আপনাদের লজ্জা লাগে না?
১
পুলিশের কোনো বড় কর্তা
যখন মুখে আমার প্রিয়তমার হাসি নকল করে কয়,
আইন শৃঙ্খলা সব কন্ট্রোলে আছে।
আপনাদের লজ্জা লাগে না?
ঐ পুলিশ বেটার স্ত্রী হতে
ভাবি তোমার লজ্জা লাগে না?
এই দম্পতির মেয়ে হতে বুন্ডি তোমার লজ্জা লাগে না?
[ওগো, তুমি কোথা যাও কোন্ বিদেশে,
বারেক ভিড়াও তরী কূলেতে এসে।
যেয়ো যেথা যেতে চাও,
যারে খুশি তারে দাও,
শুধু তুমি নিয়ে যাও
ক্ষণিক হেসে
আমার সোনার ধান কূলেতে এসে।]
রবীন্দ্রনাথের সোনর তরী কবিতার শেষ চরণ।
আপনাদের লজ্জা লাগে না? থাক, আসেন, আমরা মুখ ঢাকবানে।
২
আমি এক কাস্টমস্ অফিসাররে চিনি,
সে একদম সোমায়িলার দস্যুদের মত দার্শনিক!
জানো কি তোমরা ঐ দস্যুরা কী বলে হেসে?
বলে, “মারব, মরে যাব, এই তো আমাদের জীবন।”
ঐ কাস্টমস্ কর্মকর্তা আমায় বলে,
“এ দেশের ভলো করতে পারবা না ভাইডি,
যা পারো কামায়ে নাও। শেষে কেটে পড়ো একদিন।”
[আমার গায়ে যত দুঃখ সয়
বন্ধুয়া রে করো তোমার মনে যাহা লয়।।]
উকিল মুন্সীর লেখা গান, বারী সিদ্দিকী গেয়েছে।
আপনাদের লজ্জা লাগে না? থাক, আসেন, আমরা মুখ ঢাকবানে।
৩
একজন সচিবের কথা থাক, ব্যাটা, ৫৭ ধারা আছে না?
খ্যাপাও ক্যান আমারে এই মধ্যরাতে?
স্বপ্ন দ্যাখতাছি। সত্যি কথা না কিছ্ছু এসব।
“সই গো সই পিরিতির কথা আমি কারে গিয়া কই”
গানের একটা লাইন মনে পড়ে গেল ফাঁকে। যাকগে।
এক যুগ্ম সচিবের কথা কই–
খুবই এলেমদার লোক সে,
শুনেই কদমবুচি কর, শালা!
সে আমারে কয়, “এসিল্যান্ড, ইউএনও, ডিসি;
আমার কম্ম শ্যাষ।
অহন আমি এলেমদার, ইমেজ বিল্ডার।
এরপর সচিব হয়ে কোপায়ে দিমু।”
অহন সে একটা ব্যাংকের চেয়ারম্যান।
এলাকার কাউরে ফিরায় না, সামনে নির্বাচন করবে যে…
আপনাদের লজ্জা লাগে না? থাক, আসেন, আমরা মুখ ঢাকবানে।
৪
দাঁড়াও ম্যান, দাঁড়াও–
সেই সিভিল সার্জন আছে না, চিন তারে?
সে আমায় অাহ্লাদ করে কয়,
এক তাপস ডাক্তারই নাকি তারে মাসে বিশ হাজার করে দেয়,
বিনিময়ে আজীবন নিজের উপজেলায় চাকরি করে মি. তাপস,
বাড়ির ধারে নিজের হাসপাতাল চালায়!
এক রিক্সালারে জিগাইলাম,
কী মিঞা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেইক্কা
কী চিকিৎসা পাইলা?
কয়, “তাপস বাবুর হাসপাতালে দেখাইছি,
সে এক মজার ঘটনা! হেতের কমপাউন্ডারে
উল্টা এক্সরে করছিল। ব্যাথ্যা পাইছি কোমরে,
এক্সরে করছে হাঁটুর। তাপস ডাক্তার সেই এক্সরে
দেইখা ওষুধু লিক্খে দেছিল! সে যে কী কাণ্ড! হুলুস্থুল অবস্থা!!”
[মনে আছে সেদিন হুলুস্থুল বেধেছিল?
ঘরের কোণে জ্বলে উঠেছিল আগুন –
আমাকে অবজ্ঞাভরে না-নিভিয়ে ছুঁড়ে ফেলায়!
কত ঘরকে দিয়েছি পুড়িয়ে,
কত প্রাসাদকে করেছি ধূলিসাত্
আমি একাই- ছোট্ট একটা দেশলাইয়ের কাঠি।]
সুকান্তের একটি কবিতার লাইন।
আপনাদের লজ্জা লাগতেছে না? থাক, আসেন, আমরা মুখ ঢাকবানে।
৫
ওস্তাদ, নাম্বার আছে, বায় খাড়ান,
শুইনা লন–
গভীর ঘুমে আছি, চুপচাপ শুইনা লন।
[স্বপ্নে তব কুললক্ষ্মী কয়ে দিলা পরে—
“ওরে বাছা, মাতৃকোষে রতনের রাজি,
এ ভিখারী-দশা তবে কেন তোর আজি?]
