“মানুষের বিবর্তন” গ্রন্থ থেকে চতুর্থ কিস্তি

“মানুষের বিবর্তন” একটি স্বতন্ত্র ধাচের বই। এতে জীবনের পঁচিশটি সমস্যা উপস্থাপিত হয়েছে বিশেষ প্রশ্নোত্তর সন্নিবেশে। প্রতিটি সমস্যা উত্থাপিত হয়েছে পাঁচটি প্যারার সমন্বয়ে, এভাবে একশো পঁচিশটি প্যারায় বইটি শেষ হয়েছে। এবারের পর্ব যৌনতা এবং নারী-পুরুষের সম্পর্ক বিষয়ে।

নারী পুরুষের সম্পর্ক তুমি কীভাবে দেখ?bamboo

অত্যন্ত সাবলীল, সহজ এবং সুন্দর হওয়া প্রয়োজন।

ঠিক কীভাবে তা হতে পারে?

স্বতস্ফুর্তভাবে।

পড়ে গেলে মানুষকে টেনে তুলতে হবে,

তাই বলে নদীর চারপাশ

বাধ দিয়ে আটকানো যায় না।

আরো পরিষ্কার করে বলো।

পরিষ্কার করে শুনতে চেও না,

মানুষ মানতে পারবে না।

যা মানুষ চায়, বলে দিলে

তা অন্যে নিয়ে নেবে ভাবে।

অপ্রাপ্তি এবং ঈর্ষায়

আমাদের আচরণ অসুস্থ হয়েছে।

সরাসরি কিছু বলা যাবে না।

কিছুটা ধোঁয়াশা রাখতে হবে।

ধোঁয়াশা রাখলে বক্তব্যের কার্যকারীতা থাকে?

কখনো কিছুটা খর্ব হয় নিশ্চয়ই।

ভালবাসা সম্পর্কে তোমার অভিমত কী?

ভালবাসা সার্বজনীন।

মায়ের প্রতি ভালবাসার সাথে

স্ত্রীর প্রতি ভালবাসার কোনো তফাৎ নেই।

স্ত্রীর প্রতি ভালবাসায় বেশি যা আছে

তা অন্য নারীর প্রতিও থাকতে পারে।

আবার স্ত্রী প্রতি আকর্ষণ বৈ

ভালবাসা নাও থাতে পারে।

তবে আকর্ষণের সাথে

কিছু ভালবাসাও থাকে বৈকি,

নারী পুরুষের নিষ্কাম ভালবাসা ভয়ঙ্কর হয়।

দায়িত্ব এবং করুণায় গিয়ে শেষ হয়।

তুমি বলছ

নারী পুরুষের ভালবাসা পূর্ণতা পেতে গেলে

সেখানে দৈহিক আকর্ষণ থাকতে হবে?

