আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় উদ্ধার হয় দিব্যেন্দু দ্বীপের স্ত্রী এবং সন্তান

দিব্যেন্দু দ্বীপ

সুবর্ণা তার সন্তান ঈশপ শিবুকে নিয়ে বড় বোন খায়রুন্নাহার মিতু, খালাতো বোন লাইজু, খালাতো ভাই শরীফ সোহেল এবং তার স্ত্রী উম্মে হাবিবার চক্রান্তে খালাতো ভাইয়ের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের জোড়ার দেউল গ্রামে আত্মগোপন করেছিলেন ছয় থেকে আট দিন।এরপর পুলিশের ততপরতায় রামপুরা থানায় মুচলেকা দিয়ে বড় বোন এবং দুলাভাইয়ের জিম্মায় তাদের গেন্ডারিয়ার বাসায চলে যান। যদিও শেষ পর্যন্ত আবার সেই সোহেলের বাসাতেই হদিশ পাওয়া যায়। এবং বর্তমানে তিনি মুন্সিগঞ্জের রামপাল ইউনিয়নের দালালপাড়া গ্রামে একটি বাড়িতে আছেন বলে জানা যায়।


ঈশপ এবং ঈশপের মা নুরুন্নাহার সুবর্ণাকে গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে পাওয়া যাচ্ছিল না। বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার কথা বলে ঐদিন বিকালে গেলেও ১ অক্টোবর (২০২০) পর্যন্ত তাদের কোনো সন্ধান পাওয়া যায় নাই। এ প্রেক্ষিতে সুবর্ণার স্বামী দিব্যেন্দু দ্বীপ রামপুরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (ডায়েরি নং- ১৩০৭, তারিখ: ২৫/০৯/২০২০) করেন। উল্লেখ্য, দিব্যেন্দু দ্বীপ এবং নুরুন্নাহার সুবর্ণার সন্তান ঈশপ শিবু একজন বিশেষ শিশু। এ ধরনের শিশুদের পিতা বা মাতা যে কারো কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করলে তার ফলাফল খুবই নেতিবাচক হয়।
সুবর্ণার পিতা-মাতা, ভাই এবং মামা-খালা এ জাতীয় অধিকাংশ আত্মীয়-স্বজন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এবং ঢাকায় বা তাদের গ্রামের বাড়ী মুন্সিগঞ্জে কোনো বাসা নেই। মুন্সিগঞ্জ জেলার টঙ্গিবাড়ী উপজেলার নিতিরা গ্রামে (ডাকঘর: আড়িয়াল বাজার) সুবর্ণাদের বাড়ী, তবে সেখানেও এখন তেমন আপনজন কেউ থাকে না। তাই সুবর্ণা কোথায় গিয়ে থাকতে পারে তার সম্ভাব্য দুটি অপশন ছিল— ঢাকায় ওনার বড় বোন খায়রুন্নাহার মিতুর বাসা অথবা মামাতো বোন অনামিকা জামানের বাসা। বড় বোনের বাসা পুরনো ঢাকার গেন্ডারিয়ায়,  অনামিকা জামানের বাসা উত্তরায়।  

সুবর্ণার বড় বোন খায়রুন্নাহার মিতু সুবর্ণার স্বামী দিব্যেন্দু দ্বীপের বন্ধু মুক্তা আক্তারকে ২৪ সেপ্টেম্বর (২০২০) জানিয়েছিলেন যে, সুবর্ণা তাদের বাসাতেই আছেন। এ খবরে সুবর্ণার স্বামী কিছুটা স্বস্তি বোধ করেন। তারপরও সন্দেহ থেকে যাওয়ায় বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য সুবর্ণার বড় বোন খায়রুন্নাহার মিতুকে ৩০ সেপ্টেম্বর ফোন করে। মিতু বিশেষ কিছু জানাতে অসমর্থতা প্রকাশ করেন এবং ফোন মিতুর স্বামী মাহফুজুর রহমান মিঠু ধরেন। এরপর দিব্যেন্দু দ্বীপের সাথে মাহফুজুর রহমানের কিছুক্ষণ বাক বিতণ্ডা হয়। সুবর্ণা সম্পর্কে তারা কোনো তথ্য দিতে অস্বীকার করেন। এতে দ্বীপের সুবর্ণার অবস্থান নিয়ে সন্দেহ হয়। এরপর দ্বীপ চলে যান রামপুরা থানায়। দ্বীপের করা সাধারণ ডায়েরির (জিডি নং-১৩০৭, ২৫/০৯/২০২০) প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকতা জুয়েল মিঞা মিতুর নম্বরে ফোন করেও কোনো হদিশ বের করতে পারেন না। অবশেষে দ্বীপ সাধারণ ডায়েরির কপি নিয়ে চলে যান গেন্ডারিয়া থানায়। সেখান থেকে পুলিশ নিয়ে খায়রুন্নাহার মিতু এবং মাহফুজুর রহমানের বাসায় গেলে, তারা তাদের ঘরে অনুসন্ধান করতে বলেন এবং সুবর্ণার কোনো হদিশ আসলেই তারা জানেন না বলে জানান।

