কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: সাম্প্রতি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে বইমেলার দাবি উঠেছে। বহুল আলোচিত সাহিত্য সংগঠন ‘উচ্ছ্বাস সাহিত্য সুহৃদ’ নামের একটি ফেইসবুক আইডির দেয়া “নাগেশ্বরীতে বইমেলা চাই” শিরোনামের একাট স্ট্যাটাসের মাধ্যমে এ দাবি ওঠে লেখক, পাঠকসহ সচেতন মানুষদের মাঝে। এরপর একাধিক ফেইসবুকে স্ট্যাটাসের কারণে এ দাবি আরো জোরালো হয়। সুধি মহলের অভিযোগ নাগেশ্বরীতে প্রতিবছর উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে বৃক্ষমেলা, শিক্ষামেলা, কৃষিমেলা, কম্পিউটার মেলা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা, পিঠা মেলাসহ প্রায় সব ধরণের মেলার আয়েজন করলেও বইমেলার আয়েজন করা হয়নি কোনো বছরই। অথচ এই বই মেলার আয়োজন করলে যুবসমাজসহ সকল স্তরের মানুষের উপকার হতো। কাজে লাগতো নবীন প্রবীণ সকল লেখকদের। এ অঞ্চল থেকে অনেক লেখকের বিভিন্ন ধরণের বই বের হলেও নেই সঠিক সুবিধা বা বিক্রির মাধ্যম। তবে স্থানীয় লেখকদের বই নিয়ে আগ্রহ রয়েছে সাধারণ পাঠকদেরও। তারপরও কখনো নাগেশ্বরীতে অনুষ্ঠিত হয়নি বইমেলা। অন্যদিকে ঢাকা গিয়ে বইমেলায় অংশ নেওয়াও সম্ভব হয় না সবার। সব মিলিয়ে নাগেশ্বরীতে প্রতিবছর বইমেলা আয়োজনের দাবী জানিয়েছেন লেখক, প্রকাশক ও সাধারণ পাঠকেরা। কয়েকজন লেখক ও প্রকাশক জানান, এবার অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে সামনে রেখে প্রায় অনেক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে কুড়িগ্রাম ও এর আশেপাশের এলাকা থেকে। এগুলোর মধ্যে আব্দুস ছালামের শিশুতোষ ছড়ার বই “তেঁতুল গাছে ভুত” দাদুর কাঁধে ছড়ার ঝুলি” রুহুল আমিন মিয়া, শ্রী ভবেন চন্দ্র রায়ের যৌথ কাব্যগ্রন্থ-ভালোবাসার পরশ, হাফিজুর রহমান হৃদয়ের, চলছে গাড়ি ছড়ার বাড়ি, প্রজাপতি প্রেম , সাপখাওয়া থেকে প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকা উচ্ছ্বাস উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও একক ও যৌথ গ্রন্থ রয়েছে আরও বেশকিছু। অথচ বিক্রির খুব একটা মাধ্যম না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেন তারা। এমনকি নিয়মিত বই প্রকাশ হলেও মেলার স্বাধ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন লেখক, প্রকাশক ও পাঠকসহ সাধারণ মানুষ।
এ বিষয়ে প্রকাশক-সম্পাদক, তরুণ লেখক ও সংগঠক হাফিজুর রহমান হৃদয় বলেন, বইমেলা হলো আমাদের প্রাণের মেলা। নাগেশ্বরী উপজেলা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অনেক সমৃদ্ধ। এখানে বইমেলা হলে অনেক প্রতিভা বেরিয়ে আসবে। অনেক লেখক প্রকাশক তাদের বই বের করতে উৎসাহী হবেন। তাই শুধু নাগেশ্বরীই নয় দেশের সব উপজেলায় নিয়মিত বইমেলা হোক এই দাবী জানাই।
প্রবীণ লেখক আব্দুস ছালাম জানান, মানুষের বিনোদনের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম বইমেলা, বই সভ্যতার আলো। একমাত্র বইই পারে মানুষকে বিপথ থেকে ফিরিয়ে আনতে। তাই আমাদের অঞ্চলে বইমেলা অতিব জরুরি।
রংপুর অ্যাড আইডিয়া পাবলিকেশন্স এর প্রকাশক মাসুদ রানা সাকিল বলেন একটি উন্নত জাতির জন্য বইমেলার গুরুত্ব বহন করে।
রংপুরের পাতা প্রকাশ এর প্রকাশক শাকিলা পারভীন জানান, যথারীতি পা-ুলিপি নিই, আইএসবিএন নম্বর যোগাড় করি, সুন্দরভাবে একটি বই প্রকাশও করি-কিন্তু বই প্রদর্শনের ব্যবস্থা নেই। ঢাকা বইমেলায় বই রাখতে গেলেও নানা সমস্যা। তাই স্থানীয়ভাবে বইমেলা হলে লেখক, প্রকাশকরা তাদের বই প্রকাশ করতে ইৎসাহী হবেন।
বিভাগীয় লেখক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জাকির আহমদ জানান প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বই বের করলে এসব বইয়ের কম্পোজ এক জায়গায়, প্রিন্ট বা বাঁধাই অন্য জায়গায়, আবার বিক্রি বা প্রদর্শনের ব্যবস্থার জন্য ছুটতে হয় ঢাকা বইমেলায়। ফলে ঢাকা ও বিভাগীয় শহরগুলোর পাশাপাশি জেলা ও উপজেলাগুলোতে বইমেলা হলে এদিক থেকে পাঠক ও লেখক দু’পক্ষেরই সুবিধা হবে। তাই স্থানীয়ভাবে বইমেলা হওয়া আমাদের প্রাণের দাবী।
গত ১৯, ২০ ও ২১ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসকের আয়োজনে ৩দিন ব্যাপী কুড়িগ্রামে বইমেলা হওয়ার পর কবি, গল্পকার ও সাংবাদিক গোলাম মওলা সিরাজ, নাগেশ্বরী উন্মুক্ত সাহিত্য পরিষদের সভাপতি, প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম, কবি রুহুল আমিন মিয়া, উপজেলা যুগান্তর স্বজন সমাবেশ এর সভাপতি ও উচ্ছ্বাস এর নির্বাহী সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান, বিনয় কিশোর নলনী, কবি রফিক হাসানসহ সাধারণ পাঠকরা অনেকেই চলতি বছর থেকেই মেলা আয়োজনের দাবী করেন।
বিশিষ্ট সাহিত্য-সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব ও নজরুল গবেষক সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, আলোকিত সুন্দর মানুষ হতে হলে যা চাই তা হলো বইয়ের সাথে প্রেম। তাই ঘুনে ধরা সমাজটাকে রক্ষায় বইমেলা অবশ্যই প্রয়োজন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হায়াত মো. রহমতুল্যাহ এ প্রতিনিধিকে বলেন, বইমেলা অবশ্যই হওয়া প্রয়োজন এটি একটি ভালো উদ্যোগ। জেলা প্রশাসক মহোদয় কুড়িগ্রামের সব উপজেলায় সামনের বছল থেকে একুশে বইমেলা করার কথা জানিয়েয়েছেন। এবারেই সেটি হওয়া সম্ভব কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন সামনের ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখে দেখি বইমেলা করা যায় কি না। এ বিষয়ে বৈশাখি মেলা উদযাপনের প্রস্তুতিসভায় আলোচনা করে উপজেলা চত্বরে বইমেলার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।