ওরা সহ্য করেনি ভিখারীর দশা, ওরা বীর এবং গম্ভীর।
পূজোয় চন্দন কাঠ লাগে, আবার রূপ লাবণ্য চর্চায়ও অনেকের লাগে।
মিঞা, হাইসা দিও না, এই জিনিসের নুনুর মত এক পিসের দাম কত জানো?
চারশো টাকা পিস, ভালোডা আটশো টাকাও আছে।
ঐ ব্যবসায়ী আমায় কইল, “এই জিনিস তো আর খাবে না, তাই না?
গেওয়া কাঠে চন্দন সেন্ট মাইরা রাইখা দিই।
ওরা মাথা নিচু কইরা এইডাই ঘষে। কন দেহি
দেব-দেবি কি ঘোস্যা করছে তাতে কোনোদিন?”
[চন্দন পালঙ্কে শুয়ে একা একা কি হবে
জীবনে তোমায় যদি পেলাম না]
সন্ধ্যা মুখার্জির গাওয়া বিখ্যাত গান। গীতিকারের নাম জানি না।
আপনাদের লজ্জা লাগে না? থাক, আসেন, আমরা মুখ ঢাকবানে।
৬
একজন হোটেল ব্যবসায়ীরে ঘুমের মধ্যে জিগাইলাম,
মাম্মা, পুচকে একটা সিঙ্গাড়ার সাথে এক প্লেট সচ ঢাইলা দাও
ব্যবসা তো লাটে ওঠার কথা, ক্যামনে কী?
কয়, “ব্যাপার না, পাঁচ লিটার কিনি ষাট টাকায়,
পাঁচ লিটার দিয়ে তিনশো সিঙ্গাড়া বেঁচা যায়।
কাস্টমার খুশি, ধুমচে খায়।”
জিগাইলাম, মামা, এইডা বানায় কী দিয়া?
কয়, ছি! ছি! লজ্জা দিয়েন না।
তর্জনী উঁচিয়ে কয়,
“ঐ দ্যাহেন, প্লাস্টিকের ড্রামে গরুর চর্বি জমাইছি।”
কইলাম, মামা, এরমধ্যে তো মাছি ভনভন করতাছে,
জ্যান্ত মাছি মরা মাছি গুণতেছে নাকি?
কয়, মামা, ব্যাপার না, জ্বালে দিলে সব ঠিক হয়ে যায়।
এই জিনিস লাগে, তরকারি খুব টেস্ট হয়, চকচকা হয়।
ম্যাড়মেড়ে জিনিস আজকাল চলে না। কী বলেন?”
সতিই তো, ম্যাড়ম্যাড়ে জিনিস কি আজকাল চলে?
হোটেল মালিক শরম পেয়েছে নতুন বউয়ের মত একটুখানি,
[লজ্জা! মরি মরি একী লজ্জা!
ওগো তুমি না এলে যে কাঁটাতে ভরে গো
আমার এ ফুলের শয্যা।।]
একটা গানের লাইন এগুলো।
আপনাদের লজ্জা লাগে না? থাক, আসেন, আমরা মুখ ঢাকবানে।
৭
মোবাইল কোর্ট আছে না? আছেরে ভাই, আছে।
বাগেরহাটে একটা প্যাথলজি আছে, ভাই ভাই ঠাই ঠাই তাঁরাঁ,
এক ভাই ডাক্তার, এক ভাই প্যাথলজিস্ট।
কামাইতেছে যা, ছারখার অবস্থা!
যে যেই ব্যামো নিয়েই আসুক, সবগুলো যন্ত্রের তলায় শুইতে হয়গো শুইতে হয়,
সে এক এলাহীকাণ্ড, রিয়েলি অসাম, বিউটিফুল, মাইন্ডব্লোয়িং!
এক ম্যাজিস্ট্রেট আমারে কানে কানে কয়,
[মিঞা স্বপ্ন দ্যাখতাছি কিন্তু–
স্বপ্ন আবার ধারায় ফালাইও না!!]
“সেইখানে মোবাইল কোর্ট করলাম, অপরাধ যা পাওয়া গেল
তাতে মালপত্র সব ক্রোক করে দুই ভাইরে দুই বছর কারাদণ্ড দেয়ার কথা কইলাম।
একটু পরেই নগদ নারায়ন হাজির। পাঁচ লাখে রফা, সব ফকফকা।
জনগণরে বুঝ দিতে হইব না?
বিশ হাজার টাকা সরকারের খাতে জরিমানা দ্যাখায়ে
জলদি জলদি বাসায় এসে ফেসবুকে সার্চ দিলাম,
চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছ ..”
