পিরোজপুর টু খুলনা রুটের বাসের বাম পাশের সব সিট মহিলাদের জন্য বরাদ্দ। সিট ফাঁকা থাকলে বসা যাবে, তবে কোনো মহিলা থাকলে ছেড়ে দিতে হবে। নিয়ম যে খুব কড়াকড়ি মানা হয়, তা নয়, তবে এটাই নিয়ম।
বাসের বাম পাশে সিটের উপরে ‘মহিলা’ লেখা আছে, ছোট্ট একটি ছবিও আঁকা আছে। কেউ উঠতে না চাইলে কর্তৃপক্ষের (ড্রাইভার-কন্ড্রাকটর-হেলপার) দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়। ঘাড়তেড়া কেউ কেউ খানিকক্ষণ মৌখিক ধস্তাধস্তি করে, শেষে উঠে যায়।
সজল জায়গা পেয়ে এরকম একটি সিটে বসেছে। পাশে একটি সিট ফাঁকা রয়েছে। পরের স্টপেজে একজন মহিলা উঠে ফাঁকা সিটটিতে বসেছে। সিটগুলো খুব বড় নয়, দু’জন পাশাপাশি বসলে একটু ছোঁয়া লাগা অস্বাভাবিক নয়, তাছাড়া সব পুরুষরাই সুযোগ নিতে চায়।
যৌবনের ছাপ নারীর সর্বাঙ্গে থাকে। যদিও মহিলা অনাবৃত নয়, তবু বোঝা যাচ্ছে–বয়স তার পঁচিশের মধ্যে। সজল কিছুটা অস্বস্তিবোধ করে। বেশিরভাগ পুরুষেরই উর্বশী কোন নারীর পাশে বসলে এক ধরণের কামুক অস্বস্তি হয়, এটা পুরুষের কমন ডিজিজ। চল্লিশের কোটায় পা দেয়া সজলেরও সেরকম অস্বস্তি হচ্ছে।
মেয়েটি সজলকে ভ্রক্ষেপ করছে না, বরং স্বাভাবিকভাবেই বসেছে, একজন পুরুষ পাশে বসলে মেয়েরা যেমন একটু কুণ্ঠিত হয়ে বসে মহিলাও ঠিক সেভাবেই বসেছে। সজল চাপতে পারছে না। জানালার পাশে এক ইঞ্চি জায়গাও আর অবশিষ্ট নেই।
মহিলার নিতম্বের পার্শ্বদেশের চাপ বাসের ঝাঁকুনিতে মাঝে মাঝে স্পষ্ট হচ্ছে। সজলের ইচ্ছাকৃত নড়াচড়ায় স্পর্শানুভূতিও চালু হয়েছে। মহিলা নির্লিপ্ত থাকে, গভীর মনোযোগ মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছে সে।
সজলের অস্বস্তি কামোদ্দিপ্ত অস্থিরতায় পরিণত হয়। যেহেতু অন্তত অর্ধেক পুরুষ মহিলাদের সাথে এরকম সুযোগে ‘দুর্ব্যবহার’ করে, তাই সজল এক্ষেত্রে যথাসম্ভব সংযত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েও শেষ পর্যন্ত নিজেকে আটকাতে ব্যর্থ হয়।
ও মেয়েটির দিকে সরে আসতে চায়। সে বিরক্তি প্রকাশ করে না–বাধা দেয় না। সজল লাই পায়, ডান হাতটা একটু একটু করে সচল করে, সে বাধা দেয় না। আষাঢ়ের মাঝামাঝি সময়–সারাটা দিন টিপটিপ বৃষ্টি হয়ে কিছুক্ষণের জন্য থেমেছিল একবার। আবার জোরে বৃষ্টি হচ্ছে, সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া। এমন সময় প্রত্যেকটি মানুষ একটু আনমনা হয়। পিছলা রাস্তায় বাস চলছে সাবধানে। গন্তব্যে পৌঁছাতে আরো ঘণ্টাখানেক লাগবে। সজল হাত সরানোর ভাণ করে মেয়েটির উরুদেশে একটা চাপ দেয়, মেয়েটি পাশ ফিরে তাকায়। সজল কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে সরে বসে। মেয়েটি সজলের গন্তব্য জানতে চায়।
একটু কথা হওয়াতে দু’জনেই কিছুটা স্বস্তি বোধ করে। ছোঁয়াছুঁয়িও বন্ধ হয়। পরিচিতিপর্ব শেষ করে ওরা গল্প জুড়ে দেয়। মেয়েটি বর্ষকাল দিয়েই গল্পের একটি প্রসঙ্গ তৈরি করে। বর্ষাকাল তার ভালো লাগে না, বাড়িতে যেতে খুব অসুবিধা হয়, শহরেও ভাল লাগে না, একা একা লাগে ইত্যাদি।
