ধীরে বাড়ছে অপ্রচলিত পণ্যের রপ্তানি বাজার, প্রণোদনা সুবিধা চলে যাচ্ছে অবৈধ সিন্ডিকেটের হাতে

রপ্তানি

অপ্রচলিত পণ্যের মধ্যে রয়েছে তামার তার, ইনসুলেটর, টুপি, নারকেলের ছোবড়া থেকে উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য, হাঁশের পালকের তৈরি পণ্য, চশমার ফ্রেম, ছাতার বাট, লুঙ্গি, গরুর শিং হাড়গোড়, মাছ ধরার বড়শি, ইনসুলেটর, কুচে ইত্যাদি। এছড়াও অপ্রচলিত রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে জাহাজ, ফার্নিচার, আগর, ইলেক্ট্রনিক্স এ্যান্ড হোম এ্যাপ্লায়েন্স, এ্যাগ্রোপ্রসেস সামগ্রী, কাগজ, প্রিন্টেড ও প্যাকেজিং সামগ্রী, আইসিটি, রাবার, পাদুকা, কাট ও পলিশড ডায়মন্ড, কাঁকড়া, টুপি, পরচুলা, চারকোল, মশারি, কৃত্রিম ফুল, গলফ শাপট, শাকসবজির বীজ এরকম একশোর বেশি পণ্য । বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো ইপিবি সূত্রে জানা যায় বর্তমানে টুপি রফতানির পরিমাণ ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি টুপি রপ্তানি হচ্ছে বগুড়া জেলা থেকে। জেলার ধুনট, শাজাহানপুর, বগুড়া সদর, শিবগঞ্জ, শাজাহানপুর উপজেলার শতাধিক গ্রামে টুপি তৈরি করা হয়।  প্রতিবছর প্রায় ২০০ কোটি টাকার সমমূল্যের গরু-মহিষের নাড়িভুঁড়ি বিদেশে রফতানি হচ্ছে। সিংহভাগই যাচ্ছে চীন, হংকং, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে। এটি দিয়ে উন্নত মানের স্যুপ ও সালাদ তৈরি হয় এবং তা চীনাদের কাছে বেশ জনপ্রিয় খাবার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩ কোটি ২৫ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলারের কৃত্রিম চুল ও মানুষের মাথার চুল রফতানি হয়েছে। নারীরা চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ানোর পর যে চুল পড়ে, তা ফেলে না দিয়ে গুছিয়ে রাখেন বিক্রির জন্য। গ্রামের ফেরিওয়ালারা মাসে একবার সেই চুল কিনে নিয়ে যান। চুলের বিনিময়ে চুড়ি, শাড়ি, হাঁড়িপাতিলও বদল হয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা রিসার্চ এ্যান্ড মার্কেটসের গ্লোবাল আউটলুক ও ফোরকাস্ট বলছে, ২০২৩ সালের মধ্যে পরচুলার বৈশ্বিক বাজার হবে ১ হাজার কোটি ডলারের, বাংলাদেশী মুদ্রায় যা ৮৫ হাজার কোটি টাকা। দেশী মুদ্রায় বিশ্ববাজারে প্রতিবছর ২ হাজার ২০০ কোটি টাকার আগরের চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ সেখানে রফতানি করে মাত্র ১৩ কোটি টাকার আগর। শুধু মুসলমান নয়, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেও আগরের ব্যবহার বেশি। এছাড়া মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান সহ কয়েকটি জেলা থেকে বাঁশ ও বেতের তৈরি সামগ্রী রপ্তানি হচ্ছে। বেতের ঝুড়ি, বেতের সোফা, টি-টেবিল, বাস্কেট, পেপার বাস্কেট, ফলের ঝুড়ি, আয়নার গ্লাস ফ্রেম, বেতের লেমজার বাতি, বেতের মোড়া, ফুলের টপসহ বাঁশ ও বেতের বিভিন্ন সামগ্রী রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে মাটির তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র। করোনা পূর্ববর্তী সময়ে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ৪ কোটি ২৯ লাখ ৩০ হাজার ডলারের কাঁকড়া রফতানি হয়েছে। বাংলাদেশী মুদ্রায় যা ৩৬৫ কোটি টাকার সমান। এ ছাড়া রফতানি হয়েছে ৩ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের তামার তার, ১ কোটি ১৬ লাখ ডলারের গলফ খেলার স্টিক, ৫৪ লাখ ডলারের কৃত্রিম ফুল।

