পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ পাকা চাল কুমড়া ভূমিকা রাখে রোগ প্রতিরোধে

চাল কুমড়ার পুষ্টিগুণ

জালি চাল কুমড়া একটি জনপ্রিয় সবজি, সেই তুলনায় পাকা চাল কুমড়ার কদর কম। না জানার কারণে এটি হয়েছে, নইলে বরং পাকা চাল কুমড়ারই কদর আরো বেশি হওয়ার কথা। চাল কুমড়া গাছের পাতা ও ডগা শাক হিসেবে খাওয়া হয়। আমাদের দেশের প্রায় সর্বত্রই চাল কুমড়ার চাষ হয়। সাধারণত ঘরের চালে এ সবজি ফলানো হয় বলে এরকম নামকরণ করা হয়েছে। তবে বর্তমান সময়ে বাণিজ্যিকভাবে মাটিতে এবং উঁচু মাচায় চাল কুমড়ার আবাদ হচ্ছে। এক সময় গ্রামে মানুষের ছনের ঘর ছিল, তখন সেই ঘরের চালে গাছ বাইয়ে দিলে ফলত চাল কুমড়া। বেশিরভাগ কাঁচাই খাওয়া হতো, দুএকটা পাকানো হত।  

চাল কুমড়ার পুষ্টিগুণ
চাল কুমড়া।

পরিণত বয়সে লম্বাটে সবুজ আকারের চাল কুমড়াগুলোর গায়ে সাদা চুনের মতো দাগ পড়তে থাকে। সম্পূর্ণ পরিপক্ক হলে এটি বাহ্যিকভাবে সাদা রঙ ধারণ করে। অপরিণত চাল কুমড়ার গায়ে রোম থাকে। পরিণত হলে এর গায়ে সাদা চুনের মতো পাউডার জাতীয় পদার্থের আবরণ হয় যার ফলে এটি সংরক্ষণ করা যায়, সহজে নষ্ট হয় না। কাচা ও পাকা উভয় প্রকার চাল কুমড়াই পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। এ সবজিটি রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

চাল কুমড়ায় বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন, মিনারেল, শর্করা ও ফাইবার রয়েছে তাই চাল কুমড়ার উপকারিতা অনেক। যক্ষ্মা, কোষ্ঠকাঠিন্য ও গ্যাস্ট্রিকসহ বহু রোগের উপশম করে চাল কুমড়া। চাল কুমড়ার ইংরেজী নাম “Wax Gourd” বা “Ash Gourd” এবং বৈজ্ঞানিক নাম Benincasa hispida

  • চাল কুমড়া এন্টি মাইক্রোবিয়াল এজেন্ট হিসাবে পেট এবং অন্ত্রের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে। এটি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ইনফেকশন বা আলসার রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এটি মসলাযুক্ত খাবার বা দীর্ঘদিনের জন্য উপবাসের কারণে পাকস্থলিতে তৈরি হওয়া এসিড দূর করতে সাহায্য করে।
  • চাল কুমড়া মানসিক রোগীদের জন্য পথ্য হিসেবে কাজ করে, কারন এটি ব্রেইন এর নার্ভ ঠাণ্ডা রাখে। এই জন্য চাল কুমড়াকে ব্রেইন ফুড বলা হয়।
  • প্রতিদিন চাল কুমড়ার রস খেলে যক্ষ্মা রোগের উপসর্গ কেটে যায়। চাল কুমড়া রক্তপাত বন্ধ করতে সাহায্য করে, যাদের কাশের সঙ্গে রক্ত বের হয়, এমন ক্ষেত্রে চাল কুমড়ার রস খেলে ভালো হয়ে যায়। এতে রক্ত বের হওয়া থেমে যায়।
  • চাল কুমড়া শরীরের ওজন ও মেদ কমাতে অনেক উপকারি একটি সবজি। এটি রক্ত নালীতে রক্ত চলাচল সহজতর করে। চাল কুমড়া অধিক ক্যালরি যুক্ত খাবারের বিকল্প হিসেবেও খাওয়া যায়।
  • মুখের ত্বক এবং চুলের যত্নেও চাল কুমড়ার রস অনেক সাহায্য করে। চাল কুমড়ার রস নিয়মিত চুল ও ত্বকে মাখলে চুল চকচকে হয় এবং ত্বক সুন্দর হয়, বয়সের ছাপ প্রতিরোধ করতেও চাল কুমড়া সাহায্য করে।

এছাড়া চাল কুমড়ার বিচি গ্যাস্ট্রিক রোগের উপশম করে। কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ফাঁপা এবং প্রস্রাব কোন কারণে অনিয়মিত হয়ে গেলে চাল কুমড়া খেলে অনেক উপকার হয়।

পাকা চাল কুমড়া দিয়ে মোরব্বা তৈরি করা হয়। এটি তরকারি হিসেবেও খাওয়া হয়। এছাড়া পাকা চাল কুমড়া দিয়ে হালুয়া ও পায়েশ তৈরি করা যায়। কুমড়ো বড়ি তৈরিতেও এটি ব্যবহৃত হয়। সংরক্ষণ উপযোগি বলে পাকা চাল কুমড়া দীর্ঘদিন ঘরে সংরক্ষণ করে রাখা যায়। চাল কুমড়া আমিষ, শর্করা, চর্বি ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ বলে অনেকে খাদ্য তালিকায় এ সবজিকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।

প্রতি ১শ’ গ্রাম চাল কুমড়ায় ১৩ কিলোক্যালরী খাদ্য শক্তি, ০.৪ গ্রাম আমিষ, ৩ গ্রাম শর্করা, ২.৯ গ্রাম ফাইবার, ০.২ গ্রাম চর্বি, ১০.১ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ১৫০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ১১ মিলি গ্রাম ম্যাগনেসিয়াম, ২৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ২ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ০.২ মিলিগ্রাম লৌহ, ০.৭ মিলিগ্রাম জিংক, ১৩ মিলিগ্রাম ফসফরাস রয়েছে।