[স্মৃতিচারণ]

1555569_10203988737452880_250937973280223955_n

কাজের সুবিধার্থে অনেক সময় প্রকৃত লক্ষ্যের কথা গোপন রাখতে হয়। আসল লক্ষ্যটি অদৃশ্য রেখে কিছু জনপ্রিয় উপলক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাওয়া এ ধরণের সমাজ ব্যবস্থায় সুবিধাজনক। ছদ্মবেশে ধিরে ধিরে লক্ষ্য অর্জনের পথে এগোতে হয়। ২০০৭ থেকে ২০১০ -এই তিনটি বছর সামাজিক কাজের পিছনে ব্যয় করেছি। বুকে হাত রেখে বলছি, মাসে মাসে পরিবারকে আট হাজার টাকা দেওয়া ব্যতীত আর কিছুেই করিনি। দুটো টিউসনি এবং কোচিং করিয়ে পনের হাজার টাকা আয় হত। সময় ব্যয় হত দিনে চার ঘণ্টা, ঘুমোতাম পাঁচ ঘণ্টা, ঘণ্টা দুই পত্রিকা এবং এ বই সে বই পড়তাম। খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি কাজে আরো দুই ঘণ্টা যেত। ৫+৪+২+২ = ১৩ঘণ্টা । বাকী ১১ঘণ্টা সময় ব্যয় করেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে কথা বলে, পত্রিকায় লিখে, নিজে পত্রিকা বের করে। রাত্রে ক্যাম্পসের ছিন্নমূল মানুষ নিয়ে কাজ করেছি। বেশিরভাগ সময় এসব কাজ একাই করেছি। পত্রিকাটি বের করতে গিয়ে কিছু ছাত্র-ছাত্রী এসেছে। মাসে দুটো সংখ্যা বের করতাম। sel নামক একটি হাউজিং প্রতিষ্ঠান থেকে মাসে বিশ হাজার টাকা বরাদ্দ বের করেছিলাম। ভেবেছিলাম, ভাল কিছু কাজের উদ্যোগ নিয়েছি বলে sel এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তখা মালিক ফান্ডিং করছে। চরম বিপদের মুহূর্তে দূরে সরে যাওয়ায় এবং আরো কিছু তথ্য-উপাত্ত মিলিয়ে বুঝেছিলাম তিনি সম্ভবত নিঃস্বার্থ ছিলেন না। উনি প্রকাশক এবং আমি সম্পাদক হিসেবে একটি পত্রিকার রেজিস্ট্রেশন হয়েছিল, উনি সেটি আর বের করলেন না। ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারতাম, কিন্তু রুচিতে কুলোয়নি। ‘ক্লিন ডিউ’ কর্মসূচি নামে আমরা একটি পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করেছিলাম। পরে জাপান থেকে একশোজন শিক্ষার্থী এসে কর্মসূচিটি টেনে নেয়। শুনেছি আমাদের কর্মসূচিটি বিক্রী হয়েছিল। বর্তমানে দেখছি ছাত্রলীগ ‘ক্লিন ক্যাম্পাস সেফ ক্যাম্পাস নামে অনুরূপ একটি কর্মসূচী হাতে নিয়েছে’। অথচ এই ছাত্রলীগই ‘খুব বেশি বেড়েছিস’ বলে আমাকে হল থেকে বের করে দিয়েছিল। হল থেকে বের হতে হল। চরম বিপদে কাউকে পাশে পেলাম না।পরে বুঝেছি, তখন যারা আমার সাথে ছিল তারা (বেশিরভাগ) আসলে আমার কাজের সাথে বা চিন্তা-ভাবনার সাথে ছিল না, তাদের নিজ নিজ লক্ষ্য ছিল। ঘোড়া ডিঙ্গিয়ে ঘাস খাওয়া কাকে বলে তা ঐ সময় টের পেয়েছিলাম। একটি কাজ কাউকে দিয়ে করানো যায় না, কোরো কারো নজর লজ্জাজনকভাবে শুধু হাজার কোটিপতির দিকে ছিল। তাদের কয়েকজনে জন্য এবং আমার কিছু হঠকারি সিদ্ধান্তের জন্য শেষ পর্যন্ত সকল উদ্যোগ ভেস্তে গিয়েছিল। আমার অপরাধ ছিল, আমি তখন যথেষ্ট কৌশলী হতে পারিনি। ষোলো-সতের ঘণ্টা পরিশ্রম করতাম, কোন বাহবা নেই, কোন প্রশংসা নেই। যাইহোক, বেঁচে গেলাম হল ছাড়তে হওয়ায়। ছাত্রলীগকে এখন আমি ধন্যবাদ জানাই।
[ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ গোলযোগের প্রেক্ষিত আবুক বরক নামে এফএইচ হলে একজন ছাত্র মারা যাওয়ায় ‘ক্লিন ডিউ’ কর্মসূচীর সাথে তার নামটি জুড়ে দিয়েছিলাম। ওটাই ছিল ভুল। ছাত্রলীগ ধরে নিয়েছিল, আমি জামাতে সাথে অাঁতার করেছি। সম্ভবত sel এর এমডি মহোদয়ের কোন পরিচয় তাদেরকে দুইয়ে দুইয়ে চার মিলাতে সাহায্য করেছিল।]
নিজের থাকার জায়গা নেই। এরমধ্যে সুবর্ণা বাসা থেকে আবার চলে এসেছে। বিপদ কাকে বলে কত প্রকার কী কী … প্রথম ঢাকায় এসে যেমন বিপদে পড়েছিলাম, ঠিক একই রকম বিপদে আবার পড়লাম। একদিকে পিতার বিধ্বস্ত একটি পরিবার আমার কাঁধে, অন্যদিকে ক্লাসিক বিয়ে, একেবারে কপর্দক শূন্য অবস্থা, পকেটে ফুটো পয়সা নেই, থাকার জায়গা নেই! সে কাহিনীতে আর না যাই।