[রেখো, মা, দাসেরে মনে, এ মিনতি করি পদে।
সাধিতে মনের সাধ,
ঘটে যদি পরমাদ,
মধুহীন করো না গো তব মনঃকোকনদে।]
মধুসূদন দত্তের কবিতার লাইন। যাকগে।
জর্জ কোর্টের এক বিচারক কয়,
“মানুষ তো একদিন মরবেই, যারে মারছে সেও একদিন মরত না?
কবি, কথা কও না কেন? এক কোটি টাকা চোক্খে দ্যাখছ কোনোদিন?
তাই খালাস দিয়ে দিলাম।”
[ধনধান্যে পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা
তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা
ও সে যে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি
সে যে আমার জন্মভূমি, সে যে আমার জন্মভূমি।।]
ডিএল রায়ের গান এটা।
আপনাদের লজ্জা লাগে না? থাক, আসেন, আমরা মুখ ঢাকবানে।
৮
জাগাইওনা আমারে, বোকাচোদার দল, কইছে কেউ তোমাগো এসব কেনোদিন?
[স্বপ্ন দ্যাখাতাছি মিঞা! ৫৭ ধারার মায়রে বাপ!!]
ট্যাক্স কর্মকর্তা কইল, “আরে ভাই, টাইম নাই, তোর কবিতার মায়রে বাপ।”
আমি তো লজ্জায় মরে যাই–
কবিতার মায়রে বাপ দিয়ে দিল!
কয়, “এক্সওয়াই কোম্পানি সাথে তাঁরঁ চুক্তি আছে,
এরকম খালি চুক্তি থেকে তাঁরঁ বছরে আসে পাঁচ কোটি!”
কবিতার মায়রে বাপ হেতে দিব না তয় দিবা তুমি?
[ও মা, আমার যে ভাই তারা সবাই, ও মা, তোমার রাখাল তোমার চাষি ॥
ও মা, তোর চরণেতে দিলেম এই মাথা পেতে–
দে গো তোর পায়ের ধূলা, সে যে আমার মাথার মানিক হবে।
ও মা, গরিবের ধন যা আছে তাই দিব চরণতলে,
মরি হায়, হায় রে–
আমি পরের ঘরে কিনব না আর, মা, তোর ভূষণ ব’লে গলার ফাঁসি ॥]
রবীন্দ্রনাথের গান, আমাদের জাতীয় সঙ্গীতের শেষ চরণ।
আপনাদের লজ্জা লাগে না? থাক, আসেন, আমরা মুখ ঢাকবানে।
৯
ঘুম প্রায় ভাঙ্গে ভাঙ্গে অবস্থা–
আইল এক আর্মি অফিসার, ডিজিএফআই
কয়, আর্মি নিয়ে স্বপ্ন দেখার পারমিশন নিছো?
জিগাইলাম, পারমিশন নিতে কত?
[ঊষার দুয়ারে হানি’ আঘাত
আমরা আনিব রাঙা প্রভাত,
আমরা টুটাব তিমির রাত,
বাধার বিন্ধ্যাচল।]
নজরুলের লেখা রণসঙ্গীত এটি।
আপনাদের লজ্জা লাগে না? থাক, আসেন, আমরা মুখ ঢাকবানে।
১০
অবশেষে সাংবাদিক আইসে কয়,
“লিইখা দিব মিঞা তোমার স্বপ্নদোষের কথা?”
হেরে কইলাম, ওহে মুতিচুর,
কবিরে সত্য কও কিছু, নইলে মইরা শান্তি পাইবা না।
কীসে যে কী হইল, হেতে আর থামে না,
কয়, “ওরা তো মনোগ্যামি, শুধু ঘুষু খায়!
আমি ভাই, পলিগ্যামি, বিজ্ঞাপন খাই, ঘুষু খাই
এবং খ্যাতি খাই, খাওয়াইও!”
জিগাইলাম, কাদের খাওয়ায় মুতিচুর?
কয়, “বেশি খাওয়াই বুদ্ধিজীবীদের, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের।
কমু না তোমারে সব, কবিদের পেট পাতলা হয়।
একটুখানি কই, বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া তো দূরে থাক
ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করছিল, সে (স্ত্রীলিঙ্গ) এখন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
পাস করে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছে!
২০০৪ সালের ঘটনা। কুনো রিপোর্ট করি নাই। সুযোগে খাইয়া লইছি।”
[হাউ মাউ খাউ, মানুষের গন্ধ পাউ!]
আমাদের লোক সাহিত্যে আছে এই লাইনটি।
আপনাদের লজ্জা লাগে না? থাক, আসেন, আমরা মুখ ঢাকবানে।
শেকস্ রাসেল
লন্ডন প্রবাসী কবি
রম্য সাহিত্য হিসেবে লেখাটি প্রকাশ করা হয়েছে। লেখাটি কাল্পনিক একটি কবিতা মাত্র। এই লেখার কোনো অংশ তথ্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। -ফলোআপনিউজ.কম কর্তৃপক্ষ