জিএফআই (ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে ৭.৫৩ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়, যা ৬৪০ বিলিয়ন টাকার সমতুল্য। তাই, দেশ থেকে অর্থ পাচারের পরিমাণের দিক থেকে ১৩৫টি উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৩তম। আমদানি ও রফতানির প্রকৃত তথ্য গোপন করে ১০ বছরে (২০০৬ থেকে ২০১৫) বাংলাদেশ থেকে ৬ হাজার ৩০৯ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৫ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। পাচার হওয়া অর্থের এ হিসেবটি কয়েক বছরের পুরনো। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ছিলো ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। অতএব, দেখা যাচ্ছে— যদি ২০১৫ পরবর্তী দশ বছরের হিসেব করা হয়, তাহলে দশ বছরে গত বাজেটের চেয়ে বেশি পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে এটা ছিলো বাজেদের দেড়গুণ। হিসেবের বাইরেও যে পরিমাণ অর্থ পাচার হয়, সেটি হিসেব করলে এটি হবে দিগুণেরও বেশি।
২০১৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে বছরে গড়ে পাচার হচ্ছে ৬৪ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে শুধু ২০১৫ সালে ১ বছরেই দেশ থেকে পাচার হয়ে যায় ৯৮ হাজার কোটি টাকা। পাচারকৃত টাকার পরিমাণ বিবেচনায় দক্ষিণ এশিয়ায় পাচারকারী দেশ হিসেবে দ্বিতীয় স্থানে বাংলাদেশ। প্রতি বছর দেশের এসব টাকা পাচার হয়ে চলে যাচ্ছে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, থাইল্যান্ডসহ ১০টি দেশে। আমদানি-রফতানিসহ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কারসাজি আর হুন্ডির আড়ালে অর্থপাচার করছে পাচারকারী সিন্ডিকেট। এমনটাই বলছে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ পাচার মনিটরিং সংস্থা— বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বিআইএফইউ। উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেনের সাড়ে ১৭ শতাংশই কোনো না কোনোভাবে পাচার হচ্ছে বলে দাবি আন্তর্জাতিক সংস্থাটির।
বাংলাদেশের অবৈধ অর্থের প্রবাহের বড় উৎস হচ্ছে সরকারি কর্মকর্তা ও প্রভাবশালীদের বড় বড় দুর্নীতি, বিভিন্ন ধরনের সংঘবদ্ধ অপরাধ, যেমন চোরাচালান, মাদক ও মানব পাচার, ব্যাংকঋণ কেলেঙ্কারি ইত্যাদি। অর্থ পাচারের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আর্থিকসহ সব ধরনের অপরাধ লুকানো, কর ফাঁকি, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার আইন ও বিনিয়োগ নীতি লঙ্ঘন, অন্য দেশে নিরাপদ বিনিয়োগ এবং উন্নত দেশের উঁচু মানের জীবনযাত্রার লোভে সেখানকার নাগরিকত্ব লাভ। মূলত বিনিয়োগ ভিসা, স্থায়ীভাবে বা দীর্ঘ সময়ের জন্য বসবাসের অনুমোদন, বিভিন্ন সেকেন্ড হোম প্রকল্প ও নমনীয় বিনিময় হারের ব্যবস্থা বাংলাদেশের নাগরিকদের অর্থ পাচারে উৎসাহিত করছে।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার গবেষণায় টাকা পাচারের ক্ষেত্রে মোটা দাগে এসব কারণ উঠে এসেছে। সাম্প্রতিক সময়ে পরপর ৩টি সংস্থার রিপোর্টেই বাংলাদেশ থেকে ভয়াবহ আকারে টাকা পাচারের তথ্য উঠে এসেছে। এই সংস্থাগুলোর মধ্যে আছে— মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই), সুইস ব্যাংক এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন আইসিআইজের পানামা ও প্যারাডাইস পেপার। দফায় দফায় রিপোর্ট প্রকাশ হলেও পাচার বন্ধে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই বলে মনে করেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এত টাকা পাচার হলেও, এত বেশি রিপোর্ট