তোমার চিকিৎসা চলে?
শরীর ভালো?
কাকে জিজ্ঞাসা করি, বল?
ওরা বলবে, এই হিন্দু মেয়ের
কেন দরকার তোমার খবর?
হিন্দু মেয়ে না আমি, মানুষ শুধু।
ধর্ম -জাতে পরিচয় মানিনি কখনো
মানুষকে মানুষ থেকে দূরে ঠেলে যা
তা কি করে মানুষের পরিচয় হয়?
নিজের রক্ত ওরা ছুঁয়ে বলুক তো,
যাদের হিন্দু বলে ওরা
নিজ পূর্বপুরুষের রক্তে তাদের রক্ত ফোঁটা নাই?
সেই রক্ত নেই, যারা মানুষকে
বামুন-ক্ষত্রিয়-বৈশ্য-শুদ্রে ভাগ করে ছুঁড়ে দিল দূরে,
ব্রাহ্মণ-রাজার নীতি মেনে।
আপন কে করে দিল পর!
শিরাতে সেই হিন্দুরই রক্ত বয়ে যাওয়া জাতি বলে
যা কিছু সভ্যতা আচার
সবই আজ ছাড়ার সময়!
এত সহজেই অভিশপ্তদের,
নিজেদের যা যা ছিল সব
মাটি বাদে সব সম্পদের
ছেড়ে দিল তারা অধিকার!
ওদেরকে প্রশ্ন আমার
তোমরা কি বোঝো,
যা নিজের,
তা দাবী করে নিতে হয়?
যারা ছিল জাতপাপী গোঁড়া হিঁদু
মানুষের ছোঁয়াকেও অপবিত্র বলেছিল যারা
তাদেরকে বলে দাও আজ,
“এই ভাষা, এই গান, এই শাড়ি, টিপ চুড়ি
পার্বণ, মেলা, পুঁথি সব আমাদেরও !! “
দাবী কর,
কেড়ে নাও অধিকার।
কেন তুমি ছেড়ে দাও
পুরোদমে যা ছিল তোমার?
গাছ নদী ফসলের মত,
শাড়িতে ললনা, আর ধুতি ফতুয়ায় পুরুষ,
উৎসবে, পার্বণে, মেলা আর যাত্রাগানে
তোমরাই ছিলে। ভুল গেলে!
তাদের কে ঘৃণা করে নিজের যা সব ছেড়ে দিলে??
এমনকি ভাষারও অধিকার!!
ঘৃণা শুধু ঘৃণাই শেখায়,
ঘৃণাতে পুড়বে ঘৃণাকারী
আর কেউ কখনোই নয়!
হিন্দুর শেখানো বিভাজন,
আরবের আনা আগ্রাসন –
“ছুঁয়ে দিলে মেরে দিব ” ছেড়ে দিয়ে ঠিকই
লোভ দাও, অস্ত্র ধর তুলে, “এসো সবে এক ধর্ম তলে,
নয় তোমায় করব দংশন”।
প্রাকৃত বাঙালী রক্ত শরীরে তোমার,
না ছিল অমঙ্গল বিভাজন
করনি অন্যায় আগ্রাসন।
ছিলে তুমি কোল, মুন্ডা, ভীল
সাঁওতাল, অস্ট্রিক, দ্রাবিড়,
মাটির মানুষ হয়ে প্রকৃতির সাথে মিশে ছিলে।
কিন্তু দেখ,
বিভাজন-আগ্রাসনে আজ
নিজেরই ভাইয়ের রক্ত মেশাও মাটিতে,
তোমাদেরি ভিন্নজাত আত্মীয়ের
দীর্ঘশ্বাস বাতাসে ছড়ায়!
পোড়ে শুধু বাংলার শত শত বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস,
কাঁদে বাংলার সভ্যতার আত্মা!!
বাঙালী মুসলিম-হিন্দু, ধর্ম সব
আজ কি ভেঙে দিবে
যুগে যুগ ধরে গড়া সমৃদ্ধ এই
বাঙালী সংস্কার?
কোরান, গীতায় কি বলে, “কর তুমি
নিজের অস্তিত্ব অস্বীকার”??
এবার বলত,
কি ভুল আমার,
হলামই না হয় জন্ম হিন্দু পরিবারে
ভালোবেসে যদি আমি নিতে চাই তাহার খবর!?
ধর্ম দিয়ে কর কেন আজো তুমি মানুষ বিচার?