অবশেষে পুলিশের চাপে তারা শেষ পর্যন্ত জানান যে, সুবর্ণা আছে ওর খালাতো ভাই সোহেলের বাসায় মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার রামপাল ইউনিয়নের জোড়ার দেউল গ্রামে। পুলিশ সেখান থেকে দ্রুত সুবর্ণা এবং ঈশপ শিবুকে নিয়ে এসে থানায় হাজির হতে বলেন। সে মোতাবেক সুবর্ণা সকাল ৭টা ৪৫ মিনেটে গেণ্ডারিয়া থানায় হাজির হন। গেন্ডারিয়া থানায় বসে মীমাংসার প্রাথমিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে সবাইকে নিয়ে আসা হয় দ্বীপের সাধারণ ডায়েরিকৃত থানা রামপুরায়। রামপুরা থানায় বসে পুলিশ চেষ্টা করে দিব্যেন্দু দ্বীপ এবং নুরুন্নাহার সুবর্ণার সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে। কিন্তু সুবর্ণার বড় বোন খায়রুন্নাহার মিতু এবং দুলা ভাই মাহফুজুর রহমানের অসহযোগিতায় সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এরপর থানায় মুচলেকা এবং অঙ্গিকারনামা দিয়ে সুবর্ণা তার বড় বোন এবং দুলাভাইয়ের জিম্মায় চলে যান। উল্লেখ্য, থানায় বসে তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং সাংবাদিকদের কাছে নুরুন্নাহার সুবর্ণা বাসা থেকে বের হয়ে খালাত ভাইয়ের বাসায় ছয় থেকে আট দিন থাকার বিশেষ কোনো কারণ দেখাতে ব্যর্থ হন। সংসার না করার কোনো কারণও তিনি দেখাতে পারেননি। সাংবাদিকরা তার সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি কিছু বলতে অস্বীকার করেন।

সাংবাদিকদের এক বিশেষ অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে— সুবর্ণার বড় বোন খায়রুন্নাহার মিতু এবং খালাতো ভাই সোহেল, সোহেলের বোন লাইজু ও তার স্ত্রী দীর্ঘদিন সুবর্ণার পিছনে থেকে থেকে ওর ব্রেন ওয়াস করেছে কখনো ধর্মের নামে, কখনো সুবর্ণার স্বামী দ্বীপ এবং তার পরিবার সম্পর্কে নেতিবাচক কথা বলে বলে। কখনো আবার তারা সুবর্ণাকে ভালোবাসার ভাণ করেছে সুবর্ণাকে কব্জা করতে। মূলত তারা ইসলামের শান্তিপ্রিয় এবং মানবিক দিকের বিপরীতে রাজনৈতিক ইসলাম তথা উগ্রবাদী দর্শনে বিশ্বাস করে— যেখানে ভিন্ন ধর্ম এবং ভিন্ন মতের কোনো স্থান নেই। এজন্য সুবর্ণাকে যেকোনোভাবে দ্বীপের কাছ থেকে সরিয়ে নেওয়াটাই ছিল তাদের উদ্যেশ্য। কেন সুবর্ণা স্বামীকে কিছু না জানিয়ে খালাত ভাইয়ের বাসায় গিয়েছিল, এবং সুবর্ণা এবং তার সংশ্লিষ্ট আত্মীয়রা কেন বিষয়টি গোপন রেখেছিল সেটি এখন একটি বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে— তারা কি সুবর্ণা এবং তার সন্তান ঈশপ শিবুকে হত্যা করে দ্বীপের ওপর দায় চাপাতে চেয়েছিল? আদালতের স্মরণাপন্ন হয়ে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা চাইতে হবে বলে জানিয়েছেন দিব্যেন্দু দ্বীপ।

