ছোটগল্প: মেয়েটি

follow-upnews
0 0

ফিরে তাকালো মেয়েটি…

হাত ইশারায় বলল পিছু পিছু চলেন।

খুব বেশি রাত হয়নি তখনও। ১০টার একটু বেশি। যেখানে মেয়েটি দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে আরও কিছু মেয়ে ছিল। এই মেয়েটাকে আমার সবার থেকে একটু ভিন্ন মনে হচ্ছে, মনে হচ্ছে সে একটু আলাদা স্বভাবের। আমার দিকে তাকিয়ে কেমন যেন অদ্ভুতভাবে তাকাচ্ছে নীল রংয়ের ওড়না পরা মেয়েটি।

আড়চোখে তাকালাম মেয়েটির দিকে, ওরা চোখের চাউনিতে চিনে নিতে পারে খদ্দের। চোখে এক ধরনের ইশারা থাকে। খদ্দেররাও বুঝতে পারে।

মেয়েটি ধীরে ধীরে আমার দিকে একটু এগিয়ে আসলো। আমি কিছু বলতে চাইলাম। অস্পষ্ট স্বরে বলেই ফেললাম- নাম কি তোমার?

মেয়েটি আরও একটু কাছে এসে বেশ সুন্দর একটা ভঙ্গি করে বলল, নি-পা।

বেশ সুন্দর নাম তো আপনার! মেয়েটি আরও একটু কাছে আসল। ব্যস্ত স্বরে বলল, সময় একদম নেই আমার হাতে। ইতোমধ্যে আশপাশের লোকজন বার বার তাকাচ্ছিল। আচমকা প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম, আচ্ছা, নিপা রেট কত তোমার?

এবারে নিপা একটু হাসল, একটু লজ্জা পেলেও কিছু বলল না। সে শিখেছে, জীবিকার জন্য লজ্জা করতে নেই। অন্যদিকে তাকিয়ে সে বলল, দুশো।

আমি ততক্ষণে বিষয়টি সব বুঝে গেছি। কথা না বাড়িয়ে মাথা নেড়ে সায় দিলাম। মাত্র দুশো টাকা! মন্দ না।

মেয়েটি হাত ইশারায় তার পিছু নিতে বলল। আমি কোনো বিলম্ব না করে মেয়েটির পিছু নিলাম। মুহূর্তের মধ্যে অন্ধকার একটা গলিতে ঢুকে পড়লো মেয়েটি, স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি জোরে হাঁটতে থাকল সে। আমি তার পিছু পিছু চললাম।

কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসলাম একটি অন্ধকার রুমে–যেখানে ফ্যানের শব্দটা খট খট করে চলছে তো চলছেই। রুমে ঢুকেই নিপা বিছানায় পা তুলে বসলো, আমি চেয়ারে পা তুলে বসলাম, আমি চেয়ারে বসলে সবসময় পা তুলে দিই। নিপা আমার দিকে তাকিয়ে একটু লজ্জার স্বরে বলল, টাকাটা দেন। তারপর কাছে আসুন সোহাগ করি।

আমি মানিব্যাগ থেকে পাঁচশো টাকার একটা নোট নিপার হাতে দিয়ে বললাম, এখানে পাঁচশত টাকা আছে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম, আমার কোনো সোহাগ লাগবে না। আমি এসেছি আপনার সাথে কিছু কথা বলতে।

খুব বেশি অবাক না হয়ে নিপা জিজ্ঞেস করলো, এসব আর নতুন কি? বলুন কি জানতে চান। ও কাঁপতেছিল তখন। আমি বললাম, ভয় পাবেন না, আপনি বসুন। কতদিন যাবত এ পেশাতে আছেন? একথা বলায় বেশ একটা ধাক্কা খেল নিপা, কিছু আর বলল না সে।

ভাবলাম, হতে পারে সে নিজে আসতে চায়নি এখানে। কেনই বা এসেছে তাহলে? কেন সে আমার প্রশ্ন শুনে বিষন্ন হচ্ছে?

মুহূর্তেই ভুলে গেলাম সব।

আচ্ছা নেহা কি এখন বিষন্ন? নেহা কি এখন মন খারাপ করে বসে আছে? ভাবছে কি আমার কথা? কি করছে এখন সে? নেহার কি আমার কথা মনে পড়ে? মনে পড়ে কি তার সাথে আমার দীর্ঘ ৫ বছরের সম্পর্কের কোনো কথা? নেহা কি ভুলে গেছে আমার সাথে তার কাটানো সময়গুলো—কলেজের বারান্দায় বা কলেজের মাঠে? গভীর থেকে গভীর রাত অবধি ফোনে কথা বলা অতঃপর কথা শেষ না হওয়ায় রাগ করে ঘুমিয়ে পড়া। সবকিছু ভুলে গেছে কি ও? না! এভাবে ও সব কিছু ভুলে যেতে পারে না।

কিছু ভাবছেন বুঝি? বলে উঠলো নিপা।

ওর কথা ঠিক আমার কানে ঢুকেও ঢুকলো না।

জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। রাত বাড়ছে, চাঁদের আলো এসে পড়ছে রুমের এক কোণায়। আজ চাঁদটাকে খুব সুন্দর লাগছে। আমি চাঁদের আলোয় নিজেকে হারিয়ে ফেললাম, আহ! নেহার হাতে হাত রেখে কত রাত অবধি হাঁটতাম, দীঘির পাড়ে বসে গল্প করতাম। চাওয়া-পাওয়ার গল্প। সাথে থাকার গল্প, পাশে থাকার গল্প আরও কত গল্প। নেহার কি এগুলো মনে পড়ে না? নেহা কি সত্যি এসব ভূলে গেছে।


মেহেদি হাসান

Next Post

নগর ভবনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

প্রাণতোষ তালুকদারঃ  নগরাঞ্চলের দুর্যোগ সহনশীলতা বৃদ্ধি প্রকল্প নিয়ে ৩৩, ৩৮, ৪৭, ৪৯ নং ৪টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরগণদের সভাপতি পদ মর্যাদা দিয়ে সকলের সহযোগিতা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে নগরাঞ্চলের দুর্যোগ সহনশীলতা বৃদ্ধি প্রকল্প ও প্রকল্প অবহিতকরণ করা হইয়াছে। আজ ১২/১২/২০১৭ইং রোজ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় রাজধানী ঢাকার নগর ভবনের (ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন) সভাকক্ষে দুর্যোগ […]
দুযোগ ব্যবস্থাপনা