বাসের মধ্যে সাবধানে গল্প করতে হয়, যেহেতু সকল যাত্রী অলস সময় কাটায়, তাই অনাকাঙিক্ষত শ্রোতাদের কথা মাথায় রেখেই গল্প ফাঁদতে হয়। কথা দিয়ে বিশেষ কিছু বুঝানোর সুযোগ থাকে না। আকার ইঙ্গিতে যতটুক বুঝানো যায়।
বোঝাপোড়া কিছুটা তো এতক্ষণে হয়েই গিয়েছে। দু’জনেই সুযোগ পেলে দেহবাদী, সেটি দু’জনের কাছে অজানা নেই আর। এখন একজন এগিয়ে আসলেই হয়। বাস থেকে নেমে ওরা পাশাপাশি হাঁটতে থাকে। রূপসা ফেরি পার হতে হবে। ওখানে ফেরি নেই এখন, লোক পারাপারের জন্য ট্রলার চলে। ট্রলারে ওরা চুপ থাকে। অপরিচিতের মতই যার যার ভাড়া মিটায়।
খেয়া পার হয়ে যে যার মত রিকশা নিয়ে চলে গেলে অস্থিরতা হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে পারত। সজল তা হতে দিল না। হঠাৎ মেয়েটির হাত ধরল ও। কোমল স্পর্শে নরম হাত ধরে হাঁটতে থাকল কিছু পথ। মেয়েটির শিহরণ দেখে মনে হচ্ছে এ অভিজ্ঞতা হররোজ তার হয় না। সজল হিসেব না মিলিয়ে উপভোগে মন দেয়। একটা রিকশা ডেকে দু’জনে উঠে বসে। গন্তব্য বলেছে, হাদিস পার্ক। খুলনার হাদিস পার্ক এমন কোনো পার্ক নয়, তবে কিছু সময় কাটানোর জন্য জায়গাটা খারাপও না। পুকুর ঘেষা একটি বেঞ্চে বসে দীর্ঘদিনের প্রেমিক-প্রেমিকার মত বাদাম খেতে খেতে নানান গল্প করতে থাকে ওরা।
ওদের গল্পের বিষয়গুলো মামুলি। ঘণ্টাখানেক শান্ত সময় কাটায়। এর মধ্যে মেয়েটির হাতের উপর বিলি কাটা ছাড়া আর কোনো দুষ্টুমি সজল করেনি। এবার ওঠার পালা। কে সভা ভঙ্গ করবে? মেয়েটি বিদায় নিতে চাইল। সজল একটি চুমু খেতে চাইলে বাধল বিপত্তি। কোনো অনাবৃত অংশ খুঁজে না পেয়ে মেয়েটির হাতের পিঠে চুমু দিয়ে রাখল অনেকক্ষণ। ও চোখ বুঝে ছিল তখন।
সজল ওকে বাসায় নিতে চাইল। রাজি হয় না। দু’জনে চুপচাপ আবার কিছুক্ষণ বসে থাকার পর মেয়েটি সজলকে ওর বাসায় পৌঁছে দিতে বলল। রিকশায় উঠতেই আবার বৃষ্টি পড়ে। চালক ত্রিপল দিলে ভাগাভাগি করে খুল নেয় ওরা। ত্রিপল দিয়ে গলা পর্যন্ত ঢেকে নেয় সজল। কিছু পথ না যেতেই দু’জন উদ্দিপ্ত নারী পুরুষ অবশ্যম্ভাবীভাবে জড়িয়ে পড়ে বিনামূল্যে প্রাপ্ত অমূল্য সুখে।
রিকশা থেকে নেমে সজল ভাড়া মিটিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। মেয়েটি ওকে ইশারায় ডাকে। সজলকে একটু দুরত্বে পিছনে হেঁটে ফলো করতে বলে। বলে রাখে, বাড়ি ঢোকার মুহূর্তে কেউ দেখে ফেললে বা বিশেষ কোনো প্রশ্ন করলে সজল যেন অবশ্যই ফিরে যায় এবং কোনো খোঁজ করার চেষ্টা আর না করে।
একটি একতলা বাসা দেখিয়ে নিজে আগে গেট দিয়ে ঢুকে যায় ও। সজল অনুসরণ করে। বাসার পিছনে একটি টিনের ঘরে সবাইকে আড়াল করে ঢুকে পড়ে ওরা। সন্ধ্যার সময় টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছে, কেউই বিনা কারণে বাসার বাইরে নেই। কেউ দেখেনি বলে দু’জনেই স্বস্তি পায়।
মেয়েটি ওকে মাথা মুছতে বলে, গামছা দেয়। সজল মাথা মুছে নেয়। চা খাবে কিনা জিজ্ঞেস করে। সজল বলদের মত নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকে।
– রাস্তায় এত জ্বালালেন, আর এখন একেবারে চুপসে গেছেন যে?
– আচ্ছা, আপনি আমাকে কতদিন ধরে চেনেন?
– তিন ঘণ্টা ধরে।
– এমনভাবে আমাকে গামছা পৌঁছে দিলেন যেন আমরা কতকাল একসাথে আছি!
