কাইয়ুম পড়াশুনা শেষ করেই চাকরি পেয়েছে। একটি বড় প্রাইভেট ব্যাংকের প্রবেশনারি অফিসার হিসেবে যোগ দিয়েছে। আরও অনেক চাকরির চেষ্টা করে করে সবার মতো পড়তে পড়তে নিজেকে আর হয়রান করতে চায় না সে, এই চাকরি দিয়েই আয় উন্নতি করতে চায়।
ভালো বেতন, ভালো অফিশ, সবমিলিয়ে কাইয়ুম চাকরিটা খুব উপভোগ করছে। মাস শেষেই হাতে কড়কড়ে পয়ত্রিশ হাজার টাকা! বাড়ীতে নগদ টাকা বলতে পিতার স্কুল মাস্টারির বেতন, সেটি কোনোদিন দশ হাজারের কোটা পেরোতে পারেনি। পিতা রিটায়ার্ড করেছে তিন বছর হলো। ফলে নগদ সে উপার্জনটুকুও আর নেই। কাইয়ুম প্রথম কয়েক মাসের বেতন এক করে বাড়ীর কাজে হাত দিয়েছে। সারাজীবন বসবাসের কষ্ট করতে হয়েছে, একটি আধাপাকা বাড়ী তাই গ্রামের সবারই আজন্ম স্বপ্ন। কাইয়ুম খুব দ্রুতই পিতা-মাতার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছে। প্রবেশনারি পিরিয়ড শেষ হতে না হতেই গ্রামে আধাপাকা একটি বাড়ী করে ফেলেছে।
চাকরিতে স্থায়ী হয়ে দায়িত্ব এবং ব্যস্ততা বেড়েছে। নারায়ণগঞ্জ শাখায় চাকরি— ভোরে বেরিয়ে পড়তে হয়, ফিরতে ফিরতে রাত আটটা, কোনো কোনোদিন কাজ শেষ করে আসতে দশটাও বেজে যায়। প্রথমদিকে চাকরিতে যে মজা পাচ্ছিল সে মজা আর নেই। এখন শুধু কাজ আর কাজ।
বাড়ীর সবাই-ই খুব আনন্দিত। মা রোজ ফোন করে খোঁজ খবর নেয়— বাড়ীতে এবং এলাকায় একটাই কথা— সরোয়ার সাহেবের ছেলেটা খুব ভালো। গ্রামে সামান্য উন্নতি হলেই সাজ সাজ রব পড়ে যায়, সবাই আলোচনা করে। কাইয়ুম বাড়ী করেছে, কিছুদিন হলো পিতাকে ছোট্ট একটা গরুর খামার করে দিয়েছে। গ্রামের মানুষ এগুলো দেখে ঈর্ষায় এবং একইসাথে ভালোলাগায় বুদ হয়ে আছে।
যতই দিন যাচ্ছে কাইয়ুম বিরক্ত হচ্ছে। কিছুতেই চাকরিটা আর করতে ইচ্ছে করছে না। নিজেকে যন্ত্রদানব মনে হয়। সারাদিন, সারা সপ্তাহ শুধু একগাদা হিসেব নিকেষ! পড়াশুনার কোনো মানে খুঁজে পাচ্ছে না। মাস শেষে টাকাটা হাতে পেলে যা একটু ভালো লাগে। দুই বছরে বেতনও বেড়েছে। চাকরি করছে, বিনিময়ে টাকা পাচ্ছে— কিন্তু কী দিয়ে কী পাচ্ছে হিসেব করতে গেলেই আর মিলছে না। যাচ্ছে জীবন, আসছে টাকা, সে টাকায় পরিবারের সবাই আহ্লাদিত— কাইয়ুমের প্রতি সবার মনোযোগ বেড়েছে। কাইয়ুম বুঝতে পারে যে, এটা ঠিক ভালোবাসা নয়, এটা অনেকটা জোয়ারের পানিতে সাঁতার কাটার মতো বিষয়, সবাই পানিতে নামতে চায়, গা ভেজাতে চায়, আবার চলেও যায়। প্লাবন শেষ হলে পথটাই শুধু সঙ্গী হয়ে থাকে শুকনো নদীর। মানুষ আবার আসে শুধু ভরা ভাদরে।