থাকতে হবে।

তবে দৈহিক আকর্ষণ মানেই তো

আর ঝাপিয়ে পড়া নয়,

নারী পুরুষের শারীরিক সম্পর্কের

বিষয়টিও মোটেও সরল নয়,

বরং তা বিবিধভাবে জটিল।

বিষয়টি খুবই সুক্ষ্ম, এবং সুন্দরও।

যৌনতা কদর্য হয়েছে পুরুষের কারণে।  

ভালবাসা এক সময়

সর্বোচ্চরূপে ঘনিষ্ট হতে চাইবেই,

এতে দোষের কিছু নেই।

তুমি হয়ত শুনলে অবাক হবে যে

আমার মতে পৃথিবীর

সবচেয়ে জটিল এবং দুর্বোদ্ধ

সম্পর্ক হচ্ছে মা-ছেলের ভালবাসা।papya

তবে সব মা এবং সব ছেলের মধ্যে

ভালবাসার সম্পর্ক থাকে এমন নয়।

মা-ছেলের ভালবাসা শতভাগ

মানসিক মানতে হবে,

একইসাথে খুব বেশি দুর্বোদ্ধও।

মা, ছেলে এবং ছেলের বউ,

এই তিন জনের মধ্যে ভালবাসা

বৃত্তাকার হওয়া কঠিন।

যদি কোনো মা-ছেলের প্রগাঢ়

ভালবাসার সম্পর্ক থাকে,

বোঝাপড়া থাকে,

তবে মায়ের উচিৎ হবে

সন্তানের বিয়ের পর তাদের সাথে না থাকা।

এক্ষেত্রে মা শিক্ষিত-সচেতন না হলে

সমূহ বিপদ।

একমাত্র শিক্ষা এবং প্রজ্ঞাই পারে

গৃহের পরিবেশ সুন্দর রাখতে।

তুমি বলছ নারী পুরষের সম্পর্ক বলতে

শুধু দৈহিক সম্পর্ক, মানে

যতটুকু বিজ্ঞান অনুমোদন করে,

এমন সম্পর্ক বুঝায় না,

এক্ষেত্রে পারিবারিক সম্পর্কগুলোও

মাথায় রাখতে হবে?

ঠিক তাই।

নারী-পুরুষের প্রতিটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক

স্বতন্ত্র, এবং গোপন বৈশিষ্টের।

গোপনীয়তা মানেই তা শুধু শারীরিক নয়,

বরং বিভিন্নভাবে তা জটিল।

নারী সম্ভবত বিষয়টা জানে।

এজন্য একজন নারী

তার কাঙ্খিত পুরুষের জন্য

অন্য কোনো নারীর সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক

অনুমোদন করে না।

এটা কি ঠিক বলে তুমি মনে কর?

না, ঠিক নয়। এক্ষেত্রে নারীদের

নতুন করে ভাবতে হবে।

ভাবনা এবং চর্চার মধ্য দিয়ে পরিবর্তন আসবে।  

নারী পুরুষের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিৎ তাহলে?

ইউরোপ আমেরিকা মতো খোলামেলা

নাকি ভারতবর্ষের মতো আলুথালু?

আলুথালু মানে ঠিক বুঝলাম না,

তবে ভারতবর্ষের নারী-পুরুষের সম্পর্ক

বুঝাতে শব্দটি চমৎকার হয়েছে।

ইউরোপ-আমেরিকার সম্পর্ক

কেমন হয় ঠিক জানি না।

তবে যেমনটা শুনি বা গণমাধ্যমে দেখি,

তা সঠিক পথে আছে বলে মনে হয় না।

ভারতবর্ষও এক্ষেত্রে চমৎকার

কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি।

তোমার মতে কী হওয়া উচিৎ?

এত সহজে তো পথ

বাতলে দেওয়া যায় না।

দিলেই না হয়,

কেউ মানলে মানুক না মানলে না মানুক।

বনের পাখির মতো গান গেয়ে যাও।

বলা শক্ত নয়। ভাবি তো এসব।

তাহলে বলো।

আচ্ছা বলছি।

তার আগে বলা দরকার,

যৌনতায় নৈতিকতা কী?

নারী পুরুষের সম্পর্কের মধ্যে

নৈতিকতার অংশটুকু ঠিক কোথায়।

কোথায় বলে তোমার মনে হয়?buddha

প্রথমত বুঝতে হবে,

ভালবাসা জোরাজুরির বিষয় নয়।

এটা বুঝে নিতে হবে,

যদি মনে হয় ভালবাসা আর অবশিষ্ট নেই,

তা মেনে নিতে হবে।

প্রতিশ্রুতির সাথে দায়িত্বের সম্পর্ক,

কর্তব্য জড়িত, ভালবাসা নয়।

ভালবাসা কখনো

প্রতিশ্রুত বিষয় হতে পারে না।

এটা আপনা হয়।

কাউকে বিয়ে করার প্রতিশ্রতি হতে পারে,

কারো সাথে একসাথে বসবাস করার

প্রতিশ্রতি হতে পারে।

ভালবাসার প্রতিশ্রুতি হতে পারে না অবশ্যই।

এটা বুঝে নেওয়ার বিষয়।

এটা যতক্ষণ থাকে থাকবে,

না থাকলে কিছু করার নেই।

নারী-পুরুষের এই ভালবাসা

সুউচ্চ কিছু নয়,

যতরকমের ভালবাসা আছে তার মধ্যেে

এটাই মনে হয় সবচেয়ে নিম্নমানের।

‘ভালবাসি’ বলে নিজের সাথে প্রতারণা

করার কোনো মানে হয় না।

একটা বিষয় তুমি এড়িয়ে যাচ্ছ?

