জর্জ হ্যারিসন (ফেব্রুয়ারি ২৫, ১৯৪৩, যুক্তরাজ্য – নভেম্বর ২৯, ২০০১) বিংশ শতাব্দীর অত্যন্ত প্রতিভাবান একজন জনপ্রিয় গায়ক এবং গিটারিস্ট। তবে তাঁর প্রতিভা কেবলমাত্র এ দু’য়ে সীমাবদ্ধ থাকেনি। তাঁর বিচরণের ক্ষেত্র ব্যাপ্ত ছিল সঙ্গীত পরিচালনা, রেকর্ড প্রযোজনা এবং চলচ্চিত্র প্রযোজনা অব্দি। বিখ্যাত ব্যান্ড সঙ্গীত দল দ্য বিটল্স এর চার সদস্যের একজন হিসেবেই তিনি বিখ্যাত হয়ে ওঠেন।
পপ সঙ্গীতের জনপ্রিয় ইংল্যান্ডের এই শিল্পী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পন্ডিত রবি শংকরের অনুরোধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরের ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে ১৯৭১ সালের ১লা আগষ্টে এক বেনিফিট সঙ্গীত অনুষ্ঠানের কনসার্ট ফর বাংলাদেশ আয়োজন করেছিলেন। এই কনসার্ট হতে সংগৃহীত ২,৫০,০০০ ডলার বাংলাদেশের উদ্বাস্তুদের জন্য দেয়া হয়েছিল।
মূলত: লীড গিটারিস্ট হলেও বিটলসের প্রতিটি এলবামেই জর্জ হ্যারিসনের নিজের লিখা ও সুর দেয়া দু’একটি একক গান থাকতো যা তাঁর প্রতিভার পরিচায়ক ছিল। বিটলস্ এর হয়ে এ সময়ের গানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল-
ইফ আই নিডেড সামওয়ান
ট্যাক্সম্যান
হোয়াইল মাই গীটার জেন্টলী উইপস্
হেয়ার কামস্ দ্য সান এবং
সামথিং
বিটলস্ ভেঙ্গে যাবার পরও তাঁর জনপ্রিয়তা কমেনি। সত্তুরের পরবর্তী সময়ে তাঁর অনেক গান প্রচন্ড জনপ্রিয় হয়েছিল। এ সময় কালের গানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল-
মাই সুইট লর্ড (১৯৭০)
গিভ মি পিস অন আর্থ (১৯৭৩)
অল দোজ ইয়ার্স এগো (১৯৮১)
গট মাই মাইন্ড সেট অন ইউ (১৯৮৭)
পরিচ্ছেদসমূহ
১ ১৯৭১: কনসার্ট ফর বাংলাদেশ
২ ব্যক্তিগত জীবন
৩ অসুস্থতা এবং মৃত্যু
৪ তথ্যসূত্র
৫ উৎস
৬ আরো পড়ুন
৭ বহিঃসংযোগ
১৯৭১: কনসার্ট ফর বাংলাদেশ
১৯৭১ সালে যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলছিল, তখন জর্জ হ্যারিসন তার বন্ধু রবি শংকর এর পরামর্শে নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেন প্রাঙ্গনে দুটি দাতব্য সঙ্গীতানুষ্ঠান(কনসার্ট) এর আয়োজন করেন। অনুষ্ঠানটি তে জর্জ হ্যারিসন, রবি শংকর ছাড়াও গান পরিবেশন করেন বব ডিলান, এরিক ক্ল্যাপটন, অপ্র বিটল্ রিঙ্গো স্টার সহ আরও অনেকে। কনসার্টে জর্জ হ্যারিসন তার নিজের লেখা বাংলাদেশ গান পরিবেশন করেন। কনসার্টের টিকেট, সিডি ও ডিভিডি হতে প্রাপ্ত অর্থ ইউনিসেফের ফান্ডে জমা করা হয়।
ব্যক্তিগত জীবন
১৯৬০ এর মাঝামাঝি সময় থেকে হ্যরিসন ভারতীয় সংস্কৃতি প্রতি আকৃষ্ট হন এবং বিটলসের অন্যান্য সদস্যদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। Help নামক চলচিত্র তৈরির সময় বাহমায় ‘শিবানন্দ যোগ’ এর প্রতিষ্ঠাতা স্বামী বিষ্ণু দেবানন্দ তাকে The Complete Illustrated Book of Yoga নামের বইটি দেন। ১৯৬৬ সালে হ্যরিসন তাঁর স্ত্রী প্যাঁটিকে কে নিয়ে মুম্বাই সফরে যান। সেখানে তিনি