মহান মে দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) ও বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের উদ্যোগে আজ ১ মে সকাল ১০টায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে এক মিছিল বের হয়ে পল্টন, প্রেসক্লাব হয়ে আবার সংগঠন কার্যালয়ের নিচে এসে শেষ হয়। ফখ্রুদ্দিন কবির আতিকের সভাপতিত্বে মিছিল পরবর্তী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি জহিরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ও বাসদ(মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটির সদস্য উজ্জল রায়, গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন নেতা ডা. মুজিবুল হক আরজু, রেডিমেড দর্জি শ্রমিকনেতা ইদ্রিস আলী, পুস্তক বাঁধাই শ্রমিক ফেডারেশনের সদস্য সচিব মানিক হোসেন, প্রাইভেট গাড়ী চালক ইউনিয়নের আহ্বায়ক মামুন মিয়া, নির্মাণ শ্রমিক রাশেদুল ইসলাম প্রমুখ।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ- ১৬০০০ টাকা নিম্নতম মোট মজুরী, অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার, গণতান্ত্রিক শ্রম আইন-বিধিমালা ও কর্মস্থলে নিরাপত্তার দাবি। রাজনীতি সচেতন, নীতিনিষ্ঠ ও সংগ্রামী শ্রমিক সংগঠন গড়ার আহ্বান জানান।
নেতৃবৃন্দ বলেন, “মে দিবস কোন উৎসবের দিন নয়। মে দিবস ৮ ঘণ্টা কাজ, ৮ ঘণ্টা অবসর-বিনোদন আর ৮ ঘণ্টা বিশ্রামের অধিকার আদায়ের জন্য ধর্মঘটে শ্রমিকের রক্ত ঝরানোর দিন। ১৮৮৯ সালে সর্বহারা শ্রেণীর মহান নেতা কমরেড ফ্রেডরিক এঙ্গেলস ২য় আর্ন্তজাতিক সম্মেলনে ১লা মে-কে আর্ন্তজাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস পালনের প্রস্তাব করেন এবং তা গৃহিত হয়। আজ দেশী-বিদেশী মালিক শ্রেণী ও তাদের স্বার্থ রক্ষাকারী সরকার শ্রমিকদের সে সংগ্রামের ইতিহাস ভুলিয়ে দিতে চায়।”
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন- “গত ৪৫ বছরের পুঁজিবাদী ‘উন্নয়নের জোয়ার’-এ দেশের অর্থনীতির তথাকথিত প্রবৃদ্ধি হয়েছে। মহাজোট সরকার তাদের ঘোষিত ‘মধ্য আয়ের দেশ’ বানানোর লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। ধনীদের সম্পদ বাড়ছে, কিন্তু শ্রমিক-কৃষক গরিব-মধ্যবিত্ত বিপুল জনসাধারণ মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, অভাব-অনটনে হাঁসফাঁস করছে। এদেশের সম্পদ সৃষ্টিতে যাদের অবদান সবচেয়ে বেশি সেই শ্রমিক হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খেটেও মানুষের মতো বাঁচার উপযোগী মজুরি পায় না, কৃষক ফসলের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত, প্রবাসী শ্রমিকরা প্রায় দাসের মত জীবনযাপন করে, মধ্যবিত্ত শিক্ষিত শ্রমশক্তি অনিশ্চয়তাপূর্ণ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত, ছিন্নমূল বস্তিবাসীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। মুষ্টিমেয় ধনকুবের গোষ্ঠী এদেশের জমি-কারখানা-উৎপাদন যন্ত্রসহ সবকিছুর মালিক, তাদের স্বার্থেই অর্থনীতি-রাজনীতি-সমাজ পরিচালিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জাতীয় পার্টি-জামাত এসব দল এই ব্যবস্থাকেই টিকিয়ে রেখে তার সুবিধা ভোগ করতে চায়। ব্যক্তিমালিকানাভিত্তিক এই পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কারণেই উদয়াস্ত পরিশ্রম করেও গরিবের দুর্দশা কাটে না, অন্যদিকে মালিকরা টাকার পাহাড় গড়ে। এই অবস্থা পাল্টাতে হলে চাই শ্রমিকদের সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ লড়াই- এটাই মে দিবসের শিক্ষা। যতদিন রাষ্ট্র মালিকশ্রেণীর হাতে থাকবে শ্রমিকশ্রেণীর দুর্দশা কাটবে না। তাই অর্থনৈতিক দাবি-দাওয়া আদায়ের পাশাপাশি রাজনীতি সচেতন বিপ্লবী ধারার শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।”
মহান মে দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন, সূত্রাপুর থানা শাখার উদ্যোগে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ্ (ভিক্টোরিয়া) পার্কে আজ বিকাল বিকাল সাড়ে ৪টায় শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। থানা সংগঠক রাজীব চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে ও ছাত্র ফ্রন্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক কিশোর সরকারের পরিচালনায় সভায় আলোচনা করেন বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি জহিরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল রায়, সাইফুজ্জামান সাকন, পুস্তক বাঁধাই শ্রমিক ফেডারেশনের আহ্বায়ক জামিল ভূইঁয়া, মানিক হোসেন, রেডিমেড দর্জি শ্রমিকনেতা ইদ্রিস আলী, আবির মাহমুদ প্রমুখ। আলোচনা সভার শুরুতে গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।