পূর্ব ইতিহাসঃ
সুবর্ণাকে দুই মেয়াদে ওর পরিবার বন্দী করে রাখে। (নিচের এই ভিডিওটিতে আটক থাকা অবস্থায় ওকে ওর স্বামীর সাথে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে। সুবর্ণার স্বামী তখন অন্য বাসার ছাদে দাঁড়িয়ে ওর সাথে কথা বলছিলেন, এবং এভাবে কথা বলার ব্যবস্থা পাশের বাড়ির এক নারীর সাথে কথা বলে সুবর্ণাই করেছিলেন।)

তারা সুবর্ণাকে একবার আটকে রাখে ২০০৫ সাল থেকে ২০০৭ সাল (১৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৭) পর্যন্ত, আরেকবার ২০০৭ সাল (০১/০৭/২০০৭) থেকে ২০১০ সাল (০৮/০২/২০১০) পর্যন্ত। এর মধ্যে ২০০৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি নুরুন্নাহার সুবর্ণা এবং দিব্যেন্দু দ্বীপের বিবাহ হয় বিশেষ বিবাহ আইনে (স্পেশাল ম্যারেজ আইন ১৮৭২, ফরম নং- ১৬২৭)। ২০০৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সুবর্ণাকে ওদের মিরপুর পল্লবীর (২/ডি/১৩, পল্লবী, ঢাকা) বাসা থেকে তালা ভেঙে তখন উদ্ধার করা হয়েছিল। এ উদ্ধার কাজে সুবর্ণার মামাতো ভাই ইমন, ইমনের বন্ধু সৌরভ এবং সুবর্ণাদের বাসার কাজের মেয়ে সহযোগিতা করেন। ঐদিনই সুবর্ণা ও দ্বীপের মধ্যে বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়, এবং সাথে সাথে তা সুবর্ণার পরিবারকে জানানো হয়। কিন্তু সুবর্ণার মা নাজমা বেগম বিবাহের আট দিন পর ১৫/০২/২০০৭ তারিখে পল্লবী থানায় ঘর থেকে বেরিয়ে মেয়ে আর ফেরেনি বলে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং- ১১৭১, ১৫/০২/২০০৭) করেন।  এরপর ২৮/০৩/২০০৭ তারিখে সুবর্ণার মা পল্লবী থানায় আরেকটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং- ২৭০৬, ২৮/০৩/২০০৭) করেন। এখানে তিনি বিবাহের খবরটি জানতে পারার কথা উল্লেখ করেন এবং পাশাপাশি আরো লেখেন, “আমার মেয়ে অসম্ভব জেদী এবং একরোখা। … আমি আশংকা করছি আমার মেয়ে সুবর্ণা যদি ভবিষ্যতে কোন কারণে দিব্যেন্দু দাস দ্বারা প্রতারিত হয় তাহলে যে কোন কঠিন কাজ অর্থাৎ আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে পারে। কারণ আমাদের কাছে ফিরে আসার মুখ তার নেই। অতএব, আমাকে আইনগত সহায়তা প্রদান করে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অনুরোধ করা হল।”

নুরুন্নাহার সুবর্ণা
স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট-১৮৭২ অনুযায়ি দিব্যেন্দু এবং সুবর্ণার বিয়ে হয় ২০০৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি।

বিবাহের পরে সার্বিক পরিস্থিতিতে এবং পরিবারের আশ্বাসে সুবর্ণা আবার বাসায় ফিরতে বাধ্য হলে সুবর্ণাকে তার পরিবার আবার বন্দী করে রাখে। যখন দিব্যেন্দু দ্বীপ সুবর্ণাকে তাদের বাসায় রেখে আসে তখন দ্বীপের কাছ থেকে জোর করে তারা সাদা কাগজে ‘অঙ্গিকারনামা’ শিরোনামে একটি লিখিত রাখে—

