সুস্থ থাকতে হলে বিশুদ্ধ পানি পানের বিকল্প নেই …

জারের পানি দূষিত

বিশুদ্ধ পানি ছাড়া আমাদের জীবন চলে না। আমাদের শরীরের দুই-তৃতীয়াংশ হচ্ছে পানি। আর এ জন্যই বলা হয় পানির অপর নাম জীবন। সুস্থ থাকতে এবং রোগ প্রতিরোধ করতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি। সারাদিন আমরা নানা ধরনের খাবার খাই আর এ খাবারগুলোর মধ্যে একমাত্র পানিই চর্বি, শর্করা ও চিনিমুক্ত। আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর ঠিকভাবে কর্ম সম্পাদনের জন্য প্রয়োজন পানি।

মানবজীবনে সুস্থ থাকতে হলে বিশুদ্ধ খাবার পানির কোনো বিকল্প নেই। কেবল মানুষই নয় প্রাণিকুলের স্বাভাবিক জীবনের জন্যও পানি প্রয়োজন। আদিকাল থেকেই বিশুদ্ধ খাবার পানি সংগ্রহ করার জন্য মানুষের সংগ্রাম করতে হয়েছে। সুস্থ জীবনের জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানির সরবরাহ নিশ্চিত করাটা এখনো বড় চ্যালেঞ্জ। 

শরীরের জন্য পানি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হলেও সারাদিন আমরা কিন্তু নিয়ম মেনে পানি পান করি না। পিপাসা ছাড়া পানি পান করার কথা অনেকেই আমরা চিন্তাও করি না। আমাদের শরীরে প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রয়োজন পানির। দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, বিভিন্ন বর্জ্য নিষ্কাষণ, খাবার হজম করতে, রক্ত তৈরি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির ক্ষেত্রে শরীরের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান পানি।

তাই আমাদের সবার অবশ্যই প্রতিদিন নিয়ম মেনে পানি পান করার অভ্যাস করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুস্থ থাকার জন্য আমাদের প্রতিদিন দেড় থেকে আড়াই লিটার পানি পান করা উচিৎ। শারীরিক পরিশ্রম বেশি হলে বা শরীর বেশি ঘামলে বেশি পানি পান করতে হবে। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস পানি পান করলে শরীরের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সক্রিয় হয়, খাবার খাওয়ার আধা ঘণ্টা আগে পানি পান করলে হজমে সাহায্য করে, ঘুমাতে যাওয়ার আগ মুহূর্তে এক গ্লাস পানি পান করলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে। এছাড়াও পর্যাপ্ত পানি পানের মাধ্যমে মাথা ধরা, শরীর ব্যথা, হৃদযন্ত্রের সমস্যা, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, হাঁপানি, কিডনি ও ইউরিন সমস্যা, বমি, গ্যাস্ট্রিক, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, শরীর থেকে টক্সিন জাতীয় পদার্থ বের করতে এবং ডায়াবেটিস সহ নানা রোগ থেকে ঝুঁকিমুক্ত থাকতে পানির কোনো বিকল্প নেই। তাই নিয়ম মেনে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি।

প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করার জন্য আমাদের বাড়িতে হাতের কাছে পানির বোতল রাখতে হবে; কর্মক্ষেত্রে টেবিলে বা ডেস্কে একটি পানির বোতল হাতের কাছেই রাখতে হবে; যারা সারাদিন ছোটাছুটির কাজ বা ভারি কাজ করেন, তাদের কাজের ফাঁকে নিয়ম মেনে একটু বেশি পরিমাণ পানি পান করতে হবে। সুস্বাস্থ্য, অধিক কর্মদক্ষতা, ভালো ত্বক, ওজন কমানো এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে পানির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। পানি পান করা যতটা জরুরি, ঠিক ততটাই জরুরি পরিমিত পরিমাণ পানি পান করা। পনি উপকারি বলে মাত্রাতিরিক্ত পানি পান করা ঠিক নয়।

আমরা প্রতিনিয়ত যে পানি পান করছি, একবারও কি ভেবে দেখছি— এই পানি পানের জন্য কতটা নিরাপদ? তীব্র গরমে, কাজের ফাঁকে কিংবা জ্যামে আটকে থাকায় নামকরা কোনো প্রতিষ্ঠানের মোড়কে বোতলজাত ঠাণ্ডা পানি বিক্রি হচ্ছে দেখে তা পান করলাম, কিন্তু সে পানি কি আমাদের শরীরের জন্য নিরাপদ! এমন পানি অনেকেই নিশ্চিন্তে পান করছেন; যার ফলে বেড়ে যাচ্ছে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি। হেপাটাইটিস, টাইফয়েড, ডায়রিয়া, কলেরা ও আমাশয়সহ আরও অনেক জটিল ও কঠিন রোগের কারণ হতে পারে দূষিত পানি। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে, দূষিত পানি পান করলে তা মরণব্যাধি ক্যান্সারের কারণও হতে পারে।

বাসাবাড়িতে নিজেদের টিউবওয়েল (আর্সেনিক এবং অতিরিক্ত আয়রনমুক্ত হতে হবে), ফিল্টার (ফিল্টারটি সঠিক হতে হবে), ফুটিয়ে (ফুটালে পানি জীবাণুমুক্ত হয়, কিন্তু ভারী ধাতুমুক্ত হয় না)  পানি বিশুদ্ধ হলেও বাইরে পানি পান করার সময় আমাদের হতে হবে সচেতন। বাইরের বিভিন্ন দোকানপাট, হোটেল কিংবা রাস্তার ভ্রাম্যমাণ পানি যদি হয় অনিরাপদ; তবে তা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য হতে পারে চরম বিপর্যয়ের কারণ। দূষিত পানি পান করার কারণে সম্প্রতি পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়ে গেছে।

