সাঁওতাল উচ্ছেদ হলেও এমপির ১৫ পুকুর অক্ষত : নির্মূল কমিটি

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে রংপুর চিনিকলের জমি থেকে সাঁওতালদেরকে উচ্ছেদের ঘটনায় স্থানীয় সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ ও উপজেলার চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ হাত আছে বলে অভিযোগ করেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। তারা জানায়, সাঁওতালদের উচ্ছেদ করা হলেও চিনিকলের ওই এলাকায় জায়গায় সংসদ সদস্যের ১৫টি পুকুর রয়েছে।

দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ করে নির্মূল কমিটি। গত ৬ নভেম্বর  ওই জমি থেকে সাঁওতালদের শতাধিক বাড়িঘর উচ্ছেদ করা হয়। এ সময় তাদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। অভিযানে মৃত্যুও হয় তিন জনের।

সাঁওতালদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে জমিটি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল পাকিস্তান আমলে। তখন শর্ত ছিল, এই জমিতে চিনি কলের জন্য আখ চাষ হবে। কিন্তু অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করে জমি ফিরে যাবে সাঁওতালদের মালিকানায়।

চিনিকল কার্যত বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ওই জমিতে ঘর তোলে সাঁওতালরা। তাদেরকে বারবার উচ্ছেদের চেষ্টা হলেও ব্যর্থ হয় প্রশাসন। তবে গত নভেম্বরে অভিযানে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয় দেশ জুড়ে।

এই ঘটনার তদন্তে আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শামসুল হুদার নের্তৃত্বে একটি দল পাঠায় নির্মুল কমিটি। কমিটির স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে সেখানে গণশুনানিও করে তারা। এই অভিজ্ঞতাই সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়।

বিচারপতি শামসুল হুদা বলেন, ‘গোবিন্দগঞ্জের হামলায় এমপি ও চেয়ারম্যানের জড়িত থাকার বিষয়টি মদদ ছিল স্পষ্ট।’ তিনি বলেন, ‘চুক্তিতে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে আখ চাষ না হলে সে জমির মালিকদের ফেরত দিতে হবে। কিন্তু দেয়া হচ্ছে না।’

বিরোধপূর্ণ জমিতে কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার সমালোচনা করে শামসুল হুদা বলেন, ‘এটা কি বাংলাদেশ-ইন্ডিয়ার বর্ডার যে তারকাটা দিয়ে বেড়া দিতে হবে। এটা মানবাধিকারের চরম লংঘন।’

চিনিকলের জায়গায় সাঁওতালদের উচ্ছেদের পর স্থানীয় সংসদ সদস্যের ১৫টি পুকুর থাকার ঘটনাটি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন শামসুল হুদা। বলেন, প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না।

নির্মূল কমিটির এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে স্থানীয় সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের দুটি নম্বরেই ফোন করা হয়। এর একটি বন্ধ পাওয়া যায়। অন্যটিতে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা ধরেননি।

সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবিরও। তিনি বলেন, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের বিচার হচ্ছে না। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জামায়াত মনোভাবে কর্মকর্তাদের কারণেই এমনটা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন করা, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন এবং আলাদা সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠনের দাবিও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘২০১২ সালে রামুতে সংঘঠিত সাম্প্রদায়িক হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা যায়নি।’ তিনি বলেন, ‘হামলাকারী যে দলেরই হোক না কেন, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আমরা দাবি করেছিলাম। দাবি করেছিলাম তাদের সম্পত্তি যেন বাজেয়াপ্ত করা হয়। কিন্তু কোনোটাই তো হয়নি বরং তারা পুলিশের দুর্বল চার্জশিটের কারণে সবাই জামিনে বেড়িয়ে গেছে। হামলার শিকাররা মামলা প্রত্যাহারও করে নেয়।’

শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘আমরা একই দৃশ্য দেখতে পাচ্ছি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর ও গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে।’

শাহরিয়ার কবির বলেন, নাসিরনগরে মাদ্রাসা থেকে মৌলীবাদিরা ও হেফাজতিরা সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়েছে। ব্যবহার করেছে বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে।’

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর হামলার নিন্দা জানিয়ে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘জামায়াত ও পাকিস্তান মিলে রোহিঙ্গাদের ব্যবহারের চেষ্টা করছে। জামায়াত রোহিঙ্গাদের তালিকা করে জিহাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করছে। ২০০৬ সালে এরকম ১৭টি জিহাদি সংগঠনের কথা প্রকাশ করা হয়েছিল বলেও উল্লেখ করেন শাহরিয়ার।’

ইসলামী ব্যাংক জঙ্গিদের জিহাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে অভিযোগ করে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘জামায়াতের নিয়ন্ত্রণে ও পাকিস্তানে বসে থাকা কুদ্দুসের নেতৃত্বে হরকাতুল জিহাদ আরাকান সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।’

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপদেষ্টা বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় সদস্য আরমা দত্ত, কলামিস্ট মাহবুবুর রশিদ, লেখক আলী আকবর।

#ঢাকাটাইমস/