“আমি দিব্যেন্দু দ্বীপ, পিতাঃ মৃত শিবপ্রসাদ দাস, ঠিকানাঃ গ্রাম+পোস্টঃ মসনীম থানাঃ কচুয়া, জেলাঃ বাগেরহাট। এই মর্মে প্রত্যয়ন করিতেছি যে, নামঃ নুরুন্নাহার সুবর্ণা, পিতাঃ জনাব খোরশেদ আলম, ঠিকানাঃ ১৩ডি/২ পল্লবী। উহার সাথে আমার বিগত ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ তারিখে বিবাহ হয়। কিন্তু আমাদের মধ্যে পারস্পারিক সমজোতা  না হওয়ায় আমরা অদ্য ৩০ জুন ২০০৭ তারিখে বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিই। আজকে থেকে ভবিষ্যতে সুবর্ণা অথবা তার সাথে সংশ্লিষ্ট কাউকে কোনভাবে হয়রানি করিলে তাদের পক্ষ থেকে নিঃশর্তভাবে যেকোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করার অধিকার থাকবে।নিম্নোক্ত সাক্ষীগণের উপস্থিতিতে সজ্ঞানে স্বেচ্ছায় এবং বিনা প্ররোচনায় আমি উক্ত বিষয়ের পক্ষে সাক্ষর করলাম।”

অঙ্গিকারনামাটি তারা তখন দেড়শো টাকার একটি স্টাম্পে নোটারি করে। আইনগত যে কোনো বিবেচনায় কারো কাছ থেকে প্ররোচিত করে বা জোর করে এ ধরনের অঙ্গিকারনামা আদায় করা অবৈধ। তাছাড়া এ ধরনের অঙ্গিকারনামা নিলেই একটি আইনগত বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায় না। একইসাথে এরপর সুবর্ণার অভিভাবক সুবর্ণার কাছ থেকেও ৫০ টাকার স্টাম্পে একটি হলফনামা তৈরি করে স্বাক্ষর করায়। পরবর্তীতে সুবর্ণা জানিয়েছিলেন যে, এটি তারা জোরপূর্বক আদায় করেছিল।  সেখানে অজস্র মিথ্যা কথা লেখা রয়েছে, যেমন— 

♦ হলফনামায় লেখা হয়েছে, দ্বীপ এবং সুবর্ণার বিয়ে হিন্দুমতে হয়েছে। আসলে দ্বীপ এবং সুবর্ণার বিয়ে হয়েছে স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট-১৮৭২ অনুযায়ী যে যার ধর্মে থেকে।

♦ লেখা হয়েছে যে, সুবর্ণাকে ভুল বুঝিয়ে বিয়ে করা হয়েছে। আসলে সুবর্ণা নিজেই বাসা থেকে বেরিয়ে আসে বিবাহ করে। এবং প্রয়োজনীয় সাক্ষীর উপস্থিতিতে বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিয়ের দিন যারা উপস্থিত ছিলেন তার মধ্যে বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষক ড. মোঃ শরিফুল ইসলামও ছিলেন।

♦ লেখা রয়েছে, ৩০/০৬/২০০৭ তারিখে বাসা থেকে সুবর্ণাকে বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়।

এরকম বিভিন্ন বানোয়াট কথা লিখে তাতে সুবর্ণার স্বাক্ষর নেওয়া হয়। উল্লেখ্য, এভাবে স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টে বিবাহ হলে সে বিবাহের বিচ্ছেদ হতে পারে না। তাছাড়া দিব্যেন্দু দ্বীপকে অঙ্গিকারনামায় তারা যা লিখতে বাধ্য করে তার সাথে সুবর্ণাকে দিয়ে লিখতে বাধ্য করা উপরিউক্ত ভাষ্য সাংঘর্ষিক।

কথা হচ্ছে, সুবর্ণা যদি স্বেচ্ছায়ই এ বক্তব্য লিখবে তাহলে তাকে আবার গৃহবন্দী করে রাখার প্রয়োজন হলো কেন? পূর্বের মতই পড়াশুনা বন্ধ করে দিয়ে এরপর থেকে ০৮/০২/২০১০ সাল পর্যন্ত সুবর্ণাকে তারা আবার বন্দী রেখেছিল।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র সুবর্ণাকে ওদের গেন্ডারিয়ার বাসা থেকে উদ্ধার করে ২০১০ সালে (০৮/০২/২০১০)। সে সময় সাদা কাগজে সুবর্ণা একটি অঙ্গিকারনামা লেখেন–

“আমি নুরুণ নাহার সুবর্ণা (২২) পিতা হাজী মুহাম্মদ খোরশেদ আলম এই মর্মে জানাচ্ছি যে,অদ্য আমি আমার বাবার বর্তমান ঠিকানা ৬৯, ডিস্টিলারি রোড থানা গেন্ডারিয়া থেকে আইন ও সালিশ কেন্দ্রে স্ব ইচ্ছায় চলে যাচ্ছি। এ ব্যাপারে আমার মা বাবার কোনো দায় দায়িত্ব থাকবে না।”

