তৈরি পোশাক নির্ভর রপ্তানি আয় থেকে বের হতে পারাটাই এখন বাংলাদেশের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ

রপ্তানি বাণিজ্য

২০২০-২১ অর্থবছরে বিশ্বের ২০৩টি দেশে ৭৫১টি পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এতে ৩৮ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৩ হাজার ৬৯০ কোটি ডলার আয় হয়েছে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলারের পণ্য, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। যদিও সরকার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলো ৫ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। সেই লক্ষ্যের চেয়ে রপ্তানি কম হয়েছে ৪ দশমিক ২১ শতাংশ বা ২৪৪ কোটি ডলার। আইএমএফ প্রাক্কলন করে বলছে, ২০২৬-২৭ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় হবে ৭ হাজার ৫৮ কোটি মার্কিন ডলার, যা ২০২০-২১ অর্থবছরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। আইএমএফের প্রাক্কলনে বলা হয়েছে, রপ্তানি আয় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫ হাজার ১৮৬ কোটি, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৫ হাজার ৭৭৯ কোটি, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৬ হাজার ৩৩০ কোটি ও ২০২৬-২৭ অর্থবছরে ৭ হাজার ৫৮ কোটি ডলার হবে। আর ২০২৬-২৭ অর্থবছরে ৭ হাজার ৫৮ কোটি ডলারের মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে পোশাক খাতের অংশ হবে ৫ হাজার ৭৪২ কোটি ডলার। বাকি ১ হাজার ৩১৬ কোটি ডলার আসবে সেবাপণ্য রপ্তানি থেকে। ২০২০-২১ অর্থবছরে বিভিন্ন দেশ থেকে ৬ হাজার ৬৮ কোটি ১০ লাখ (৬০.৬৮ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এর আগে কখনই এক অর্থবছরে এতো বেশি অর্থের পণ্য আমদানি করেনি বাংলাদেশ। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে পণ্য বাণিজ্যে প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি নিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছর শেষ হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিপোর্ট থেকে জানা যায়- ২০২০-২১ অর্থবছরে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৮০ কোটি লাখ (প্রায় ২৩ বিলিয়ন) ডলার। এই অঙ্ক ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়ে ২৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি। এর আগে প্রায় ১৮ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষ করেছিলো বাংলাদেশ। ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে ৩৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিলো বাণিজ্য ঘাটতি। ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩০০ কোটি ৮০ লাখ ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরের এই ঘাটতি ছিল ২৫৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। মূলত বিমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাপ করা হয়।