রাজধানী ঢাকায় দৈনিক পানির প্রয়োজন ২২০ থেকে ২৩০ কোটি লিটার। ওয়াসাসহ ঢাকার পানি সরবরাহকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান চাহিদার পুরোটাই সরবরাহ করে। সংশ্লিষ্টদের মতে, সরবরাহকৃত পানির ১৫ শতাংশ আসে সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার থেকে। শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গা থেকে পানি এনে শোধন করে তা নগরবাসীর জন্য সরবরাহ করা হয়। ঢাকার বেশিরভাগ এলাকায় পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান যে পানি সরবরাহ করে, তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক সময় তা গন্ধযুক্ত ও পানের উপযোগী থাকে না। আর বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটের সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু ব্যক্তি বাণিজ্য করছে। বিশুদ্ধ পানির নামে বোতলজাত পানি অথবা জেরিক্যানে বিক্রির ব্যবসা চালাচ্ছে। রাজধানীসহ সারাদেশে নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকিরা জেরিক্যানে করে যে পানি বিক্রি করে তা বিশুদ্ধ নয়।

পানি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. এম আশরাফ আলী বলেন, ‘স্বাভাবিক নিয়মে ভূগর্ভস্থ পানির যে স্তরটুকু খালি হয়, তা পরবর্তী সময়ে প্রাকৃতিকভাবেই পূরণ হয়ে যাওয়ার কথা; কিন্তু ঢাকাসহ আরো কিছু এলাকায় তা হচ্ছে না। ভূগর্ভের পানি শুধু কমছেই, বাড়ছে না। অপরিকল্পিতভাবে নলকূপ বসিয়ে পানি অপচয়ের কারণে এখন বিশুদ্ধ পানি সহজে পাওয়া যাচ্ছে না। মানুষের অসচেতনতা এবং নদী দখলদারদের কারণে বুড়িগঙ্গা, তুরাগসহ ঢাকার পার্শ্ববতী নদী খাল মারাত্মক দূষণে পরিণত হয়েছে। নদী দূষণের কারণে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট দিয়েও পানি সঠিক মাত্রায় নিরাপদ করা যাচ্ছে না।

পানিতে মিশে থাকা বিষাক্ত কেমিক্যাল, ভারি ধাতু, মরিচা, সিসা, বিভিন্ন দূষিত পদার্থ পানি ফোটানোর পরও অনেক সময় পুরোপুরি দূষণমুক্ত হয় না। ব্যাকটেরিয়াসহ অন্যান্য ক্ষতিকর জীবাণু ধ্বংসের জন্য পানি সঠিক তাপমাত্রায় ৩০ থেকে ৪০ মিনিট ফোটানো দরকার। এছাড়া পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য বিকল্প হিসেবে উন্নত মানের ফিল্টার ব্যবহার করা যায়।

আমাদের এখনই পানির উৎস নিয়ে ভাবতে হবে। নদী ও খালগুলো পুনরুদ্ধার করতে হবে। ইতিমধ্যেই পানি দূষণ এবং নদী দখল করে অবৈধ স্থাপনাকারীদের বিরুদ্ধে সরকার অভিযান পরিচালনা করেছে। শিল্পকারখানার বর্জ্য কোনোভাবেই যেন পানিতে মিশে পানি দূষণ করতে না পারে সে বিষয়ে সচেতন হতে হবে। নদীগুলো থেকে জরুরিভাবে ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করতে হবে। কিছুদিন আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নদীদূষণের কারণ খুঁজে বের করার কথা বলেছেন এবং নদী রক্ষায় একটি মহাপরিকল্পনার কথাও বলেছেন। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঢাকা ওয়াসা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। পানিদূষণের জন্য নয়টি উৎস দায়ী। এগুলো শনাক্ত করে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ২০২১ সাল নাগাদ পরিবেশবান্ধব গণমুখী পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে আশা করা যায়।

দেশে পানিদূষণের কারণে প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক মানুষ প্রাণ হারায়। সরকার পানিদূষণ রোধে কার্যকর কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। নদীকে দূষণমুক্ত রাখা আমাদের সবার দায়িত্ব। এই জনস্বাস্থ্য সমস্যার মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি আমাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে হবে। মনে রাখতে হবে— সুস্থ থাকার জন্য বিশুদ্ধ পানি পানের কোনো বিকল্প নেই।


বিজ্ঞাপন

kent.co.bd (দোকানের চেয়ে কম মূল্যে ফিল্টার কিনতে এই ওয়েব সাইটটি ভিজিট করুন।)

কেন্ট রিভার্স অসমোসিস

ভারী ধাতুসহ পানিতে থাকা সকল ধরনের জীবাণুমুক্ত করে আধুনিক ফিল্টারগুলো। রিভার্স অসমোসিস ফিল্টার থেকে শতভাগ বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যায়। পরিবারকে নিরাপদে রাখতে এ ধরনের একটি ফিল্টার হতে পারে সচেতন মানুষের লাভজনক বিনিয়োগ। কারণ, বিশুদ্ধ পানি পান করে আপনি থাকবেন রোগমুক্ত, ফলে বড় ব্যধি বাধিয়ে লাখ লাখ টাকা আপনার খরচ করতে হবে না।