করোনাকালীন এবং করোনা পরবর্তী সময়ে এসব অপ্রচলিত পণ্যের সাথে যুক্ত হয়েছে করোনা সুরক্ষা সামগ্রী। করোনার সময় বাংলাদেশ বিশেষ করে মাস্ক এবং পিপিই রপ্তানি করেছে। করোনা পরবর্তী সময়ে কিছু পণ্যের রপ্তানিতে সরকার ভর্তুকি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে চা, দেশে তৈরি বাইসাইকেল ও এর যন্ত্রাংশ, দেশে তৈরি এমএস স্টিল পণ্য এবং দেশে উৎপাদিত সিমেন্ট শিট রপ্তানিতে প্রণোদনা বা নগদ সহায়তার আওতাভুক্ত হয়। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরেও ৪৩ ধরনের পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা দেবে সরকার। এসব পণ্য রপ্তানিতে ১ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত নগদ সহায়তা দেওয়া হবে। এর মধ্যে ৮ পণ্য রপ্তানিতে মিলবে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে যে ৬ খাতের পণ্য রপ্তানিতে— হালকা প্রকৌশল পণ্য, চামড়াজাত দ্রব্য, আসবাবপত্র, অ্যাকুমুলেটর ব্যাটারি, সিনথেটিক ও ফেব্রিকসের মিশ্রণে তৈরি পাদুকা ও ব্যাগ এবং চাল রপ্তানি খাত। ১২ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে। এ ছাড়া ১০ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি খাত, সাভারে চামড়াশিল্প নগরে অবস্থিত কারখানা ও সাভারের বাইরে অবস্থিত কারখানায় যেখানে নিজস্ব ইটিপি রয়েছে, এমন কারখানায় উৎপাদিত ক্রাস্ট ও ফিনিশড চামড়া, প্লাস্টিক দ্রব্য, কাগজ ও কাগজজাতীয় পণ্য, সফটওয়্যার, আইটিইএস ও হার্ডওয়্যার, জাহাজ রপ্তানি, ওষুধ পণ্য, হাতে তৈরি পণ্য (হোগলা, খড়, আখের/নারিকেলের ছোবড়া, গাছের পাতা/খোল, তৈরি পোশাকের ঝুট কাপড় থেকে), গরু ও মহিষের নাড়ি ভুঁড়ি শিং, পেট বোতল-ফ্লেক্স, পেট বোতল-ফ্লেক্স থেকে উৎপাদিত পলিইয়েস্টার স্টাপল, ফটোভোলাটিক মডিউল রপ্তানি, মোটরসাইকেল, কেমিক্যাল পণ্য, রেজার ও রেজার ব্লেডস, সিরামিক পণ্য, টুপি, কাঁকড়া ও কুঁচে, গ্যালভানাইজ শিট, ভোক্তা ব্যবহার্য ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক হোম ও কিচেন পণ্য রপ্তানি খাত।

২০২১ সালের জুলাই থেকে চীন তাদের বাজারে বাংলাদেশের ৯৭% পণ্যের শুল্কমুক্ত সবিধা দেয়। পরে চামড়াজাত পণ্যগুলোকে অন্তর্ভূক্ত করে এটিকে ৯৮% করা হয়েছে। কিন্তু চীনের প্রধান বিশটি আমদানী পণ্যের তালিকায় বাংলাদেশী কোনো পণ্য নেই। ইলেকট্রনিক সার্কিট, অপরিশোধিত তেল, মোটর কার, ফোন সিস্টেম ডিভাইস, পেট্রোলিয়াম গ্যাস, সয়াবিন, তামার তার, ডেটা প্রসেসিং মেশিন, সেমিকন্ডাক্টর, পরিশোধিত তামা, সৌর শক্তি ডায়োড, পলিমার, সৌন্দর্য পণ্য, স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট, লো ভোল্টেজ সুইচ— এই বিশটি পণ্যের কোনোটিই বাংলাদেশ চীনে রপ্তানি করে না। তামার তার বাংলাদেশ অন্যান্য দেশে রপ্তানি করলেও চীনের বাজার ধরতে পারছে না। চীন বাংলাদেশ থেকে মূলত খুবই অপ্রচলিত কিছু পণ্য আমদানী করে থাকে। চীনের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি বিশাল। বাংলাদেশ চীন থেকে দশ থেকে বারো বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানী করলেও এক বিলিয়ন ডলারের পণ্যও রপ্তানি করতে পারে না। এমনকি স্বাস্থ্যসনদ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ২০২০-এর জুন থেকে পরবর্তী এক বছর চীনের বাজারে বাংলাদেশের এডিবল এ্যাকোয়াটিক এ্যানিমেলস বা কাঁকড়া ও কুঁচে রপ্তানি বন্ধ ছিলো। এতে বাংলাদেশের ৫০ মিলিয়ন ডলারেও বেশি রপ্তানি আয় বাধাগ্রস্ত হয়। ২০২১ সালের জুলাই মাসে চীনে আরো কিছু অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানির জন্য একটি তালিকা পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আম, কাঁঠাল, পেয়ারা এবং আলুর পেস্ট। এসব পণ্যের ঝুঁকি পর্যালোচনার জন্য চীনা কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। এসব পণ্য অনুমোদন পেলে চীনে রপ্তানি কিছুটা বাড়তে পারে।

অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানি নিয়ে কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশে গবেষণা চলছে। তবে রপ্তানি আয়ের দিক থেকে কয়েকটি পণ্যই শুধু এগিয়ে আছে। এর মধ্যে ওষুধ, বাই সাইকেল এবং সবজি অন্যতম। বাংলাদেশ থেকে বিদেশের বাজারে রপ্তানি হয় এখন সাতশোর বেশি পণ্য। এর মধ্যে তৈরি পোশাক সহ সাতটি পণ্যেরই দখল করে আছে ৯৪% বাজার। অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানি করে এককভাবে অনেক টাকা না আসলেও হিসেবটি ফেলে দেওয়ার মতো নয়। যেমন এখন গলফ ব্যাটের শাপট রপ্তানি করে আসে প্রায় একশো কোটি টাকা। প্লাস্টিক বর্জ্য রপ্তানি করে আসে তিনশো কোটি টাকার মতো। অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানি করে কত টাকা আয় হয় এ বিষয়ে ইপিবি’র কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। ইপিবির বিভিন্ন সময়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছর অপ্রচলিত পণ্য থেকে আয় হয়েছে ২০ হাজার কোটি ডলার। আগের বছরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে এ আয় ১০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরে অপ্রচলিত পণ্যের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। ২০২২ সালের জুলাইয়ে ইয়ার্ন ও ফেব্রিক্স বর্জ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গত অর্থবছরের জুলাইয়ের তুলনায় এ বছরের একই সময়ে ১৫ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর মধ্যে বিশেষ প্রবৃদ্ধি হয়েছে পিভিসি ব্যাগ, প্রিন্টেড ম্যাটেরিয়ালস, পাল্প ও হস্তশিল্পে। অপ্রচলিত পণ্য হিসেবে পরিচিতি ইনসুলেটর তৈরি ও রপ্তানিতে ১৪০ কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ পেয়েছে নিটল-নিলয় শিল্প গ্রুপ। এ বিনিয়োগ পেতে শিল্প গ্রুপটিকে সহায়তা করেছে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। এ জায়গাগুলোতে অভিযোগও প্রচুর। এসবক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাযোশের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ রয়েছে যে, রপ্তানি প্রণোদনার সুযোগ নিচ্ছে বড় বড় কোম্পানিগুলো, অনেকক্ষেত্রে ভুয়া কোম্পানি। তাদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্টভাবে অভিযোগও উঠেছে। অপরদিকে ছোট ছোট উদ্যোক্তরা প্রণোদনার ধারে কাছে পৌঁছুতে পারছে না।