বাংলাদেশি পণ্যের অন্যতম রপ্তানি গন্তব্য ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোয় বর্তমানে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধায় পণ্য রপ্তানি করা যায়। ২০২৯ সাল পর্যন্ত এ সুবিধা বহাল থাকবে। এটাকেই এ সময় পর্যন্ত রপ্তানি আয় বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশ প্রধানত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ড ও বেলজিয়ামসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানি করে। আর জাপান, কানাডা, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশ এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানি করে। প্রধান প্রধান রপ্তানি পণ্যগুলো হলো নিটওয়্যার, ওভেন পোশাক, হিমায়িত মাছ, হিমায়িত চিংড়ি, হাঙ্গরের পাখনা, শুটকি মাছ, লবণযুক্ত মাছ, পশুর নাড়িভুঁড়ি, শাকসবজি, আলু, ফল, নারিকেল, সুপারি, শুকনা মরিচ, হলুদ, সরিষা, সয়াবিন-নারিকেল ও সরিষার তেল, তামাক, কফি বিনস, আদা, ধনিয়া, মধু, মসলা, চাল, শুকনা খাদ্য, বিস্কুট, জ্যাম, জেলি ও ফ্রুট জুস। রপ্তানি করা আরো পণ্য হলো সস, চা, কাঁচাপাট, মাংস, কাঁকড়া, কনডেন্সড মিল্ক, মানুষের চুল, হাঁসের পালক, পশুর হাড়, শিং, খুর, তাজা ফুল, বাঁশের খুঁটি, চিনি, চিটা গুড়, মিনারেল ওয়াটার, হুইস্কি, কয়লা, সি শেল, ছোবড়া ও ছোবড়া জাত পণ্য, ঝিনুক, মুক্তা, ন্যাপথা, ফার্নেস ওয়েল, ফার্মাসিটিক্যালস, রাসায়নিক সার, পিভিসি পাইপ, পিডিসি ব্যাগ, পলিথিন সিট, প্লাস্টিক হ্যাম্পার, সিনথেটিক রোপস, প্লাস্টিকের বর্জ্য, সিমেন্ট, প্রসাধনী, সাবান, রাবার, কাগজ, গ্লাস সিট, জিলোটিন, চামড়া, জুট ইয়ান, জুট টুয়াইন, জুট কারপেট, জুট ম্যানুফাকচারার্স, সিল্ক ফেব্রিক্স, কাঁচা তুলা, সুতি কাপড়ের বর্জ্য, কটন সূতা, পলিয়েস্টার ফ্রেড, অ্যাকরেলিক ইয়ার্ন, টেক্সটাইল ফেব্রিক্স, হস্তশিল্প, টেরি টাওয়েল, হোম টেক্সটাইল, পাদুকা (চামড়া), পাদুকা (পাট), পাদুকা (স্পোর্টস), সিরামিকের ইট, সিরামিক টাইলস, সিরামিক স্যানিটারি ওয়্যার ও সিরামিক টেবিল ওয়্যার। এছাড়া এমএস রড, জিআই পাইপ, আয়রন চেইন, কাস্ট আয়রন আর্টিকেল, তামার তার, মেশিনারিজ, ইলেকট্রিক ফ্যান, কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ, জেনারেটর, ট্রান্সফরমার, ড্রাইসেল ব্যাটারি, টেলিফোন সেট, বৈদ্যুতিক তার, টেলিফোন ক্যাবলস, কার্বন রড, বাইসাইকেল, লাইট ফিটিংস, গাড়ির যন্ত্রাংশ, জিঙ্ক ওয়াল্ট, বিল্ডিং ম্যাটারিয়ালস, অডিও-ভিডিও ক্যাসেট, টেলিভিশন সেট, সার্কিট ব্রেকার্স/বোর্ড, ইনডিকেটর ল্যাম্প, কম্পিউটার সফটওয়্যার, সিগারেট, মোমবাতি, ফিচার ফিল্ম, মেলামাইন টেবিলওয়্যার, চামড়ার ব্যাগ ও পার্টস রপ্তানি করা হয়।
আরো যেসব পণ্য রপ্তানি হয়, চামড়ার তৈরি হার্ভ গ্লাবস, পার্টিকেল বোর্ড, করোগেটেড কার্টুন, কাঠের ফ্রেম, প্রিন্টেড পণ্য, স্টেশনারি সামগ্রী, জামদানি শাড়ি, কম্বল, বস্তা ও ব্যাগ, তাঁবু, মশারির কাপড়, টুপি, ছাতা, পরচুলা, প্রাকৃতিক পাথর, ছোট প্লাস, জুয়েলারি, অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি সামগ্রী, ব্লেড, স্টেইননেস স্টিলের তার, অ্যাকিউমুলেটর ব্যাটারি ও পার্টস, ফেরি বোট, ক্যামেরা পার্টস, দেওয়াল ঘড়ি, কাঠের আসবাবপত্র, খেলনা, গলফ সেফট, ঝাড়বাতি, টুথব্রাশ, জিপার, বলপেন, মিউজিক্যাল যন্ত্রাংশ, অ্যালুমিনিয়াম স্ট্রাকচার, উপহার সামগ্রী, চামড়ার তৈরি ফেব্রিক্স, হ্যান্ড গ্লাভস (রাবার) ও জাহাজের তৈরি যন্ত্রাংশ।

রপ্তানিতে তৈরি পোশাকের বিকল্প কী?

