প্রথম পর্ব
১
একটা নির্বোধ নদী চাই।
অঝোর ধারায় বৃষ্টি হও,
সাঁতরে পার হবো,
যদি অনুমতি দাও।
আর কিছু নয়,
বড়জোর পাড়ে কিছুক্ষণ বসে থাকবো,
এরপর মিলিয়ে যাব দূরে, বহুদূরে।
নারী:
একদম টিপিক্যাল পুরুষের মতো বললে!
২
ঘুমা পায়,
তুমি যখন জেগে ওঠো
ঠিক তখনই আমার কেন ঘুম পায়?
দূরে আছো,
ঘুম ভোলাতে পারতে যদি!
গুনগুন করে শিওরে বসে গাইতে যদি।
৩
দূরেই তুমি থাকতে চাও!
তাহলে কি চলবে?
আকাশ কি কানে কানে আমাদের কথা বলবে?
৪
নারী: এটা মোহ, অজানা, লক্ষ্যহীন;
কেটে যাবে সময়ে।
পুরুষ:
কেন মায়া বাড়াও তবে?
চলে যাও,
তুমিও তো জেনে গেছো
আমার ভীষণ ডিঙ্গি নাও।
৫
নারী:
নাহ! তাই বলে যাব না, থাকবো!
পুরুষ:
পারবে না।
আমি তো উজান,
উজান কেউ বেশিক্ষণ বাইতে পারে না।
৬
নারী:
তুমি তবে কি চাও?
পুরুষ:
আমি চাই কেউ পাথরে উড়ে এসে
একটা ফুল হয়ে ফুঁটুক,
আমার হঠাৎ কিছু সুখ জুটুক।
৭
নারী:
এত সুন্দর কথা পাও কেমন করে?
পুরুষ:
ঘোরের মধ্যে পড়লে।
নারী: ঘুমের ঘোর?
পুরুষ:
নাহ! অন্যকিছু।
৮
নারী:
তোমার কি আমাকে দুষ্টু প্রকৃতির মনে হয়?
পুরুষ:
নাহ!
তুমি উচ্ছ্বল, প্রাণবন্ত, তবে আঘাতপ্রাপ্ত।
একটি তাজা গোলাপ থেকে
কোনো শিশু যেন একটি পাশ ছিঁড়ে নিয়েছে!
৯
নারী:
আচ্ছা বলোতো, তুমি কি আমাকেই লেখো
নাকি আমার ওপর ভর করো?
পুরুষ:
তোমাকেই লিখি, আবার ভরও করি,
তবে ভণিতা নয়।
নারী:
কী চাও বলোতো?
পুরুষ:
আমাকে এখন টানছে দূর, সুদূর,
পারবে নিয়ে যেতে শর্তহীন?
তাই বলে আমরা রাখবো না
কারো কাছে কোনো ঋণ।
১০
নারী:
কাল রাতে সত্যিই আমি ভয় পেয়েছিলাম,
তুমি তো আমার সাথেই ছিলে,
হঠাৎ কোনো সাড়া নেই!
পুরুষ:
একদিন এভাবে মরে যাব, তুমিও;
এই স্মৃতিগুলো থাক, কোথায় রাখবে?
আমাদের কিছুই কি কোথাও থাকবে?
একদিন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাব,
বলতে পারো শেষ মুহূর্তে
সেদিন হাতে হাত রেখে কাকে তখন পাব?
একজন কেউ যেন আসে আকাশ হতে ভেসে
আমি মাঝে মাঝে থাকি এমন কারো আশে।
তুমিও কি প্রিয়?
১১
নারী:
তুমি কবিতাগুলো পাবলিশ করতে পারো,
খুব সন্দর, সবাই পড়ুক,
আমার জন্য আলাদা করে রাখার দরকার নেই।
পুরুষ:
পাবলিশ করার ক্ষমতা নেই,
দরকারই বা কী বলো?
নীরবে নিভৃতে তুমিই শুধু আমায় নিয়ে চলো।
১২
নারী:
এখনও কি ঘুম পাচ্ছে?
