Headlines

মোনাফ কিলিং মিশনে ছিল তিনজন

কক্সবাজার

কক্সবাজারে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোনাফ সিকদারকে মাত্র তিন থেকে চার ফুট দূরত্বে দাঁড়িয়ে পেছন থেকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। হত্যাচেষ্টার ঘটনাস্থলে ছিলেন তিনজন।

কক্সবাজার

গুলি করেই দক্ষিণ দিকের একটি উপ-সড়ক দিয়ে পূর্ব দিকে পালিয়ে যান তারা।

গত ২৭ অক্টোবর রাতে কলাতলীর সুগন্ধা পয়েন্টে বিরোধপূর্ণ জমিতে গড়ে ওঠা শুঁটকি মার্কেটের সামনে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মোনাফ সিকদারকে (৩২) গুলি করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার একটি সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

সুগন্ধা পয়েন্টে প্রধান সড়কের পশ্চিম পাশের সড়কের পাশে আড়াআড়িভাবে তৈরি করা হয়েছে দুটি শুটকি মার্কেট। ঘটনার দিনের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, মার্কেটের সামনে থেকে হেঁটে প্রধান সড়ক পার হয়ে ওপারে যাচ্ছিলেন মোনাফ। এ সময় একজন তাকে থামান। মাত্র মিনিট দুয়েকের মধ্যেই পেছন থেকে একজন তাকে গুলি করে পালিয়ে যান। দুর্বৃত্তদের ছোড়া গুলি মোনাফের শরীর ছেদ করে পাশে দাঁড়ানো এক ব্যক্তির পায়ে গিয়ে বিঁধে। ওই ব্যক্তিও বর্তমানে আহত অবস্থায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

গুলি করার পর দুর্বৃত্তরা যে সড়ক দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়, সেই সড়কে বসানো সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজেও পর পর তিনজনকে পালিয়ে যেতে দেখা গেছে। তিনজনই প্যান্ট পরিহিত ছিলেন। দুজনের গায়ে সাদা, অন্যজনের গায়ে কালো শার্ট দেখা গেছে। ৩৮ সেকেন্ডের ওই ফুটেজে পর পর তিনজনকে দৌড়ে পালিয়ে যেতে দেখা যায়।

সেদিন ঘটনাস্থলে থাকা মোনাফের চাচাতো ভাই রানা সিকদার বাংলানিউজকে জানান, তিনজনকে তারা দেখেছেন, তবে কাউকে চিনতে পারেননি।

রানা বলেন, আমিসহ আমার ভাই মার্কেটের সামনে চেয়ারে বসেছিলাম। ভাইয়ের কিছু গেস্ট রাস্তার ওপারে কাঁচালঙ্কা রেস্টুরেন্টে বসেছিলেন। তাই চেয়ার থেকে উঠে রেস্টুরেন্টে যাচ্ছিলেন আমার ভাই। রাস্তা পার হওয়ার সময় মার্কেটে দোকান নিতে আসা এক লোক ভাইকে ডাক দেন। এ সময় ফুটপাতের ওপর দাঁড়িয়ে ওই লোকের সঙ্গে কথা বলার সময় দুর্বৃত্তরা পেছন থেকে গুলি করে।

তিনি আরও বলেন, আমরা ধারণা করছি, দুর্বৃত্তরা আগে থেকেই ঘটনাস্থলে এসে আমার ভাইয়ের গতিবিধি লক্ষ্য করছিল। যখনই আমার ভাই মার্কেটের ওপারে যাচ্ছে, তখন তারা এসে খুব কাছ থেকে গুলি করে পালিয়ে যায়।

রানা আরও জানান, অন্য যে লোকটির পায়ে গুলি লেগেছে, আমাদের মনে হয়েছে ওই লোকটিও দুর্বৃত্ত দলের। তিনি এখনো কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

এ ঘটনার প্রায় সপ্তাহ পার হলেও পুলিশ এখনও জড়িত কাউকে গ্রেফতার বা চিহ্নিত করতে পারেননি বলে জানান রানা।

তবে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনীর-উল-গিয়াস মামলাটির তদন্ত কাজ চলছে জানিয়ে বলেন, ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ আমরা সংগ্রহ করেছি। যারা গুলি করেছে তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।

