ধর্মের আধ্যত্মিক দিক বলে এখন আর কিছু নেই। ধর্ম এখন পুরোটাই সাম্প্রদায়ীক, এজন্য অনভূতিও তার এখন খুব প্রবল।
ধর্ম বা ধার্মীকের আঘাত পাওয়ার তো আসলে কিছু নেই, আঘাত পায় সম্প্রদায়, আঘাত তো আসলে পায় না, বড়ামী আহত হয়।
তো যারা চাপাতি হাতে তুলে নেয়, তারা কিন্তু একটা বড় দায়িত্ব পালনের সুযোগ পায়, তারা একটি সম্প্রদায়ের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয়। এজন্য বিষয়টিতে বোধহয় তাদের একটুও অপরাধবোধ নেই, বরং গর্বের সাথে তারা কাজটি করে চলেছে।
বিষয়টা অনেকটা সেনাবাহীনীর বর্ডার পাহারা দেওয়ার মতই। বর্ডারে বন্দুক হাতে বিজিবি যেমন দেশ পাহারা দেয়, এরা চাপাতি হাতে সম্প্রদায়ের পাহারা দেয় ধর্মের নামে।
গতকালই তো একজন স্কুল ছাত্রকে বিএসএফ মেরে ফেলেছে। ছেলেটি আম পড়াতে গিয়েছিল বলে খবরে প্রকাশ।
বিএসএফরে যে জোয়ান একজন নিরপরাধ কিশোরকে মেরে ফেলল, সে খুব স্বাভাবিক আছে নিশ্চয়ই, রাতে খেয়েছে, পরিবারের সাথে আড্ডা-অাহলাদ করছে, আজকে আবার ডিউটিতে এসেছে!
এক্ষেত্রে হত্যাকাণ্ডটি সংগঠিত হয়েছে দেশ প্রেমের নামে এবং এজন্য সে তার জাতির কাছে বীরও!
ধর্মাবমাননাকারীকে চাপাতি দিয়ে হত্যা করেও কিন্তু একই রকম বীরত্বের মধ্যে থাকছে খুনিরা। সম্প্রদায়ের কাছে তারা বীর, কারণ, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সম্প্রদায়ের শেষ সীমানায় তারা পাহারা বসিয়েছে।
সাম্প্রদায়ীক জায়গা থেকে অত্যন্ত লিবারেল মানুষটাও আত্মশ্লাঘা বোধ করে। যেহেতু এখনো পৃথিবীতে সাম্প্রদায়ীক বাস্তবতা রয়েছে, এবং ধর্মটাই শুধু নির্দিষ্ট কোনো সম্প্রদায়ের মেনিফেস্টো, তাই ধর্ম নিয়ে নেতিবাচক কিছু বলা মানে একা একটা সম্প্রদায়ের সামেন দাঁড়িয়ে যাওয়া।
এখন পর্যন্ত ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বাইরে শক্তিশালী কোনো সম্প্রদায় তৈরি হয়নি। হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান…, সবে মিলে আসলে একটিই সম্প্রদায়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এটা হয় কি করে?
নাস্তিকতা তাই বিশ্বাস-অবিশ্বাসের বিষয় না হয়ে, হওয়া দরকার ধর্মীয় সম্প্রদায়ের যৌক্তিক বিরোধীপক্ষ। ঈশ্বর বনাম নিরীশ্বর নয়, হতে হবে সম্প্রদায় বনাম অসম্প্রদায়।
ঈশ্বর যেমন দ্যুলোকের বিষয়, নিরীশ্বরও তাই। অস্তিত্বের প্রশ্নের সাথেই শুধু অনস্তিত্বের প্রশ্ন জড়িত থাকতে পারে, তাই ঈশ্বরে অবিশ্বাসের কোনো প্রয়োজন আসলে নেই।
প্রয়োজন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের যৌক্তিক বিরোধিতা এবং ক্রমান্বয়ে তা এনিহিলেশনের চেষ্টা করা।