কাইয়ুম নিজেকে অনেকটা গুটিয়ে নিয়েছে। উপার্জন বেড়েছে, একইসাথে একাকীত্বও যেন বেড়েছে। যারা আসে সবাই আসে হয় কোনো সাহায্য চেয়ে অথবা কোনো অফার নিয়ে— রিসোর্টে থাকার অফার, ভালো রেস্টুরেন্টে খাবার অফার ইত্যাদি। কাইয়ুম বুঝতে পারছে যে, টাকা যেটা মাসে পকেটে ঢোকে সেটি বের করে নেওয়ার জন্য আশেপাশে অনেক মানুষ জড়ো হচ্ছে, স্বচ্ছলতা দেখে পরিবার বড় হচ্ছে— যারা কোনোদিন আত্মীয় হতে পারেনি তারা সবাই কোথা থেকে এসে হাজির হচ্ছে। ভালো লাগছে, বিপরীতে হাহাকারও যেন বেড়েই চলছে।
অন্য চাকরির চেষ্টা না করে তাহলে কি ভুলই হলো? রোজ একবার করে মনে আক্ষেপ তৈরি হয়— বিসিএস দিয়ে এডমিন বা পুলিশে গেলেই ভালো ছিল! সরকারি চাকরিই ভালো ছিল— এই অনুভূতিটা কাইয়ুমের দিনকে দিন প্রবল হচ্ছে। হবারই কথা। সরকারি চাকরিতে ক্ষমতা আছে, উপরিও আছে, ফলে বেসরকারি চাকরির হিসেবের পয়শা দুর্নীতিগ্রস্থ দেশের সরকারি চাকরির সাথে কখনই পাল্লা দিয়ে পারে না।
রোবটের মতো চাকরিটা করাতে লাভ হয়েছে— দ্রুতই ঢাকার কাছে শনির আখড়া ব্রাঞ্চের ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছে। তিন বছরে একটি প্রমোশনও ব্যাংক দিয়েছে। যদিও প্রাইভেট ব্যাংক প্রথম প্রমোশনটা যতটা দ্রুত দেয়, এরপর আর দ্রুত প্রমোশন হয় না। বিশেষ করে চাকরির বয়স শেষ হয়ে গেলে প্রাইভেট ব্যাংক নখদন্ত বের করা শুরু করে। শুরুর দিকে ভুলিয়ে ভালিয়ে যৌবনটুকু ওরা ভালোই কাজে লাগায়।
কাইয়ুমের এখনো এক বছর চাকরির বয়স আছে, কিন্তু চাকরি পরিবর্তন করার কোনো পরিকল্পনা নেই, ফলে কষ্টটা শুরু থেকেই ও মনের সুখেই করে। এতে লাভ হয়েছে— ‘না এটা, না ওটা’ অনেকের মতো দোলাচলে ত্রিশ বছর পার হয়ে যায়নি। ছাব্বিশ বছর চার মাস বয়সে চাকরিতে ঢুকেছে, সে হিসেবে ত্রিশ হতে হতে আর্থিকভাবে বেশ স্বাবলম্বি বলতে হবে। পরিবার খুশি। বিয়ে করেছে এক বছর হলো। স্ত্রী অনার্স পড়ছে তোলারাম কলেছে। নারায়ণগঞ্জ থেকেই পরিচয়। প্রেমের বিয়ে ঠিক বলা যায় না, প্রেম হবার আগেই পারিবারিকভাবে বিয়েটা হয়ে গিয়েছে।