প্রকাশিত হলেও সরকারের দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেই। টাকা পাচার রোধে সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দরকার। বিশ্লেষকরা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে টাকা পাচারের এক ভয়াবহ তথ্য পাওয়া গেছে। আমদানির নামে এলসি বিল পরিশোধ করছে, কিন্তু কোনো পণ্যই দেশে আসছে না। প্রভাবশালী মহল পণ্য জাহাজিকরণের কাগজ জাল করে এলসিকৃত পণ্যের পুরো টাকাই তুলে নিয়ে বিদেশে রেখে দিচ্ছেন। এ ধরনের বেশ কিছু কেস স্টাডি পাওয়া গেছে।
সরকারের দু’টি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। টাকা ফিরিয়ে আনা এবং জড়িতদের কঠোর শান্তি নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক, দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসকে একযোগে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে পাচার রোধে আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটকে কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
দুইভাবে টাকা বিদেশে পাচার হয়। এর মধ্যে অন্যতম হল কাস্টমসে ভুল তথ্য দিয়ে আমদানি-রফতানির প্রকৃত দাম গোপন করে। এছাড়া হুন্ডির মাধ্যমে কিছু টাকা যায়। সেটির পরিমাণ খুব বেশি নয়। এলসির মাধ্যমেই বেশি টাকা পাচার হয়। সাধারণত আমদানি-রফতানির আড়ালে অর্থ পাচার হয়ে থাকে। তবে গোটা পৃথিবীতে বিশ্ববাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থ পাচার হচ্ছে। এ বিষয়ে এখন সবাই সতর্ক। কিন্তু বাংলাদেশ এ বিষয়ে এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) পানামা এবং প্যারাডাইস পেপার্সে এ পর্যন্ত অর্থ পাচারকারী হিসেবে ৮২ জন ব্যবসায়ীর নাম প্রকাশ করেছে।
পানামা পেপারসে স্থান পাওয়া যেসব বাংলাদেশির সম্পদের বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধান শুরু করার কথা ছিলো— তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন— আওয়ামী লীগ নেতা কাজী জাফরউল্লাহ (এক সময় জাতীয় পার্টির নেতা ছিলেন), তার স্ত্রী কাজী নিলুফার জাফর, ছেলে কাজী রায়হানুল জাফর, রায়হানুলের স্ত্রী ফাহরা মুরাদ, কাজী জাফরউল্লাহর বোন সাবিহা মাহবুব, ভগ্নিপতি আবদুল্লাহ আহসান ইউসুফ, ভাগ্নে আবদুল্লাহ ইমরান ইউসুফ ও আবদুল্লাহ আহসান ইউসুফ। এদের মধ্যে জাফরউল্লাহর বোন, ভগ্নিপতি ও ভাগ্নেরা নিউজিল্যান্ডে বসবাস করছেন। এ ছাড়া আরও যাদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে, তাদের মধ্যে আছেন- সামিট ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড মার্কেন্টাইল কর্পোরেশন প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও পাঁচ পরিচালক।
এ ছাড়া ইউনাইটেড গ্রুপের চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ রাজা, পরিচালক খন্দকার মইনুল আহসান (শামীম), আহমেদ ইসমাইল হোসেন ও আখতার মাহমুদ, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি এএমএম খান, খুলনার পাট ব্যবসায়ী দিলীপ কুমার মোদি, সি পার্ল লাইন্সের চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ সিরাজুল হক, বাংলা ট্রাক লিমিটেডের আমিনুল হক, নাজিম আসাদুল হক, তারিক ইকরামুল হক, ওয়েস্টার্ন মেরিনের পরিচালক সোহেল হাসান, মোমিন টি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজমত মঈন, মাসকট গ্রুপের চেয়ারম্যান এফএম জুবাইদুল হক, তার স্ত্রী সালমা হক, সেতু কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, তার স্ত্রী উম্মে রব্বানা, অমনিকেম লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইফতেখারুল আলম, তার পুত্রবধূ ফওজিয়া নাজ, আবদুল মোনেম লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএসএম মহিউদ্দিন আহমেদ, তার স্ত্রী আসমা মোনেম, অনন্ত গ্রুপের শরীফ জাহির, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপ বিল্ডার্সের ক্যাপ্টেন সোহাইল হাসান, বিবিটিএলের পরিচালক এএফএম রহমাতুল্লাহ বারী, ক্যাপ্টেন এমএ জাউল, মির্জা এম ইয়াহইয়া, মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম, সৈয়দা সামিনা মির্জা এবং জুলফিকার হায়দার। এ নামগুলো শৈল শিলার সামান্য দৃশ্যমান অংশমাত্র।
প্যারাডাইস পেপারসের দ্বিতীয় তালিকায় যে ১০ বাংলাদেশির নাম এসেছিল তাদের মধ্যে বিএনপি নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু এবং একটি প্রতিষ্ঠানের নাম ছাড়াও তার ছেলে আউয়াল-তাবিথ মো., আউয়াল-তাফসির মোহাম্মদ, চৌধুরী-ফয়সাল, মিন্টু-আবদুল আউয়াল, মোগল-ফরিদা ওয়াই, উল্লাহ-শহিদ, তাজওয়ার মো. আউয়ালের অভিভাবক হিসেবে আবদুল আউয়াল মিন্টু, আহমাদ-সামির, আউয়াল-তাজওয়ার মোহাম্মদের নাম রয়েছে। তালিকায় থাকা একমাত্র প্রতিষ্ঠানটি হল ব্রামার অ্যান্ড পার্টনার্স অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট (বাংলাদেশ) লিমিটেড। তাদের ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ৫০, মহাখালী বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১২১২।
অন্যদিকে প্যারাডাউস পেপারসে তৃতীয় তালিকায় নতুন করে যাদের নাম এসেছে তাদের মধ্যে মুসা বিন শমসের ছাড়া অন্যরা হলেন- ভেনাস ওভারসিস হোল্ডিংস কোম্পানি, ব্লক আই, বনানী ঢাকা। ফজলে এলাহী চৌধুরী, ডাইনামিক এনার্জি হোল্ডিং, ৪২৪ ফাস্ট ফ্লোর, রোড নং-৭, বারিধারা, ডিওএইচএস ঢাকা। কেএইচ আসাদুল ইসলাম, ইন্ট্রিপিড গ্রুপ, ধানমন্ডি ঢাকা। জুলফিকার আহমেদ, খালেদা শিপিং কোম্পানি, ১৩২ ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, রোড নং-৩, ধানমন্ডি ঢাকা। তাজুল ইসলাম তাজুল জেক্সিমকো ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, চাষাঢ়া নারায়ণগঞ্জ। মোহাম্মদ মালেক বেঙ্গল শিপিং লাইন, ১০১ আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম। শাহনাজ হুদা রাজ্জাক, সাউদার্ন আইস শিপিং কোম্পানি, ঢাকা ইপিজেড। ইমরান রহমান, ওশান আইস শিপিং কোম্পানি, ইপিজেড ঢাকা। মোহাম্মদ এ আউয়াল, শামস শিপিং লিমিটেড, ৭৭ মাওলানা শওকত আলী রোড, লালখান চট্টগ্রাম।
এরিক জনসন আনড্রেস উইলসন, ডব্লিউ এমজি লিমিটেড, বাড়ি নম্বর ১৪, চতুর্থ তলা, রোড নং-১৩, সেক্টর-৪, উত্তরা ঢাকা। ফারহান ইয়াকুবুর রহমান. ইন্ট্রিডিপ গ্রুপ, হাউস-৫, রোর্ড নং-৫১, গুলশান ঢাকা। তাজুল ইসলাম, জেক্সিমকো ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, বালুর মাঠ, চাষাঢ়া, নারায়ণগঞ্জ। আমানুল্লাহ চাগলা, পদ্মা টেক্সটাইল, বাড়ি ৪৫৮, লেন-৮, ডিওএইচএস, বারিধারা, ঢাকা। মোহাম্মাদ আতিকুজ্জামান, নিউটেকনোলজি ইনভেস্টমেন্ট, বর্তমান অবস্থান মস্কো, রাশিয়া। মোহাম্মদ রেজাউল হক, ঠিকানা উল্লেখ নেই, বর্তমান অবস্থান মাল্টা। মোহাম্মদ কামাল ভুইয়া।
তুহিন সুমন, জেক্সিমকো ট্রেড ইন্টারন্যাশাল, বালুর মাঠ চাষাঢ়া, নারায়ণগঞ্জ। মাহতাবা রহমান, সেলকন শিপিং কোম্পানি, বাড়ি নং-৮৭এ, রোড নং-৬, পুরাতন ডিওএইচএস, বনানী, গুলশান, ঢাকা। ফারুক পালওয়ান, জেক্সিমকো ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, নারায়ণগঞ্জ এবং মাহমুদ হোসাইন, গ্লোবাল এডুকেশন সিস্টেম, বর্তমান অবস্থান আয়ারল্যান্ড।
