বাগেরহাট সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামেও একটি গণহত্যা ঘটেছিল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে। স্থানীয় মনোয়ারা বেগমের উদ্ধৃতিতে জানা যায়—
এই
গ্রামের প্রায় অর্ধেক লোক হিন্দু । তাই এখানে সবচেয়ে বড় মন্দিরটি ছিল হাটখোলায়। এই মন্দিরের পুরোহিত বাদল ঠাকুর ছিলেন খুবই ধর্মপরায়ণ। দেশের অবস্থা খারাপ হলে তাঁর পরিবারের সকলে ভারত চলে যায়। কিন্তু তিনি মন্দিরেই থেকে গেলেন। যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে সকল হিন্দু পাঞ্জাবি-টুপি পওে নাম পাল্টে মুসলমান হয়ে গেলেন। সবাই কালেমা ও নামায শিখে ফিরলেন। কিন্তু বাদল ঠাকুর এটা করলেন না। তিনি ধুতি পরে থাকলেন।
যুদ্ধের মধ্যভাগে খানসেনারা বিষ্ণুপুর গ্রামে প্রবেশ করে। প্রথমেই দুজনকে পেয়ে তাঁদের কাছে কালেমা জিজ্ঞেস করে। কিন্তু তাঁরা এটা না পারায় একজনকে জবাই এবং অন্যজনকে গুলি করে মারা হয়। যেখানে এদের মারা হয় মন্দিরটি ছিল তার কাছে। বাদল ঠাকুর তখন মন্দিরে অবস্থান করছিলেন। আমি ও আমার ছয় ছেলে-মেয়ে এবং আশপাশের বিশজনের মতো একটি গর্ত খুড়ে ওপরে খড়কুটা, লতাপাতা দিয়ে নিচে ছিলাম।
বাদল ঠাকুর গুলির শব্দে ভীত হয়ে মন্দির থেকে বের হতেই খান সেনাদের চোখে পড়ে যান। খান সেনারা বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তাঁর ভুঁড়ি বের করে ফেলে। এভাবে কিছু লোককে হত্যা করে খান সেনারা ওই দিনের মতো চলে যায়। তখন আমরা বের হয়ে দেখি বাদল ঠাকুর তখনও মারা যাননি। ছটফট করে বলছিলেন, আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে চলো। অল্প সময়ের মধ্যে তিনি মারা যান। এই হৃদয়বিদারক কথা মনে পড়লে চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে যায়।
বিষ্ণুপুর গ্রাম
গণহত্যা এবং গ্রামটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পোস্টটিতে চোখ রাখন: