ওয়ার্ড দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন এবং প্রকল্প অবহিতকরণ সভা

ওয়ারি প্রাণোতোষ

ওয়ারি প্রাণোতোষ

প্রাণতোষ তালুকদারঃ দুর্যোগ প্রস্তুতি ও সাড়া প্রদানে সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাঠামো, পরিকল্পনা ও সমন্বয় প্রক্রিয়াকে অধিক শক্তিশালী, কার্যকরী ও প্রাতিষ্ঠানিকরণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত নীতিমালা, আইনি কাঠামো ও পরিকল্পনাসমূহের বাস্তবায়নে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি যা নগরাঞ্চলের দুর্যোগ ঝুঁকি তথা ভূমিকম্প ও অগ্নিকাণ্ডের দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে-
রাজধানী ঢাকার ৩৮ নং ওয়ার্ড এর কাউন্সিলর অফিসে অদ্য ০৮/১১/২০১৭ ইং রোজ বুধবার সকাল ১০.৩০ মিনিটের সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন এর লক্ষ্যে ওয়ার্ড দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন এবং প্রকল্প অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত সভাটির আয়োজন করেছেন পপুলেশন সার্ভিসেস এন্ড ট্রেনিং সেন্টার (পিএসটিসি)।
বক্তব্য দিয়েছেন ৩৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইদুর রহমান, ৩৮ নং ওয়ার্ডের ওয়ার্ড সচিব উত্তম কুমার হাওলাদার, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ওয়ারী থানা শাখার সভাপতি প্রাণতোষ তালুকদার এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনে পপুলেশন সার্ভিসেস এন্ড ট্রেনিং সেন্টার (পিএসটিসি) এর প্রকল্প সমন্বকারী মোঃ ইকবাল হাসান, প্রজেক্ট অফিসার তাহমিনা আক্তার, মনিটরিং অফিসার উর্মিলা নখরেট, ফিল্ড এ্যাসিট্যান্ট সুবর্ণা রাণী ভৌমিক, সাহিদুন নাহার, নাজমুল হক, মেহেদী হাসান।
উক্ত অনুষ্ঠানে ৩৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবু আহমেদ মন্নাফী-কে সভাপতির পদমর্যাদা দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে ৩৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবু আহমেদ মন্নাফী বলেন, অবহেলার কারণে শত শত কোটি টাকা নষ্ট হচ্ছে ভাল প্রশিক্ষণ না থাকাতে। জনগণ সচেতন না হলে কোন কাজই সম্ভব নয়।
তিনি সকলকে সচেতন হওয়ার জন্য বলেন। এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে ভূমিকম্পসহ দুর্যোগের ঝুঁকি বিশ্লেষণ পূর্বক স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে পারিবারিক ও সামাজিক পর্যায়ে ভূমিকম্পসহ অন্যান্য দুর্যোগ সম্পর্কে ঝুঁকিহ্রাসের পদক্ষেপ সম্পর্কে অবহিত করেছেন। এবং বলেছেন বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইদুর রহমান বলেন, ভূমিকম্প মোকাবেলায় সকলকে সঠিকভাবে কাজ করতে হবে এবং জনগণকে সচেতন হতে হবে।
৩৮নং ওয়াডের্র ওয়ার্ড সচিব উত্তম কুমার হাওলাদার বলেন, অন্যান্য বছরের চেয়ে বৃষ্টি এবার বেশী ছিল। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা বেশী, ঝুঁকি বেশী। তাই সবাইকে সতর্ক ও সচেতন হওয়ার কথা বলেন।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ওয়ারী থানা শাখার সভাপতি প্রাণতোষ তালুকদার বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিতে যাদের নেয়া হবে তাদের অতীত জেনে নিতে; সচেতন ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি গঠন করার কথা পরামর্শ দিয়েছেন। সচেতন ব্যক্তিরাই পারবে সকল জনগণকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা, নদীভাঙ্গন, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস, বজ্রপাত, খরা, ভূমিধ্বস ও ভূমিকম্পের মোকাবেলার সঠিক পথ দেখাতে। যদি কমিটিতে অসচেতন লোক ঢুকানো হয়। তাহলে কিছুই করা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, সচেতনতার অভাবে রোহিঙ্গা শরণার্থী আমাদের অর্থনীতি, রাজনীতি, পরিবেশ, সমাজ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জননিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যে অভিঘাত সৃষ্টি করতে যাচ্ছে তার একমাত্র সমাধান হচ্ছে দ্রুত শরণার্থীদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন যা মিয়ানমার সরকার না চাইলে সম্ভব হবে না। বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার কারনে জামায়েত ইসলামী এবং পাকিস্তানপ্রেমী মৌলবাদীরা কক্সবাজার অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটনানোর পাশাপাশি সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায় অধ্যুষিত এলাকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের জন্য নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছে। তাই সকলকে সচেতন ও সজাগ থাকতে বলেছেন।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য বনবিভাগের যে ৩ হাজার একরেরও অধিক জমি বরাদ্দ করা হয়েছে সেখান থেকে বন উজার হয়ে গিয়েছে। রোহিঙ্গারা নির্বিচারে গাছ ও পাহাড় কেটে তাদের আবাস নির্মাণ করছে, পরিবেশের ওপর যা সমূহ বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।