বেশ কিছু ধর্গুমরুর সাথে দেখা করেন, সিতার নিয়ে পড়াশুনা করেন এবং কিছু তীর্থ স্থান পরিদর্শন করেন। ১৯৬৮ সালে উত্তরভারতের হৃষীকেশ পরিদর্শনে যান বিটলসের অন্যান্য সদস্যদের সাথে নিয়ে এবং সেখানে মহর্ষি মহেশ যোগীর কাছে শিক্ষা নেন। ১৯৬০ সালে হ্যারিসন নিরামিষাশী হয়ে যান এবং পরমহংস যোগানন্দের কাছে ক্রিয়া যোগের দীক্ষা নেন। ১৯৬৯ সালের মাঝামাঝি সময় লন্ডনের রাধাকৃষ্ণ মন্দিরে ‘হরেকৃষ্ণ’ মন্ত্র জপ শুরু করেন। এরপর থেকে হ্যারিসন হরেকৃষ্ণ সম্প্রদায়ের সাথে যুক্ত হন যা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ছিল। তিনি তাঁর বিশ্বাস সম্পর্কে বলেন, ‘সকল মতবাদই একটি বৃহৎ বৃক্ষের শাখা। তুমি তাকে কি নামে ডাকবে এটা কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়’। তিনি বলেন, “Krishna actually was in a body as a person … What makes it complicated is, if he’s God, what’s he doing fighting on a battlefield? It took me ages to try to figure that out, and again it was Yogananda’s spiritual interpretation of the Bhagavad Gita that made me realise what it was. Our idea of Krishna and Arjuna on the battlefield in the chariot. So this is the point—that we’re in these bodies, which is like a kind of chariot, and we’re going through this incarnation, this life, which is kind of a battlefield. The senses of the body … are the horses pulling the chariot, and we have to get control over the chariot by getting control over the reins. And Arjuna in the end says, ‘Please Krishna, you drive the chariot’ because unless we bring Christ or Krishna or Buddha or whichever of our spiritual guides … we’re going to crash our chariot, and we’re going to turn over, and we’re going to get killed in the battlefield. That’s why we say ‘Hare Krishna, Hare Krishna’, asking Krishna to come and take over the chariot”
অসুস্থতা এবং মৃত্যু
১৯৯৭ সালে হ্যরিসনের গলায় ক্যন্সার ধরা পড়ে। তখন তাকে রেডিওথেরাপি দেয়া হয় যা সফল হিসেবে মনে করা হয়েছিল। ২০০১ সালে তাঁর ফুসফুস থেকে ক্যন্সার টিউমার অপসারণ করা হয়। ২০০১ সালে ২৯ নভেম্বর হ্যরিসন ৫৮ বছর বয়সে মেটাস্টাটিক নন-স্মল সেল লাং ক্যন্সারে মারা যান। হলিউড ফরএভার সিমেট্রিতে তাঁকে দাহ করা হয়। এরপর তাঁর দেহভস্ম ভারতের কাশীর নিকট গঙ্গা ও যমুনা নদীতে ছড়িয়ে দেয়া হয়। নিকট পারিবারিক লোকেরা ভারতে হিন্দুরীতিতে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন। হ্যরিসনের শেষ এলবাম Brainwashed (২০০২) তাঁর দুই সন্তান শেষ করেন এবং এ্যালবামে ভগবদ গীতা থেকে একটি উক্তি ছিল, “There never was a time when you or I did not exist. Nor will there be any future when we shall cease to be.
উইকিপিডিয়া।