আমি বীরাঙ্গনা, আমার চেতনায় মহান মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য // ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী

ferdousi priyabhashini

“আমি বীরাঙ্গনা, আমার চেতনায় মহান মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য। আমার গর্ব মহান মুক্তিযুদ্ধ।”

উপরের বলিষ্ঠ শব্দগুলি উচ্চারণ করেছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের নিবেদিতপ্রাণ ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী। দেশের পরাধীনতার গ্লানি তার ভেতর এতটাই যন্ত্রণার সৃষ্টি করেছিল, যা তার সম্ভ্রম হারানোর বেদনাকে অতিক্রম করে গিয়েছিল।

আমাদের বিজয়ের পর মুক্তিযোদ্ধারা বুক ফুলিয়ে যে যার ঘরে ফিরে গেছেন। কিন্তু স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি চার লক্ষ সম্ভ্রমহারা নারী। রক্ষণশীল সমাজের বৈরী আচরণে নির্বাক হয়ে যাওয়া চার লক্ষ বীরাঙ্গনা নারীর মুখপত্র হয়ে তিনিই প্রথম সাহসের সাথে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্যাতনের কথা জনসমক্ষে তুলে ধরেন। গর্বের সাথে তার নামের সঙ্গেও যুক্ত করেন ‘বীরাঙ্গনা’ শব্দটি।

প্রিয়ভাষিণীকে নির্যাতনের জন্য পাকিস্তানিরা তিনটি অভিযোগ খাঁড়া করে—

১. মেঝোভাই শিবলীর মুক্তিযুদ্ধে যোগদান;

২. শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান হত্যাকাণ্ড;

৩. নকশাল কর্মকাণ্ডে জড়িত।

নির্যাতনের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “রাতে ফিদাই, ক্যাপ্টেন সুলতান, লে. কোরবান আর বেঙ্গল ট্রেডার্সের অবাঙালি মালিক ইউসুফ আমাকে যশোর নিয়ে যায়। যাওয়ার পথে গাড়ির ভেতর তারা আমাকে ধর্ষণ করে। নির্মম নৃশংস নির্যাতনে এক পর্যায়ে আমার বোধশক্তি লোপ পায়, ২৮ ঘন্টা অচেতন থাকি।” (সাক্ষাৎকার: লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির)

আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন— “অনেক রাত শেষ প্রহরে আমার উপর চলছিল নিদারুণ নির্যাতন। …ওরা গাড়ি থামিয়ে আমাকে কফি খেতে বলে। আমি দু’হাতে মুখ ঢেকে বলি কোথায় নিয়ে যাবে , তাই চলো। ওরা তখন অট্রহাসিতে ফেটে পড়ে। ওল্ড স্পাইস হুইস্কির বোতল (তখন অবশ্য চিনতাম না, পরে জেনেছি) বের করে কেউ কেউ পান করছে। …মাঝে মাঝে মনের উল্লাসে অট্রহাসিতে ফেটে পড়ে আমার মুখে কুলি করে ছিটিয়ে দিচ্ছিলো। পাটের গুদামের পাশে গাড়ি রেখে একের পর এক নির্যাতন করছিল। আমি অজ্ঞানের মতো নিথর দেহ মনে পড়ে রইলাম। হয়ত সেই মুহূর্তে আমার কোনো জ্ঞান ছিল না।”

আজ ৬ মার্চ ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর প্রস্থান দিবস। ভাস্কর, বীরাঙ্গনা ও মুক্তিযোদ্ধা প্রিভাষিণীর মৃত্যু নেই। তিনি এদেশের কাঁদা-জলে মিশে থাকবেন। তার মহান আত্মত্যাগ পৃথিবীর বিপন্ন মানুষের মুক্তি সংগ্রামে অনুপ্রেরণা যোগাবে।


আলী আকবর টাবী