বিএনপি আসলে কী? বিএনপি হচ্ছে জামাতের ছদ্মবেশ। বিএনপি নামটা মুছে ফেলেন এবং আওয়ামী লীগের বিরোধী পক্ষ হিসেবে জামাতকে নির্বাচন করার সুযোগ দিয়ে দ্যাখেন, ফলাফল কী দাঁড়ায়? জামাত-বিএনপি জোট নির্বাচনে যে কয়টি আসন পাবে শুধু জামাত নির্বাচনে গেলেও একই পরিমাণ আসন পাবে। পরীক্ষাটা ছোট্ট পরিসরে চালিয়ে দেখা যেতে পারে । সোজা কথায় সমাজের মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে, ফিলসফিতে সমস্যা রয়েছে। এখনো সবাই আতঙ্কের মধ্যে আছে, উপমহাদেশের মুসলমানেরা এক সময় (যখন হিন্দু ছিল) উচ্চ বর্ণর হিন্দুদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছে, একসময় ব্রিটিশদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছে। বাংলাদেশ হওয়ার পরে পাকিস্তানীদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছে। প্রচুর পরিশ্রম করেও বাংলাদেশের মানুষ কখনো ভাল থাকতে পারেনি। অর্থাৎ এদেশের মানুষের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। এখন যারা এ দেশে ধনী বা একটু গুছিয়ে বসেছে, তারাও সবসময় আতঙ্কে থাকে, হারানোর ভয়ে ভীত থাকে। পাশে একটি প্রভাবশালী হিন্দু রাষ্ট্র থাকায় ভয়টা আরো বেশি, এবং কখনো কখনো সে ভয় প্রাসঙ্গীকতাও পায়, ফলে ধর্মান্ধতা অঁকাড়ে ধরাটাকে অনেকে প্রয়োজনীয় মনে করে, অনেকে তা করে অভ্যাসবশত। ধর্ম ব্যাবসায়ীরা ঠিক এই সুযোগটিই নেয়। জামাতের বা বিএনপির রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুও ঠিক এখানে। আওয়ামীলীগও শেষ পর্যন্ত রাজনীতিতে ধর্মর ব্যাবহার করতে বাধ্য হচ্ছে। শুধু মুক্তিযুদ্ধ দিয়ে তারা পেরে উঠছে না, কপালে ‘কালো টিপ’ এবং মাথায় সাদা টুপি কারণে অকারণে তাদেরও পরতে হচ্ছে। এই বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত হতে না পারলে অচিরেই এই ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে ভাল কিছু দেখার সম্ভাবনা কম। একটা জগাখিচুড়ি চলতেই থাকবে।
একটা সমাধান ছিল- বাঙ্গালী জাতিস্বত্তার মাধ্যমে পৃথিবীর কাছে একটি জাতি রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হওয়া। সেটি ছিল মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম একটি আকাঙ্ক্ষাও। তা হয়নি। সাংবিধানিকভাবে এবং সামাজিকভাবে বাংলাদেশ একটি মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে ‘৭৫ পরবর্তী সময়ে পরিচিত হতে চেয়েছে, হয়েছে। সমাজের অলিতে গলিতে ‘মুসলিম উম্মাহ’ তত্ত্ব ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতীর ভণিতা যেমন বেড়েছে, পাশাপাশি বেড়েছে অবিশ্বাসও।
আসলে খুব সহজ কোন সমাধান খোঁজা এই মুহূর্ত বোকামী হবে। আমার ধারণা একটি ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হতেই বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ স্বস্তি বোধ করবে, অর্থাৎ গণতন্ত্র মেনে নিলে বাংলাদেশকে একটি ইসলামিক স্টেট হিসেবেই মেনে নিতে হবে। ইসলামিক স্টেট হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ যদি শান্তিপূর্ণ অবস্থায় থাকে, তাহলে ব্যাক্তিগতভাবে আমার সে ব্যাবস্থা মেনে নিতে অসুবিধা নেই। সমস্যা হচ্ছে, ইসলামিক স্টেট হয়ে বাংলাদেশ ভাল থাকতে পারেব না বা ভাল থাকতে দেওয়া হবে না, তার এক নম্বর কারণ- ধর্মান্ধরা মওকা পেয়ে হাজার বছর পিছিয়ে যেতে চাইবে, দুই নম্বর কারণ- বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থা, তিন নম্বর কারণ- সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। তাছাড়া ইসলামীক স্টেট হিসেবে একটি সুন্দর দেশ হওয়ার কোন বাস্তব উদাহরণ পৃথিবীতে নেই, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা আরো অসম্ভব।
বাংলাদেশী জাতিয়তাবাদ একটি উদ্ভট বিষয়। ভূখণ্ড দিয়ে বা ভূখণ্ডের নামে কখনো জাতিস্বত্তা নিরূপিত হয় না। এটা করা হয় এথনিসিটি দিয়ে, অর্থাৎ জীবনপ্রণালীর মধ্যে মিল রয়েছে এমন একটি জাতি নিয়ে গঠিত রাষ্ট্রকে জাতি রাষ্ট্র বলে। জাতি রাষ্ট্র থেকেই জাতিয়তাবাদের উদ্ভব। সমস্যা হচ্ছে বাংলাদেশের আদিবাসী গোষ্ঠী নিয়ে। যেহেতু তারা বাঙ্গালী নয়, সেক্ষেত্রে ‘বাঙ্গালী জাতি’ তত্ত্বটিও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। অর্থাৎ এই ভূখণ্ডের মানুষকে একটি বাস্কেটের মধ্যে রাখার মত কোন থিওরি আপাতত আমাদের হাতে নেই। থিওরিটা দরকার। সমাজ বিজ্ঞানীদের উচিৎ নড়েচেড়ে বসা, এবং একটি থিওরি বাতলে দেওয়া। শুধু হামলা পাল্টা হামলা করে সমাধান হওয়া অসম্ভব।
[আসলে দেশটার জন্মের মধ্যেই সমস্যা রয়েছে। ’৪৭ এ দুই বাংলা মিলে একটি দেশ হলে আজকে এত সমস্যা পোহাতে হত না।]