সুবর্ণা

কাগজে সাক্ষী হিসেবে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের উদ্ধারকারী আইনজীবী নাহিদ শামসের সই রয়েছে। সুবর্ণা কিছুদিন আইন ও সালিশ কেন্দ্রে শেলটার হোমে থাকার পর দিব্যেন্দু দ্বীপের বৈধ স্ত্রী হিসেবে তার সাথে আবার থাকতে শুরু করে। 

৫ জুন ২০১৬ তারিখে সুবর্ণার পিতামাতা উদ্যোগী হয়ে এই বিয়েটি এফিডেভিট করে। এফিডেভিটে স্পষ্ট করে লেখা আছে— “That we do not professor believe in any religion at present.” অর্থ হচ্ছে, ঈশ্বর মানলেও নির্দিষ্ট কোনো ধর্মের প্রতি আমরা এখন থেকে আর অনুরক্ত নই।

Affidavit

দ্বীপ এবং সুবর্ণার বিয়ের কাগজপত্র সহ অন্যান্য কাগজপত্র আমেরিকান /////// জমা দেয় সুবর্ণার ছোট ভাই /////////////// তারিখে। উল্লেখ্য, সুবর্ণার ছোট ভাই নাজমুল আলম যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী, সে দিক থেকেই সুবর্ণার বড় বোন এবং সুবর্ণা সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য এই আবেদন করে। এটা দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, সুবর্ণার পিতামাতার এই বিয়েতে আর কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু এরপরেও তারা বিভিন্ন ধরনের হয়রানিমূলক কাজ করেছে।

২০১৭ সাল পর্যন্ত এই সম্পর্কটিকে ঘিরে তেমন কোনো সমস্যা না হলেও বিভিন্ন ধরনের ইন্ধন সুবর্ণার পিছনে সবসময় ছিল বড় বোন এবং অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের পক্ষ থেকে। সুবর্ণার স্বামীর পরিবারে বিভিন্ন সমস্যা থাকায় সেদিক থেকেও কিছু অস্বস্তি সবসময় ছিল। স্বামীর মা মানসিক রোগী হওয়ায় এবং স্বামীর অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙে পড়ায় সুবর্ণাও ভেতরে ভেতরে হয়ত ভেঙে পড়েছিল। সেই ভঙ্গুর অবস্থার সুযোগ নিয়েছে ওর বড় বোন খায়রুন্নাহার মিতু এবং ওর খালাতো ভাই সোহেল, সোহেলের বোন লাইজু এবং সোহেলের স্ত্রী উম্মে হাবিবা। এদের নানান ধরনের কূটচাল এবং ইন্ধনের কারণে ২০১৭ সালে (০৯/১২/২০১৭) দিব্যেন্দু দ্বীপের ছোট বোন দেবপ্রিয়ার সাথে ঝগড়া করে এক কাপড়ে হঠাৎ আড়াই বছর বয়সী ছেলে ঈশপকে নিয়ে চলে যান সুবর্ণা। তখন ওর পিতা-মাতা সুবর্ণাকে দিয়ে সূত্রাপুর থানায় স্বামীর বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং- কোনো জিডি নং দেওয়া নেই) করতে বাধ্য করেন। পরবর্তীতে এটি মামলায় পরিণত করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল বলে জানা যায়। জিডিতে সুবর্ণাকে দিয়ে লেখানো হয়েছিল— “বিবাহের পর থেকেই প্রতিনিয়ত কারণে অকারণে আমাকে অকথ্য ভাষায় করিত ও শারীরিক নির্যাতন করে। এর জের ধরে অদ্য ০৯/১২/২০০৭ইং তারিখে সকাল আনুমানিক ১০ টায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করিয়া সে আমার প্রতি ক্ষিপ্ত হইয়া আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। ও কিল ঘুষি মারিয়া জখম করে এবং আমাকে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করে। এমনকি আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করে। আমি প্রাণ ভয়ে অদ্য ০৯/১২/২০১৭ তারিখে ২ টায় বর্তমান ঠিকানায় চলে আসি। আমার ধারণা সে আমার বড় ধরনের ক্ষতি সাধন করতে পারে।” এরপর আইন ও সালিশ কেন্দ্রের মধ্যস্থতার সময় সুবর্ণা জানায় জিডিতে সে কিছুই লেখেনি, তার পিতা-মাতা এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তাকে অন্ধকারে রেখে সই নেয়।  আইন ও সালিশ কেন্দ্রের মধ্যস্থতায় আবার সম্পর্কটি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে সুবর্ণা মিথ্যা এ মামলাটি (ইতিমধ্যে উক্ত সাধারণ ডায়েরির প্রেক্ষিতে থানা থেকে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল) তুলে নেন। মধ্যস্থতার সময় অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন এবং এনজিওকর্মী মুক্তা আক্তার আইন ও সালিশ কেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন। সুবর্ণা তার সন্তান ঈশপকে নিয়ে দিব্যেন্দু দ্বীপের কাছে ফিরে আসেন। 