– এই হল পুরুষের সমস্যা। স্বাভাবিক ব্যাপারটাকে তারা স্বাভাবিক ভাবতে পারে না। অথচ অস্বাভাবিক আচরণ করছেন শুরু থেকেই। আপনার মাথা ভিজে আছে, মোছার জন্য গামছা দিছি। খুব স্বাভাবিক ব্যাপার নয় কি এটা?
– ঠিক আছে।
– বসেন, চা বানাচ্ছি। বসা এবং শোয়ার জায়গা একই। দুটো খাটে আমরা দুই বান্ধবী থাকি। ক’দিন হল ও বাড়ি গিয়েছে। আমিও কালকে বাড়ি যাব। যে কোনো একটা খাটে বসে পড়েন।
– সজল হতভম্ভ হয়ে যায়। ঘরে এসে মেয়েটা আচরণ বদলে ফেলেছে।
– আপনি একঘণ্টা আমার এখানে থাকতে পারবেন। আলতু ফালতু যা বলতে চান এই সময়ের মধ্যেই বলতে হবে। মেয়েটি চায়ের পানি উনোনে দিয়ে কাপ ধুতে ধুতে কথা বলতে থাকে।
– আমি কি আপনার চা বানানোর কাজে সাহায্য করতে পারি?
– চা একাও বানানো যায়। তবে যা করতে চাচ্ছেন তা একা করা যায় না।
সজল উঠে এসে মেয়েটিকে কোমর ধরে দাঁড় করায়। পোশাকে হাত পিছলে যায়। ভিতরটা ধরা যায় না সহজে। মেয়েটি নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে চা বানানোর ফুসরত চায়। অদৃশ্য আহ্বানে চায়ের পাঠ অতি দ্রুত শেষ হয়।
সজল মেয়েটির মুখ দেখতে চায়। মেয়েটি আচমকা সজল মুখে সজোরে থাপ্পড় মারে। হুংকার দেয়–
– তুই জানিস না যে পর পুরুষরে মুখ দেখাতে নেই? তুই কি আমারে বিয়ে করেছিস? তুই কি আমার স্বামী? তোরে আমি মুখ দেখাব কেন? বটি হাতে নিয়ে উদ্ধত হয়। গলার উপরে হাত দিলে কোপ খাবি।
সজল দু’পা পিছিয়ে এসে ধপাস করে খাটের উপর বসে পড়ে। অপমানে মাথা নিচু করে নিজের পায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।
মেয়েটি উন্মাদিনীর মত এগিয়ে এসে সজলের চুলের মুঠি ধরে মাথাটা বুকের সাথে চেপে রাখে। চিৎকার করে বলে, ভালবাসতে পারবি? সজল অন্ধ হয়ে বুকের সাথে লেপ্টে থাকে। ও আবার চুল ধরে সজলকে জাগিয়ে তুলে চোখে চোখ রাখে। মোলায়েম হয়ে সজলের মুখে হাত বুলাতে থাকে। ভালবাসার ভঙ্গিতে দু’হাতে মাথা জড়িয়ে বুকে নেয়।
– একটা কথা বল তো, দেহের সুখ পেতে ভালবাসার কী কোনো দরকার আছে তোর? তোদের দরকার নেই জানি, কিন্তু অবোলা নারীরা তা পারে না। সত্যি পারে না, নাকি তোরা পারতে দিস না?
আচ্ছা, একবার সঙ্গম করে সুখ পেতে মুখ দেখারই বা কি দরকার? দেহ পছন্দ হয়েছে দেহের সাথেই থাক। মুখ দেখলে অপছন্দ হতে পারে। তাছাড়া মুখ দেখালে তো তুই আমারে চিনে রাখবি, কখনো দেখলে নষ্ট মেয়ে বলবি। বলবি না? মুখে চুমো খাওয়ার কী দরকার? থাপ্পড় দিয়েছি বলে রাগ করিসনে। কারো সামনে তো দিইনি।
তোরা তো বেশ্যার লাথি খেতেও রাজি, যদি কেউ না দেখে, ভুল বলেছি কিছু? নে, মুখাবয়ব বাদে দেহের সব জায়গা তোর কাছে সঁপে দিলাম। চেটেপুটে খা। হবে না এতে তোর? ঘড়ি ধরে কাজ করবি। ঠিক আধা ঘণ্টা পরে বেরিয়ে যাবি। নিজ দায়িত্বে বেরিয়ে যাবি। ধরা পড়লে আমাকে পাশে পাবিনে। আমি অস্বীকার করব। আমি সতী-ই থাকব, তোরা যেমন সৎ থাকিস। তোরে চিনি না বলব।
সজলকে এক ছটকায় ঠেলে দিয়ে গলা পর্যন্ত কাপড় খুলে ফেলে মেয়েটি। টগবগে যৌবনের উন্মত্ত এক তরুণী, এখন উন্মাদিনি। ছাই চাপা আগুন যেন।