বর্তমানে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানিমুখী শিল্পখাত। ২০২১-২২ অর্থবছরে শুধুমাত্র তৈরি পোশাক শিল্প থেকে রপ্তানির পরিমাণ ৪২.৬১৩ বিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৮১.৮১ ভাগ। এখনো বাংলাদেশের রপ্তানি আয় প্রধানত তৈরি পোশাক নির্ভর। প্রশ্ন হচ্ছে— এর বিকল্প কী? এরপরেই রয়েছে হোম টেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়া জাত পণ্য, ওষুধ, বাইসাইকেল, প্লাস্টিক পণ্য, কৃষিপণ্য, পাট ও পাটজাত দ্রব্য, চামড়া, ওষুধ, হিমায়িত মাছ এবং সামুদ্রিক খাদ্য। কিন্তু এর কোনোটিই তৈরি পোশাককে ছাড়িয়ে যাওয়ার অবস্থাতে নেই। পৃথিবীতে যে দশটি খাদ্য পণ্যের বিশাল বাজার রয়েছে— চাল, মাংস, দুধ, ভুট্টা, সয়বিনস, বিভিন্ন ধরনের শস্য, গম, সামুদ্রিক খাদ্য। কিছু হিমায়িত সামুদ্রিক খাদ্য বাদে বাংলাদেশ এর মধ্যে কিছুই রপ্তানি করে না। এর মধ্যে মাংস এবং সামুদ্রিক খাদ্যের বাজারটি বাংলাদেশ ধরার চেষ্টা করতে পারে, বিশেষ করে সামুদ্রিক খাদ্য। সামুদ্রিক খাবার বলতে মাছ, শেলফিশ এবং ক্রাফিশ সহ যেকোন ধরনের ভোজ্য সামুদ্রিক জীবনকে বোঝায়। এটি বিশ্বব্যাপী একটি জনপ্রিয় খাদ্য পছন্দ, এটির অনন্য স্বাদ, পুষ্টিগত সুবিধা এবং রন্ধনসম্পর্কিত উপযোগিতার জন্য এগুলো মূল্যবান। স্বাস্থ্যকর এবং টেকসই প্রোটিন উৎস হিসাবে এসব সামুদ্রিক খাদ্যের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। বাংলাদেশের রয়েছে বিশাল সমুদ্রাঞ্চল, ফলে সামুদ্রিক খাদ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তালিকার উপরের দিকে উঠে আসতে পারে। গ্লোবাল সামুদ্রিক খাবার বাজারের আকার ২০২১ সালে ৩১০.৭৫ বিলিয়ন ডলার ছিলো এবং ২০২২ সালে ৩৩৮.৪৭ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২০৩০ সালের মধ্যে ৭৩০.২৮ বিলিয়ন ডলার হতে যাচ্ছে। এখান থেকে বড় একটি অংশ বাংলাদেশ দখলে নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। পাশাপাশি বাংলাদেশ চামড়াজাত পণ্যের বাজারটিও হাতে নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। বাংলাদেশ মাথাপিছু মাংস ভক্ষণে পিছিয়ে আছে। প্রোটিন চাহিদা বৃদ্ধির জন্যও মাথাপিছু মাংস ভক্ষণ বাড়ানো দরকার। মাংস উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করলে চামড়া উৎপাদনও বাড়বে। এই চামড়া যদি ঠিকমতো পণ্যে পরিণত করা যায়, তাহলে চামড়াজাত পণ্যের বাজারটি ধরা সম্ভব। শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই বর্তমানে পঞ্চাশ বিলিয়ন ডলারের চামড়াজাত পণ্যের বাজার রয়েছে। পৃথিবীতে এ বাজার প্রায় ২৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের, যা বাংলাদেশের বর্তমান মোট রপ্তানি আয়ের আট গুণ। শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চামড়ার বাজারটিও বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের তুলনায় বেশি।

তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের ক্রেতারা অন্য দেশের তুলনায় দাম কম পায়

তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছে। আন্তর্জাতিক ক্রেতারা ধারাবাহিকভাবে বৈশ্বিক গড় মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক পণ্য কিনছেন। কিন্তু বাংলাদেশের কিছু প্রতিদ্বন্দ্বী কাছ থেকে কেনার সময় একই ক্রেতা বেশি দাম দিচ্ছেন। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্রের (আইটিসি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। স্থানীয় তৈরি পোশাক উৎপাদনকারীরা অন্য দেশের সরবরাহকারীদের তুলনায় ক্রেতাদের কাছ থেকে ৩২ থেকে সর্বোচ্চ ৮৩ শতাংশ পর্যন্ত কম দাম পান। এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশি তৈরি পোশাক উৎপাদনকারীদের একটি দীর্ঘদিনের দাবির সত্যতা প্রমাণ হলো। তারা প্রায়ই আন্তর্জাতিক ক্রৈতাদের কাছ থেকে আশানরূপ দাম না পাওয়ার অভিযোগ করেন এবং ভ্যালু চেইনে আরো ওপরের দিকে যাওয়ার গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেন। ‘দ্য গার্মেন্ট কস্টিং গাইড ফর স্মল ফার্মস ইন ভ্যালু চেইনস’ নামে আগস্ট মাসে প্রকাশিত সমীক্ষা প্রতিবেদনে আইটিসি জানায়, একটি বিষয় উঠে আসছে সেটি হলো খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডদের উচিৎ পোশাক সরবরাহকারীদের ন্যায়সঙ্গত ফ্রি-অন-বোর্ড (এফওবি) মূল্য পরিশোধ করা, কারণ তারা প্রায়ই উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে পোশাক কেনেন। প্রতিবেদন মতে, ‘প্রাপ্ত তথ্য থেকে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, অনেক কারখানা কম এফওবি মূল্য পাওয়ার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে।’