আইন ও সালিশ কেন্দ্র
আইন ও সালিশ কেন্দ্রে মধ্যস্থতার আবেদন তখন (২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর) সুবর্ণাই করেছিলেন।

সুবর্ণার পিতা-মাতার বাসা থেকে ফেরার পর থেকে ঈশপের মধ্যে আচরণগত সমস্যা দেখা দেয়, যেটিকে চিকিৎসকরা পরবর্তীতে অটিজম হিসেবে সণাক্ত করেন। যেহেতু ঈশপের সাথে ঈশপের পিতার সম্পর্ক খুব গভীর ছিল, তাই যে কয়দিন ঈশপকে নিয়ে সুবর্ণা হঠাৎ করে একটি ভিন্ন পরিবেশে ছিলো, তাতে শিশুটি মানসিকভাবে বিশেষ আঘাত পেয়ে থাকতে পারে বলে অনেক মনে করেন। যদিও দিব্যেন্দু দ্বীপ এ বিষয়ে কিছু বলতে চাননি। ঐ কয়দিন ঈশপের সাথে “কী ধরনের আচরণ” করা হয়েছিল, সেটি কখনই নিশ্চিত হওয়া যায়নি। যেহেতু সুবর্ণার পরিবার ধর্মীয়ভাবে ভীষণ রক্ষণশীল, তাই শিশুটির ওপর কোনো ধরনের চাপ তৈরি হওয়া অসম্ভব নয় বলে অনেক মনে করেন— সাংস্কৃতিক এবং ভাষাগত বিভিন্ন সমস্যাই তৈরি হয়ে থাকতে পারে।
এরপর দ্বীপ এবং সুবর্ণা তাদের পুরোন ঢাকার কাগজীটোলার (২৮ শুকলাল দাস লেন, সূত্রাপুর) বাসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। কিছুদিন বনশ্রীতে অবস্থান করার পর সুবর্ণা এবং তার স্বামী দিব্যেন্দু দ্বীপের সাথে প্রায় দেড় বছর বাগেরহাট থাকেন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সুবর্ণা তার স্বামী দিব্যেন্দু দ্বীপের সাথে আবার ঢাকার বনশ্রীতে বাসা নিয়ে থাকতে শুরু করেন।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর (২০২০) সুবর্ণা আবারও হঠাৎ মেজাজ খারাপ করে ফেলেন এবং সেই একইভাবে ননদের সাথে বিবাদ তৈরি করেন। এ বিবাদের সূত্র ধরে আবারও অটিস্টিক শিশু ঈশপকে নিয়ে চলে যান। উল্লেখ্য, ননদ তার দাদার বাসায় থাকে না, দুই তিন দিনের জন্য বেড়াতে এসেছিল অসুস্থ মাকে দেখাশোনার জন্য।
সুবর্ণার স্বামী দীর্ঘ সময় বাসায় নিচে বসে সুবর্ণাকে বাধা দেবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। কিছু সময়ের জন্য বাথরুমে গেলে সেই ফাঁকে ও চলে যায়। এরপর থেকে সুবর্ণাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে খবর পাওয়া যায় যে, সুবর্ণা ওনার বড় বোনের বাসা গেন্ডারিয়াতে আছে। তবে পুলিশি তৎপরতার আগ পর্যন্ত তারা কোনো খবর সুবর্ণার স্বামী দিব্যেন্দু দ্বীপকে দেয়নি। এবং এটা প্রমাণিত হয় যে, সুবর্ণার বড় বোন খায়রুন্নাহার মিতু মিথ্যা তথ্য দিয়ে দ্বীপ এবং তার বন্ধুদের বিভ্রান্ত করে রেখেছিলেন।
সকল বিষয় জানার পর এ বিষয়ে সুবর্ণার স্বামী দিব্যেন্দু দ্বীপের সাথে কথা বলা হলে তিনি বলেন, “আমাদের সম্পর্কটা অনেক সমস্যার মধ্য দিয়ে এগিয়েছে। কত ধরনের সমস্যার মধ্য দিয়ে গিয়েছে সেটি বলে শেষ করা যাবে না। এত সমস্যার মধ্য দিয়ে গিয়েছে বলেই সম্পর্কটির প্রতি আমাদের মায়া একটু বেশিই। আমার দিক থেকে যে কোনো ভুল হয়নি, তা নয়। তবে আমার মধ্যে তো নিষ্ঠুরতা নেই, তাই এমন কিছু কখনো ঘটেনি, যাতে