না এড়িয়ে যাচ্ছি না,

তুমি বিষয়টাকে খুব গুরুত্বপূর্ন ভাবছ,

কিন্তু আমি তা ভাবছি না।

যৌনতার সাথে ভালবাসা আমি মেলাচ্ছি না।

তবে উপভোগ্য, পরিচ্ছন্ন শারীরিক সম্পর্ক

ভালবাসা তৈরি করতে পারে।

সীমা থেকে অসীমে,

আবার অসীম থেকে সীমানায়,

দুটোই সম্ভব।

শারীরিক সম্পর্কে নৈতিকতার বিষয়ে বলছিলে—

এক্ষেত্রে নৈতিকতা খুব জরুরী।

যাকে তুমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছ

তার কাছে সাধু সেজে

তুমি বাইরে সম্পর্ক করতে পারো না।

শারীরিক সম্পর্ক পরস্পরের ওপর

যে ভার তৈরি করে, প্রেম তৈরি করে,

তা ঠিক কতটা নেওয়া সম্ভব?

সাধ্যের অতিরিক্ত নেওয়া মানে

তা অবৈধভাবে নেওয়া।

সম্পর্কের মধ্যে দায়িত্ব

নিয়ে একসাথে থাকতে হলে

গোপনে বহুগামী হওয়া কঠিন।

তবে সচেতনভাবে

শুধু যৌনতার বিষয় হলে ভিন্ন কথা,

সেক্ষেত্রে সঙ্গীকে জানাতে হবে,

যাতে সে অহেতুক বিসর্জন না দেয়।  

সে মেনে না নিলে,

হয় তাকে ছাড়তে হবে

অথবা বহুগামী হওয়া যাবে না।

যৌনতায় এর চেয়ে বেশি

নৈতিকতা আশা করা অসত্য হবে।

তবে এই নৈতিকতাটুকুও

তুমি পাশ কাটাতে পারো

যদি তোমার বহুগামিত্ব বিদ্যমান

সম্পর্ককে কোনোরূপ প্রভাবিত না করে,

এবং শৈল্পিকভাবে

তুমি তা গোপন রাখতে পারো।

দুর্বল মানুষেররা কি মেনে নিতে পারবে,

এভাবে ভাবতে পারবে?

মানতে পারে, কিন্তু ভয় পায়।

ওদের ভয় কেটে যাবে একসময়।  

যদি কেউ ভীষণ ভালবাসে?     

ভীষণ ভালবাসা মানুষকে মুক্ত করে,

সে ভালবাসা বিরল,

ভীষণ ভালবাসায় এসব সমস্যা হয় না।

বলছি না যে ভীষণ ভালাবাসার

মানুষ বহুগামী হয় না।

বরং ভীষণ ভালাবাসা ভীষণ ঠকেও।

তাছাড়া একবার ভাবো তো—

সঙ্গী যদি আমায় ভালবাসে

তাহলে আমি জিতলে

সে ঠকে কীভাবে?

অনেক ক্ষেত্রে এটা শুধু যৌন ঈর্ষাও।

মানুষ আসলে স্বভাবতই বহুগামী।

শারীরিকভাবে এবং মানসিকভাবেও।

এক দেহে অনেকে সুখী হলেও

এক প্রেমে মানুষের সুখ নেই। 

যেহেতু মানসিকভাবে মানুষ বহুগামী

তাই ধরে নিতে হবেorrange

সামার্থ এবং সুযোগ থাকলে

শারীরিকভাবেও সে বহুগামী।

তবে সবার বিবেচনাবোধ,

ন্যায়বোধ একরকম হয় না।

এরকম ভাবা ঠিক নয় যে

যৌনজীবনে নৈতিক মানে সে প্রকৃতপক্ষে নৈতিক।

যৌনজীবনের নৈতিকতা

মানুষের সামগ্রিক নৈতিকতার

মানদণ্ড ঠিক করে না।

তবে এটা সত্য,

সামগ্রিকভাবে যে অনৈতিক

সে সর্বক্ষেত্রেই অনৈতিক।

তুমি যা বললে তাতে কি সমস্যার সমাধান হল?

