একটি ‘জারজ ডিপার্টমেন্ট’ এবং আমি এক মন্দ ছাত্র

follow-upnews
0 0

অনেক দিন ধরে লেখাটিতে হাত দেওয়ার কথা ভাবছি, কিন্তু নানান ব্যস্ততায় হয়ে উঠছিল না। অবশেষে জীবন-জীবীকার ফাঁকে ফাঁকে লেখাটি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। একটি চ্যাপ্টার ডিঙ্গিয়ে লেখাটি শুরু করলাম। চ্যাপ্টারটি বই বের করার সময় যোগ করা যাবে।

ডিপার্টমেন্টটির বয়স তখন দশ বছর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক সান্ধ্য কোর্সের মত এটিও তখন সান্ধ্য কোর্স। ডিপ্লোমা করানো হয়, পাশাপাশি প্রতি বছর দুই বছর মেয়াদী মাস্টার্স কোর্সে পঁচিশ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়। ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়। ভর্তি পরীক্ষাটি হয় লিখিত এবং ভাইভা আকারে। লিখিত এবং ভাইভা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তবেই একজন শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারে। এখানে প্রফেশনাল এবং ফ্রেসার উভয় প্রকার শিক্ষার্থী বাছাই করা হয়। ছেলে মেয়ের একটি অনুপাতও বিবেচনায় নেওয়া হয়।

চান্স পেয়ে আমি ভর্তি হয়েছিলাম। খুব জনপ্রিয় কোনো ডিপার্টমেন্ট নয়, তাই চান্স পাওয়া খুব শক্ত তাও নয়। তারপরেও তিন/চারশো পরীক্ষার্থীর মধ্য থেকে পঁচিশ জন মাত্র বাছাই করলে যেমন ডিপার্টমেন্টই হোক চান্স পেয়ে এক ধরনের ভাললাগা কাজ করবেই। তবে পড়াশুনাটা যেহেতু ফ্রি নয়, তাই দুশ্চিন্তা ছিল সব সময়। ভাবনার বিষয় ছিল- শূন্য হাতে অন্য সব ঝামেলার সাথে আরেকটি ঝামেলা যোগ করছি না তো? যাইহোক টাকা পয়শা ম্যানেজ করে শেষ পর্যন্ত ভর্তি হয়েছিলাম। দুই বছরে আশি হাজার টাকা আমার জন্য বোঝার উপর শাঁকের আটি নয়, তা ছিল সেরের উপর সোয়া সের। তবুও তখন আমার জ্ঞানশূন্য সময় চলছিল বলে অতসব ভাবনার সুযোগ ছিল না। তাছাড়া এক্ষেত্রে সামনে মূলা ঝুলানোও ছিল। ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম দশ জনকে মাসে দুই হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা ছিল। তাছাড়া পরীক্ষার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে সম্ভবত পাঁচ জনকে সত্তর হাজার টাকা বৃত্তি দেওয়ার ঘোষণাও ছিল। ভেবেছিলাম ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম দশজনে নিশ্চয়ই আছি, তাই প্রথম বৃত্তিটা অন্তত পাওয়া যাবে। সত্যিকারঅর্থে আমি পড়াশুনার ইচ্ছে নিয়েই গিয়েছিলাম, তাই সত্তর হাজার টাকার প্রতিও আমার ঝোঁক ছিল। কিন্তু কয়েকদিন ক্লাস করেই বুঝলাম এখানে স্বেচ্ছাচারিতা এবং অস্বচ্ছতা প্রতি পদে পদে। কখনই ভর্তি পরীক্ষার মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়নি। দুই হাজার টাকা করে দেওয়ার জন্য দশজনকে বাছাই করা হয়েছে পরিচালক মহোদয়ের আস্থাভাজন দশজনকে। পরিচালকই সর্বেসর্বা, চেয়ারম্যানের কোন বেল নাই, অন্য শিক্ষকরাও নীরব। নিশ্চয়ই নীরবতার কারণ ছিল। একটা কারণ ছিল মি. পরিচালক বিভাগটি খুলেছিলেন তার চ্যালাবেলাদের নিয়ে, পাশাপাশি অর্থের ভাগ বাটোয়ারাও নিশ্ছয়ই তিনি করতেন প্রয়োজনমত।

ডিপার্টমেন্টটি ইউএনএফপি এর অর্থায়নে এবং আনুকূল্যে অনেক ধরনের ব্যয় বহন করত। বিভিন্ন কর্মসূচী বিভাগ থেকে হাতে নেওয়া হত। সেখানে পরিচালক মহোদয় ভালো রেজাল্ট এবং বৃত্তির মূলো ঝুলিয়ে খাটাতে চাইতেন শিক্ষার্থীদের, খাটাতেনও। কর্মসূচীগুলো ছিল মূলত গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানের মত। পার্থক্য বলতে- অনুষ্ঠানের স্থানটা পুরনো ঢাকার কোনো ছাদে না হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে হত, এবং গানা বাজনার পরিবর্তে প্রজেক্টরে পেপার ওয়ার্ক দেখানো হত। শেষে খানাপিনা। পরিচালক মহোদয় চাবিয়ে চাবিয়ে ইংরেজি বলতেন, ভীনদেশীদের তোষণ করতেন, তোষণ করতেন আগত অতিথীদেরও।

আসলে কর্মসূচী মানেই টাকা বরাদ্দ হওয়া, তারপর ভাগ বাটোয়ারা। যাইহোক দুই মাসের মধ্যেই আমার ‍বিতৃষ্ণা চলে আসলো। কোন কিছু গেইন করার জন্য চোরের সাক্ষী গাটকাটা হতে আমি অপারগ। কয়েকদিন চেষ্ঠা করলাম না তা নয়, বুঝতে চাইছিলাম- আমি ভুল করছি না তো, নায়ককে ভিলেন ভাবছি না তো? দেখলাম না, ইনি যতেষ্ট অভিজ্ঞ ভিলেন। উপর থেকে লাথি খেয়ে নিচে সেটি ট্রান্সফার করতে উনি ওস্তাদ। আবার উপরে যে তেল দিতে হয় নিচ থাকে উনি তা সংগ্রহ করে রাখে প্রয়োজনের তুলনায় শতগুণ।
– চলবে।

Next Post

সিরিজের নাম: রোজ একটি শব্দ

সিরিজের নাম: রোজ একটি শব্দ আজকের শব্দ: Panegyric (Noun) উচ্চারণ: প্যানিজিরিক Meaning: A panegyric is a formal public speech, or written verse, delivered in high praise of a person or thing. অর্থ: প্রশংসাসূচক বক্তৃতা যেমন: A speech praising a new political theory is an example of a panegyric. synonyms: laudatory, […]