তোমার তো হঠাৎ হঠাৎ ঘুম পায়।
পুরুষ:
সত্যিই ঘুম পাচ্ছে,
আবার মন এবং মস্তিষ্ক সঙ্গও চাচ্ছে!
কাছে থাকলে বুঝতে—
ঘুম কাতুরে আমার পাশে একলা তুমি নি:স্ব হতে।
১২
নারী:
এটা ঠিক হচ্ছে না,
অসুস্থ তোমাকে আর জাগিয়ে রাখবো না।
পুরুষ:
সুস্থ করেছো তো এতক্ষণে অনেকটা,
সাক্ষাতে করো না হয় বাকীটা, পারবে?
১৩
নারী:
তোমার শরীরটা একটু যা দুর্বল,
কিন্তু তুমি শক্তিমান পুরুষ।
আমার ভালো লাগে, খুব!
পুরুষ:
আমার সত্যি কিছু নেই,
তুমি আবিষ্কার করেছো তবু,
তোমার শক্তিতে, অটুট ভক্তিতে
আমাকে বানাচ্ছো তোমার প্রভু!
রাধা, তুমিই সত্যি ত্রাতা,
আমার তো কৃষ্ণ সেজে শুধুই ভণিতা।
১৪
নারী:
আরেকটু শুনতে ইচ্ছে হচ্ছিলো,
কিন্তু তুমি তো শেষ করে দিলে!
পুরুষ:
ঘোরে পড়লে লিখি,
কোথায় শুরু কোথায় শেষ
আমি কেউ নই, সবই যেন সময় বিশেষ।
১৫
নারী:
তোমার সাথে ভাব বিনিময় তো রোজই হচ্ছে,
কিন্তু সামনাসামনি দেখা করতে চাইনে,
যদি এই ভালোলাগাটুকু কেটে যায়?
পুরুষ:
কেটে গেলে যাবে,
যা রাখার নয় তা কেন তুমি রাখবে?
আচ্ছা, যদি বেড়ে যায়?
নারী: তবুও তো ভয় হয়!
আমি পারব না এ গণ্ডি কেটে বের হতে।
পুরুষ:
তোমাকে পারতে কে বলেছে?
তুমি একলা নারী, আমিও একলা পুরুষ,
তাই বলে আমরা নই তো বেঁহুশ।
১৬
নারী:
একবার ভেবে দেখো তো
সেই কবে তোমার সাথে দেখা হয়েছে আমার!
পুরুষ:
ভুলে গেছি সে চর্যাপদ যুগের কথা,
মাঝখানে মহাকাল,
এখন নতুন মানুষ, নতুন সকাল,
ছুড়ে ফেলে দাও সব জঞ্জাল।
নারী:
আমি তো সেই তোমাকেই চাই।
পুরুষ:
তুমি ভুল দেখেছিলে
সেখানে বিশেষ কিছু নাই, বরং এখনই সময়।
নারী:
তুমি কথার কারিগর, কিন্তু আমার ইচ্ছা ওটাই।
পুরুষ:
তাহলে স্বপ্নে ডানা মেলো তুমি, আমি চললাম।
নারী:
নাহ! তাই বলে যেও না, আমাকেও নিও না,
শুধু থাকো, কাছে থাকো।
পুরুষ:
সে কেমন থাকা?
নারী: পুরুষ পারে না, কিন্তু নারী চায়।
তুমি পারবে?
১৭
নারী:
এত কিছুর পরেও তোমার এখনো সয়?
তোমার ওপর দিয়ে ঝড়ে তো কম যায়নি!
পুরুষ:
সয় না সত্যি,
মন গিয়েছে মরে অনেক আগে,
এখনো তবু কিছু মায়া কোথা থেকে যে আসে,
বিস্ময় জাগে!
১৮
নারী:
না, এরকম না, একদম জোর করবা না;
জোর আমি একেবারেই পছন্দ করি না,
তাহলে একদম দূরে চলে যাব।
পুরুষ:
কত দূরে যাবে?
