কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রাম শহরের গাড়ীয়াল পাড়ায় মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলী (৬৮ ) নামের এক ধর্মান্তরিত খ্রিষ্টানকে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। দশ বছর আগে তিনি মুসলিম ধর্ম থেকে খ্রিষ্টান ধর্মগ্রহণ করেছিলেন।
আজ মঙ্গলবার(২২ মার্চ) সকাল সাতটার দিকে বাড়ির কাছাকাছি কুড়িগ্রাম-মোগলবাসা সড়কে এ ঘটনা ঘটে। দুর্বৃত্তরা ককটেল ফাটিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পালিয়ে যায়।
স্থানীয় লোকজনের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলী মোগলবাসা ইউনিয়নের চর সিতাই ঝাড়ের মৃত: ছেপাত উল্লাহ ছেলে। তিনি পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক হিসেবে গেল বছর অবসরে যান।
চাকুরির সুবাদে ২০ বছর আগে এই এলাকায় বাড়ি করেন তিনি। এরমধ্যে ১০ বছর আগে তিনি মুসলিম ধর্ম থেকে খ্রিষ্টান ধর্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। তার মুক্তিযোদ্ধা সনদ নং-ম-৯৪৭৩৫৫ এবং স্বারক নাম্বার বি/ম/সা/কুড়িগ্রাম/প্র:৩/৪৩/২০০২/২৯৮০।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানায়, প্রতিদিন সকালে হাঁটতে বের হতেন হোসেন আলী। আজকেও তিনি হাঁটতে বের হন। হাঁটা শেষ করে বাসায় ফেরার পথে সকাল সাতটার দিকে তাঁর গাড়ীয়াল পাড়ার বাড়ি থেকে ২০ গজ মতো দূরে আশরাফিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে একটি মোটরসাইকেলে তাঁর গতি রোধ করে। ওই মোটরসাইকেলে থাকা তিন আরোহীর মধ্যে একজন তাঁর গলা কাটছে দেখে এক পথচারী এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় তাঁকে ছুরি দেখিয়ে ভয় দেখানো হয়। অপর একজন ককটেল নিক্ষেপ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। তারপর তিনজন মোটরসাইকেল নিয়ে ঘটনাস্থল ছাড়ে। এ সময় আশপাশের লোকজনের চিৎকারে পূর্ব কলেজ পাড়ার সড়কের অপর মাথায় গাছ ফেলে দুর্বৃত্তদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা হয়। তবে সেটি সফল হয়নি। এখানেও দুর্বৃত্তরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে পালিয়ে যায়।
তারা প্রত্যেকেই শার্ট এবং ফুলপ্যান্ট পড়া ছিল। এদের মধ্যে মোটর সাইকেল থেকে ২ জন আকস্মিকভাবে নেমে আল্লাহু আকবার বলে পথচারি মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলীকে কোপ মারলে তিনি পড়ে যায়। পরে তাকে জবাই করে। চিৎকার চেঁচামেচি শুনে লোকজন ছুটে আসলে দুর্বৃত্তরা সেখানে ২টি ককটেল ফাটিয়ে পালিয়ে যায়।
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। তবে পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
হোসেন আলীর কয়েকজন প্রতিবেশী বলেন, হোসেন আলী প্রায় ১৫ বছর আগে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেন। কারও সঙ্গে তাঁর মনোমালিন্য ছিল না।
নিহতের ছেলে আজাদ বলেন, তাঁদের গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নের নয়ারহাট গ্রামে। তাঁর বাবা প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হতেন না। কারও সঙ্গে তাঁর কোনো শত্রুতা ছিল না বলেও তিনি দাবি করেন।
জেলা পুলিশ সুপার তবারক উল্লাহ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে ককটেল ফাটিয়ে এলাকায় আতংক ছড়ানোর চেষ্টা করে। এরমধ্যে ২টি ককটেল অবিষ্ফোরিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। আমাদের বিশেষ দল সেগুলো নষ্ট করবে। তবে উগ্রপন্থি নাকি শত্রুতার কারণে এই হত্যাকান্ড ঘটেছে তা আমরা খতিয়ে দেখেছি।