লোড় করে নয়নকে মারধরের জন্য চিৎকার শুরু করে। তখন ঘটনা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সন্তোষপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার ও উপজেলা যুবলীগ নেতা মো. সেলিম বলেন, “শিবিরের চিহ্নিত কিছু যুবককে প্রতিরোধ করা না হলে নয়ন মারাও যেতে পারত।” তিনি বলেন, “একপর্যায়ে চেয়ার তুলে নিয়ে পাল্টা প্রতিরোধ যদি না করতাম তারা নয়নকে মেরে ফেলতো।” ঘটনার মীমাংসার বিষয়ে তিনি বলেন, “যতদূর জানি মীমাংসার বিষয়টি এসেছে নয়নের পরিবারকে বিপদের হাত থেকে বাঁচাতে, চক্রান্তকারীরা চেয়েছিল ইস্যুটিকে বড় করে হিন্দু পাড়ায় হামলা করতে। আমি বিষয়টি জানতাম না, বৈঠকে আমাকে ডাকা হলে এবং পরিস্থিতি স্বয়ং দেখে আমি বুঝতে পারি এই ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। মূলত আওয়ামীলীগ সমর্থক নয়নকে এবং স্থানীয় হিন্দুদের ভয়ভীতি দেখিয়ে একঘরে করাই ছিল ঘটনার মূল উদ্দেশ্য।”
ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন এমন একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছা প্রকাশ করে বলেন, “আমরা শুনেছি নয়ন তার ফেইসবুকে ইসলাম নিয়ে খারাপ খারাপ লেখা প্রকাশ করেছে কিন্তু কী লিখেছে তা জানি না।” নয়নের বাবা নিরঞ্জন মজুমদার বলেন, “ছেলের সাথে আমার কথা হয়েছে, সে বলেছে তার এই লেখার পেছনে কাউকে আঘাত করাটা উদ্দেশ্য ছিল না। কেবল দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে একটি জাতীয় আলোচিত বিষয়ে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেছিল সে।”
উল্লেখ্য, নয়ন মজুমদারের ফেইসবুক স্ট্যাটাসটি কেউ দেখাতে না পারলেও সে সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপিত ভাস্কর্যের অপসারণ প্রসঙ্গে সুলতানা কামালের বক্তব্য সমর্থন করে লিখেছিল বলে নিশ্চিত হওয়া যায়।
বিষয়টি জানতে সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ঘটনাটি তার জানা নেই। তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন। বিষয়টি জানতে সন্তোষপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাকছুদুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “তিনি চট্টগ্রামে অবস্থান করায় ঘটনার বিষয়ে পরে অবগত হয়েছেন।” এ বিষয়ে ভূক্তভোগী নয়ন মজুমদারের সাথে যোগাযোগের জন্য তার মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করা যায়নি।
সূত্র: অনলাইন