খুব মনে হলে ঠিকই পৌঁছে যাব সময়মতো,
তোমার অগ্রভাগে।
তারপর?
তোমার মান ভাঙাগো মৌন ভীষণ সম্মতিতে।
১৯
পুরুষ:
আমি যদি আবার প্রেমে পড়ে যাই, বা তুমি?
নারী:
মানুষ ব্যক্তি কবির প্রেমে খুব কমই পড়ে,
পড়ে তার লেখা, চিন্তা, আর ব্যক্তিত্বের প্রেমে।
আর কবিরাও বিভিন্ন নারীর প্রেমে পড়ে
তবে তা সাময়ীক উৎসাহ যোগায়,
কোনো পরিণতি পায় না, কবি বোধহয় চায়ও না।
নারী:
তুমি আমাকে নিয়ে ভয় পাচ্ছো?
পুরুষ:
ভয় পাচ্ছি আমি নিজেকে নিয়ে।
২০
পুরুষ:
যাবে লক্ষ্মী আমার সাথে একদিন
দুইদিন, তিনদিন,
তারপর আবার একই সব এমন দিন।
এই স্মৃতিটুকু থাকবে,
মাঝে মাঝে হৃদয় মাঝে বাজবে সে বীণ।
যাবে তুমি?
নারী:
খুব সুন্দর।
এমন করে ডাকলে তো মানুষ সাড়া দিয়ে বসবে!
তবে
বেশি কাছে এসো না, আসতে বলো না,
অনেক মান অভিমান জমা পড়বে শুধু শুধু।
২১
পুরুষ:
তোমার সন্তান বুঝি তোমার খুব প্রিয়?
নারী:
কার না প্রিয়?
পুরুষ:
সবার হয়ত এতটা নয়।
নারী:
দু’টো মানুষের উথাল পাথাল ভালোবাসার ফসলে
আরেকটা মানুষ,
এর চেয়ে মহত্মর সৃষ্টি প্রকৃতির আর কী হতে পারে?
২২
নারী:
বিয়ের কথা আমাকে আর বলো না,
আমি আর বিয়ে করব না।
বরং তোমার কথা বলো?
পুরুষ:
আমার চাই একজন মানুষ,
যে হাত ধরে নিয়ে যাবে,
যে থাকবে, যে সত্যি একটু ভালোবাসবে,
শুধু আমাকে নয়,
এবং আমি ভালোবাসতে পারি যাকে।
২৩
পুরুষ;
আজকেও খুব ঘুম পাচ্ছে,
তোমাকেও মন চেয়েছে!
তবু এখন বিদায় বলো রাণী।
কোনটা দামী- ঘুমঘুম এমন ভালোবাসা,
নাকি নেশার ঘোরে কাছে আসা?
কী যেন একটা আমার হয়েছে!
বলতো পারো?
ঠিক প্রেম নয়, প্রেমের মতো।
২৪
নারী:
বেশি কিছু চাইবার অধিকার বা সম্পর্ক আমার নেই,
ছোটখাটো কিছু অনুরোধ রাখলে খুশি হবো।
পুরুষ:
রাগ করেছো?
নারী:
রাগ করতেও তো অধিকার লাগে,
সবার ওপর রাগ করা যায় না।
পুরুষ:
অধিকার কীসে হয়?
নারী:
আমি জানি না অধিকার কীসে হয়,
শুধু অনুভব করছি তোমার ওপর ততটা হয়নি!
২৫
পুরুষ:
দু:খ দিলে।
নারী:
তুমি দাও অজান্তে, বুঝতে পারো না।
আমি চাই তুমি ভালো থাকো,
যেখানেই থাকো।
শুধু শুধু আমাকে এভাবে বলো না,
আমার কষ্ট হয়, তুমি তো সত্যি বলো না,
কবির মতো বলো!
২৬
পুরুষ:
হঠাৎ তোমার এত অভিমান হলো কীসে?
নারী:
তোমার মনে হয়েছে হঠাৎ!
