আজকের দিনে

ডেল ব্রাকেনরিডজ কার্নেগি (নভেম্বর ২৪, ১৮৮৮ – নভেম্বর ১, ১৯৫৫) ছিলেন একজন আমেরিকান লেখক, অধ্যাপক, ও একাধারে বিখ্যাত আত্মোন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণমালা যেমন: সেফ-ইম্প্রুভমেন্ট, সেল্সম্যানশিপ, করপরেট ট্রেনিং, পাবলিক স্পিকিং, ও ইন্টার পার্সোনাল স্কিল-এর উদ্ভাবক। তিনি দরিদ্র মিজুরি কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি হাউ টু উইন ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ইনফ্লুয়েন্স পিপলস (১৯৩৬ সালে প্রকাশিত) বইয়ের লেখক, যা আজো প্রচণ্ড জনপ্রিয় বেস্ট সেলারের মর্যাদা পায়। তিনি ১৯৪৮ সালে প্রকাশিত হাউ টু স্টপ অওরিং অ্যান্ড স্টার্ট লিভিং , লিঙ্ক দ্য আননোন এবং আরো অনেক বইয়েরও লেখক। তার বইয়ের বিশেষত্ব এই যে নিজের প্রতিক্রিয়ার ভিন্নতার মধ্য দিয়ে অন্যের ব্যবহারের পরিবর্তন আনা সম্ভব।

Dale-Carnegie-profile


প্রারম্ভিক জীবন
ডেল কার্নেগী ১৮৮৮ সালে মেরীভিলে, মিজুরিতে জন্মগ্রহণ করেন। কার্নেগী ছিলেন অত্যন্ত দরিদ্র কৃষক পরিবারের জেমস উইলিয়াম কার্নাগী ও আমান্দা এলিজাবেথ হারবিসনের দ্বিতীয় পুত্র। বালক বয়সে যদিও প্রত্যহ তিনি ভোর চারটায় উঠে গৃহপালিত গরুগুলো থেকে দুধ সংগ্রহ করতেন, তথাপি তিনি এর মধ্য দিয়ে ওয়ারেঞ্চেবার্গ-এর সেন্ট্রাল মিশৌরী স্টেট ইউনিভার্সিটি তে তার পড়াশুনা চালিয়ে যান।

ব্যক্তিগত জীবন
তার প্রথম বিবাহিত জীবনের ছিন্ন হয় ১৯৩১ সালে। ৫ই নভেম্বর, ১৯৪৪ সালে তিনি তুলসা, অক্লাহমাল-এ ডরোথি প্রাইস ভেন্ডারপোলকে বিয়ে করেন, যিনিও পরে বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করেন। ভেন্ডারপোলের ঘরে দুইটি মেয়ে ছিলো; রোসমেরি, যিনি ভেন্ডারপোলের প্রথম ঘরের সন্তান, ও কার্নেগীর ঘরে ডনা ডেল কার্নেগী জন্ম নেন। কার্নেগী তার নিজ বাড়ি ফরেস্ট হিলস, কুইঞ্চ, নিউ ইয়র্কে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে সমাধিস্থ করা হয় বেল্টন, মিজুরি, কাস, সেমেটারিতে। অফিসিয়াল বাইওগ্রাফিতে উল্লেখ করা হয়, কার্নেগী ১লা নভেম্বর, ১৯৫৫ সালে ইউরেমিয়া জটিলতাসহ হকিংস রোগে মারা যান

কর্মজীবন
তার কলেজোত্তর প্রথম চাকরিটি ছিলো সেলিং করেস্পন্ডেন্স কোর্সেস টু রেঞ্ছারস, পরে তিনি আর্মর অ্যান্ড কোম্পানি’র জন্য বাকন (লবণ জারিত শুকরের মাংস), সাবান এবং লার্ড (শুকরের চর্বি মিশ্রিত করা) তৈরি করেন। তিনি ফার্মের প্রধান হিসেবে তার সেলস টেরিটোরি দক্ষিণ ওমাহ, নেব্রারাস্কতে সফলতা লাভ করেন। ১৯১১সালে ৫০০ ইউএস ডলার সঞ্চয়ের পর তিনি তাঁর বহুদিনের চৌতকুয়া’র অধ্যাপক হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিক্রয় সেবা ত্যাগ করেন। তিনি নিউইউর্ক আমেরিকান একাডেমি অব ড্রামাটিক আর্টস-এ যোগ দেন, যদিও এটা বলা আছে যে, একবার একটি রোড শো “পলি অব দ্যা সাইকেল”-এ তিনি ডঃ হার্টলি’র চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, কিন্তু অভিনেতা হিসেবে অল্প সাফল্য পান। যখন প্রডাকশন বন্ধ হয়ে গেলে তিনি নিউ ইয়র্ক প্রত্যাবর্তন করেন ও চাকরিবিহীন থাকাকালীন ব্রোকের কাছে ওয়াইএমসিএ-এর ১২৫ নম্বরে বাস করতে শুরু করেন। পাবলিক স্পিকিং-এর ধারণাটি তিনি ওখানেই লাভ করেন। ৮০% মোট লভ্যাংশে তিনি ওয়াই পরিচালকের কাছে নিজেকে শিক্ষা প্রদানের জন্য প্ররোচিত করেন। তিনি তাঁর প্রথম সেশনে ইম্প্রভাইজিং এর ওপর আলোচনা শেষ করেন ও ছাত্রদের “রাগান্বিত হয় এমন কিছু” বক্তব্যের উপর বক্তৃতা প্রদান করতে বলেন এবং শ্রোতার সম্মুখে ভীতিহীন বক্তব্য প্রদানের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। ১৯১২ সালের প্রারম্ভে, ডেল কার্নেগী কোর্সের সূচনা করেন। কার্নেগী আমেরিকানদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করেছিলেন এবং প্রতি সপ্তাহে এতে তাঁর আয় দাঁড়াত ৫০০ থেকে ১০০০০ ইউএস ডলার।

