মাঠ থেকে মাঠে-মাঠে—সমস্ত দুপুর ভ’রে এশিয়ার আকাশে-আকাশে
শকুনেরা চরিতেছে; মানুষ দেখেছে হাট ঘাঁটি বস্তি; নিস্তব্ধ প্রান্তর
শকুনের; যেখানে মাঠের দৃঢ় নীরবতা দাঁড়ায়েছে আকাশের পাশে
আরেক আকাশ যেন—সেইখানে শকুনেরা একবার নামে পরস্পর
কঠিন মেঘের থেকে; যেন দূর আলো ছেড়ে ধূম্র ক্লান্ত দিক্হস্তিগণ
প’ড়ে গেছে—প’ড়ে গেছে পৃথিবীতে এশিয়ার খেত মাঠ প্রান্তরের পর
এই সব ত্যক্ত পাখি কয়েক মুহূর্ত শুধু; আবার করিছে আরোহণ
আঁধার বিশাল ডানা পাম গাছে—পাহাড়ের শিঙে-শিঙে সমুদ্রের পারে;
একবার পৃথিবীর শোভা দেখে, বোম্বায়ের সাগরের জাহাজ কখন
বন্দরের অন্ধকারে ভিড় করে, দ্যাখে তাই; একবার স্নিগ্ধ মালাবারে
উড়ে যায়—কোন্ এক মিনারের বিমর্ষ কিনার ঘিরে অনেক শকুন
পৃথিবীর পাখিদের ভুলে গিয়ে চ’লে যায় যেন কোন্ মৃত্যুর ওপারে;
যেন কোন্ বৈতরণী অথবা এ-জীবনের বিচ্ছেদের বিষণ্ণ লেগুন
কেঁদে ওঠে…চেয়ে দ্যাখে কখন গভীর নীলে মিশে গেছে সেই সব হূন।
জীবনানন্দ দাশ (ফেব্রুয়ারি ১৮, ১৮৯৯ – অক্টোবর ২২, ১৯৫৪; বঙ্গাব্দ ফাল্গুন ৬, ১৩০৫ – কার্তিক ৫, ১৩৬১) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক, প্রাবন্ধিক। তাকে বাংলাভাষার “শুদ্ধতম কবি” বলে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অগ্রগণ্য।