ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলীঃ “মরণরে, তুঁহুঁ মম শ্যাম সমান”

মরণ রে, তুঁহু মম শ্যাম সমান'

মরণরে,
তুঁহুঁ মম শ্যাম সমান!
মেঘ বরণ তুঝ, মেঘ জটাজুট,
রক্ত কমল কর, রক্ত অধর-পুট,
তাপ-বিমোচন কৰুণ কোর তব,
মৃত্যু অমৃত করে দান!
তুহু মম শ্যাম সমান।

মরণরে,
শ্যাম তোঁহারই নাম,
চির বিসরল যব্‌, নিরদয় মাধব
তুঁহুঁ ন ভইবি মোয় বাম!

আকুল রাধা রিঝ অতি জরজর,
ঝরই নয়ন দউ অনুখন ঝরঝর,
তুঁহুঁ মম মাধব, তুঁহুঁ মম দোসর,
তুঁহুঁ মম তাপ ঘুচাও,
মরণ তু আওরে আও।
ভুজ পাশে তব লম্ব সম্বোধয়ি,
আঁখিপাত মঝু আসব মোদয়ি,
কোর উপর তুঝ রোদয়ি রোদয়ি
নীদ ভরব সব দেহ।
তুঁহুঁ নহি বিসরবি, তুঁহুঁ নহি ছোড়বি
রাধা-হৃদয় তু কবহুঁ ন তোড়বি,
হিয়-হিয় রাখবি অনুদিন অনুখণ
অতুলন তোঁহার লেহ।
দূর সঙে তুঁহুঁ বাঁশি বজাওসি,
অনুখণ ডাকসি, অনুখণ ডাকসি
রাধা রাধা রাধা,

দিবস ফুরাওল, অবহুঁ ম যাওব,
বিরহ তাপ তব অবহুঁ ঘুচাওব,
কুঞ্জ-বাট পর অবহুঁ ম ধাওব
সব কছু টুটইব বাধা!
গগন সঘন অব, তিমির মগন ভব,
তড়িত চকিত অতি, ঘোর মেঘ রব,
শাল তাল তৰু সভয় তবধ সব,
পন্থ বিজন অতি ঘোর,
একলি যাওব তুঝ অভিসারে,
যা’ক পিয়া তুঁহুঁ কি ভয় তাহারে,
ভয় বাধা সব অভয় মুরতি ধরি,
পন্থ দেখাওব মোর।
ভানু সিংহ কহে, “ছিয়ে ছিয়ে রাধা
চঞ্চল হৃদয় তোহারি,
মাধব পহু মম, প্রিয় স মরণসে
অব তুঁহুঁ দেখ বিচারি!”


ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত একটি কাব্যগ্রন্থ। রবীন্দ্রনাথ কৈশোর ও প্রথম যৌবনে “ভানুসিংহ” ছদ্মনামে বৈষ্ণব কবিদের অনুকরণে কিছু পদ রচনা করেছিলেন। ১৮৮৪ সালে সেই কবিতাগুলিই ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী নামে প্রকাশিত হয়। কবিতাগুলি গ্রন্থাকারে প্রকাশের পূর্বে বিভিন্ন সময়ে ভারতী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। কবিতাগুলি রচনার ইতিহাস পরবর্তীকালে জীবনস্মৃতি গ্রন্থের ভানুসিংহের কবিতা অধ্যায় বিবৃত করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী উৎসর্গ করেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী কাদম্বরী দেবীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে। উৎসর্গপত্র থেকে জানা যায়, রবীন্দ্রনাথের নূতন বৌঠান কাদম্বরী দেবী তাকে ভানুসিংহের কবিতাগুলি ছাপাতে অনুরোধ করেন। উল্লেখ্য, এই গ্রন্থ প্রকাশের পূর্ববর্তী বছরেই আত্মহত্যা করেছিলেন কাদম্বরী দেবী। পরবর্তীকালে ভানুসিংহের পদগুলিতে কবি প্রচুর সংশোধনী আনেন।