সম্প্রতি টাকা পাচারের আরও একটি বড় মাধ্যম হয়ে দেখা দিয়েছে রেমিটেন্স। একটি চক্র বৈদেশিক মুদ্রায় প্রবাসীদের রেমিটেন্স সংগ্রহ করে তা বিদেশেই রেখে দেয়। আর এ দেশে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকায় এর দায় শোধ করা হয়। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার জরিপ অনুযায়ী এই প্রক্রিয়ায় প্রায় ৪০ শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসছে না। ওইগুলোও পাচার হয়ে বিদেশের কোনো ব্যাংকে রাখা হচ্ছে।
দুর্নীতি, কমিশন বাণিজ্যসহ নানা অবৈধ উপায়ে খুব দ্রুতই এখানে সম্পদ বানানো যায়। আর যারা এভাবে অর্থ উপার্জন করে, তারা বড় অংশই বাইরে নিয়ে যায়। তাদের ছেলেমেয়েরা দেশের বাইরে পড়াশোনা করে। সেখানে সম্পদ গড়লে তা নিরাপদ। দ্বিতীয়ত, দেশের যে অবস্থা, তাতে নানা ধরনের আশঙ্কা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারেন। তৃতীয়ত, কারা পাচার করছে, তা জানা সত্যেও কোনো অ্যাকশন নেয়া হচ্ছে না। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর তেমন কোনো তৎপরতা নেই।
চতুর্থ হল আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে বেশ কিছু জটিলতা রয়েছে। এলসি খোলার পর ঠিকমতো জিনিসপত্র আসছে কিনা, সঠিক দামে খোলা হয়েছিল কিনা, তার নজরদারি নেই। পঞ্চমত, কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এমন বড় কোনো উদাহরণ নেই। এসব বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হলে টাকা পাচার বন্ধের সম্ভাবনা নেই। শুধু কথার কথা নয়, বাস্তবেই সরকারের পক্ষ থেকে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।
টাকা পাচার রোধে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে কয়েকটি পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছিলো। এর মধ্যে রয়েছে- বিদেশে অর্থ পাচার ও সম্পদ গচ্ছিত রাখা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো, অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে অপরাধ দমনে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। ইশতেহারে আরও বলা হয়েছিলো, পাচার রোধ ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব সংস্থা এগমন্ট গ্রুপের সদস্য। আরও ১৫৯টি দেশ এই গ্রুপে রয়েছে। এদের মাধ্যমে তথ্য বিনিময় হয়।
টাকা পাচারের মাধ্যমে পুরো দেশকে আর্থিকভাবে অচল করে দেওয়া হচ্ছে, পঙ্গু করে দেওয়া হচ্ছে। যারা টাকা পাচার করছে তাদের কয়েকজনকে যদি উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হয় তাহলে পরবর্তীতে সবাই টাকা পাচার করতে ভয় পাবে। ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৪ বছরে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার তথ্য প্রকাশ করেছে সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত দেশ থেকে পাচার হওয়া লক্ষ কোটি টাকার মধ্যে মাত্র ২১ কোটি টাকা ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে।
অর্থ পাচার দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে একটি বড় বাধা। বিদেশে অর্থ পাচার দিন দিন বাড়ছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য ভয়াবহ বিপদের কারণ হতে পারে। এটি প্রতিরোধ করতে না পারলে দেশের উন্নয়ন ভেস্তে যাবে। জাতীয় আয়ের একটি বড় অংশ পাচারের মাধ্যমে বেরিয়ে যাচ্ছে। দেশের একশ্রেণির সরকারি আমলা, রাজনীতিক, ব্যবসায়ীসহ উচ্চাভিলাষী ব্যক্তিরাই এই অর্থ পাচার করে আসছেন। তারা অবৈধ অর্থ, ব্যাংকের টাকা, জনগণের আমানত, দেশের সম্পদ ইত্যাদি আত্মসাৎ ও লুট করে নিজ হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে।
বিভিন্ন পত্রিকা অবলম্বনে ফলোআপ নিউজ ডেস্ক