তিনি বলেন, বনাঞ্চলে যত্রতত্র ঘর বানাতে গিয়ে রোহিঙ্গারা না জেনে বন্যপ্রাণীর আবাস ধ্বংস করে দিচ্ছে। বন্য হাতির আবাস ও চলাচলের পথে বনবিভাগের সতর্কিকরণ বিজ্ঞপ্তি রয়েছে, যা রোহিঙ্গারা পড়তে পারেনি। বন্য হাতি তার আবাস খুঁজে না পেলে স্বাভাবিকভাবেই লোকালয়ে হামলা করবে। বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর কারণে এলাকায় বন্যপ্রাণীদের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। তাই তিনি বলেছেন সুন্দর মানুষ দরকার, সচেতন মানুষ দরকার। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি সচেতন মানুষ নিয়ে গঠন করলে সবই সম্ভব।
প্রকল্পের কর্মকর্তাগণ বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, এলাকায় রয়েছে অনেক পুরাতন ভবন ও সরু সড়ক। বেশিরভাগ নতুন বহুতল ভবনগুলোও সঠিকভাবে ভূূমিকম্প সহনশীল করে নির্মাণ করা হয়নি। রয়েছে নানা রকমের ঝুঁকি, বিপদাপন্ন পরিস্থিতিতে বসবাস করছে বেশিরভাগ মানুষ। ওয়ার্ড পর্যায়ে দুর্যোগের ঝুঁকি নিরুপণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং উক্ত ঝুঁকি হ্রাস কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে কোন বরাদ্দ না থাকার পাশাপাশি জনসাধারণ পর্যায়ে দুযোগ সচেতনতার অভাব রয়েছে। এলাকাসমূহের স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ভূমিকম্প সচেতনতায় তেমন কোনো পদক্ষেপ না থাকায় জনসাধারণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতির আশংকা বেশি।
একটি দুর্যোগ সহনশীল নগর নির্মাণে প্রয়োজন রয়েছে সমন্বিত উদ্যোগ, বিদ্যমান আইন ও নীতি কাঠামোর আলোকে নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সমন্বয়। ভূমিকম্পসহ নগরাঞ্চলের অন্যান্য দুর্যোগ যথা অগ্নিকান্ড, জলাবদ্ধতা ইত্যাদি দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস, প্রতিষ্ঠান ও জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং কার্যকর সমন্বয়ের মাধ্যমে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি কমাতে পপুলেশন সার্ভিসেস এন্ড ট্রেনিং সেন্টার (পিএসটিসি), ‘প্লান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ’ এর সহযোগিতায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত ৪টি ওয়ার্ডে “নগরাঞ্চলের দুর্যোগ সহনশীলতা বৃদ্ধি” প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন আর্থিক সহায়তা করছে ‘ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন হিউমেনিটারিয়ান এইড এন্ড সিভিল প্রটেকশন’ বিভাগ। প্রকল্পটি ওয়ার্ড দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি, জোনাল অফিস, সিটি কর্পোরেশন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি, স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটি, ওয়ার্ড পর্যায়ে দক্ষ স্বেচ্ছাসেবক দল এবং বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্যোগ সহনশীলতা বৃদ্ধিতে কাজ করবে। প্রকল্পটি এলাকার বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠী তথা নারী, পুরুষ, শিশু, বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গের দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করবে।
প্রকল্পটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রূপকল্প ২০২১-এ সাথে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কযুক্ত যার মাধ্যমে দুর্যোগ মোকাবেলায় নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও জনগোষ্ঠীর দুর্যোগ সহনশীলতা তৈরী হবে। এ প্রকল্পটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে আওতাধীন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত; এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন, এসওডি এবং নীতিমালাসমূহের আলোকে পরিচালিত হবে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে পিএসটিসি এবং প্লান ইন্টারন্যাশনাল-এ একদল অভিজ্ঞ কর্মীদল আছেন, যারা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় পারদর্শী। এছাড়াও নিয়মিতভাবে ওয়ার্ড দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে সাথে নিয়ে মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম পরিদর্শন করা হবে এবং পরিদর্শন পরবর্তী সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নে পিএসটিসি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। প্রকল্পের অগ্রগতি কর্ম এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিল অফিস, জোনাল অফিস, সিটি কর্পোশেন এবং জেলা প্রশাসকের অফিসে মাসিক/ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে প্রেরণ করার কথা বলেছেন।