শুরুতে যে কথা বলছিলাম, সবসময় লক্ষ্যটি সামনে আনতে নেই। অামার তখন ভুল ছিল সবার সাথে নিজের ইচ্ছেগুলো শেয়ার করা। খেলার পাত্র হয়ে গিয়েছিলাম। খেলেছিল আমাকে নিয়ে ছোট ছোট ছেলে মেয়েগুলো। স্মৃতিচারণ করতে এখন ভালই লাগে। কারো উপর রাগ হয় না। রাগ হয় নিজের উপর। আবার ভাবি, জীবন তো সময় নামক কতগুলো ছোট ছোট চেইনের একটি শৃঙ্খল। যা ঘটেছে সবেমিলে আমি। মেনে নিই। তবে ২০০৭ থেকে ২০১৩ -সময়টা ভোলা কঠিন। যে সময়টা নিজের কাজে লাগানো সুযোগ ছিল, সামার্থ ছিল, প্রয়োজন ছিল। সময়টা আমৃত্যু দুঃসহ হয়ে থাকবে না, তবে এখনো ভোলা সম্ভব হয়নি।

[‘ক্লিন ডিউ’ কর্মসূচীটি মূল উদ্যোক্তাদের আড়ালে রেখে কীভাবে বিক্রী হয়েছিল তার একটি নমুনা ছবি (জাপানি ভদ্রলোকের সাথে একজনকে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে, যিনি কোনভাবেই উদ্যোগের সাথে জড়িত ছিলেন না) নিচে দেওয়া হয়েছে। জাপানি শিক্ষার্থীদের সাথে উপাচার্য স্যারও যুক্ত হয়েছিলেন, কিন্তু তিনিও মুল উদ্যোক্তাদের স্মরণ করা বা কাউকে ডাকার প্রয়োজন বোধ করেননি]
[যে কারণে ছাত্রলীগ নাখোস হয়েছিল সে ছবিটিও দেওয়া হয়েছে]