প্রথম পর্ব
রেল পরিবারে পদার্পণের দিন থেকে নাক মুখ দিয়ে অক্সিজেনের ন্যায় হতাশা আমার ফুসফসে প্রবেশ করেছে যা অদ্যাবধি আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছে৷ প্রতিদিন অফিসের চেয়ারটাতে বসি আর চিন্তা করি, চুয়াল্লিশ সাল তুমি আর কতো দূর? তুমি আসলেই আমি পেনশন পাই আর না পাই, পেয়ে যাবো আমার কাঙ্খিত অবসর ৷ সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পরেও চোর, অকর্মণ্য সাব্যস্ত হওয়া থেকে মুক্তি পাবো ৷ শীতের সকাল (৫:৩০) এ পায়ে হেটে অথবা রিকশায় স্টেশনে পৌঁছার সময় পথমধ্যে নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়ে কর্তৃপক্ষ সদয় হয়ে আমাকে প্রতিদিন ১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিসিএস টিসির দায়িত্ব দিয়েছেন ৷ প্রত্যেকদিন সেই তিন ঘন্টার অভিজ্ঞতার আলোকে আরব্য উপন্যাসের ন্যায় প্যাথেটিক ও রোমাঞ্চকর সিরিয়াল লেখা সম্ভব আমার পক্ষে ৷ শ্রাবনের বারিধারার ন্যায় আমার উপরে যাত্রীসাধারণ কর্তৃক বর্ষণকৃত কতিপয় জ্ঞানসম্ভারের সাথে আমি শ্রদ্ধাভরে দ্বিমত পোষণ করি…
১। যাত্রী : সেবার মানতো একটুও বাড়েনি, ভাড়াতো ঠিকই বাড়িয়েছেন৷
আমি : ভাই, গরুর মাংসতো একসময় ১৫০ টাকা কেজি কিনেছেন, এখন কিনছেন ৫০০ টাকা কেজি ৷ খাদ্যমান কতটুকু বেড়েছে? আমি বোঝাতে চেয়েছি, মূল্য বৃদ্ধি পায় উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফিতিসহ বিভিন্ন কারণে ৷ সেবার মানের সাথে সবসময় সম্পর্কিত নয় ৷
২। যাত্রী : এখানে ( টিসি গেইটে) টিকেট ছাড়া যেতে দিচ্ছেন না, গাড়ীর মধ্যেতো ঠিকই বিশ টাকা দিলে খুশি হয়ে পকেটে পুরবেন ৷
আমি : ভাই, পঞ্চাশ টাকার ভাড়া বিশ টাকা দেয়ার সুবিধাভোগীতো আমি আপনি দুজনই ৷ একা আমারে দুষছেন কেনো?
৩। এতো টিকেট কাটার জন্য জোরাজুরি করেন, বছর শেষে ঠিকইতো লোকসান হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায় ৷
আমি : ভাই, অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি রেলের লাভ-ক্ষতি টিকেট বিক্রির সাথে সম্পৃক্ত নয় ৷ আজ পর্যন্ত রেলের কোনো প্রজেক্ট কমার্শিয়ালি ভায়াবল কিনা তা ভাবার সুযোগ দেয়া হয়নি রেলওয়ের বাণিজ্যিক বিভাগকে, যা অবহেলিতই থাকে ৷ যেখানে সাগরদাড়ি, কপোতাক্ষের মতো হাইলি কমার্শিয়াল গাড়িতে (যেখানে যাত্রী একটা টিকেটের জন্য হাহাকার করে) একটা শোভন সাধারণ শ্রেণির কোচ লাগানোর জন্য দারে দারে মাথা খুটতে হয়, সেখানে কাল চিঠি পেলাম সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেসের মতো ( যার টিকেট বিক্রির পরিমাণ ১০-১২% এর উর্দ্ধে নয়) গাড়ীতে একটা ( যেএফসি) এসি ক্যুপ লাগানো হচ্ছে ৷ সেখান আয় কেমন আসবে তা সহজেই অনুমেয় ৷ তাছাড়া যেখাতে বিনিয়োগ হচ্ছে অন্তত ষাট-সত্তর বছরের জন্য, তাৎক্ষণিকভাবে সেই খাতে লাভ লস হিসাব করা বাতুলতা মাত্র ৷ তবে অবশ্যই ইনভেস্টমেন্ট যৌক্তিক হওয়া উচিৎ ৷ এ যৌক্তিকতা বিচারের দায়ভার অনেকের উপরই বর্তায় ৷
৪। অনেক গুণীজন আবার রেলের লাভ-ক্ষতির সাথে বাস মালিকের সম্পর্ক খোঁজেন। আমি শ্রদ্ধাভরে তাদের জানাতে চাই, রেলপথ নামে আলাদা একটা মন্ত্রণালয় রয়েছে, যেখানে রয়েছেন অনেক বড় বড় কর্তাব্যক্তি ৷ যারা আলাদিনের চেরাগের এক ঘষায়, এক ফুঁয়ে শুধু রেল কেনো পুরো দেশটায় স্বর্গীয় বাতাস বইয়ে দিতে পারেন ৷ আমার ক্যাডারের জোনাল প্রধানগণ বড়জোর দু’একটা কোচ লাগানোর অনুরোধ করতে পারেন ৷ চেষ্টা করতে পারেন সাধ্যের মধ্যে কিছু সমস্যার সমাধান করতে ৷
আমি অস্বীকার করি না পুরো দেশটার ন্যায় আমার এ পোড়া রেলটাতে খারাপ মানুষ নাই, তাদের খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তি দিলে কৃতার্থ হবে ৷ নচেৎ কেবল উপরের দিকে থুথু ছিটাবেন না, থুথুর কিয়দংশ নিজেদের চোখে মুখেও লাগবে ৷
চলবে…
লিখেছেন