শাহিদা সুলতানার কবিতা: অঙ্কুরিত ঝরাপাতার গান

শাহীদা সুলতানা

এপিটাফ

এ বছর ভুলে গেছো 
নীল খামে ভরে
পাঠাতে প্রিয় পঙক্তিমালা
আমার একান্ত দিনে-
ঘড়ির কাঁটা শূন্য থেকে শুরু হয়ে 
আবার মিলিয়ে গেল শূন্যে-
টেবিল ভরা অসংখ্য তোড়ার ভিড়ে পাইনি খুঁজে
সাদা অলকানন্দার গুচ্ছ ।

একদিন আমারও বাড়বে বয়স
স্মৃতিভ্রমে নষ্ট হবে এঁকে রাখা সব 
ভ্রমণ পরিকল্পনা–
এপিটাফে মোড়া পালকিতে
একা একা ভাতঘুম দিতে দিতে
ভুলে যাবো তোমার পায়ের আওয়াজ
সেইসব রংধনু ছুটির দুপুরে!

 

গলে যাওয়া বিষাদ বরফ

মাঝে মাঝে
এক অলৌকিক স্বপ্ন আসে, 
সপ্তর্ষির নৌকার 
গলুয়ে ভর করে।
সম্মোহনের সরগমে
মোমের মতো গলে যায়
সব পার্থিব বন্ধন।

ভেসে যাওয়া মেঘ কেটে কেটে 
আমি উড়ে যাই,
আমার ডানায়, 
কপালে, ভুরুতে
মেখে থাকে 
ভেজা আদরের দাগ,
এক আলোময় করতল
মুছে দিতে চায়
ঠোঁটের কোণায় জমে থাকা 
দীর্ঘ বিষাদ বরফ!

 

চৈত্র সংক্রান্তি

দেখা হলে তুমি বিদায়ের কথা বল খুব বেশী,
অনেকটাই শীতের ঋতু জুড়ে সারাদিন টুপটাপ 
ত্রস্তে খসে পড়া পাতার মতোই যেন স্বাভাবিক গল্প।
অষ্ট্রেলিয়ার পি আর, আমেরিকার স্কলারশিপ,
আরিজোনায় আলাপ হওয়া রংগিন প্রজাপতি –
আসন্ন নিবিড় বসন্তের স্বপ্নে
বিভোর থাকে তোমার দুচোখের পাতা-

দেখা হলেই তুমি উঠবার তাগিদ দিতে থাকো,
বিবর্ণ পাতাহীন বৃক্ষের বাকলে বাকলে 
কামারের হাতুড় নাচে রাশান ব্যালের ভংগিতে–
গাড়ির জ্বালানি, কোন বন্ধুর আসবার কথা
ডাক্তারের আপোয়েন্টমেন্ট, অসংখ্য অজুহাতে
চায়ের কাপে শেষ চুমুকের আগেই
তুমি দেখো ঘড়ির কাটার চলা ।

আমার তাড়াহীন সময় কেবলই ছু্ঁয়ে যায়
দেয়ালের অয়েল পেইন্টিং 
শেষ বিকেলের সোনালী ধানের ক্ষেত,
আলের শুকনো ডালে 
ডানায় ভর দিয়ে এখনো বসে আছে একলা শালিক।

বিদায় যদি এতই ভালোবাসাময়
তবে আসছে সংক্রান্তিতেই
হোক সেই কাংখিত কাব্যের মোড়ক উন্মোচন 
এই কয়েকটা দিন চলুক না হয় 
আমার নিজস্ব ব্যথার কিছু আগাম আয়োজন।


শাহিদা সুলতানা Shahida Sultana