কৃষিপণ্য রপ্তানির বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৬.২ কোটি টাকার প্রণোদনা নিয়েছেন ঢাকার ফকিরাপুলের মামুন এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। ২০১৮ সালের আগস্ট থেকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৪২টি চালান রপ্তানি দেখিয়ে এ প্রণোদনা নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু তারা প্রণোদনা পাওয়ার মতো কোনো পণ্য রপ্তানিই করেনি। আরো অন্তত ২০টি প্রতিষ্ঠান একইভাবে ৪৫১ দশমিক ৫ কোটি টাকা মূল্যের ৯৬৫টি চালান রপ্তানি না করেই বিপুল পরিমাণ অর্থপাচার করেছে। রপ্তানি না করেও এলসির বিপরীতে ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে অর্থ আসায় এ ঘটনায় ব্যাংকেরও দায় থাকতে পারে বলে মনে করছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। তবে কাস্টমসের নথিতে ব্যাংকের দায়ের বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। কাস্টমস কর্মকর্তাদের ইউজার আইডি ব্যবহার করে এসব রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা করেছেন অন্তত ২০টি সিএন্ডএফ এজেন্ট। এসব চালান চট্টগ্রাম বন্দরে প্রবেশ না করলেও তা এনবিআরের সার্ভারে রপ্তানি দেখানো হয়েছে। যা ব্যবহার করে পরবর্তীতে প্রণোদনা পেয়েছে এসব প্রতিষ্ঠান। অস্তিত্বহীন এসব চালানগুলোকে কৃষিপণ্য বা প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন আলু, তিল বীজ, লাল মরিচ, হলুদ, টমেটো, ধনে গুঁড়া এবং বিরিয়ানি মসলা দেখানো হয়েছে। এসব পণ্য রপ্তানির উপর ২০ শতাংশ হারে প্রণোদনা পেয়ে থাকে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। রপ্তানিকারক ও তাদের এজেন্টদের পাশাপাশি অবশ্যই কিছু কাস্টমস এবং ব্যাংক কর্মকর্তারা এতে জড়িত রয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো তদন্ত রিপোর্ট সরকারের পক্ষ থেকে নেই। কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সেটিও জনগণ জানে না।

কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইলিয়াস মামুন মিয়াজীর মালিকানাধীন মামুন এন্টারপ্রাইজ এবং মিয়াজী ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেড প্রায় ৯৯ কোটি টাকার ২০৫টি চালান রপ্তানি করেছে। সাতটি ব্যাংকের তিনটি থেকে সংগৃহীত তথ্যে দেখা যায়, তারা প্রণোদনা হিসেবে ৭.৬১ কোটি টাকা নিয়েছে। একইভাবে ভুয়া রপ্তানি দেখিয়ে সরকারের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকার প্রণোদনা নিয়েছে অপর দুটি অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান ডিও এম্পেক্স লিমিটেড এবং এমবি এগ্রো ফুড প্রোডাক্ট। এই চিত্র থেকে এটা সহজেই অনুমেয় যে প্রণোদনা এবং ভর্তুকি সুবিধা নিয়ে অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানিতে চলছে ফাঁকি। বিপরীতে প্রকৃতপক্ষে যারা এ ধরনের পণ্য রপ্তানি করছে তারা প্রণোদনা এবং ভর্তুকি সুবিধা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিতে পারছে না। আসলেই যদি স্বচ্ছভাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যেত তাহলে নতুন নতুন উদ্যোক্ত তৈরি হত এবং অপ্রচলিত পণ্যের রপ্তানি বাজার বাড়তো।

রপ্তানি বহুমুখীকরণ খুবই জরুরী। এ বিষয়ে সরকার কিছু পদক্ষেপ নিলেও এখন পর্যন্ত কোনো মেগা প্রজেক্ট সরকার হাতে নিতে পারেনি। এখনো বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানিতে আটকে আছে। অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানিতে সরকার কিছু প্রণোদনা ঘোষণা করলেও উদ্যোক্তা তৈরিতে এগিয়ে আসতে পারছে না। প্রণোদনা সুবিধা চলে যাচ্ছে দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটদের হাতে। ছোট উদ্যোক্তাদের অনেক সমস্যা পোহাতে হয়। কারখানা স্থাপন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, ব্যাংক লোন না পাওয়া, ঘুষ দুর্নীতির খপ্পরে পড়া, বন্দরে ট্রেড লজিস্টিক্সের সমস্যা, রাজস্ব বোর্ডের বিভিন্ন রকমের ট্যারিফ পলিসির কারণে ছোট উদ্যোক্তাদের প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে। ফলে রপ্তানিপণ্যেও কাঙ্ক্ষিত বৈচিত্র্য আসছে না।


অনলাইন অবলম্বনে ফলোআপ নিউজ ডেস্ক