ব্যাংক ফিক্সড ডিপোজিট একাউন্টের বিপরীতে ঋণ প্রদান করে থাকে। এক্ষেত্রে ব্যাংক আপনার ফিক্সড ডিপোজিটের মোট অর্থের পরিমাণের সর্বোচ্চ ৯০ ভাগ পর্যন্ত ঋণ দিয়ে থাকে। যা আপনার আর্থিক প্রয়োজনীয়তা অনেকাংশেই পূরণ করে থাকবে। ফিক্সড ডিপোজিটের বিপরীতে দেওয়া ঋণ, ওভার ড্রাফট বা চাহিদার বিপরীতে ঋণ হিসেবে প্রদান করা হয়। মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ফার্মার্স ব্যা্ংক, স্টান্ডার্ড চার্টাড, সিটি ব্যাংক, সোনালী, রুপালী সহ সরকারি বেসরকারি অনেক ব্যাংকই বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী নির্দিষ্ট সুদ হারে ফিক্সড ডিপোজিটের বিপরীতে ঋণ দিয়ে থাকে।
ফিক্সড ডিপোজিট কিঃ
ফিক্সড ডিপোজিট হচ্ছে ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত এক ধরনের স্কিম যা আপনাকে নিয়মিত সেভিংস একাউন্টের তুলনায় আপনার সঞ্চয়ের উপর অতিরিক্ত ইন্টারেস্ট দিয়ে থাকে। এটা এক ধরনের সেভিংস একাউন্ট যেখানে আপনি নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য অর্থ সঞ্চয় করলে আপনার মূল অর্থের উপর ভিত্তি করে ব্যাংক নির্দিষ্ট হারে ইন্টারেস্ট প্রদান করে থাকে। ফিক্সড ডিপোজিটকে নির্দিষ্ট শর্তের উপর আমানতও বলা যেতে পারে। আমানতের নির্দিষ্ট সময়কালের পূর্বে আপনি তা তুলে নিতে পারবেন না। কিন্তু অগ্রিম ব্যাংক বিজ্ঞপ্তি বা জরিমানা পরিশোধ সাপেক্ষে নির্দিষ্ট সময়ের আগে আমানত তুলে নিতে পারবেন। ফিক্সড ডিপোজিট বিভিন্ন মেয়াদের হয়ে থাকে যেখানে ইন্টারেস্টের হার, সময়কাল ও আমানতের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে ভিন্ন হয়ে থাকে।
ফিক্সড ডিপোজিটের বিপরীতে ঋণ গ্রহণের সুবিধাঃ
- ফিক্সড ডিপোজিটের বিপরীতে ঋণ গ্রহণের ফলে আপনার ব্যবস্থাপনার মধ্যে এক ধরনের সামঞ্জস্য আনয়ন করে। কারণ ফিক্সড ডিপোজিটের বিপরীতে নেওয়া ঋণ আপনাকে স্বল্প মেয়াদী অর্থ প্রদান করে আপনার সাময়িক আর্থিক প্রয়োজনীয়তা মেটাচ্ছে যেখানে ফিক্সড ডিপোজিটের মূল অর্থ খরচ হচ্ছে না।
- এটি আপনার আর্থিক চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আপদকালীন সময়ে সম্পদ বিক্রির হাত থেকে আপনাকে রক্ষা করছে।
- ফিক্সড ডিপোজিটের বিপরীতে ঋণ গ্রহণের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, অন্যান্য ব্যক্তিগত ঋণের চেয়ে কম সুদে ঋণ পাচ্ছেন এখানে। উপরন্তু ফিক্সড ডিপোজিটের বিপরীতে গৃহীত ঋণ অনেক বেশি সুরক্ষিত হয়।
- এছাড়া বাংলাদেশের বেশিরভাগ ব্যাংক ফিক্সড ডিপোজিটের মূল অর্থের সর্বোচ্চ ৯০ ভাগ পর্যন্ত ঋণ প্রদান করে থাকে।
- ফিক্সড ডিপোজিটের বিপরীতে নেওয়া ঋণ আপনার ডিপোজিটের মেয়াদ থাকাকালীন সময়ের ভেতরে পরিশোধের সুযোগ পাবেন।
