যে কারণে সরাসরি বলা দরকার

সমস্যা
কমিউনিজম মানে মার্কসবাদ না। কমিউনিজম মানে সুন্দর একটি সমাজ ব্যবস্থার সামষ্টিক আকাঙক্ষা এবং তার জন্য যে যে কাজ করা প্রয়োজন, সেসবই সমাজতন্ত্র। সমাজটাকে সুন্দর অবস্থায় পৌঁছে দেয়ার জন্য বিভিন্নভাবে মানুষ কাজ করছে। এগুলো সবই সমাজতন্ত্র।
কেন মানুষ নিজের ভেতর থেকে সেরাটা বের করে আনতে পারছে না, কারণ, সে নিজেকে এক্সপ্লোর করতে পারছে না। তাই মূল বাধাটা চাপিয়ে দেয়ায়।
মানব সমাজে সবচেয়ে বেশি চেপে বসে আছে ধর্ম। দুর্বত্তরা খুব কার্যকরভাবে এটা কাজে লাগাচ্ছে। ভালো ধর্ম বলে কিছু নেই— বাতিল জিনিস, অচল জিনিসেরও মূল্য আছে, তবে সেটি ব্যবহারিক মূল্য নয়, সেটি ঐতিহ্যগত মূল্য। তাই জাদুঘরে রাখতে হয় প্রাচীন যা কিছু, লোকালয়ে নয়।
কালকে একটা এলাকায় গিয়েছিলাম— গ্রাম দখলের মহোৎসব চলছে সেখানে। বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক নেতারা কালোটাকা দিয়ে গ্রামের মানুষের জায়গাগুলো ভুলিয়েভালিয়ে কিনছে। অভাবী গ্রামের মানুষ একসাথে অনেক টাকা পেয়ে, কখনো বাধ্য হয়ে জায়গাগুলো বিক্রী করছে। গ্রামটাকে রাখা হয়েছে ভয়ঙ্করভাবে অবহেলিত অবস্থায়, সম্ভবত সমস্ত জায়গা দখলে নেয়ার পর উন্নয়ন শুরু হবে।
ঢাকার এত কাছে হওয়ার পরও কোনো প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা সেখানে নেই। গ্রামের ঢোকার রাস্তাটা পর্যন্ত নেই। সদ্য সিটি কর্পোরেশনের আওতায় গেছে গ্রামটি। তাতেই মনে হয় সবচে বড় সর্বনাশটা এখন হবে। কারণ, কোনো পরিকল্পনার ছাপ নেই কাজে। দেখলাম, একটি বিশেষ বাহিনীর এক কনস্টেবল জায়গা কিনে প্রাচীর দিয়েছে রাস্তার উপর! এরকম আরো আছে।
চাইলে শহরের পাশে সুন্দর একটি আদর্শ গ্রাম হতে পারত এটি। শহরের মানুষের হাঁপ ছাড়ার জায়গা হতে পারত। পর্যটন কেন্দ্র হতে পারত। ছোট নদী (বড় খাল) রয়েছে পাশে, ভেতরে ভেতরে জলাশয় রয়েছে। চমৎকার কিছু আয়োজন হতে পারত এসব ঘিরে।
হয়নি, হবেও না। দখল হচ্ছে, জগাখিচুরি হচ্ছে। এরচেয়ে বড় যেটা হচ্ছে— সেখানে কিচ্ছু হওয়ার আগেই সুরম্য দুটি উপসনালয় হয়েছে। অর্থাৎ দুর্বত্তরা নিজেদের কাভারআপ করার জন্য, মানুষকে বুঝ দেয়ার জন্য খুব দ্রুত ওটি বানিয়ে ফেলেছে, কারণ, সরকারি অনুদান আছে, লোকের কাছে টাকা চাইলেও এক্ষেত্রে পাওয়া যায়, ফলে কম বিনিয়োগে এবং সবচে কম মাথা খাঠিয়ে মানুষকে তারা ধোকা দেয়ার উপায়টাই কাজে লাগিয়েছে।
কিন্তু মশার কাপড়ে দাঁড়িয়ে থাকা যায় না। জানতে চাইলাম, মশার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা আছে কিনা, নেই। মশার বিরুদ্ধে তো ভালো, কোনো ধরনের কোনো নাগরিক সুবিধা সেখানে নেই। সন্ধ্যের পরেই ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে যায়, রাস্তায় লাইট নেই। খালের পানি ভয়ঙ্কর নোংড়া, সেখান থেকে দুর্গন্ধ ছুটছে সবসময়।
কিন্তু খুব বেমানানভাবে দুটি উপসনালয় বানানো হয়েছে! ওটার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে সত্যিই কোনো স্বস্তি খোঁজার মতো অবস্থায় আধুনিক মানুষ আছে এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। কথা বলে বুঝলাম— তারা জাস্ট পেরে ওঠে না।
যে কথা শুরুতে বলছিলাম— মুক্তির পথে মূল বাধাটা কোথায় এটা সরাসরি বলা যায় না, এটা সবচে বড় দুঃখ এদেশে। এটা গবেষণা করে বুঝিয়ে দেয়া সম্ভব যে, কেন সরাসরি বলাটা জরুরি। কারণ, যাদেরকে বলতে হবে শৈল্পিকভাবে বললে তারা বুঝবে না। তাদের সরাসরি বলতে হবে, ফলে তারা খেপবে আবার চিন্তাও করবে।
ধর্ম ব্যবসায়ীরা কিন্তু চায় আপনি যেন সরাসরি না বলেন, কৌশলে বললে তাদের কোনো অসুবিধা নেই। কারণ, কৌশলে বললে যাদের কানে পৌঁছাবে তাদের বুঝ নিয়ে তারা ভাবিত নয়, যে শ্রেণির মাথায় তারা কাঁঠাল ভাঙে তারা যে সরাসরি না বললে বুঝবে না, এটা তারা (ধর্মব্যবসায়ীরা) জানে।