সুখের সংসার— শশুর বাড়ীর সবাই বেশ খাতির করে। ব্যাংকারদের জামাই হিসেবে মানুষ বেশ পছন্দ করে বলতে হবে। কাইয়ুম বলতে গেলে প্রায় প্রতি সপ্তাহে শশুর বাড়ী যায়, যাওয়া লাগে। অনামিকা বাপের বাড়ী থেকে অনার্স ফাইনাল পরীক্ষ দিচ্ছে, এ কারণে কাইয়ুম কিছুদিন হলো শশুর বাড়ী থেকেই শনির আখড়ায় অফিশ করছে। যাত্রবাড়ী বাসায় মা এবং ছোট বোন থাকে। ছোট বোনটা ভর্তি পরীক্ষার জন্য পড়াশুনা করছে। কাইয়ুম অফিশ শেষ করে মা এবং বোনের খবর নিয়ে তারপর শশুর বাড়ী যায়। সব মিলিয়ে যাতায়াত আর অফিশ হয়ে উঠেছে কাইয়ুমের জীবন।
বাসায় গিয়েও শান্তি নেই, রাত দশটা এগারোটা পর্যন্ত অফিশের ফোনে এটেন্ড করা লাগে। শনির আখড়ার মতো একটা ব্যস্ত ব্রাঞ্চের ম্যানেজারের অনেক দায়িত্ব। উপার্জন বেশ বেড়েছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ব্যস্ততা এবং দায়িত্ব— ঘরে বাইরে দায়িত্ব। পিতা-মা দুজনই কমবেশি অসুস্থ থাকে, তাদের নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে হয়। সময় হয় না বলে টাকার ওপর দিয়ে গচ্ছা দেয় কাইয়ুম। সপ্তাহখানেক আগে মা-কে পুরোন ঢাকার আসগর আলী হাসপাতালে পাঠিয়েছিল, কোনো রোগ ধরা পড়েনি, কিন্তু সাতচল্লিশ হাজার টাকা চলে গিয়েছে। সময় করে কোনো একটা সরকারি হাসপাতালে গেলে হয়ত দুই চার হাজার টাকার মধ্যে হয়ে যেত।
কাইয়ুম হাফ ছাড়তে পারে শুধু টাকা গচ্ছা দিয়ে। ফলে যতটা আয় হয় ব্যয়ের খাতও যেন হু হু করে বাড়ছে। ভালো উপার্জন করে শুধু নিজে ভালো থাকলে তো হয় না, পরিবারের সবাইকে একই স্টান্ডার্ডে রাখতে হয়। কাইয়ুম হয়ত কষ্টের বিনিময়ে, প্রয়োজনে ভাড়ার গাড়ীতে চড়ে, নিজের পিছনে একটু বেশি ব্যয় করে, কিন্তু পরিবারের অন্যদেরও জীবনমানও উপার্জনকারীকে ঘিরে তৈরি হয়। অতএব, পিতা-মাতা, ছোট বোন সবার পিছনে খরচ দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। কাইয়ুম বুঝতে পারছে যে, যে হারে উপার্জন খরচ সে হারে বাড়বেই— এটাই বোধহয় আয় ব্যয়ের বৈশিষ্ট। তাই চাকরির টাকা কখনো অঢেল হয় না। একটা সীমানায় গিয়ে চাকরির টাকায় টান পড়বেই।
তবে ম্যানেজার হওয়াতে প্রয়োজন হলে কাইয়ুম উপার্জন একটু বাড়িয়ে নিতে পারে, তাই যেকোনো ধাক্কা ও সহজেই সামলে নেয়। সবাই কাইয়ুমকে প্রব্লেম সলভার ভাবে, তা যেমন পরিবারে আবার অফিশেও।
আফতাবনগরে কাইয়ুম তিন কাঠার একটা প্লট কিনেছে। আজকে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে ফুল পেমেন্ট করে এসেছে। চাকরির বয়স সাত বছর ছুঁই ছুঁই, আরেকটি প্রমোশন দ্রুত পেতে হলে এমবিএটা করতে হবে। কাইয়ুম কিছুতেই আর পড়াশুনার কথা ভাবতে পারে না। তারপরও পিছিয়ে থাকতেওতো মন চাইছে না। একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএটা করে নেবে ভাবছে। আবার টাকার হিসেব— জীবন সহজ করতে গেলে চাপ পড়ছে গিয়ে টাকার ওপর, সেই টাকাটাই আবার উপার্জন করতে হচ্ছে জীবন খুইয়ে। অতএব, জীবনের বিনিময়ে জীবন খোঁজা ছাড়া আর কিছুই হচ্ছে না যেন।