করে শিশু বাচ্চা নিয়ে হঠাৎ হঠাৎ সুবর্ণা চলে যেতে পারে। এটা সত্য যে, ওর পিতা-মাতা সুবর্ণাকে ছয় বছর আটকে রেখেছিলেন দুই মেয়াদে। ফলে স্বামী হিসেবে আমার কাছ থেকে সুবর্ণার প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি। সে প্রত্যাশা পূরণ করতে সম্ভবত আমি ব্যর্থ হয়েছি— আমি শুধু ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়েছি, একটা সুন্দর সময়ের জন্য অপেক্ষা করেছি । অপেক্ষার প্রহর যত বেড়েছে সুবর্ণাও তার পিতা-মাতার কথা তত বেশি করে মনে করতে শুরু করেছে। আবার আমার কাছে এসে সমস্যামুক্ত স্বচ্ছল একটা জীবন এখন পর্যন্ত ও পায়নি। পিতা-মাতার চিন্তা, বিভিন্ন ধরনের মানসিক চাপ, ধর্মদানবদের বিভ্রান্তিমূলক প্রেরণা ওকে ধীরে ধীরে ভঙ্গুর একটা মানুষে পরিণত করে ফেলেছিল। কার কথা শুনতে ও কার কথা শুনেছে তার হদিশ আমি জানি না। তবে আমার কথার কোনো মূল্য ও আর দিতে চায়নি, আমি অর্থনৈতিক এবং সামাজিক দিক থেকৈ শক্ত একটি জায়গায় পৌছাতে পারব এমন বিশ্বাস ও আর রাখতে পারেনি । যেহেতু আমার পরিবারে অনেক সমস্যা রয়েছে, এবং পরিবারটি পুরোপুরি আমার ওপরেই নির্ভরশীল, এবং আমি খুব বেশি মনোযোগী মানুষ নই, ফলে সবকিছু মিলিয়ে ওর মধ্যে কোনো ধরনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি হওয়া অসম্ভব নয়। বিষয়টিকে মানবিকভাবে বিবেচনা করার সুযোগ রয়েছে। আমি ওকে দিনশেষে কোনো দোষ দিতে চাই না। পরিবারে সামান্য ঝগড়া বিবাদ হতেই পারে, তাই বলে এভাবে কেউ চলে যেতে পারে? আমি মনে করি, আমাদের অর্থনৈতিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে একটা পক্ষ ওকে মানসিকভাবে বিভ্রান্ত করেছে। ওর পিতা-মাতা অনেক দূরে থাকে। ওর মা অসুস্থ, সে বিষয়টিও হয়ত ওর মধ্যে কাজ করেছে। সবকিছু মিলিয়ে ও ভুলটি আবারও করেছে। আমাদের সন্তানটির কথা চিন্তা করলে বিষয়টি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হয় না। কীভাবে ওর পরিবার ধর্মের নামে সবকিছু শেষ করে দিতে পারে, তা কিছুতেই আমার বোধগম্য হয় না। ঐতিহাসিকভাবে যে উগ্র ধর্মভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা আমরা গড়েছি তার কুফল অনেকেই ভোগ করছে, তাদের মধ্যে আমিও একজন। আইনি প্রতিকার তো হতেই পারে— কিন্তু প্রেম-ভালোবাসা-সম্পর্কের ক্ষেত্রে আইনি প্রতিকারের মূল্য আসলে কতটুকু? তবে একটি বিষয়ে অবশ্যই আমি আইনি প্রতিকার চাচ্ছি— সুবর্ণা ২৩ সেপ্টম্বর আনুমানিক বিকেল ৪টায় বাসা থেকে বের হয়ে কোথায় গিয়েছিল, এবং কেন মুন্সিগঞ্জের জোড়ার দেউল গ্রামে তার খালাত ভাইয়ের বাড়ীতে আত্মগোপন করেছিল? কেন সুবর্ণা ফিরে আসে নাই? কেন আমার সাথে থাকছে না? বর্তমানে (১ অক্টোবর থেকে) ও ওর বড় বোনের বাসাতে (৬৪, দীননাথ সেন রোড, গেণ্ডারিয়া) রয়েছে আমাদের অটিস্টিক শিশুটিকে নিয়ে। এমতাবস্থায় বোনের পরিবারের সাথে থাকার আইনি সুযোগ আসলে কতটুকু আছে?

