ফলোআপ নিউজ ডেস্ক
বিবিসি বাংলা কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে কিছু কেস স্ট্যাডি তুলে ধরে:
শিশু ধর্ষণের এরকম হাজার হাজার পরিসংখ্যান রয়েছে শুধু গণমাধ্যমের হিসেবে, বাস্তবে নিশ্চয়ই আরো বেশি। সারা পৃথিবীতেই শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, তবে আমাদের দেশে সংখ্যাটা উদ্বেগজনক।
সর্বশেষ ঘটনাটি পূর্বের নৃশংসতাগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে। শিশুটি যেভাবে নির্যাতিত হয়েছে তা ডাক্তারদেরও হতবাক করেছে। ঘটনাটিতে গণমাধ্যম সরব, সামাজিক মাধ্যমও সরব স্বাভাবিকভাবে, কিন্তু মূলত বিচার চেয়ে সবাই সরব। পাশাপাশি প্রতিরোধ এবং প্রতিকার চেয়েও সরব হওয়া প্রয়োজন নয় কী?
জানা দরকার, শিশু ধর্ষণ কারা করে, কেন করে। অপরাধ-বিজ্ঞানটা কিন্তু আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। সামাজিক দিকটায়ও আলোকপাত হচ্ছে না। বিচার তো চাইতেই হবে। এতটা সরব না হলে এরকম ঘটনায় ভিকটিমের ঠিকমত চিকিৎসা পাওয়াও হয় না, বিচার ব্যবস্থাও ঠিকমত কাজ করে না। তাই আমাদের চিৎকার অবশ্যই লক্ষ্যভেদী। জনগণের দায়িত্ব জনগণ পালন করছে। কিন্তু ঘাফলতি থেকে যাচ্ছে সমাজ বিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী এবং অপরাধ বিজ্ঞানীদের। দায় আছে সরকার তথা দায়িত্বপ্রাপ্ত বাহিনীর।
প্রতি বছর হাজার হাজার ঘটনা ঘটছে, তারপরও কেন কর্তব্যক্তিদের টনক নড়বে না? শুধু আবেগঘন লেখা তো মুহূর্তের, দীর্ঘ্যমেয়াদে তা কোনো কাজে আসে না এসব ক্ষেত্রে।
শিশু ধর্ষণ নিয়ে পৃথিবীতে প্রচুর গবেষণা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশে এরকম গবেষণা বিরল। এমন কি খুব বেশি কেস স্টাডিও নেই।
[ফুল টেক্সট্ চেয়ে মেইল করে কোনো সাড়া আসেনি]
উন্নত দেশগুলোতে এ সংক্রান্ত পরিসংখ্যান রয়েছে: Child Sexual Abuse Statistics
এক্ষেত্রে WHO ‘র পূর্ণাঙ্গ তথ্য রয়েছে। জানি না আমাদের দেশ থেকে তারা কীভাবে তথ্য সংগ্রহ করে: WHO ‘র রিপোর্ট বলছে-
An estimated 7.9% of males and 19.7% of females universally faced sexual abuse before the age of 18 years
উইকিপিডিয়ার পরিসংখ্যানে বাংলাদেশ ধর্ষণের দিক থেকে চার নম্বরে রয়েছে।
তবে এই পরিসংখ্যানের বড় অসংগতির জায়গা হচ্ছে। শিশু ধর্ষণের বিষয়টির রকমফের আছে। শিশুদের ঘৃণ্য-ইচ্ছায় ছোঁয়া থেকে শুরু করে নির্যাতন করে মেরে ফেলা পর্যন্ত এর মধ্যে নানান প্রকার রয়েছে।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির কিছু পরিসংখ্যান আছে। তবে সেটি আলাদাভাবে শিশুদের উপর নয়। ২০১৬ সালের কোনো পরিসংখ্যান কোথাও নেই।
বিষয়ের উপর গবেষণা আমাদের দেশে দু’একটা থাকলেও দশ বছরে নিচের শিশুদের উপর কোনো গবেষণা খুঁজে পাওয়া গেল না। অর্থাৎ, এত ছোট শিশুও যে ধর্ষিত হতে পারে সেটি অনুমানটিই করা হয়েছে এই অঞ্চলে খুব কম। নিচের গবেষণাটি দশ থেকে পনেরো বছর বয়সী শিশুদের উপর-
Child Abuse in Bangladesh: A Silent Crime
এটি মূলত একটি কেস স্টাডি এবং বর্ণনা।
নিচের কাজটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। ফুল টেকস্ট চেয়ে মেইল করেছি লেখকদের কাছে। আশাকরি পাওয়া যাবে।
No Place is Safe: Sexual Abuse of Children in Rural Bangladesh