দুই বছর হলো মা গত হয়েছেন। পিতার শরীর এতটাই খারাপ বলতে গেলে চলতে ফিরতে আর পারেন না। কোনোমতে বারান্দায় এসে একটু বসতে পারেন। বাসায় একজন লোক আছে পিতাকে দেখাশুনার জন্য। অনামিকা দুই সন্তান নিয়ে হিমশিম খেয়ে যায়, শশুরের দিকে খুব একটা নজর দিতে পারে না। এটা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই— কাইয়ুম স্ত্রীর ওপর পিতাকে দেখাশোনার ভার দিতে চায় না। তাতে পিতাকে দেখাশোনা হবে না, অহেতুক সংসারে অশান্তি বাড়বে। এতেই বরং ভালো হয়েছে, কাইয়ুম কিছু না বলায় অনামিকা নিজে থেকেই মাঝে মাঝে দায়বদ্ধতা অনুভব করে। শশুরের খোঁজ খবর যথেষ্টই সে নয়।
চাকরিতে উপার্জন যে হারে বেড়েছে সবসময় খরচ বেড়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি। ফলে ভালো উপার্জন করেও কাইয়ুম কখনো টাকার চিন্তা থেকে মুক্ত থাকতে পারেনি। একবার রাঙ্গামাটি পরিবার নিয়ে ঘুরতে গিয়ে ও খুব মজা পেয়েছিল— পানির মতো টাকা বেরিয়ে যাচ্ছিল, এক মাসের বেতন তিন দিনে শেষ করে শুধু মনে হচ্ছিল জীবনের বিনিমেয়ে জীবন খুঁজে ফেরার কোনো মানে হয় না। শুধু পরিব্রাজকই পেতে পারে প্রকৃত ভ্রমণের আনন্দ, একজন চাকরিজীবীর জীবন শুধু কিছু দায়িত্ব পালন ছাড়া কিছু নয় আসলে। অফিশে হয়ত আট দশ ঘণ্টার দায়িত্ব, কিন্তু বাকী সময়টুকুও তো পরিবার পরিজনের প্রতি দায়িত্ব, ফলে এই ঘোরাঘুরিতে বস্তুত কোনো আনন্দ পাওয়া সম্ভব নয়, স্ত্রী-সন্তানদের আনন্দ দেখে যা আনন্দ ওটাই নিজের আনন্দ।
বাড়ীর কাজ শেষের পথে। করবে না করবে না করে শেষ পর্যন্ত বাড়ীটা করেছে। ছয় তলার ঢালাই চলছে। রং-এর কাজটা খুব ভালো করতে চায় কাইয়ুম। ভেতরে যা ঢুকেছে তো ঢুকেছে, দেখতে যেন বাড়ীটা খুব সুন্দর হয়। হঠাত করে কাইয়ুম নিজের বয়স হিসেব করতে শুরু করেছে— বায়ান্ন বছর দুই মাস বয়স। ছেলেটা কলেজে পড়ে। মেয়েটা ক্লাস এইটে। কাইয়ুম আজকে অনেকক্ষণ ধরে ছাদে পায়চারি করছে। অনামিকা একবার ডেকে গিয়েছে। সাড়া দেয়নি। ভাবছে— প্রায় পঁচিশ বছর এই চাকরিতে কেটে গেল! কী চেয়েছিলাম আসলে জীবনে? আমি কি একটা বাড়ী চেয়েছিলাম? আমি কি একটা গাড়ী চেয়েছিলাম? কী চাইতে হয় আসলে?