যা তুমি পারবে না,
কেন শুধু শুধু শুধাও এত?
পারবে তুমি?
পুরুষ:
এত কঠিন প্রশ্ন কেন করছো?
মুক্ত রাখো না আমায়।
নারী:
তাহলে আমাকে আর ওসব বলো না, প্লিজ।
২৭
নারী:
আমাদের এ কথোপকথন পড়লে
মানুষ কি আমাদের মাঝে প্রেম ভাববে?
পুরুষ:
ভাবতে পারে।
খনিতে যেমন হীরক খণ্ড থাকে,
কেউ বুঝতে চায়, কেউবা মাড়িয়ে যায়।
আমাদের তাতে কী আসে যায়?
২৮
কী হত পাশাপাশি থাকলে
কোনো এক চন্দ্রাহত রাতে?
অভিমান কি তোমার ভাঙতো?
আমার কি এমন করে ঘুম আসতো?
নাকি ভুলেভালে কথার তালে রাতটুকু শুধু কাটতো?
নারী:
ভয় হয় তোমার এসব কথায়,
যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাই!
আমি খুব সংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ, পারব না।
২৯
নারী:
তুমি ইচ্ছে হলো ঘুমিয়ে পড়ো,
আমার সাথে কথা বলতেই হবে এমন নয়।
পুরুষ:
আধমরা করে ঘুমোতে যাও রোজ!
রাখো কি তার কোনো খোঁজ?
দেনাপাওনা আছে কিছু বাকী,
মিটিয়ে দিও, কতটুকু আর দিতে হবে?
দিনকে দিন বেড়ে চলেছে আমার ওষুধের ডোজ।
তবু প্রিয় তুমি দিও না আমায় ফাঁকি!
নারী:
তোমাকে সইতে হবে, সবইতো আমাদের কথার কথা,
এ জীবনে আমাদের সবই রইলো বাকী।
৩০
নারী:
এত কম বয়সে
আমি কাউকে এতটা বুড়ো হতে দেখিনি!
তোমাকে আরও ফিট হতে হবে।
রোজ ব্যয়াম করবা, ভালো খাবা, ঠিকমতো ঘুমাবা।
পুরুষ:
তরিকা সঠিক, তবে তরী মাঝিহীন।
নারী:
নিজের মাঝি নিজে হও না কেন?
পুরুষ: ছিলাম তো এতদিন,
হঠাৎ কী যেন হয়েছে, বলবো তোমায় অন্য একদিন।
৩১
নারী:
সারাদিন তোমার সাথে আছি,
তাও সময় হলো না বলার!
পুরুষ:
এভাবে সারাজীবন থাকলেও তা
পৃথিবীতে বসে পূর্ণিমার চাঁদ দেখার মতো,
চাঁদে গিয়ে চাঁদ দেখার সাধ্য কোথায়?
৩২
নারী:
শোনো, এরপর দেখা হলে
আমরা দু’জনের মধ্যে কিছু বলব না,
অন্যকিছু বলব। রাজি?
পুরুষ:
এতটা দুর্গম পথ পেরিয়ে কেউ কি যেতে চায় বারবার?
আমি যাব একবার, চাঁদের দেশে,
ফিরে আসব ক্লান্ত হয়ে হেসে।
তুমি রাজি?
নারী:
ঠিক এখানেই আমার আপত্তি,
জেনে রাখো
তোমার এ যাত্রা কোনোদিন হবে না সত্যি।
৩৩
পুরুষ:
আমার অবস্থা ভয়াবহ,
এ জীবন আর চলে না,
বাতিল করো সমস্বরে, জোরে।
তবে এখনও মন চায়
কারো কাঁধে মাথে রেখে নি:শ্বাস নিই প্রাণভরে।
এটা স্বপ্ন, সত্য নয়,
বাস্তবে আমি তা পারি না, নিরুপায়।
নারী:
রাগ করেছো?