গবেষণাটি বলছে, পরিবারের লোকেদের দ্বারা শিশুরা ধর্ষিত হওয়ার ঘটনা ঘটলেও পরিবারের বাইরের লোকেদের দ্বারাই ৮৩% ঘটনা ঘটে বলে গবেষণায় দেখা গেছে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষ্য এক্ষেত্রে আরো উব্দেগজনক। শিশুদের প্রতি যেসব পুরুষ যৌনেচ্ছা অনুভব করে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় তাদের পিডোফাইল বলে। বিষয়টিকে সাইক্রিয়াটিক ডিজওর্ডার হিসাবে সণাক্ত করা আছে। নির্যাতকরা, ধর্ষকরা সবাই যে পিডোফিল তা নয়, আরো অনেক কারণ রয়েছে। তবে ভয়ঙ্কর ঘটনাগুলো সাধারণত পিডোফিলরাই ঘটায় বলে জানা যায়। এছাড়াও হেবফাইল, এফবোফাইল রয়েছে -এরা মূলত কিশোরীদের উপর আক্রমণ চালায়।
বিষয়টির উপর ২৫ নভেম্বর ২০১৫, বিবিসি বাংলা একটি বিজ্ঞান-প্রতিবেদন করেছিল। “শিশু যৌন নির্যাতনকারীদের মস্তিষ্কের গঠন কি আলাদা?” শিরোনামের ঐ প্রতিবেদন থেকে-
ক্যানাডার টরন্টোর মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষক ডঃ জেমস ক্যান্টর শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনকারীদের মস্তিষ্ক নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন। তার গবেষণায় উঠে এসেছে চমকপ্রদ কিন্তু বির্তকিত তথ্য।
তিনি বলছেন , ‘‘পিডোফিলিয়া একটা যৌন প্রবণতা এবং মানুষ এই প্রবণতা নিয়ে জন্মায়। সময়ের সঙ্গে এর পরিবর্তন ঘটে না।’’
ড: ক্যান্টর বলছেন সাধারণ মানুষ যেমন শিশুদের দেখলে আদর করে – তাদের সঙ্গে ভাব জমানোর চেষ্টা করে- এই পিডোফাইলদের মধ্যে সেধরনের প্রবণতা জাগে না- শিশুদের দেখলে তাদের মধ্যে যৌন প্রবণতা তৈরি হয়।
তাঁর তত্ত্ব অনুযায়ী এধরনের প্রবণতা জন্ম নেয় যখন মাতৃগর্ভে একটা শিশু বেড়ে ওঠে এবং তার মস্তিষ্ক গঠিত হয়। তিনি গবেষণায় দেখেছেন মা গর্ভাবস্থায় মানসিক চাপ ও অপুষ্টিতে ভুগলে শিশুর মস্তিষ্কের যথাযথ বিকাশ হয় না।
তবে এ নিয়ে আরও গবেষণা করে তিনি দেখতে চান এই প্রক্রিয়াকে বন্ধ করা যায় কীনা।
তার এই গবেষণাকে বির্তকিত বলছেন ক্যানাডারই অটাওয়ার একজন গবেষক ড: পল ফেডোরফ। তিনি মনে করেন না এটা জন্মগত সমস্যা। তার মতে এর চিকিৎসা সম্ভব।
তিনি বলেছন অ্যান্টি-অ্যান্ড্রোজেন ওষুধ দিয়ে এধরনের অপরাধীদের যৌন প্রবণতা বন্ধ করা সম্ভব। তার মতে ওষুধ ব্যবহার করে শিশুদের ওপর তাদের যৌন নির্যাতনের প্রবণতা যদি রোখা যায় তাহলে এদের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সহায়তাদান সম্ভব।
দেখা যাচ্ছে, বিষয়টিতে বিজ্ঞান এখনো একটি বিতর্কিত জায়গায় রয়েছে। কিন্তু এটা প্রমাণিত যে পিডোফাইল একটা মানসিক রোগ, তা সে জন্মগত হোক বা না হোক। এক্ষেত্রে সামজিকভাবে আমাদের করণীয় হতে পারে এরকম কোনো রোগীর (বিকৃত মানুষ) সন্ধান পেলেই তা গোপন না রাখা। অন্তত প্রথমদিকে নিকট আত্মীয় এবং প্রতিবেশীদের জানানো। আপনজন হলেও এক্ষেত্রে আবেগশূন্য হতে হবে। প্রয়োজনে থানায় একটা জিডি করেও রাখা যায়।
গত চারদিন আগে পার্বতীপুরের ঘটনার হোতা সাইফুল ইসলাম কিন্তু আগে থেকেই পরিবারের কাছে সণাক্ত হয়েছে। খবরে প্রকাশ- তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে, এবং সন্তানরাও তার কাছে নীরাপদ ছিল না।
‘ধর্ষক’ সাইফুল আসলে কে? এখানে তার পূর্বাপর কিছু তথ্য রয়েছে, যেখান থেকে সতর্ক হওয়ার এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ ছিল।
এ ধরনের অপরাধ গোপন রাখার অপরাধে সাইফুলের স্ত্রী’রও শাস্তি হওয়া উচিৎ, তাতে সমাজে অন্তত একটা দৃষ্টান্ত তৈরি হবে। বিষয়টিতে (শিশু নির্যাতন-ধর্ষণ) সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর আরো অনেক বেশি কাজ করা উচিৎ। সাইফুলের মত মানুষের স্ত্রী এবং নিকটজনেরা যাতে আবেগশূন্য হয়ে বিষয়গুলো বুঝতে পারে সেজন্য প্রচার-প্রচারণা সহযোগিতা অনেক বেশি জরুরী। অন্যথায় ঘটনা ঘটার পরে শুধু বিচার করে এরকম আরেকটি ঘটনার অপেক্ষায় থাকতে হবে।