রাজনের পিতা-মাতাকেও আইনের আওতায় আনা দরকার । দিব্যেন্দু দ্বীপ

শোকের আবহ কিছুটা কেটে গেলে রাজনের পিতা-মাতাকেও আইনের আওতায় আনা দরকার, তা সে প্রতিকী হিসেবে হলেও।

যে প্রশ্নগুলো তোলা দরকার-
* রাজনের পিতা-মাতা কেন রাজনকে (১২/১৩) ভরণপোষণ দিতে ব্যর্থ হল? কেন তাকে সবজি বিক্রী করতে পাঠাল?

পাশাপাশি নাগরিক সমাজের রাষ্ট্রের কাছে জানতে চাওয়া দরকার-
* সন্তান যদি বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে ভরণপোষণ দিতে আইনত বাধ্য হয়, তাহলে আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত সন্তানকে ভরণপোষণ দিতে পিতা-মাতা কেন বাধ্য হবে না?
* রাষ্ট্রকে জানতে হবে, বিষয়টি বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে যে, টোটাল জিডিপির কত শতাংশ শিশুশ্রম নির্ভর?
* রাষ্ট্রের কাছে প্রশ্ন করতে হবে- কোন সেক্টরে কী পরিমাণ শিশুশ্রম নিয়োজিত আছে রাষ্ট্র তা জানে কিনা;
* রাষ্ট্রের কাছে প্রশ্ন রাখা দরকার- অবৈতনিক এবং বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার সাথে শিশুশ্রম সুস্পষ্টভাবে সাংঘষিক হওয়া স্বত্ত্বেও কীভাবে শিশুরা শ্রমে নিয়োজিত হচ্ছে।

[যেহেতু পিতা-মাতা ব্যক্তিগতভাবে শিশুদের শ্রমে নিয়োজিত করছে, তাই প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে শিশুশ্রমের জন্য যে আইন আছে তা প্রয়োগ করা সম্ভব নয়, যদিও প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও আইনের প্রয়োগ নেই। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা যেহেতু বাধ্যতামূলক, তাই এ বিষয়ে সরকার পিতা-মাতার কাছে জাবাবদিহিতা চাইতে পারে]

ইত্যাদি অনেক বিষয় আলোচনায় তোলা দরকার। শুধু রাজনের হত্যাকারীর বিচার চাওয়া এবং এই ঘটনাটায় অতিরিক্ত স্পেসিফিকেশনে বিপদ আছে, সরকার শুধুমাত্র এই ঘটনাটা নিয়ে তৎপর হবে, বিভিন্ন রাঘব বোয়ালেরা রাজনের পিতা-মাতার কাছে ছুটে যাবে, রাজনের পিতা-মাতাকে অর্থ সাহায্য দেওয়া হবে, রাজনের খুনির বিচারও হবে; কিন্তু সমস্যা থেকেই যাবে, তাই শুধু স্পেসিফিকেশনে সিমাব্দ্ধ না হয়ে বিষয়টা নিয়ে কাজ করতে হবে, এবং লাগাতার তা করতে হবে।

এবার একটি বাস্তবতা তুলি ধরি, তাহলে এদেশে শিশুশ্রমের মূল কারণ বুঝতে সুবিধা ।

আমাদের বাসায় যে মেয়েটা (নাগিস) কাজ করে, ওর পিতার দুইটা বিয়ে। প্রথম স্ত্রী মারা গেছে তিন সন্তান রেখে। নাগিস প্রথম মায়ের সন্তান। নারগিসের বড় দুই ভাই আছে, তারা বিয়ে করে আলাদা হয়েছে, পড়াশুনা কেউ করেনি, কাজটাজ করে কোনমতে চলে তারা। নারগিসের পরের মায়ের চার সন্তান। নারগিসেরও বিয়ে হয়েছে। শুরুতে ও বাড়িতেই ছিল, স্বামী কিছু করত না। ওদের চলত না, সচেতনতার অভাবে নারগিসের প্রথম সন্তান ডেলিভারির সময় মারা যায়। এরপর কারো সাথে স্বামী নিয়ে ও ঢাকায় চলে আসে। স্বামী ভ্যান চালায়, কখনো চালায়, কখনো চালায় না; নারগিসই মূলত বাসায় কাজ করে সংসার সামালায়।

নারগিসের ঢাকায় আসার এক বছর পরেই আবার সন্তান হয়েছে। ওর ছেলের বয়স এখন তিন বছর। কাজে যেতে হলে ছেলেকে কার কাছে রেখে যাবে? বাড়িতে ওর আট বছরের একটি ছোট ভাই আছে। ওর পিতা ওকে বলেছে, ভাইকে এনে ছেলের দেখাশুনা করাতে, বিনিময়ে ভাইয়ের খাওয়া পরা দেবে এবং বাপকে মাসে তিনশো টাকা পাঠাবে। নারগিস তাই করেছে। এক বছর ধরে আট বছরের একটি ছেলে তিন বছরের একটি ছেলেকে দেখাশুনা করে, ছেলে খাটানোর বিনিময়ে পিতাকে টাকা পাঠাতে হয়!

তাহলে আট বছরের ঐ ছেলেটা কি পিতার কাছে দাস নয়? বন্দী নয়? এখানেই শেষ নয়, নারগিসের আরেক সৎ বোন বৃষ্টি (১৫), সে বাড়িআলীর বাসায় কাজ করছে পাঁচ বছর ধরে। বৃষ্টি নাম সই করতে পারে না। কিন্তু প্রতি মাসে বাপকে এক হাজার টাকা পাঠায়। বৃষ্টির দুই বছরের একটি বোন আছে বাড়িতে। ওকেও নিশ্চয় আর কয়েক বছর পরে একই ভাগ্য বরণ করতে হবে।
উপরের ঘটনার বাস্তবতায় নারগিসের পিতা কেন অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হবে না? কেন সেজন্য আইন থাকবে না?

 
Dibbendu Dwip