পুরুষ:
অধিকার যেমন নাওনি, আবার দাওতোনি।
৩৫
নারী:
ঘুমিয়ে পড়লে নাকি?
পুরুষ:
আমি খুব ক্লান্ত,
আজকে তোমার ছেলের মতো
সিএনজি অটোতে একটা ঘুম দরকার,
তারপর জেগে উঠে খাবার চাই,
ঘুমটা শিশুতোষ, তবে খাবারটা নয়।
নারী:
মাইর। ঠিক আছে, ঘুমিয়ে পড়ো।
৩৬
নারী:
আগুন নিয়ন্ত্রণে রাখাই ভালো,
এই বয়সে তুমিও জ্বলবে, আমাকেও জ্বালাবে।
পুরুষ:
আমি জ্বলন্ত, তুমিও।
স্পর্শ করে দেখো
তুমি শুধু শান্ত হবে,
আমি থেকে যাব সেই একই ভিসুভিয়াস।
৩৭
নারী:
আমার ঘুম আসে না, তুমি ঘুমাও,
তোমাকে অনেক জ্বালাই।
পুরুষ:
আমার এরকম জ্বলতে ভালোই লাগে।
হঠাৎ একদিন থেমে যাবে সব,
আমাদের জীবনও,
তখন আমাদের স্মৃতিটুকু নিয়ে
পড়ে রইবে শুধু অগণিত নিস্তদ্ধ রাত।
৩৮
নারী:
তুমি কি বুঝতে পারছো
আমাকে যে টানছো?
পুরুষ:
বুঝতে পারছি নাতো!
নারী:
এটাই তোমার দোষ, আর আমার ভয়।
পুরুষ:
কিচ্ছু দিতে হবে না,
ভয় পাও কেন প্রিয়?
শুধু তোমার আবোল তাবোল মনটুকু দিও।
নারী:
শুধু কি দেবার ভয়, এ ভয় নেবারও।
৩৯
নারী:
আমাকে তুমি আর কিছু বলো না,
আবার না বললেও যে আমার সহ্য হয় না!
তুমি কিছু একটা করেছো আমায়!
পুুরুষ:
ভয় পেও না,
আমি পারি না, শুধু এভাবে বলতে পারি,
ছুঁয়ে দেখতে জানি না কোনো প্রিয়তমাকে।
শুধু দাবী, বাকীটুকু মনছবি।
নারী:
তোমার কাছে শুধু কথার কথা!
আমার যে কষ্ট হয়!! বুঝতে পারো?
৪০
অনেক দূর থেকে আমি দেখতে পাই না,
কাছে এসে দাঁড়িয়ে পড়তে চাই।
সমুদ্রের ঢেউটুকুতেই আমার নেশা,
গভীরে যাব অত সাহস বা শক্তি তো আমার নেই।
নারী:
সাগর যদি উত্তাল হয়,
তুমি কি তখন দৌঁড়ে পালাবে?
পালাবো না, এতটুকু সততা আমার মাঝে আছে।
৪১
নারী:
কখনো কোনো আশায় থেকো না,
তুমি যেমন মুক্তি চাও, আমাকেও মুক্ত রাখো।
পুরুষ:
পৃথিবীতে ফুল ফোঁটে এমন অদৃশ্য কিছু,
তুমি এলে, যদিও এলে না,
তবু মনে হচ্ছে
ছিন্নপত্রের মতো এক রূপশালী
নিয়েছে শুধু আমার পিছু।
না হলে না হোক, আমি হয়ে থাকবো বিশ্বলোক।
দ্বিতীয় পর্ব
৪২
নারী,
তোমার উন্মুক্ত বক্ষ তবে কার?
আমাকে করেছো যেহেতু ছারখার!
৪৩
নারী:
তুমি এমন লেখো কেন?
আমার যে খুব ভয় হয়!
পুরুষ:
কীসের ভয়,
সতীত্ব হারানোর ভয়?
নারী: রোজ তোমার ঘুম পায়,
আজকে আমার ঘুম পাচ্ছে!