রপ্তানি আয়ে শীর্ষে মজুরিতে পিছিয়ে

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয়। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্ট্যাডিজের (বিলস) এক গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদেরমজুরি সর্বনিম্ন। এমনকি ভারতের চেয়েও অনেক কম। ভারতে পোশাক শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি বাংলাদেশি মুদ্রায় ১২ হাজার ১৬০ ঢাকা (১২৮ ডলার) আর বাংলাদেশে আট হাজার টাকা (৭৫.৫ ডলার, প্রতি ডলার ১০৬ টাকা হিসেবে)।
বিলসের গবেষণা বলছে, তুরস্কে তৈরি পোশাক খাতে মোট শ্রমিক ৪০ লাখ। শ্রমিকেরা প্রতি ঘন্টায় মজুরি পান ১.৪৮ ডলার। মাসিক ন্যূনতম মজুরি পায় ৩০৭ ডলার। বাংলাদেশি টাকার ২৯ হাজার ১৬৫ টাকা। ভিয়েতনামে কাজ করে ২৫ লাখ শ্রমিক। মাসিক ন্যূনতম মজুরি ১৬৮ ডলার বা ১৫ হাজার ৯৬০ টাকা। ফিলিপাইনে কাজ করে সাড়ে ৫ লাখ শ্রমিক। তাদের ন্যূনতম মাসিক মজুরি ২৪৪ ডলার বা ২৩ হাজার ১৮০ টাকা। মালয়েশিয়ায় কাজ করে দুই লাখ ৬০ হাজার শ্রমিক। মাসিক ন্যূতম মজুরি ২৭০ ডলার বা ২৫ হাজার ৯৩৫ টাকা। কম্বোডিয়ায় ছয় লাখ শ্রমিক। ন্যূনতম মজুরি ১৯৪ ডলার বা ১৮ হাজার ৪৩০ টাকা। ইন্দোনেশিয়ায় কাজ করে ৪২ লাখ শ্রমিক। ন্যূনতম মজুরি ১৩৭ ডলার বা ১৩ হাজার ১৫ টাকা। ভারতে কাজ করে চার কোটি ৫০ লাখ পোশাক শ্রমিক। ন্যূনতম মজুরি ১২৮ ডলার বা ১২ হাজার ১৬০ টাকা। চীনে শ্রমিক এক কোটি ৫০ লাখ। ন্যূনতম মজুরি ২৬২ ডলার বা ২৪ হাজার ৮৯০ টাকা। বিলসের গবেষণার তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে বর্তমানে পোশাক খাতে কাজ করছে ৩২ লাখ শ্রমিক। তারা মাসে ন্যূনতম মজুরি পাচ্ছে ৭৫.৫ ডলার বা আট হাজার টাকা। বিলসের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২০২ ডলার বা ২১ হাজার ৪১৫ টাকার করার কথা বলে হচ্ছে।
বিলস মূল্যস্ফীতি সহ সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে নতুন মজুরি প্রস্তাব করছে। তারা দেখিয়েছে ঢাকায় চারজনের একটি শ্রমিক পরিবারে মাসিক খাবার বাবদ খরচ হয় ১৪ হাজার ৩৩০ টাকা, ঘরভাড়া ১০ হাজার টাকা, খাদ্য ও ভাড়া বহির্ভূত ব্যয় সাত হাজার ৪৪৯ টাকা, চিকিৎসা ব্যয় এক হাজার ২৮৭ টাকা, শিক্ষা ব্যয় এক হাজার ২৫৬ টাকা, পোশাকসহ অন্যান্য বয় চার হাজার ৯০৬ টাকা এবং মাসিক সেভিংস এক হাজার ৫৮৯ টাকা। সব মিলে দাঁড়ায় ৩৩ হাজার ৩৬৮ টাকা। যেহেতু অধিকাংশ পরিবারে স্বামী-স্ত্রী দুই জনই পোশাক শ্রমিক হিসাবে কাজ করেন তাই সেহেতু ১.৪৬ জন ফ্যামিলি ইনকাম আর্নার ধরে এক জন শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি হয় ২২ হাজার ৮৫৫ টাকা। আর বিলসের গবেষণায় প্রস্তাব করা হয়েছে ২২ হাজার ৮৫০ টাকা। প্রায় একই হারে ঢাকার আশপাশের উপশহর এবং চট্টগ্রামেও মজুরি কাঠামোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

আমরা যদি বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর ইতিহাসের দিকে তাকাই তাহলে দেখবো শিল্পেন্নত এবং স্বনির্ভর হয়ে ওঠার জন্য তাদের রয়েছে সুস্পষ্ট পরিকল্পনা এবং সংগ্রামের এক ইতিহাস। পরিকল্পনা এবং পরিশ্রম নিষ্ঠার সঙ্গে করতে পেরেছে বলেই তারা আজ উন্নত রাষ্ট্র। উন্নত দেশ হতে হলে বাংলাদেশকে দু’টো কাজ করতে হবেÑ ক্রমান্বয়ে কিছু কিছু পণ্যে স্বনির্ভর হতে হবে, এবং পাশাপাশি কিছু কিছু পণ্য নির্দিষ্ট করে রপ্তানি আয় বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞাদের নিয়ে একটি প্যানেল গঠন করে স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। শুধু তৈরি পোশাক রপ্তানি এবং রেমিটেন্সের ওপর নির্ভরশীল থাকলে চলবে না, প্রণয়ন করতে হবে বহুমুখি রপ্তানি বাণিজ্যের পরিকল্পনা। এক্ষেত্রে সামুদ্রিক খাদ্য, চামড়া এবং পাটজাত পণ্য হতে পারে অগ্রগণ্য।


ফলোআপ নিউজ ডেস্ক

বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধ নিবন্ধ হতে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে লিখিত।