অনামিকা আজ অন্য ঘরে ঘুমিয়ে পড়েছে। বছর দুই হলো স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কটা আর ভালো যাচ্ছে না। অনামিকা স্বামীর শেষ বয়সে চাকরির যে জৌলুস সেটি উপভোগ করছে, খরচ করে আনন্দ পাচ্ছে, মানুষকে জানিয়ে দেখিয়ে আনন্দ পাচেছ, বিপরীতে কাইয়ুম চৌধুরী যেন নির্জীব হয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন।
কাইয়ুম চৌধুরী খুব খামখেয়ালি করছে ইদানিং। অফিশ থেকে মাঝে মাঝেই বাসায় ফিরছে না। অনামিকা প্রথম প্রথম সন্দেহ শুরু করেছিল। পরে গোয়েন্দাগিরি করে যা পেয়েছে সেটি খুবই চমকপ্রদ। কাইয়ুম চৌধুরী অফিশে তার রুমেই একটা শোয়ার মতো সোফা আনিয়েছে। রাতে অনেক রাত পর্যন্ত কী কী যেন পড়াশুনা করে ঐ সোফায় ঘুমিয়ে পড়ে।
অনামিকা কাইয়ুম চৌধুরীকে পাগল ভাবতে শুরু করেছে। ডাক্তার দেখানোর কথা বলার সাহস নেই, তারপরও বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছে কোনো একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাতে যাওয়া যায়।
কাইয়ুম চৌধুরী ছেলেমেয়েদের ডেকে অনেকক্ষণ ধরে কথা বলছে। বলছে, “শোনো, তোমরা পড়াশুনা করবা, শুধু পড়াশুনাই করবা। আমি যা রেখে গেলোম এগুলো দিয়েও চলতে পারবা। পড়াশুনা করবা, পড়াশুনা করে করে কিছু একটা করবা। গোলামি করবা না, শুধু একটা চাকরি করবা না। যে চাকরি মানুষের না, যে চাকরি মানুষের জন্য না তা করবা না। শুধু আয় আর ব্যয় করবা না। আয় ব্যয় কোনো জীবন না। আমার মতো হবা না, মাতা-পিতার মতো হবা না। মাতা-পিতারা ব্যর্থ, তাদের মতো হবা না। আয় করার জন্য জীবন না, শুধু আয় করতে চাইবা না। জীবন, জীবনটা খোঁজো, জীবনটা বোঝো।”
ছেলেমেয়েরা চলে গিয়েছে, কিন্তু কাইয়ুম চৌধুরী একা একা কথা বলেই যাচ্ছে। অনামিকা এসে পিঠে হাত রেখে বলছে, “তুমি কার সাথে কথা বলছো!” কাইয়ুম চৌধুরী চমকে উঠে অনামিকাকে বলে, “আচ্ছা, আমি যদি কোথাও চলে যাই তুমি ছেলেমেয়ে নিয়ে সামলে চলতে পারবা না।” অনামিকা কোনো পাত্তা দেয় না, বলে, “তোমার কি বুড়ো বয়সে ভীমরতি হয়েছে? বিয়ে করবা একটা?”
কাইয়ুম চৌধুরী গোপনে গোপনে পড়াশুনা করে বিদেশে একটা স্কলারশিপ পেয়েছে—পিএইচডি জন্য আগামী মাসে চলে যেতে চায়। স্ত্রীকে এখনো জানায়নি। অফিশের দুএকজন শুধু জানে। সবাই হাসাহাসি করে, আবার এই বয়সে পড়াশুনার স্টামিনা দেখে অনেকে ব্যঙ্গাত্মকভাবে প্রশংসাও করে। কাইয়ুম চৌধুরী ডিগ্রির জন্য নয়, আজন্ম লালিত স্বপ্নের জন্য পথ চেয়ে আছে। তার পিএইডির বিষয়— “ব্লাক হোল অব ক্যাপিটালিজম।” বিস্তারিত কোথাও প্রকাশ করতে চায় না, যদি আবার বিষয় চুরি হয়ে যায়!
আজকে কাইয়ুম চৌধুরীর ফ্লাইট। স্ত্রী-সন্তানেরা খুবই বিষন্ন। কেউ মানতে মারছে না। প্রথমদিকে তো কেউ বিশ্বাসই করেনি। কাইয়ুম চৌধুরী খুবই খুশি, মনে হচ্ছে জীবনে শেষ অধ্যায়ে এসে সে নিজেকে কিছুটা খুঁজে পাচ্ছে। সন্তানদের আলিঙ্গন করে কাইয়ুম চৌধুরী স্ত্রীকে বিদায় জানায়। ভোঁ করে বিমান আকাশে উড়াল না দেওয়া পর্যন্ত অনামিকা আকাশের দিকে তাকিয়েই থাকে, এখনও তার বিস্ময়ের ঘোর কাটছে না যেন!