তোমার কোলে মাথা রেখে
ঘুমোতে চাই।
৪৪
ঘুমাও, ত্বরিত ঘুমাও,
নইলে ঘোর লাগতে পারে,
যেতে পারো হেরে।
তখন?
সতী নারী,
কেমনে চিনবে কোনটি তোমার বাড়ী?
৪৫
নারী:
মধুর।
কী মিষ্টি করে বলো তুমি,
একদম খেয়ে ফেলতে মন চাইছে!
পুরুষ:
প্রেমে পড়েছো?
নারী: পড়তে চাই না যে …
৪৬
নারী:
আমার জন্য তোমার
এমন মিষ্টি মিষ্টি কবিতা আর
যখন আসবে না তখন
কি সম্পর্কটা আলগা হয়ে যাবে?
তুমি কি তখন নতুন কোনো
নারীতে ভর করবা?
পুরুষ:
জানি না, তবে কবিতা লেখার জন্য তো
কাউকে কোনোদিন খুঁজিনি।
ভালোলাগা থেকে কথা,
কথা থেকে কাব্যিকতা, নাকি?
৪৭
নারী:
তুমি ভয় পেও না,
ভালোবাসলেও
আমি তোমায় বাঁধতে চাই না।
না-বাঁধাটাই বরং সবচেয়ে বেশি
শক্ত করে ধরে রাখা।
নারী:
সত্যি করে বলোতো
তুমি কি আমায় ভালোবাসে?
ভালো যে তুমি বাসো না,
এটা আমি বুঝতে পারি।
পুরুষ:
‘ভালোবাসি না’ এটা বুঝতে পারো,
‘ভালোবাসি’ এটা বুঝতে পারো না!
এই দুইয়ের মাঝ বরাবর একটি রেখা চলে গিয়েছে,
সেটি হলো প্রেম।
তোমাকে সাথে নিয়ে সমগ্রকে ভালোবাসি,
বাকীটা নেশা, ঘোর …
এরপর ধীরে ধীরে কারো জন্য বাড়ে মায়া,
ঐ বিশেষ মায়াটুকুই তোমার জন্য আমার প্রেম।
নারী:
এসব কিচ্ছু আর বলো নাতো,
এর চেয়ে কয়েক লাইন কবিতা শোনাও,
ঘোরের মধ্যেই থাকি, সত্য বড় কঠিন।
৪৮
নারী:
তোমার সাথে আমি বেশি দূর যাব না,
আমি যে ফিরতে পারব না!
পুরুষ:
ফিরতে হবে কেন? কোথায় ফিরতে চাও?
অনন্ত এক পথের পথিক আমরা,
ফিরতে চাওয়াটাই সবচেয়ে বড় ভুল,
চোখ মেলে দেখো
পথে পথে ফুটে রয়েছে কত অসংখ্য,
কত জাতের নাম-না-জানা ফুল।
ভুল শুধরে নিও আরো কিছু পথ সামনে হেঁটে।
৪৯
নারী:
ঐ যে মায়ার কথা বললে না,
আমি মায়ার বন্ধনে বাধা পড়ে যাই,
কোনোভাবেই সে বাধন আর খুলতে পারি না।
তোমরা কীভাবে পারো?
তুমি কি আসলে পারো?
তোমাকে কেন জানো খুব কোমল হৃদয়ের মনে হয়,
পুরুষরা কি আসলে এমন হয়?
পুরুষ:
কখন বলেছো ঘুমানোর কথা!
ঘুমাও, আমার রুগ্ন বাহুতলে,
অদম্য মানবিক শক্তির মায়ায়
তুমি ঘুমিয়ে থাকো অবলীলায়।
৫০
নারী:
এমনভাবে যে বলতে পারে
তা কি মিথ্যা হয় কখনো?
পুরুষ:
ঠিক এখনই মিথ্যা নয়,
কিন্তু সময়ে সবই মিথ্যা হয়।
নারী:
ভয় পাই, ভীষণ ভয় পাই।
ঘুমিয়ে যাই, শুভরাত্রি।
৫১
রাগ করেছো মোহিনী?