- আপনার নিজের জন্য ছাড়া ও তৃতীয় পক্ষের কারো জন্য বা কোন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের জন্য ঋণ নিতে পারবেন ।
ফিক্সড ডিপোজিটের বিপরীতে ঋণ নেওয়ার জন্য কিভাবে আবেদন করবেনঃ
প্রথমে আপনাকে প্রয়োজনীয় তথ্য সহকারে ঋণের আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে। ঋণের আবেদনপত্রের সাথে ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত আপনার ফিক্সড ডিপোজিটের রসিদ সংযুক্ত করতে হবে। সকল নথিপত্র বুঝে পাওয়ার পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আপনার ফিক্সড ডিপোজট একাউন্টের বিপরীতে ঋণ অনুদান দিবে।
কিভাবে ফিক্সড ডিপোজিটের বিপরীতে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করবেনঃ
ব্যাংক আপনাকে ঋণ পরিশোধের জন্য একটি সুবিধাজনক প্ল্যান প্রস্তাব করবে। আপনি কিস্তিতে বা এককালীন পরিশোধের সুযোগ পাবেন। এছাড়াও ব্যাংক গ্রাহকদের একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত ঋণ প্রস্তাব করে থাকে যেখানে আপনি হাতে নগদ অর্থ থাকাকালীন ঋণ পরিশোধ করার সুযোগ পাবেন।
ঋণ নেওয়ার ব্যাপারে যে বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখা উচিতঃ
ফিক্সড ডিপোজিটের বিপরীতে ঋণের জন্য আবেদন করার পূর্বে নিম্নে উল্লেখিত বিষয় সমূহ জেনে রাখা দরকার।
- ব্যাংক শুধুমাত্র ঐসব ডিপোজিটের বিপরীতেই ঋণ অনুমোদন দেয় যা কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট দায়বদ্ধ নয়।
- এছাড়া কোন অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির নামে থাকা ফিক্সড ডিপোজিটের বিপরীতে ব্যাংক কোন ঋণ অনুমোদন করে না।
- যৌথ অংশীদারিত্বে থাকা ফিক্সড ডিপোজিটের বিপরীতে যদি কেউ ব্যক্তিগত ঋণ নিতে চায়, তাহলে ঋণের নথিপত্রে সকল একাউন্ট হোল্ডারের সম্মতিসূচক স্বাক্ষর থাকতে হবে। এবং ঋণ সংক্রান্ত সকল দায়ভার ডিপোজিটের সব একাউন্ট হোল্ডারকে বহন করতে হবে।
- ঋণ নেওয়ার পরেও ডিপোজিটের মূল অর্থের উপরে একাউন্ট হোল্ডার ইন্টারেস্ট পাবে। তবে ঋণগ্রহীতাকে অবশ্যই নিয়মিত কিস্তিতে বা এককালীন ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হবে। এই শর্ত সাপেক্ষে গ্রাহক নিয়মিত ইন্টারেস্ট পাবেন।
ঋণগ্রহীতা যদি তার ফিক্সড ডিপোজিটের বিপরীতে নেওয়া ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়, তাহলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঋণ পুনরুদ্ধারের জন্য ঋণগ্রহীতার ফিক্সড ডিপোজিট একাউন্ট বন্ধ করে দেওয়ার অধিকার রাখে।
ফিক্সড ডিপোজিটের বিপরীতে ঋণ নেওয়ার আগে এর সুবিধা অসুবিধা বিবেচনা করে আরো একবার ভেবে নিন, তা আপনার জন্য কতটা সুফল বয়ে আনবে।