মোটেই হল না।

এটা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—

এ বিষয়ে অষ্টম শ্রেণি থেকে

বিজ্ঞানভিত্তিক এবং সমাজতাত্ত্বিক আলোচনা

থাকা দরকার নির্মোহভাবে।

পৃথিবীতে নারী-পুরুষের সম্পর্ক বিষয়ে

স্বীকৃত যে তাত্ত্বিক আলোচনাগুলি আছে

সেগুলো পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিৎ।

কোনোটি ঠিক করে দেওয়ার দরকার নেই।

মানুষ শুরু থেকেই অনিবার্য এ বিষয়টি সম্পর্কে জানুক।

নারী পুরুষের মেলামেশা ঠিক

কোন বয়স থেকে হওয়া উচিৎ?

একদম শিশু বয়স থেকে মৃত্যু পর্যন্ত।

কোনোভাবেই, কোনো বয়সে

কোনো নারী, পুরুষকে

একা হতে দেওয়া যাবে না।

পৃথিবীতে কোনো গার্লস স্কুল,

বয়েজ স্কুল থাকতে পারে না।

এটা প্রাকৃতিক না।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলে-মেয়েদের

হল আলাদা থাকতে পারে না,

এটা সংকট বাড়ায়, কমায় না।

বলেছি,

যৌনতার মধ্যে নৈতিকতা খোঁজা বোকামী।

এটা নৈতিকতার প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলো

আড়াল করে শুধু।

ধরো, একজন মানুষের

শারীরিক কারণে যৌনতায় আগ্রহ নেই,

কিন্তু মানুষ হিসেবে যেকোনো বিবেচনায়

সে খুব খারাপ।

সমস্যা হচ্ছে,

আমাদের সমাজে প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের

নৈতিকতার মানদণ্ড ঠিক করার ক্ষেত্রে

যৌনতা গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে,

তাই প্রায়শই সে পরিমাপ ভুল হয়।

কারণ, অনেকে এটা গোপন রাখতে চায়

অনেকে চায় না।

অনেকে গোপন রাখতে পারে

অনেকে পারে না।

অনেকে শারীরিকভাবে অনাগ্রহীও থাকে।

ফলে যৌনতা দিয়ে

নৈতিকতা পরিমাপ করা যায় না।

তবে ধর্ষক, পিডোফাইল ইত্যাদি

বিকৃত এবং অসুস্থদের বিষয়গুলো আলাদা,

এগুলো তো যৌনতা নয় আসলে,

যৌন বিকৃতি আর যৌনতা এক নয় কখনো।

একটা বিষয় এড়িয়ে গেলে,

নারী পুরুষের শারীরিক সম্পর্ক

ঠিক কখন হবে তাতো বললে না?

এটা ঠিক করে দেওয়ার কিছু নেই।

মেলামেশা করতে করতে

স্বস্ফুর্তভাবে হবে, যার যেভাবে হয়।

সমাজের এখানে কিছু করণীয় নেই।

সমাজের বরং উঁকি দেওয়া বন্ধ করতে হবে,

কেউ না ডাকলে এখানে সমাজের

কোনো ভূমিকা থাকা শুধু অন্যায় নয়, কদর্যও।

সমাজ, রাষ্ট্রের কাজ নিরাপত্তা দেওয়া,

ধর্ষক এবং শিশু নিপীড়কদের হাত থেকে

নারী ও শিশুদের রক্ষা করা।

নারী-পুরুষের স্বতস্ফুর্ত সম্পর্কে

বাধা হয়ে দাঁড়ানো রাষ্ট্রের কাজ নয়।

#যৌন আচরণ, সংযম এবং চর্চা মানুষের জীবনে সফলতা-ব্যর্থতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, সে বিষয়ে পরাবর্তী পর্বে আলোচনা করা হবে।


woman