অবদান
সম্ভবতঃ তাঁর সফলতার সূচনা ঘটে নামের শেষ অংশ কার্নাগি থেকে কার্নেগীতে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে। তিনি তা করেন সেসময়ের বহুল শ্রদ্ধান্বিত ও পরিচিত ব্যক্তিত্ব এন্ড্রু কার্নেগী নামে। ১৯১৬ সালে ডেল কার্নেগী হল ভাড়া নিতে সক্ষম হন। কার্নেগীর লিখিত সংগ্রহশালার প্রথম প্রকাশ “পাবলিক স্পিকিং: এ প্র্যাক্টিক্যাল কোর্স ফর বিজিনেস ম্যান” (১৯৩২ সালে)। তাঁর সেরা অবদান ছিলো যখন সিমন অ্যান্ড চুস্টার “হাউ টু উইন ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ইনফ্লুয়েঞ্চ” প্রকাশিত হয়। ১৯৩৬ সালে বইটি প্রথম আত্মপ্রকাশে বেস্ট সেলারের স্বীকৃতি পেয়েছিলো। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে ১৭তম মুদ্রণও জোটে বইটির ভাগ্যে। কার্নেগীর মৃত্যু নাগাদ বইটি বিশ্বের ৩১টি ভাষায় রচিত পাঁচ মিলিয়ন কপি বিক্রয় করেছিলো ও সাড়ে চার লক্ষের মতো ছাত্র কার্নেগীর প্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতক লাভ করে। বইটিতে লিপিবদ্ধ আছে যে, ১৫০০০০ শব্দ সম্বলিত সেই সময়ের প্রাপ্তবয়স্কদের শিক্ষার অগ্রগতির উপর একটি সমালোচনামূলক বক্তৃতা রাখেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়কালীন তিনি ইউএস সামরিক বাহিনীকে সহায়তা করেছিলেন।

কার্নেগীর প্রশিক্ষণ
ডেল কার্নেগীর প্রশিক্ষণ হচ্ছে ব্যবসায়ের জন্য একটি শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম, যার ভিত্তি কার্নেগীর শিক্ষা-প্রণালী। ৮০টিরও বেশি দেশে উপস্থাপিত হয়ে ১৯১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ও বিশ্বজুড়ে ৮০ লক্ষ লোক এই কার্নেগীর শিক্ষা পদ্ধতি গ্রহণ করেন।
কোর্সটি মূলত একটি মালিকানা পদ্ধতি, টিম ডাইনামিক্স ও ইন্ট্রা-গ্রুপের কর্মকান্ডের মাধ্যমে আন্তঃপারস্পরিক সম্পর্ক, চাপ সহনীয় ও দ্রুত পরিবর্তনীয় কর্মক্ষেত্রের অবস্থা মোকাবেলায় শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে। অন্য বিষয়গুলোও এতে প্রাধান্য পায় যেমন যোগাযোগ, সৃজনশীল সমস্যা সমাধানে ও নেতৃত্ব গঠনে ভূমিকা পালন করে।
কোর্সটি মূলত ৫টি ধাপে, যা ধারাবাহিক উন্নয়ন চক্র (কন্টিনিউয়াস ইম্প্রুভমেন্ট সাইকেল)নামে গঠিতঃ
1. দৃঢ় আত্মবিশ্বাস গঠন,
2. লোক দক্ষতা বাড়ানো,
3. যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ানো,
4. নেতৃত্বের উন্নয়ন,
5. চারিত্রিক উন্নয়ন ও চাপ কমানো।

* উইকিপিডিয়া হতে।