তুমি চন্দ্রালোক,
আমি অন্ধকারে বসে থাকা
এক ক্লান্ত যোদ্ধা।
তোমার কাছ থেকে আমায়
আড়াল করছে আদিম দু’টো পাহাড়।
পারবে সরাতে?
পারবে মটাকাতে ওদের ঘাড়?
৫২
নারী:
এত কঠিন করে কেন বলো?
আমি যে বুঝতে পারি না!
পুরুষ:
সবকিছু কি সহজে বলা যায়,
সমাজ কি সে অনুমতি দেয়?
দেয় না।
নারী:
তুমি সমাজ মানো?
মানি কতটা জানি না,
তবে সামষ্টিক এসব কদর্যতাকে ভয় তো পাই।
৫৩
নারী:
আজ সহজ করে কিছু বলো,
প্রাপ্তির কথা বলো …
পুরুষ:
তুমি একদিন সত্যিই আমার হবে জানি,
তুমি কি জানো? মানো?
আমরা পারবো, আমরা পরস্পরকে হারাবো।
নারী:
তুমি পারবে না, এটা তুমি জানো না।
পুরুষ:
কেন এমন বলো?
নারী:
কারণ, আমি নারী, তোমার চঞ্চলতা বুঝতে পারি।
তুমি মায়াবী বলে, তুমি সৃজনশীল বলে
উপভোগ করি, ধারণও করি।
৫৪
পুরুষ:
আমি শুধু পথ চেয়ে থাকবো
কবে তুমি পণ ভাঙ্গো …
খুব বেশি দূরে যাব না,
তাহলে তো অপেক্ষা শেষে তোমায় পাবো না।
নারী:
ওভাবে কিছু চেও না,
সম্পকর্টা এমনই থাক,
আমি এর চেয়ে সংস্কারমুক্ত হতে পারি না।
পুরুষ:
আমার যে ইচ্ছে হয়!
কথা দিয়েছি বলে ইচ্ছেটাকে লুকাই,
আমার স্পন্দনে
তোমার অন্তরে এবং অন্দরে
নিত্য যে ফুল ফোঁটে, হয়ত ভ্রমরও জোটে,
তবু সে আমি নই, আমার নয়।
৫৫
নারী:
অপমান করলে।
ফুল ফোটে, আবার তা ঝরেও যাও,
তোমরা পুরুষেরা বুঝতে পারো না।
যতটুকু বুঝতে পারো
তা দিয়ে প্রেম হয় না, অতটুকুই শুধু হয়।
পুরুষ:
এবার তুমি অপমান করলে।
শোধ নিলে?
নারী:
সে সাধ্য নাই,
সত্যি ভালোবাসি যে তোমায়।
৫৬
নারী:
তুমি আসলে জীবন থেকে কী চেয়েছিলে?
হলো না কেন? হচ্ছে না কেন?
তোমাকে এমন
ধীকৃত অবস্থায় দেখতে ভালো লাগে না।
পুরুষ:
তুমি বুঝতে পারো তাহলে?
কেউ একজন এই পৃথিবীতে
বুঝতে পারো এটা আমার জন্য
আনন্দের বিষয় বৈকি।
তুমি আলোকবর্তিকা হয়ে এসেছো,
সত্যিই তুমি ভালোবেসেছো।
এবার হয়ত আমার হবে,
কিন্তু তুমি কি শেষাব্দি রবে?
৫৭
নারী:
তুমি কিন্তু অন্য পুরুষদের মতো
আমার কাছে ওসব চাইবা না।
পুরুষ:
কীসব?
নারী:
বোঝোনি বুঝি!
সবাই ক্যামন বুভুক্ষুর মতো তাকায়,
আমার ভালো লাগে না।
পুরুষ:
তুমি আমাকে কেন ভিন্ন ভাবো?
আমি লুকাই,
পলেস্তারা খসে পড়া দেয়ালে
আমি যে রঙীন কাগজ লাগাই!
চলবে