মাগুরা সদর উপজেলার গোপিনাথপুর গ্রামে বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় কলেজে ভর্তীচ্ছু এক হিন্দু ছাত্রীকে (১৬) অপহরণের চেষ্টা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ছাত্রী ও তার বাবাকে কুপিয়ে জখমও করেছে হামলাকারীরা। বাবা-মেয়েকে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতের এ ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সজীব হোসেন মোল্যাসহ তিন যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মাগুরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছাত্রীটির বাবা জানান, ২০১৫ সালে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে তাঁর মেয়েকে উত্ত্যক্ত করে আসছে প্রতিবেশী উকিল মোল্যার বখাটে ছেলে সজীব হোসেন মোল্যা (২২)। ২০১৫ সালেই সজীব মেয়েটিকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায় তাদের বাড়িতে। প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তখন একবার সজীব দলবল নিয়ে মেয়েটিকে অপহরণের চেষ্টা চালায়। প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে তারা পালিয়ে যায়। মেয়েটির বাবা এ নিয়ে মাগুরা সদর থানায় মামলা করেন। পরে সজীবের পরিবারের অনুরোধে স্থানীয় সালিস বৈঠকের মাধ্যমে মামলাটি তুলে নেন তিনি। এর কিছুুদিন পর মেয়েটিকে আবার উত্ত্যক্ত করা শুরু করে সজীব। এরই একপর্যায়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে সজীব তার ভাই নাজমুল ও অজ্ঞাতপরিচয় তিনজনকে সঙ্গে নিয়ে সদ্য এসএসসি পাস করা মেয়েটির বাড়িতে ঢুকে পড়ে। তারা তাকে অস্ত্রের মুখে অপহরণের চেষ্টা করে। বাবা মেয়েকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে দুর্বৃত্তরা তাঁকে চাইনিজ কুড়াল ও চাপাতি দিয়ে কোপাতে থাকে। বাবাকে রক্ষায় মেয়ে এগিয়ে এলে দুর্বৃত্তরা তাকেও কুপিয়ে আহত করে। মেয়েটির চিৎকারে প্রতিবেশীরা দৌড়ে এলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। প্রতিবেশীরা রাতেই তাদের মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ঘটনায় মাগুরা সদর থানায় মামলা হয়েছে।
আক্রান্ত ছাত্রী বলে, ‘দীর্ঘদিন তারা আমার পিছু নিয়েছে। এলাকায় তারা বখাটে হিসেবে চিহ্নিত। ’ কাঁদতে কাঁদতে সে আরো বলে, ‘আমি এ বছর বাড়ির নিকটবর্তী গাংনালিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছি। শহরের কলেজে ভর্তির প্রতীক্ষায় আছি। এর মধ্যে এ ঘটনা ঘটল। এখন কী হবে কে জানে!’
মাগুরা সদর হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার মমতাজ মজিদ জানান, তাঁদের দুজনের শরীরেই ধারালো অস্ত্রের আঘাত আছে। মেয়েটির পিঠে, তাঁর বাবার মাথা, হাত ও পিঠে জখম হয়েছে। অবস্থা বর্তমানে কিছুটা ভালো। মাগুরা সদর থানার ওসি (তদন্ত) হোসেন আল মাহবুব জানান, অভিযুক্ত সজীবসহ নাজমুল ও সবুজ নামের আরো দুই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে এ বিষয়ে মাগুরা মহিলা পরিষদসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে। অনেকেই হাসপাতালে বাবা-মেয়েকে দেখতে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে।
মাগুরা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী লাবনী জামান বলেন, ‘আমরা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। একই সঙ্গে আক্রান্তদের দায়ের করা ২০১৫ সালের মামলাটি কেন তুলে নেওয়া হলো, সেটির সুষ্ঠু তদন্ত করে এর পেছনে কোনো পেশিশক্তি থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। ওই মামলা সচল থাকলে দৃর্বৃত্তরা দ্বিতীয়বার অপহরণের সাহস পেত না। নিশ্চয়ই প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ চাপে ওই মামলা তুলে নিয়েছে বাদীপক্ষ। আর সেটিকে দুর্বলতা ভেবে দুর্বৃত্তরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ’
সংবাদ সূত্র : কালের কণ্ঠ