সম্প্রতি ভারতের বনগাঁও ভ্রমণে গিয়েছিলাম। সেখানে দেখতে পেলাম নীল বিদ্রোহকে স্মরনীয় করে রাখার জন্য পৌর কর্তৃপক্ষ শহরের উপকণ্ঠে একটি নয়নাভিরাম ভাস্কর্য স্থাপন করেছে।
উনিশ শতকের প্রথমভাগে নীল ব্যবসা লাভজনক হয়ে ওঠে। ইংরেজ কুঠিয়ালরা নদীয়া, ২৪ পরগণা, যশোহর, খুলনা ও পাবনায় কৃষকদের উৎকৃষ্ট জমিতে নীল চাষে বাধ্য করে। হ্যালিডে বাংলায় ছোট লাট হয়ে এসে নীল কুঠিয়ালদের অবৈতনিক সহকারী ম্যাজিট্রেট পদে নিয়োগ দেন। এভাবেই বানরের হাতে খোন্তা তুলে দেওয়া হলে বাংলার কৃষকদের ওপর অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যায়। প্রতিটি কুঠিতে ছিল কয়েদখানা। নীলচাষে অবাধ্য কৃষকদের কয়েদখানায় আটকে রাখা হত। কারো কারো বাড়ি পুড়িয়ে দিয়ে গরু, ছাগল, থালা, বাটি লুট করা হত। অত্যাচারে যারা ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেত তাদের ভিটে মাটি লাঙল দিয়ে নীল চাষ করা হত।
কুঠিয়ালদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে হিন্দু-মুসলিম, আদিবাসী ও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল কৃষকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। ১৮৬০ সালে কৃষকরা নীল চাষ বন্ধ করে দেয়। বিদ্রোহ দমনের জন্য ইংরেজ সরকার পদাতিক সৈন্য পাঠায়। নদীপথে রণতরী টহল দেওয়া শুরু করে।
দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে কৃষকরা সরকারী অফিস, ম্যাজিস্ট্রেটের কাছারি প্রভৃতি দখল করে নেয়। ইংরেজরা পিছু হটে এবং কৃষকদের ওপর জোর জুলুম ও ভীতি প্রদর্শন বন্ধের আদেশ দেয়।
লেখক ও প্রকাশক