বর্তমান অবস্থা: বোনের বাসায় থাকার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সুবর্ণাকে সেখানে রাখা হয়নি। সুবর্ণার স্বামী দিব্যেন্দু দ্বীপের সাথে অনেক লুকোচুরির আশ্রয় নিয়ে শেষ পর্যন্ত আবার তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে মুন্সিগঞ্জ জেলার রামপাল ইউনিয়নের দালালপাড়া গ্রামে এক বাসায়। যদিও দিব্যেন্দু দ্বীপ মনে করে সুবর্ণা মুন্সিগঞ্জের রামপাল ইউনিয়নে অস্থান করলেও ঠিক কোন বাসায় কীভাবে অবস্থান করছে সে বিষয়ে সন্দেহের সুযোগ রয়েছে। যেহেতু সুবর্ণার যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এবং দেশের অনেকে আত্মীয় স্বজন উগ্রবাদে বিশ্বাসী, তাই তাদের ওপর আর আস্থা রাখার কোনো সুযোগ নেই। দিব্যেন্দু দ্বীপ মনে করছেন, সুবর্ণা এবং আমাদের সন্তান ঈশপ শিবু অনার কিলিং-এর শিকার হতে পারে। আমার ওপরও নানান ধরনের থ্রেট রয়েছে, এ প্রেক্ষেতি গত ১১/১০/২০২০ তারিখে আমার স্ত্রী ও সন্তানের নিরাপত্তা এবং তাদের অবস্থান সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করে রামপুরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (৫৬১, ১১/১০/২০২০) করি। এর আগে সুবর্ণা নিখোঁজ থাকাকালীন ২৫ সেপ্টম্বর একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছিল। তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে রয়েছেন সাব ইন্সপেক্টর জুয়েল মিঞা। 

দিব্যেন্দু দ্বীপ বলেন, সুবর্ণা আমার সাথে যোগযোগ রাখছে, কিন্তু তার কথা কিছু  ‍বুঝতে পারছি না। তাকে মানসিকভাবে বিভ্রান্ত করে রাখা হয়েছে। এমতাবস্থায় আমি আমার সন্তানের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে গত ১৩/০৯/২০২০ তারিখে সে আমার সাথে মুন্সিগঞ্জ প্রেসক্লাবে দেখা করতে সম্মত হয়। সেখানে মুন্সিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মীর নাসির উদ্দিন উজ্জ্বলের উপস্থিতিতে আমরা দেখা করি। এর আগে নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তা করে মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (৬৩৪, ১৩/১০/২০২০) করি। সাধারণ ডায়েরিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে শাহ আলম সোহাগের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। 

দিব্যেন্দু দ্বীপ আরো বলেন, ভয়ঙ্কর বিষয় হচ্ছে, আমাদের বিয়ের যে আইনগত দিক এবং পারস্পারিক সমজোতা সেখান থেকে সুবর্ণা সরে এসেছে। একদিকে সে “আমার এক্সট্রাম্যারাইটাল অ্যাফেয়ার আছে” জাতীয় অভিযোগ তুলে বিবাহ বিচ্ছেদ চাইছে, আরেক দিকে সে আমাকে ধর্মান্তরিত হতে বলছেন। বিষয়টি আমাকে বিস্মিত করেছে। আমি প্রতারিত বোধ করছি। সবচেয়ে বেশি চিন্তা হচ্ছে আমাদের অটিস্টিক সন্তানটিকে নিয়ে। যেহেতু আমার স্ত্রী কিছুটা মাদকাসক্ত, তাই সেদিকে থেকেও দুশ্চিন্তার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।