মোনাফ সিকদারের বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ আছে জানিয়ে জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ আটটি মামলা আছে।

ঘটনার তিনদিন পর গত রোববার (৩১ অক্টোবর) কক্সবাজার সদর মডেল থানায় পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করে হত্যাচেষ্টা মামলা করেন মোনাফের বড় ভাই মো. শাহজাহান। একই মামলায় দুই নম্বরে অভিযুক্ত করা হয় জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরীকে।

এ মামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই দিন বিকেল থেকে রাত পৌনে ১০টা পর্যন্ত শহরজুড়ে অরাজকতা সৃষ্টি করেন মেয়রের অনুসারীরা। তারা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কক্সবাজার শহরের বিভিন্নস্থানে বিক্ষোভ, টায়ার জ্বেলে সড়ক অবরোধসহ শহরজুড়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি করেন। এতে শহরজুড়ে এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। চরম দুর্ভোগে পড়েন অন্তত ৫০ হাজার পর্যটক।

এ হত্যাচেষ্টা মামলায় অভিযুক্ত কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান এ ঘটনায় সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে বলেন, ঘটনার দিন আমি এলাকায় ছিলাম না। মূলত সামনে দলের কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে দলের কিছু নেতার ইন্ধনে মামলাটি হয়েছে।

মামলার পেছনে রামু-কক্সবাজার (কক্সবাজার-৩) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল ও চকরিয়া-পেকুয়া (কক্সবাজার-১) আসনের সংসদ সদস্য মো. জাফর আলমের হাত রয়েছে বলে ইঙ্গিত দেন মেয়র মুজিবুর রহমান।

তবে তার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দুই সংসদ সদস্য। মেয়রের অভিযোগ সম্পর্কে কক্সবাজার-১ আসনের সাংসদ জাফর আলম বলেন, আমি সারাক্ষণ চকরিয়া-পেকুয়ায় পড়ে থাকি। জড়িত কেউ ধরা পড়লেই এ ঘটনার গডফাদার কে তা বের হয়ে যাবে।

কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বাংলানিউজকে বলেন, অপরাজনীতি আমার আদর্শ নয়। আব্দুল মোনাফ সিকদারকে গুলি করার ও তৎপরবর্তী মামলা হওয়ার সময়ে আমি রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে ছিলাম। এ সময় এ বিষয় নিয়ে কারো সঙ্গে আমার যোগাযোগই হয়নি। মামলা পরবর্তীতে মেয়রের বক্তব্যে আমি বিস্মিত হয়েছি।

তিনি বলেন, মেয়র সবসময় অন্যের শিখিয়ে দেওয়া কথা বলেন। কক্সবাজারের ভূমি অধিগ্রহণে হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির খবর জাতীয় পত্র-পত্রিকাসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে। এ ঘটনায়ও দুদকের অনুসন্ধানের সময় মেয়র ও তার কয়েকজন সঙ্গী আমাকে দোষারোপ করেন। অথচ সে বিষয়ে আমার কোনো ভূমিকা ছিল না।

স্থানীয়রা বলছেন, এই বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে শহরের সুগন্ধা পয়েন্টের ১ একর ১০ শতক জমির দখল নিয়ে। ওই জমির প্রকৃত মালিক চকরিয়া উপজেলার পূর্ব বড় ভেওলা এলাকার ওমর মিয়ার স্ত্রী সায়রা খাতুন। জমিটি নিয়ে একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। তবে প্রভাব খাটিয়ে বর্তমানে জমিটির অর্ধেকের দখল আছে মেয়রের অনুসারী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরোয়ার কাবেরী ও আতাউল্লাহ সিদ্দিকীর। বাকি অর্ধেকে আছেন সুগন্ধা শুঁটকি মার্কেট নির্মাতা ওবাইদুল হোসেন ও মোনাফ সিকদাররা।

জমিটি নিয়ে যাদের মধ্যে মামলা-হামলার ঘটনা ঘটছে তারা কেউই ওই জমির প্রকৃত মালিক নন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

খবরটি বাংলানিউজ পত্রিকায় ৪ নভেম্বর (২০২১) প্রকাশিত হয়।