আজকে ডেইলি স্টার পত্রিকায় একটি খবর রয়েছে। ঢাকা শহরের জীবনযাত্রার ব্যয় এবং কানাডার মন্ট্রির শহরের জীবনযাত্রার ব্যয় একই। কিন্তু জীবনমানে রয়েছে যোজন যোজন ফারাক। ব্রিটিশ ম্যাগাজিন দ্যা ইকোনোমিস্ট-এর তথ্য মতে ঢাকা এবং মন্ট্রিল খরচের দিক থেকে রয়েছে ৭১নম্বরে, অন্যদিকে কানাডার টরেন্টো রয়েছে ৮৮নম্বরে।
অর্থাৎ, টরেন্টো শহরের জীবনযাত্রার ব্যয় ঢাকার চেয়ে কম! আমেরিকার অপেক্ষাকৃত দরিদ্র এবং দূর্নীতির দেশ মেক্সিকের রাজধানী মেক্সিকো সিটির অবস্থানও ঢাকার পরে।
জীবনের সকল ঘটনার সাথে অর্থনীতির সম্পর্ক তৈরি করা যায়। এখানেও আচমকা অর্থনীতির একটি সরলীকরণ করা যায়। জীবনযাত্রার মানের তুলনায় কেন ঢাকায় জ্যবনযাত্রার ব্যয় এত বেশি? সহজ ভাষায়— বৈষম্য ও দুর্নীতি।
আয়ের মাধ্যমে যদি পাপ হয়, তাহলে ব্যয়ের মাধ্যমে সে পাপের প্রায়শ্চিত্য করা হয়। সকালে আপনি ঠাঁঠারি বাজার বা ছোটখাট কোনো বাজারে গিয়ে দেখবেন পাঁচ/সাতশো/এক হাজার টাকা কেজি দরের মাছ দশ/বিশ কেজি কিনে নিয়ে যাচ্ছে এমন মানুষের সংখ্যা প্রচুর। ওখানে আপনি পাত্তাই পাবেন না। এর বিপরীত চিত্র হচ্ছে, হাফ কেজি/এক কেজি তেলাপিয়া বা নলামাছ কেনার জন্য ঘুরছে একই বাজারে শত শত মানুষ।
ঐ বেঘোরে খানেওয়ালারা কিন্তু খেয়ে নিশ্চিন্ত থাকে না। এরপর আসে হজমের প্রশ্ন। যেহেতু গাড়িতে চলে তাই সময় বের করে হাঁটতে হয়, তাতেও নিস্কৃতি মেলে না। মনের জুজু এবং পকেটের টাকা তাকে তাড়িয়ে নিয়ে যায় অ্যাপোলো/স্কয়ার/ল্যাবএইডে, এভাবে প্রায়শ্চিত্যের প্রথম পর্ব শুরু হয়।
টাকার ব্যয় ‘নিজস্ব স্বার্থ রক্ষায়’ নিশ্চিত করতে আগে থেকেই সন্তানদের নষ্ট করা শুরু করে দেয়। নষ্টের প্রথম ধাপ হিসেবে বেশি খাইয়ে স্থুল বানিয়ে ফেলা, দ্বিতীয় ধাপ ইংলিশ মিডিয়াম/বাংলিশ মিডিয়াম এবং ডজন খানেক টিচার দিয়ে সন্তানের লাইফ হেল করে দেওয়া।
এভাবে তারা অবৈধ উপায়ে আয়ের প্রায়শ্চিত্য ব্যয়ের মাধ্যমে করছে এবং দেশটাকেও ঠেলে দিচ্ছে চরম অসুস্থ প্রতিযোগিতা, বৈষম্য এবং দূর্নীতির মধ্যে। এ কারণেই মূলত ঢাকা শহরে জীবনযাত্রার ব্যয় লাগামহীন। কারণ, এসব কাণ্ডজ্ঞানহীন ধনীদের দেখে দেখে দরিদ্ররাও প্রতিযোগিতায় নামে, প্রানান্ত হয়, নিজে শেষ হয়, সবকিছু শেষ করে।
দিব্যেন্দু দ্বীপ